Prothomalo:
2025-11-03@09:48:07 GMT

বৃষ্টি ও বর্ষার সুন্নত আমল

Published: 11th, July 2025 GMT

বৃষ্টি আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের একটি নিদর্শন, যার মাধ্যমে তিনি পৃথিবীতে কল্যাণ, রিজিক ও জীবনের গতি বিধান করেন। বৃষ্টি এলে হৃদয় প্রফুল্ল হয়, তৃষ্ণার্ত ধরিত্রী শান্তি পায়। এটি একদিকে যেমন রহমতের বাহক, অন্যদিকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের জন্য পরীক্ষাও হতে পারে। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টি নামলে আল্লাহর দরবারে উপকারী ও কল্যাণকর বৃষ্টির জন্য দোয়া করতেন।

ঝড় ও ঝঞ্ঝা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘মহাগভীর সমুদ্রতলের অন্ধকারের মতো, যাকে আচ্ছন্ন করে তরঙ্গের ওপর তরঙ্গ, যার ঊর্ধ্বে মেঘপুঞ্জ, গাঢ় অন্ধকার স্তরের পর স্তর। কেউ যদি নিজের হাত বের করে, তবু সে তা দেখতে পাবে না। আল্লাহ যাকে আলো দান করেন না, তার জন্য কোনো আলো নেই।’ (সুরা আন-নূর, আয়াত: ৪০)।

মেঘ ও বৃষ্টি সম্পর্কে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তা দিয়ে মৃতপ্রায় ভূমিকে তিনি জীবিত করেন, তাতে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তার ঘটান। এতে বায়ুর দিক পরিবর্তন এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৬৪)। তিনি আরও বলেন, ‘আর তিনি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন, তা দ্বারা তোমাদের জীবিকাস্বরূপ ফলমূল উৎপাদন করেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২)। বৃষ্টি দেখলে রাসুলুল্লাহ (সা.

) বলতেন, ‘রহমাতান’ অর্থাৎ ‘এটা আল্লাহর রহমত’ (মুসলিম: ১৯৬৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়।’ (তাবরানি: ৫৭৫৬)। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন বৃষ্টি হতো, তখন রাসুল (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ছাইয়্যাবান নাফিয়াআহ’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি এই বৃষ্টিকে প্রবহমান ও উপকারী করে দিন।’ (নাসায়ি: ১৫২৩; ইবনে মাজাহ: ৩৮৮৯)

রহমতের বৃষ্টির জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের ওপর বারি বর্ষণ করুন এবং যে বৃষ্টি আপনি পাঠাবেন, তা যেন আমাদের জন্য দীর্ঘকালীন রিজিক ও জীবিকার উৎস হয়।’

আকাশে মেঘ উঠলে নবী করিম (সা.) যাবতীয় নফল ইবাদত বন্ধ করে দিতেন, এমনকি নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন। তখন তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।’ বৃষ্টি হলে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য বরকতময় ও সুমিষ্ট পানি দান করুন।’ (আবু দাউদ: ৫১৯৯)

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে দোয়া পড়তেন, ‘হে আল্লাহ! এই মেঘমালার অনিষ্ট থেকে আমরা পানাহ চাই।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮৮৯)। বিদ্যুৎ–চমক, মেঘের গর্জন ও বজ্রপাতের সময় তিনি দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনার গজব দ্বারা আমাদের ধ্বংস করবেন না, আপনার আজাব দ্বারা আমাদের হত্যা করবেন না; তার আগেই আমাদের ক্ষমা করে দিন।’ (তিরমিজি: ৩৪৫০)

রহমতের বৃষ্টির জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের ওপর বারি বর্ষণ করুন এবং যে বৃষ্টি আপনি পাঠাবেন, তা যেন আমাদের জন্য দীর্ঘকালীন রিজিক ও জীবিকার উৎস হয়।’ (আবু দাউদ: ১১৭৩)

‘হে আল্লাহ! আপনার বান্দাগণ ও প্রাণিকুলকে পানি দিন, আপনার রহমত বিস্তৃত করুন এবং মৃত ধরিত্রীকে জীবিত করুন।’ (মুআত্তা মালিক: ৪৪৯)

বৃষ্টির পানি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত। বৃষ্টিতে ভেজা সুন্নত। হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমরা একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। তখন তিনি তাঁর জামার অংশ সরিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা তাঁর শরীরে লাগতে দেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, “কারণ, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, খুব অল্প সময় আগেই।’” (মুসলিম: ১৯৬৮)

যখন অতিবৃষ্টি হতো, তখন রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদের ওপর নয়।’ (নাসায়ি: ১৫২৭)। ‘হে আল্লাহ! পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা ও বন-জঙ্গলে বৃষ্টি বর্ষণ করুন।’ (বুখারি: ১০১৩)।

বৃষ্টি থেমে গেলে রাসুল (সা.) দোয়া করতেন: ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহি’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণায় আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (বুখারি: ১০৩৮)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রহমত র অর থ ৎ র জন য ন কর ন আল ল হ করত ন আপন র বলত ন

এছাড়াও পড়ুন:

দোষ বিয়ারিং প্যাডের নয়, যারা লাগিয়েছে কিংবা বুঝে নিয়েছে, তাদের: ডিএমটিসিএল এমডি

মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেলের। এর মধ্যে বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে একজন পথচারী মারা গেছেন। এবার নতুন করে নিরাপত্তার নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

বিয়ারিং প্যাড পড়ে পথচারীর মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করব। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে। ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাব।’

এক বছর আগে ঢাকার মেট্রোরেলের স্তম্ভের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার পর গত ২৬ অক্টোবর ফার্মগেটে আরেকটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।

বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটা কারণেও হতে পারে।’

ফারুক আহমেদ আরও বলেন, ‘দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না? যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কি না, সেগুলো এখন দেখতে হবে।’

আরও পড়ুনবৃষ্টির পানি ঢোকে, এসি বিকল হয়, মেট্রোরেল ব্যবস্থায় ৪৫ সমস্যা০২ নভেম্বর ২০২৫

এসব কাজ বুঝে নেওয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারব না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনো আমরা বুঝে নিইনি।’

ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেওয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনো অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এ জন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সব কটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরেজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।

আরও পড়ুনমেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড কী, খুলে পড়ার কারণ কী হতে পারে২৬ অক্টোবর ২০২৫

চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল দাবি করে ফারুক আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ছয় থেকে নয় মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল। তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোরেল সম্পূর্ণ হবে—এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার পর ছয় থেকে সাত বছর লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে চলে যায় তিন বছর।

২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নেওয়া হয়েছিল, তা কিসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের এমডি।

নতুন মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প তাহলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের লাগবে। আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’

আরও পড়ুনবিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে ফার্মগেটে একজন নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ২৬ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