এক রাত অপেক্ষার পর সেঞ্চুরিতে রুটের যত কীর্তি
Published: 11th, July 2025 GMT
এক রানের জন্য পুরো একটি রাত অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। গতকাল লর্ডস টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন জো রুট। তিন অঙ্কে পৌঁছাতে দরকার ছিল ১ রান। আজ সেই রান এসেছে দিনের প্রথম বলেই, যশপ্রীত বুমরার বলে চার মেরে। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করে রুট গড়েছেন টেস্ট সেঞ্চুরির নতুন কীর্তি।
টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম সর্বোচ্চ রানের মালিক এখন পঞ্চম সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিরও মালিক। লর্ডসে ভারতের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরিটি রুটের ক্যারিয়ারের ৩৭তম। যেটিতে তিনি পেছনে ফেলেছেন ভারতের রাহুল দ্রাবিড় ও অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথকে, দুজনের সেঞ্চুরিই ৩৬টি করে। ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরিতে রুটের সামনে আছেন কুমার সাঙ্গাকারা (৩৮), রিকি পন্টিং (৪১), জ্যাক ক্যালিস (৪৫) ও শচীন টেন্ডুলকার (৫১)।
তবে রুটের সেঞ্চুরির মাহাত্ম্যের শেষ এখানেই নয়। ক্যারিয়ারের ১৫৬তম টেস্ট খেলা রুট লর্ডসে সেঞ্চুরি করলেন টানা তৃতীয় ইনিংসে। গত বছরের আগস্টে এ মাঠেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই ইনিংসে করেছিলেন ১৪৩ ও ১০৩।
ক্রিকেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী মাঠটিতে টানা তিন ইনিংসে সেঞ্চুরির কীর্তিতে রুট তৃতীয়। প্রথমবার এমন কিছু করেছিলেন কিংবদন্তি ইংলিশ ব্যাটসম্যান জ্যাক হবস, সেটা ছিল ১৯১২ থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে। পরেরবার এ কীর্তি গড়েন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন, ২০০৪ ও ২০০৫ সালে।
রুটের আজকের সেঞ্চুরিটি ভারতের বিপক্ষে ১১তম। ভারতের বিপক্ষে এটি যৌথভাবে সর্বোচ্চ। অস্ট্রেলিয়ার স্মিথের ১১ সেঞ্চুরি আছে ৪৬ ইনিংসে, রুটের লেগেছে কিছুটা বেশি—৬০ ইনিংস।
রুটের ৩৭তম সেঞ্চুরিটি এসেছে বেশ কষ্টেসৃষ্টেই, খেলেছেন মোট ১৯২ বল—যা ২০২২ সালে বাজবল ক্রিকেট চালু হওয়ার পর ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তৃতীয় ধীরতম (শীর্ষ দুইয়ে ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বেন ফোকসের ২০৬ এবং ২০২৪ সালে ভারতের বিপক্ষে রুটের ২১৯ বলের সেঞ্চুরি)।
মাইলফলক গড়া ইনিংসটি অবশ্য বেশি লম্বা হয়নি। ১০৪ রান করে বোল্ড হয়েছেন বুমরার বলে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চইলত নঅ’ স্লোগানটি কেন আবার প্রাসঙ্গিক
ফেনী কলেজের ফটক দিয়ে ঢুকতেই লম্বা মাঠ। মাঠের একদিকে অনার্স ভবনের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। সম্প্রতি কলেজটির শিক্ষার্থীদের ফি বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-অসন্তোষের বিষয়টি জানতেই কলেজে আসা। আড্ডারত শিক্ষার্থীদের কাছে ফি বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করলে একজন বললেন, ‘আমাদের কলেজের একটি স্লোগান নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে। কিন্তু এখন এটাই আমাদের বাস্তবতা। দীর্ঘ দিনের লুটপাটের কারণে কলেজের ফান্ডের(তহবিল) অবস্থা খারাপ। তাই বাড়তি ফি চাপানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর।’
‘হেনী কলেজের টেঁয়া লই চুদুরবুদুর চইলতো নঅ’— জনপ্রিয় এই স্লোগানটি কথা শেষে যোগ করে কিছুক্ষণ হাসলেন মুহাইমিন তাজিম নামের ওই তরুণ। কলেজের গণিত বিভাগের এই শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কও। তাঁর কথার সঙ্গে একমত হলেন সেখানে বসে থাকা কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কথা, ফেনী কলেজের নানা অনিয়ম দুর্নীতি সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্লোগানটি আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর ফেনী কলেজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ হয়। তাঁরা জানালেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা খাতে দুর্নীতির কারণে বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি ফি এর বোঝা চেপেছে। লুটপাটের কারণে কলেজের তহবিল সংকট পূরণ করতে বর্তমান অধ্যক্ষ শিক্ষার্থী প্রতি নতুন করে ১০০ টাকা ফি বাড়িয়েছেন।
