ঐকতান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও ডিজিটাল প্লাটফর্মের উদ্বোধন
Published: 11th, July 2025 GMT
জাকজমক আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ঐকতান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং এর ডিজিটাল প্লাটফর্মের (ফেসবুক ও ইউটিউব) উদ্বোধন। শুক্রবার বিকেলে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপক, সংবাদকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও শহরের শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্টজনরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
ঐক্যতান পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঐক্যতানের লক্ষ্য ও শ্রমের মাধ্যমে এই নতুন যাত্রায় শিশু তরুণদের মধ্যে শিল্পসত্তার বিকাশ ঘটিয়ে একটি প্রকৃত সৃজনশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলবে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়মিত প্রচারিত হবে শিক্ষার্থীদের সংবাদ, উপস্থাপনা, বিতর্কসহ নানা সাংস্কৃতিক চর্চা এবং সামাজিক সচেতনতা বিষয়ক টকশো।
ঐকতানের শিক্ষার্থীদের মনোজ্ঞ সংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং বিশেষ আকর্ষণ ছিল ‘সং ফর গুড’ ব্যান্ডের সংগীতানুষ্ঠান। এই পরিবেশনায় জনপ্রিয় শিল্পী প্রফুল্ল আংশুমান এবং আশীষ ভট্টাচার্য্য গান পরিবেশন করেন। দর্শকদের ব্যাপক উপস্থিতি ও উচ্ছ্বাস অনুষ্ঠানটিকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে এবং ঐকতান এর সহযোগিতায় বিভিন্ন বিষয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১ হাজার ২০০ অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ১০০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ঐকত ন উপস থ
এছাড়াও পড়ুন:
এই অপচয় রোধে প্রয়োজন টেকসই পদক্ষেপ
প্রতিবছরের মতো এবার যে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন ছিল না, এটা ভালো দৃষ্টান্ত। অতীতে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকতার নামে সরকারের মাহাত্ম্য প্রচার করা হতো।
তবে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খুবই হতাশাজনক। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষার্থী। পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৪৬ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪; যা গতবার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড যুক্ত করলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ৬ লাখের বেশি।
এই যে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলো, এর জন্য তাদের দায়ী করা যায় না। দায়ী হলেন শিক্ষার অভিভাবক বা রক্ষকেরা। বাংলাদেশে যখন যেই সরকার আসে, তাদের মতো করে একটি শিক্ষানীতি বা কমিশন করে। কিন্তু সেই শিক্ষানীতি বা কমিশন শিক্ষার মানোন্নয়নে আদৌ ভূমিকা রাখছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হয় না।
এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কম হওয়ার জন্য শিক্ষার অভিভাবকেরা যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন, তাকে ‘ঐচ্ছিক’ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। মূল কারণ তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না যে পাসের হার এত করব, বাড়াব, নাকি কমাব। আমাদের মিশন ছিল পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।’
সুন্দরভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষা বোর্ড তথা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। এতে কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই। মূল কথা হলো নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষার সমস্যাটি কীভাবে দেখেছেন এবং তার প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। করোনার কারণে দুই বছর ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পাঠদান হয়নি, এটা সত্য; কিন্তু তার আগে কিংবা পরেও পাঠদান সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর মান যাচাই করার কথা থাকলেও সেটা হয় না। এ কারণেই এসএসসিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকার্যকর হয়।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, শ্রেণিকক্ষের চেয়ে কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের বেশি উৎসাহিত করা হয়। আগে কোচিং সেন্টার ছিল শহরাঞ্চলে, এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রসারিত হয়েছে। কোচিং মানে শিক্ষা নয়, পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে, কী উত্তর হবে; সেটা শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেওয়া। বহু বছরের কু–অভ্যাসে আমরা শিক্ষাকে এই স্তরে নিয়ে এসেছি।
প্রতিটি দেশের একটি শিক্ষা–দর্শন থাকে, যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ও ভবিষ্যতে তাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষার নীতিনির্ধারকেরা এর ওপর কখনো জোর দেননি। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অনেকের পড়াশোনা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে মেয়েশিক্ষার্থীদের। এটা কেবল পরিবার বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি নয়, মানবসম্পদেরও অপচয়।
শিক্ষা খাতের প্রতি পূর্বাপর সব সরকারই উদাসীনতা দেখিয়ে আসছে। এমনকি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারও শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বস্তরে মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, সময়মতো পাঠ্যবইসহ শিক্ষার সব উপকরণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর মেধাবীরা তখনই এই পেশায় আসবেন, যখন সম্মানজনক বেতন–ভাতা পাবেন।
এসএসসি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়া ঠেকাতে সরকারকে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ঠকমতো পাঠদান ও মান যাচাই হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই।