ঢাকার ধামরাইয়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি বাথুলি-মহিশাষী সড়কের ‘বেলিশ্বর সেতু’র নির্মাণ কাজ। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সড়কে চলাচল করা স্থানীয় কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা। কর্তৃপক্ষ বলছে, অতি দ্রুত সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করে চলাচলের উপযোগী করা হবে।

ধামরাই উপজেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের (ডিডিআইআরডব্লিউএসপি) ধামরাই-সাটুরিয়া সড়কের মহিশাষী বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সংযুক্ত বাথুলি বাসসট্যান্ড সড়কের বেলিশ্বর মোহনী মোহন উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় বিলের ওপর ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়। 

২০২২ সালের জুন মাসে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৯৩ টাকায় সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নিরাপদ এন্টারপ্রাইজ। ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ২০ ভাগের মতো কাজ করে এক বছরের আগেই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে পালায় ঠিকাদার। 

এরপর ২০২৪ সালের ৫ ডিসেম্বর মেসার্স প্রিন্স এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নতুন করে ১ কোটি ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৫ সালের ৪ ডিসেম্বর। এরইমধ্যে ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে ৮৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকার।

সরেজমিনে বেলিশ্বর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুই পাশের ভিত্তি নির্মাণ শেষ হয়েছে। পাইলিংয়ের কাজ চলছে। পরবর্তী কাজের জন্য ঠিকাদারের মালামাল এনে রাখা হয়েছে। 

এদিকে সেতুর কয়েক ফুট দূরত্বেই সাময়িক চলাচলে তৈরি করা হয়েছে বিকল্প সড়ক। এই সড়কে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় অন্তত ২৫-৩০টি গ্রামের বাসিন্দা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবীরা।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা বলছেন, প্রায় তিন বছরেও সেতু নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তারা। অটোরিকশা-ভ্যানে চলাচলের সময় এক পাশে নেমে অপর পাশে গিয়ে উঠতে হয়। একটু বৃষ্টি হলেই কাঁদার কারণে সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এছাড়া রোদের সময় পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। সেতু নির্মাণ শেষ হলে দুর্ভোগ থেকে রক্ষা মিলবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

বাথুলি এলাকায় একটি স্কুল থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে মহিশাষী এলাকায় বাড়ি ফিরছিলেন লিপি আক্তার। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘এই রাস্তাটা খুবই খারাপ। বাচ্চা নিয়ে স্কুলে যাই-আসি। খুব ঝুঁকিতে চলাচল করতে হয়। ডাইভারশন সড়ক যেটা করছে, বৃষ্টির সময় কাদা আর রোদের সময় ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। অনেক সময় অটোরিকশা-ভ্যান উল্টে যায়। রাস্তাটা দ্রুত ঠিক করা দরকার।’’

মো.

নুরুল ইসলাম নামে স্থানিয় এক মসজিদের ইমাম বলেন, ‘‘আমরা এলাকাবাসী ছাড়াও আশপাশের অনেক এলাকার লোকজন এই সড়ক ব্যবহার করে চলাচল করে। ব্রিজটা প্রায় দুই বছর হয়ে গেছে। কাজ শেষ না হওয়ায় আমরা অনেক দুর্ভোগের মধ্যে আছি। বৃষ্টি হলেও জ্বালা, রোদ উঠলেও পুরো এলাকা ধুলাবালিতে অন্ধকার হয়ে যায়। কিছু দেখা যায় না। সবকিছু মিলিয়ে আমরা খুবই দুর্ভোগে আছি। আমরা চাই অতি দ্রুত সেতুটি নির্মাণ করা হোক।’’

এদিকে বিকল্প সড়কে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সড়কে যানবাহন নিয়ে চলাচলরতরাও। ইশারত আলী নামে এক ভ্যানচালক বলেন, ‘‘তিন বছর যাবত সেতু নির্মাণ কাজটি চলছে। আমাদের চলাচলের সমস্যা। বৃষ্টি নামলে হাঁটা যায় না। রোদ উঠলে ধুলার কারণে চলাচল করা যায় না। বেশি মালামাল নিয়ে চলাচল করতে পারি না। নেমে ঠেলে যেতে হয়। দ্রুত সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানাই।’’

রাজীব নামে এক অটোরিকশা চালক বলেন, ‘‘আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। কিছু দিন কাজ চলে। আবার বন্ধ। বৃষ্টির সময় গাড়ি চালাতে পারি না। সরকারের কাছে আবেদন সেতুটি দ্রুত শেষ করে দিক।’’

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ধামরাই উপজেলা প্রকৌশলী মো. মিনারুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের বেলিশ্বর সেতুটি ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের। সেতুটি ইতোপূর্বে টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু ঠিকাদার কাজ শেষ না করায় কাজটি বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার করা হয়। বর্তমানে কাজটি মেসার্স প্রিন্স এন্টারপ্রাইজ করছে। চুক্তি রয়েছে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি শেষ হবে। কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি সময়মতো কাজটি শেষ হবে।’’

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ল শ বর ড স ম বর শ ষ কর শ ষ হয় এল ক য় বর স ত ন সড়ক র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল

ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।

বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।

প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে

জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সাড়ে চারটায় জামায়াত

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলন

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।

একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