কলেজটিতে চলতি বছর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার্থীর শাখায় ছাত্রদের ২ হাজার ৬৮০ টাকা, ছাত্রীদের ২ হাজার ৫৬০ টাকা এবং বিজ্ঞান শাখার ছাত্রদের ২ হাজার ৭৮০ ও ছাত্রীদের ২ হাজার ৬৬০ টাকা হারে ফি দিয়ে ভর্তি হতে হয়েছে। বিগত বছরের এই ফি ১০০ টাকা বেশি।
ফি বৃদ্ধির যে কারণ দেখাল কর্তৃপক্ষ
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ফি বৃদ্ধি করা হয়। সভায় ‘অত্যাবশ্যকীয় নিরাপত্তা ফান্ড’ ৬৫০ টাকা স্থলে ৭৫০ টাকা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, কলেজের কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেতন ও বোনাস মিলিয়ে কর্মচারীদের পেছনে বছরে ব্যয় হয় ৭১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এই খাতে নতুন আরও আটজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ায় বছর শেষে খরচ দাঁড়াচ্ছে ৭৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন-বোনাস ছাড়াও এই খাত থেকে টাকা ব্যয় করা হয় ভূমিসংক্রান্ত মামলার উকিলের ফি, কলেজ আঙিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায়। গড়ে বছরে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা। কিন্তু এই খাতে শিক্ষার্থীদের থেকে বছরে আদায় হচ্ছে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
ফেনী কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবু হেনা আবদুল আউয়ালের সঙ্গে কলেজের নানা অনিয়ম নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ফেনী কলেজ নিয়ে জনপ্রিয় হওয়া স্লোগানের একটা ইতিহাস আছে। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় স্থানান্তরিত হয়। সেখানকার স্থানীয় কিছু ব্যক্তির সঙ্গে কলেজের অর্থ নিয়ে বিবাদ তৈরি হলে ছাত্ররা এমন স্লোগান দেয়। আর্থিক অনিয়মের প্রতিবাদ থেকেই এই স্লোগানের জন্ম। এই পরিস্থিতিতে স্লোগানটি ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।উৎসব-অনুষ্ঠানের অতিরিক্ত ব্যয়
কলেজের বিবিধ খাতের টাকা থেকে উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিধান থাকলেও নিরাপত্তা খাত থেকে টাকা নিয়ে উৎসবে খরচ করা হয়েছে। কলেজের নথিপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ব্যয় করা হয় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৮ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২০ হাজার ৩০৪ টাকা। তবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ব্যয় কমেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই খাতে ব্যয় হয় ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা।
২০২৪ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ব্যয় হয় ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা। তার আগের দুই বছর ২০২৩ সালে হয় ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০৬ টাকা। ২০২২ সালে হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৮১১ টাকা।
বিগত কয়েক বছরে সরকারি দিবস কিংবা উৎসবে অস্বাভাবিক এমন খরচের পেছনে দুর্নীতিই মূল কারণ বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন। কলেজের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস কিংবা শহীদ দিবস দিবসগুলো সরকারি ছুটি হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তেমন থাকত না। রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মচারীসহ সব মিলিয়ে গড়ে উপস্থিতি থাকত দুই শতাধিক। এত অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য খরচ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তাঁরা।
শতবর্ষ পুরোনো এই কলেজে বিভিন্ন বিভাগে ১৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। ফি বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে