পুরান ঢাকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
Published: 11th, July 2025 GMT
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) সামনে এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। আজ শুক্রবার রাতে তাঁরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে এ বিক্ষোভ করেন।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) জনসমক্ষে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে বুক ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা–কর্মী শনাক্ত হয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়আজ রাত ১০টার দিকে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে আবার বটতলায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, আধিপত্যবাদবিরোধী মঞ্চ, বিল্পবী সাংস্কৃতিক মঞ্চের নেতা-কর্মীসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
মিছিলপরবর্তী সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব আহসান লাবিব।
সমাবেশে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাদিয়া রহমান বলেন, ‘গত ৯ মাসে বিএনপির অন্তঃকোন্দলের কারণে প্রায় দেড় শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি এই বাংলাদেশে আর হতে দেব না। আপনারা যদি না শোধরান, তাহলে হয়তো আগামীতে আপনাদের ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন পূরণ হবে, কিন্তু কত দিন ক্ষমতায় টিকে থাকবেন, সেটা ছাত্র-জনতা আবার ঠিক করে দেবে।’
সমাবেশে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্রেটারি শাফায়েত মীর বলেন, ‘আবার যারা আওয়ামী লীগের পুরোনো বন্দোবস্ত চালু করতে চায়, আবার চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন করতে চাচ্ছে, সেই দলকে আমরা বলব, চাঁদাবাজি না করে ভিক্ষা করুন, আমরা ভিক্ষা দেব। কিন্তু আমরা আপনাদের জুলুম, নির্যাতন, খুন মেনে নেব না। প্রয়োজনে আবার রাজপথে নামব।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘বিএনপি যদি এই খুন, রাহাজানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে হয়তো সেদিন বেশি দূরে নেই, যে পথে আমরা লীগকে পাঠিয়েছি, সেই পথে ফ্যাসিবাদী আমলে আমাদের সহযোদ্ধা বিএনপিকেও হয়তো হাঁটতে হবে।’
পুরান ঢাকায় নৃশংশ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। শুক্রবার রাত আটটায় ক্যাম্পাসে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব শ বব দ য
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন বাদুড় পেল বাংলাদেশ
দক্ষিণ এশিয়ায় বাদুড় আছে ১৫০ প্রজাতির, সেখানে বাংলাদেশে পাওয়া যায় মাত্র ৩৫টি। দেশের আয়তন কিংবা আবাসের বৈচিত্র্য এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও বাদুড় নিয়ে আমাদের গবেষণার ঘাটতি একটি বড় কারণ। গবেষণার উদ্যোগ যেমন কম, তেমনি আকার-আকৃতি, গুপ্তস্থানে বসবাস, চেনাজানার জটিলতায় দেশের বাদুড় সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি।
স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীর নানা দিক মূলত আমার গবেষণার জগৎ। ফলে বিষয়টি আমাকে বেশ পীড়া দেয়। তাই অন্যান্য গবেষণার পাশাপাশি গত দুই বছর যাবৎ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক অনুদানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছোট পরিসরে কিছু গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করি।
এই গবেষণাকালে গত বছরের এপ্রিলে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা রেমাক্রিতে যাই গুহায় বাস করা বাদুড়ের খোঁজে। সাঙ্গু নদের পাড়ঘেঁষা একটি মারমা পাড়ায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়। সেখান থেকে আমাদের গন্তব্য আরও প্রায় দুই কিলোমিটার। সাঙ্গু নদের পশ্চিমে পাহাড়ি পথ। সঙ্গে একজন গবেষক ছাত্র ও থানচি থেকে যোগ দেওয়া একজন গাইড। ওই পাহাড়ি পথও আমাদের অজানা। তাই গন্তব্যে যেতে একজন স্থানীয় গাইডের সন্ধানে থানচি থেকে যোগ দেওয়া গাইড আমাদের নিয়ে গেল পাশের একটি পাড়ায়। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই পাড়ায় বাস করে খুমি সম্প্রদায়।
পরদিন খুব সকালেই রওনা হলাম গুহার উদ্দেশে। আমাদের তিনজনের দলে খুমি পাড়া থেকে যুক্ত হন আরও চারজন। গুহাটি অনেকটা আগ্নেয়গিরির মতো আকৃতি। ফলে ওপর দিক থেকে গুহায় ঢুকতে হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পাহাড় বেয়ে আমরা গুহার মাঝামাঝি উচ্চতা বরাবর খাঁজে দাঁড়াতে সক্ষম হই। কিন্তু গুহার ভেতরে নামার তেমন কোনো পথ নেই। গাছের সঙ্গে রশি বেঁধে গুহার ভেতর নামার জন্য কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। আমার গবেষক ছাত্র অং শৈ নু মারমা কোনোমতেই আমাকে নামতে দিতে রাজি নয়, নামার পর যদি গুহা থেকে উঠতে না পারি! আমার মধ্যেও সাহসের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিল। ফলে দিকনির্দেশনা দিয়ে খুমি পাড়ার গাইডদের ভেতরে পাঠালাম। ওরা গাছের শিকড় ধরে তর তর করে নেমে গেল নিচে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফিরে এল কয়েকটি বাদুড়ের নমুনা নিয়ে। দু–একটি বাদুড় দেখে উল্লসিত হয়ে উঠলাম। এমন বাদুড় এর আগে তো দেখিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে বাদুড়ের নমুনার দৈহিক ও খুলির মাপজোখ নিলাম। কিন্তু প্রজাতি শনাক্তে তাতেও কোনো সিদ্ধান্তে না আসতে পেরে দাঁতের গঠন পরীক্ষা করি। আর তখনই বেরিয়ে এল বাদুড়ের পরিচয়। প্রায় তিন মাস পর নিশ্চিত হলাম এটি বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি বাদুড়। এই বাদুড়ের ইংরেজি নাম মায়োটিস ব্যাট, অন্য নাম মাউস-ইয়ারড ব্যাট; লাতিন নাম মায়োটিস অ্যানেকটান্স। বাংলায় বলা যায় ইঁদুরকানী বাদুড়। এর কানের গঠন অনেকটা ইঁদুরের কানের মতো, তাই এমন নাম। তা ছাড়া এ বাদুড়ের মুখের চারপাশে কিছু লম্বা লোম থাকে। আকারে ছোট। ঊর্ধ্ববাহুর দৈর্ঘ্য মাত্র ৪৫ মিলিমিটার, লেজ তুলনামূলকভাবে লম্বা, যা প্রায় ৪০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। কানের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ মিলিমিটার, দেহের তুলনায় কিছুটা লম্বা। এদের ওপরের চোয়ালের তিন নম্বর প্রিমোলার দাঁতটি অতিক্ষুদ্র, যা দাঁতের সারি থেকে ভেতরের দিকে সরে গেছে। এই বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে অন্যান্য নিকটাত্মীয় থেকে এদের আলাদা করা যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১২ প্রজাতির ইঁদুরকানী বাদুড়ের দেখা মেলে। কিন্তু এই জাতের বাদুড়ের কোনো রেকর্ড বাংলাদেশে নেই। এই বাদুড় শুধু দেশের জন্য নতুন নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই বেশ বিরল। ফলে প্রতিটি রেকর্ডই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত ম্যামালিয়া নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে এই বাদুড় নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করি। এই বাদুড় নথিভুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে বাদুড়ের সংখ্যা আরও একটি বাড়ল। এই বাদুড়ের বৈশ্বিক মানচিত্রে প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম।
ড. এম এ আজিজ: অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়