Prothomalo:
2025-07-12@02:35:21 GMT

বৃষ্টি ও বর্ষার সুন্নত আমল

Published: 11th, July 2025 GMT

বৃষ্টি আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের একটি নিদর্শন, যার মাধ্যমে তিনি পৃথিবীতে কল্যাণ, রিজিক ও জীবনের গতি বিধান করেন। বৃষ্টি এলে হৃদয় প্রফুল্ল হয়, তৃষ্ণার্ত ধরিত্রী শান্তি পায়। এটি একদিকে যেমন রহমতের বাহক, অন্যদিকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের জন্য পরীক্ষাও হতে পারে। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টি নামলে আল্লাহর দরবারে উপকারী ও কল্যাণকর বৃষ্টির জন্য দোয়া করতেন।

ঝড় ও ঝঞ্ঝা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘মহাগভীর সমুদ্রতলের অন্ধকারের মতো, যাকে আচ্ছন্ন করে তরঙ্গের ওপর তরঙ্গ, যার ঊর্ধ্বে মেঘপুঞ্জ, গাঢ় অন্ধকার স্তরের পর স্তর। কেউ যদি নিজের হাত বের করে, তবু সে তা দেখতে পাবে না। আল্লাহ যাকে আলো দান করেন না, তার জন্য কোনো আলো নেই।’ (সুরা আন-নূর, আয়াত: ৪০)।

মেঘ ও বৃষ্টি সম্পর্কে কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তা দিয়ে মৃতপ্রায় ভূমিকে তিনি জীবিত করেন, তাতে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তার ঘটান। এতে বায়ুর দিক পরিবর্তন এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী নিয়ন্ত্রিত মেঘমালায় জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৬৪)। তিনি আরও বলেন, ‘আর তিনি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন, তা দ্বারা তোমাদের জীবিকাস্বরূপ ফলমূল উৎপাদন করেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২)। বৃষ্টি দেখলে রাসুলুল্লাহ (সা.

) বলতেন, ‘রহমাতান’ অর্থাৎ ‘এটা আল্লাহর রহমত’ (মুসলিম: ১৯৬৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়।’ (তাবরানি: ৫৭৫৬)। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন বৃষ্টি হতো, তখন রাসুল (সা.) বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ছাইয়্যাবান নাফিয়াআহ’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি এই বৃষ্টিকে প্রবহমান ও উপকারী করে দিন।’ (নাসায়ি: ১৫২৩; ইবনে মাজাহ: ৩৮৮৯)

রহমতের বৃষ্টির জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের ওপর বারি বর্ষণ করুন এবং যে বৃষ্টি আপনি পাঠাবেন, তা যেন আমাদের জন্য দীর্ঘকালীন রিজিক ও জীবিকার উৎস হয়।’

আকাশে মেঘ উঠলে নবী করিম (সা.) যাবতীয় নফল ইবাদত বন্ধ করে দিতেন, এমনকি নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন। তখন তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।’ বৃষ্টি হলে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য বরকতময় ও সুমিষ্ট পানি দান করুন।’ (আবু দাউদ: ৫১৯৯)

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে দোয়া পড়তেন, ‘হে আল্লাহ! এই মেঘমালার অনিষ্ট থেকে আমরা পানাহ চাই।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮৮৯)। বিদ্যুৎ–চমক, মেঘের গর্জন ও বজ্রপাতের সময় তিনি দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনার গজব দ্বারা আমাদের ধ্বংস করবেন না, আপনার আজাব দ্বারা আমাদের হত্যা করবেন না; তার আগেই আমাদের ক্ষমা করে দিন।’ (তিরমিজি: ৩৪৫০)

রহমতের বৃষ্টির জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের ওপর বারি বর্ষণ করুন এবং যে বৃষ্টি আপনি পাঠাবেন, তা যেন আমাদের জন্য দীর্ঘকালীন রিজিক ও জীবিকার উৎস হয়।’ (আবু দাউদ: ১১৭৩)

‘হে আল্লাহ! আপনার বান্দাগণ ও প্রাণিকুলকে পানি দিন, আপনার রহমত বিস্তৃত করুন এবং মৃত ধরিত্রীকে জীবিত করুন।’ (মুআত্তা মালিক: ৪৪৯)

বৃষ্টির পানি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত। বৃষ্টিতে ভেজা সুন্নত। হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমরা একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। তখন তিনি তাঁর জামার অংশ সরিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা তাঁর শরীরে লাগতে দেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, “কারণ, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, খুব অল্প সময় আগেই।’” (মুসলিম: ১৯৬৮)

যখন অতিবৃষ্টি হতো, তখন রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া লা আলাইনা’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করুন, আমাদের ওপর নয়।’ (নাসায়ি: ১৫২৭)। ‘হে আল্লাহ! পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা ও বন-জঙ্গলে বৃষ্টি বর্ষণ করুন।’ (বুখারি: ১০১৩)।

বৃষ্টি থেমে গেলে রাসুল (সা.) দোয়া করতেন: ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রহমাতিহি’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণায় আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে।’ (বুখারি: ১০৩৮)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রহমত র অর থ ৎ র জন য ন কর ন আল ল হ করত ন আপন র বলত ন

এছাড়াও পড়ুন:

আল-গাফফার: এই নামে আল্লাহ ক্ষমার অপার সমুদ্র

যখন পাপের অন্ধকার হৃদয়কে গ্রাস করে, যখন ভুলের বোঝা কাঁধে চেপে বসে, তখন একটি নাম আশার আলো জ্বালায়, ‘আল-গাফফার’। তিনি আল্লাহ, যিনি তাঁর অসীম ক্ষমায় বান্দার পাপ ঢেকে দেন, তাঁর রহমতের চাদরে তাকে আগলে রাখেন।

তাঁর ক্ষমার দরজা সব সময় খোলা, তাঁর রহমতের সমুদ্র কখনো শুকায় না। ‘আল-গাফফার’ নামটি শুধু তাঁর ক্ষমার প্রকাশ নয়, বরং আমাদের নবজীবনের পথ দেখায় এবং তাঁর দিকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানায়।

ক্ষমার অপরূপ রূপ

‘আল-গাফফার’ আল্লাহর সেই নাম, যা তাঁর অসীম ক্ষমা ও রহমতের কথা বলে। তিনি সেই সত্তা, যিনি বান্দার পাপ ঢেকে দেন, তাঁর দোষত্রুটি প্রকাশ করেন না। কোরআন মজিদে এই নাম পাঁচবার উল্লেখিত হয়েছে, প্রতিবারই তাঁর অপার ক্ষমার সাক্ষ্য বহন করে। সুরা নুহে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল।’ (আয়াত: ১০)

আল্লাহ তাঁর বান্দার পাপ ঢেকে দেন, যেন অন্য কেউ তা জানতে না পারে। তিনি দুনিয়ায় পাপের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন এবং আখিরাতে তাঁর ক্ষমায় বান্দাকে মুক্তি দেন।ইমাম হিজাজি (রহ.), আন-নুর আল-আসনা, পৃ. ৫৭

ইমাম হিজাজি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দার পাপ ঢেকে দেন, যেন অন্য কেউ তা জানতে না পারে। তিনি দুনিয়ায় পাপের শাস্তি থেকে রক্ষা করেন এবং আখিরাতে তাঁর ক্ষমায় বান্দাকে মুক্তি দেন।’ (আন-নুর আল-আসনা, পৃ. ৫৭)

তিনি শুধু পাপ ঢেকে দেন না, বরং তাঁর ক্ষমার মাধ্যমে বান্দার জীবনকে পবিত্র করেন।

আরও পড়ুনআল-আজিজ, যিনি ইজ্জত দান করেন২০ জুন ২০২৫ক্ষমা ও ক্ষমতার অপূর্ব সমন্বয়

‘আল-গাফফার’ নামটি প্রায়ই ‘আল-আজিজ’ নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোরআনে এসেছে। এই সংযোগ একটি গভীর তাৎপর্য বহন করে। আল্লাহ ‘আল-আজিজ’—সর্বশক্তিমান, যিনি সবকিছুর ওপর প্রভুত্বের অধিকারী। তিনি চাইলে বান্দাকে তার পাপের জন্য তৎক্ষণাৎ শাস্তি দিতে পারেন।

কিন্তু তিনি ‘আল-গাফফার’, যিনি তাঁর অসীম ক্ষমায় বান্দার দোষ ক্ষমা করেন। ‘তাঁর ক্ষমা দুর্বলতা থেকে নয়, বরং তাঁর শক্তি ও মহিমার প্রকাশ।’ (সাল্লাবি, কিসসাতু বাদ’ইল খালক, পৃ. ১১৪০)

তিনি সেই সত্তা, যিনি ক্ষমতা ও ক্ষমার মধ্যে অপূর্ব ভারসাম্য স্থাপন করেছেন।

স্তরের পর স্তর ক্ষমা

আল্লাহর ক্ষমা শুধু পাপ ঢেকে দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি তাঁর বান্দার জন্য একাধিক স্তরে ক্ষমার ব্যবস্থা করেছেন।

প্রথমত, তিনি মানুষের শারীরিক ত্রুটিগুলো ঢেকে দিয়েছেন, যেন তার বাহ্যিক সৌন্দর্য প্রকাশ পায়।

