‘ন ডরাই’ এর বিনিময়ে বাংলাদেশে প্রথমবার মুক্তি পাচ্ছে নেপালি ছবি
Published: 11th, July 2025 GMT
বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিচ্ছে কোনো নেপালি চলচ্চিত্র। আগামী ১৮ জুলাই দেশের জনপ্রিয় মাল্টিপ্লেক্স চেইন স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেতে যাচ্ছে নেপালের আলোচিত সিনেমা ‘মিসিং: কেটি হারায়েকো সুচনা’। বিশেষ বিষয় হলো, সাফটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে আমদানি হচ্ছে সিনেমাটি, আর এর বিনিময়ে নেপালে যাচ্ছে বাংলাদেশের আলোচিত সিনেমা ‘ন ডরাই’।
নেপালি সিনেমাটি বাংলাদেশে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (বিপণন) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “এটাই প্রথম কোনো নেপালি সিনেমা, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে। আর এর মাধ্যমে দুই দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটতে যাচ্ছে।”
শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের অন্যান্য শহরেও স্টার সিনেপ্লেক্সের শাখাগুলোতে প্রদর্শিত হবে ছবিটি। ‘মিসিং’ মূলত একটি প্রেমকাহিনি-নির্ভর থ্রিলার। সিনেমার শুরুতে দেখা যায়, একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে ছেলেটি ও মেয়েটির পরিচয়। পরে প্রথমবারের মতো দেখা হয় এক ক্যাফেতে। কিন্তু সেখানে ঘটে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা– ছেলেটি মেয়েটির কফিতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাকে অপহরণ করে ফেলে! এখান থেকেই শুরু হয় ভুল বোঝাবুঝি, উত্তেজনা আর রহস্যে মোড়ানো এক দৌড়।
নেপালি ভাষায় নির্মিত হলেও সিনেমাটির ভেতর দিয়ে উঠে এসেছে দেশটির লোকজ সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ। ছবিটির চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় আছেন দীপেন্দ্র গাউছান। অভিনয়ে রয়েছেন দুরা সঞ্জয় গুপ্ত, অমিতেষ সাহ, মদন ঠাকুরসহ আরও অনেকে।
অন্যদিকে, বিনিময় চুক্তির আওতায় নেপালে প্রদর্শিত হবে বাংলাদেশের সমুদ্র ও নারীর স্বাধীনতাভিত্তিক সিনেমা ‘ন ডরাই’, যা ২০১৯ সালে দেশে মুক্তি পেয়েছিল। তানিম রহমান অংশুর পরিচালনায় এতে অভিনয় করেছিলেন সুনেরাহ বিনতে কামাল ও শরীফুল রাজ। সিনেমাটি তৎকালীন সময়েই দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছিল।
নেপালি সিনেমা ‘মিসিং’ বাংলাদেশের বড় পর্দায় আসায় দুই দেশের দর্শকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ভিন্ন রকম এক আগ্রহ। এটি শুধু বিনোদন নয়, সংস্কৃতি বিনিময়েরও একটি নতুন পথ খুলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। স্টার সিনেপ্লেক্সের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দেশের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরাও।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হাজার প্রদীপে আলোকিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়
সন্ধ্যার আকাশ ঢেকে গেছে নরম কুয়াশায়। আকাশের বুক জুড়ে নরম কুয়াশার পরত, আর মাটির উপর ঝলমলে হাজার প্রদীপের সারি। সব মিলিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ধ্যা যেন আজ অন্যরকম।
ট্রান্সপোর্ট চত্বর থেকে শুরু করে বাদামতলা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে ছোট ছোট প্রদীপ—যেন কারো সূক্ষ্ম আঁচড়ে আঁকা আলোর নদী। প্রতিটি শিখা যেন অন্ধকারকে ভাঙতে চায়, হৃদয়ের অজানা এক অদৃশ্য পথ দেখায়।
আরো পড়ুন:
সুন্দরবনে রাসপূজায় যেতে বন বিভাগের ৫ রুট, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জে বসেছে প্রতিমার হাট
প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালে ক্যাম্পাসে দীপাবলি উদযাপন করা হয়। দীর্ঘ সময় পর সোমবার (২০ অক্টোবর) দ্বিতীয়বারের মতো এবার শ্যামা কালীপূজাকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এ দীপাবলি উৎসবের আয়োজন করে ‘বাণী অর্চনা সংঘ’। শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি আলপনা আর মাটির প্রদীপে আজ আলোকিত হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।
এর আগে, বিকেল থেকেই শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন ট্রান্সপোর্ট চত্বরে। কেউ হাতে প্রদীপ নিচ্ছেন, কেউ ঝাড়বাতি জ্বালাচ্ছেন, কেউবা বন্ধুর সঙ্গে হাসিতে মেতে উঠছেন।
সন্ধ্যা নামতেই এক জাদুকরী দৃশ্যে রূপ নেয় পুরো ক্যাম্পাস। সারি সারি প্রদীপের আলোয় ক্যাম্পাসের লাল ইটের পথ হয়ে ওঠে সোনালি। বাতাসে ভেসে আসছে ধূপের গন্ধ। হাসির ঝলক আর আলোর মায়ায় মুহূর্তগুলো থেকে যায় স্মৃতির ভাঁজে।
এক শিক্ষার্থী বললেন, “সারা বছর ক্লাস, পরীক্ষা, ব্যস্ততা— আজকের এই সন্ধ্যা যেন একটু থেমে থাকার দিন। প্রদীপ জ্বালানোটা শুধু ধর্মীয় আয়োজন নয়, বরং একসঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার একটা উপলক্ষ।”
বাণী অর্চনা সংঘের সভাপতি অনিক মালো বলেন, “ক্যাম্পাসে দীপাবলীর উৎসব উদযাপন করতে পেরে নিজের কাছে খুব উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে সব অপশক্তি দূর হবে, এটা আশা করি।”
মূল ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি প্রদীপের আলো বাতাসে কাঁপছে, যেন এক জীবন্ত শিখা। কেউ বাজি ফুটাচ্ছে, কেউ কেউ শাড়ি পরে এসেছে–মনোযোগ ভালো ছবির ফ্রেমে। সেলফি তুলছে। তবে উৎসবের মধ্যে কোথাও নেই বিশৃঙ্খলা— আছে শুধু উচ্ছ্বাস আর আলোর স্নিগ্ধতা। মিষ্টিমুখ চলছে, কেউ মিষ্টি মুখে তুলে বলছে, “এত সুন্দর ক্যাম্পাস আগে দেখিনি!”
ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সাইন্সেস অনুষদের শিক্ষার্থী ঋতু রানী বলেন, “পরিবারের বাইরে প্রথমবারের মত দীপাবলি পালন করছি। সবারর অংশগ্রহণে বেশ আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ হচ্ছে।”
ট্রান্সপোর্ট চত্বরে তখন চলছে আরেক দৃশ্য। গানের আসর বসেছে ছোট করে। কেউ গিটার হাতে, কেউ তাল দিচ্ছে তালি দিয়ে। লালন গীতির সুরের ভেলায় মিলেমিশে যাচ্ছে দীপের আলো আর তারুণ্যের হাসি। রাত যত গভীর হচ্ছে, প্রদীপগুলো তত নিভে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের চোখে তখনও জ্বলছে আলো। সেই আলো শুধু প্রদীপের নয়। একাত্মতার, সৌন্দর্যের, আর জীবনের প্রতি ভালোবাসার আলো।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ রায় বলেন, “শ্যামা পূজায় পৃথিবীর সকল অশুভ শক্তি বিরুদ্ধে আমরা প্রদীপ প্রজ্বলন করি। আমরা চাই এই প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সব খারাপ শক্তির বিনাশ হোক।”
আজকের এই এক হাজার প্রদীপের সন্ধ্যা যেন শুধু আলোর উৎসব নয়, বরং শিক্ষার্থীদের অন্তরের এক দীপান্বিত যাত্রা। প্রতিটি শিখা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, জীবন ছোট ছোট আলোয় পূর্ণ, আর সেই আলোর উষ্ণতায় আমরা সবাই এক।
ঢাকা/মেহেদী