তিনি সেই সত্তা, যিনি ক্ষমতা ও ক্ষমার মধ্যে অপূর্ব ভারসাম্য স্থাপন করেছেন।

দ্বিতীয়ত, তিনি মানুষের মনের নোংরা চিন্তা ও খারাপ ইচ্ছাগুলো হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে রেখেছেন, যেন অন্য কেউ তা জানতে না পারে।

তৃতীয়ত, তিনি বান্দার পাপ ক্ষমা করেন এবং তার তাওবার বিনিময়ে তার পাপকে পুণ্যতে রূপান্তরিত করেন। ‘তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যে বান্দা তাওবা করবে, তার পাপকে তিনি নেকিতে বদলে দেবেন।’ (আন-নুর আল-আসনা, পৃ. ৫৭)

 গাফফার ও গাফুরের মধ্যে পার্থক্য

‘আল-গাফফার’ ও ‘আল-গাফুর’ নাম দুটি তাঁর ক্ষমার বিভিন্ন দিক প্রকাশ করে। ‘আল-গাফফার’ তিনি, যিনি বান্দার বারবার পাপ ক্ষমা করেন, পাপের সংখ্যা যতই হোক না কেন।

আর ‘আল-গাফুর’ তিনি, যিনি পাপের গুরুত্ব যত বড়ই হোক, তা ক্ষমা করেন। ‘আল-গাফফার পাপের পরিমাণের জন্য, আর আল-গাফুর পাপের প্রকৃতির জন্য।’ (আসমাউল্লাহিল হুসনা, মুকাদ্দিম, পৃ. ৫২)

আরও পড়ুনআল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নাম ‘আল্লাহ’০২ জুন ২০২৫এই ক্ষমার সুসংবাদ মুমিনদের হৃদয়ে আশা জাগায়। যারা আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখে, যারা হতাশার পোশাক খুলে ফেলে, তারাই তাঁর ক্ষমার অধিকারী।শায়খ আবদুর রহমান বিন সা’দি (রহ.), ফাতহুল বায়ানতাওবার পথে ক্ষমার প্রতিশ্রুতি

আল্লাহর ক্ষমা তাঁর বান্দার তাওবার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ‘যতবার বান্দা তাওবা করবে, ততবার আমি তাকে ক্ষমা করব।’

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান, তুমি যতক্ষণ আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে আশা করবে, আমি তোমার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করব, আমি এতে কোনো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান, যদি তোমার গুনাহ আকাশের শিখরে পৌঁছে যায়, তবু তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাইলে আমি তোমাকে ক্ষমা করব।

হে আদম সন্তান, তুমি যদি পৃথিবীভর্তি গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো, কিন্তু আমার সঙ্গে কাউকে শরিক না করে আমার সামনে হাজির হও, আমি তোমাকে পৃথিবীভর্তি ক্ষমা নিয়ে মিলিত হব।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫৪০)

এই হাদিস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে তাঁর ক্ষমার দরজা কখনো বন্ধ হয় না।

 ক্ষমার পথে আশার আলো

শায়খ আবদুর রহমান বিন সা’দি (রহ.) বলেন, ‘এই ক্ষমার সুসংবাদ মুমিনদের হৃদয়ে আশা জাগায়। যারা আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখে, যারা হতাশার পোশাক খুলে ফেলে, তারাই তাঁর ক্ষমার অধিকারী।’ (ফাতহুল বায়ান, ১২/১২৮)

তিনি আরও বলেন, যারা মনে করে হতাশা ও নিরাশা বান্দার জন্য উপযুক্ত, তারা মহা ভুলের মধ্যে পড়ে। কারণ, আল্লাহ তাঁর কিতাবে এবং রাসুল (সা.) তাঁর সুন্নাহতে বান্দাদের আশার বাণী শুনিয়েছেন।

‘আল-গাফফার’ নামটি আমাদের জীবনে একটি আলোকবর্তিকা। যখন আমরা পাপের অন্ধকারে হারিয়ে যাই, তখন এই নাম আমাদের তাওবার পথ দেখায়। তাঁর ক্ষমা আমাদের হৃদয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনে, আমাদের জীবনকে নতুন সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যায়। তিনি সেই সত্তা, যিনি আমাদের দোষ ঢেকে দেন, আমাদেরকে তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দেন। তাঁর ক্ষমার সমুদ্রে ডুব দিয়ে আমরা পবিত্র হই, তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পণের মাধ্যমে শান্তি খুঁজে পাই।

সূত্র: আল–জাজিরা ডট নেট, অনুবাদ: মনযূরুল হক

আরও পড়ুনইসমে আজমের শক্তি ও রহস্য৩০ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আল-গাফফার: এই নামে আল্লাহ ক্ষমার অপার সমুদ্র