চালু হচ্ছে গোলাপি রঙের বাস, ওঠা যাবে না টিকিট ছাড়া
Published: 4th, February 2025 GMT
আবদুল্লাহপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করা ২১টি কোম্পানির বাস একক কোম্পানির অধীনে পরিচালনা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম। তিনি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার একক কোম্পানির অধীনে টিকিট কাউন্টারভিত্তিক বাস পরিচালনা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। বাসগুলোর রঙ হবে গোলাপি।
রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে সংগঠনটির কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, আবদুল্লাহপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে প্রায় ২ হাজার ৬১০টি বাস চলাচল করবে। এসব বাসে টিকিট ছাড়া কেউ উঠতে পারবেন না। যত্রতত্র বাসে ওঠানামাও করা যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল আলম বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ১৬ বছর ধরে ঢাকা শহরে বাস-মিনিবাস চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করছে। এতে গণপরিবহন চলাচলে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করার কারণে সড়কে যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং দুর্ঘটনা ঘটছে। গত ১৯ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ, ঢাকা মহানগরে যানজট নিরসন এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ–সংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাসের মালিকেরা চালকদের সঙ্গে যাত্রাভিত্তিক (ট্রিপ) চুক্তি না করে পাক্ষিক বা মাসিক ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদন করতে বলা হয়েছে। তাই আগামী বৃহস্পতিবার প্রাথমিকভাবে গাজীপুর থেকে ঢাকার বিভিন্ন গন্তব্যে টিকিট কাউন্টার ভিত্তিতে চালকেরা বাস চালাবেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় আবদুল্লাহপুর থেকে এই সেবার উদ্বোধন করা হবে।
মালিক সমিতির এই নেতা আরও বলেন, চলতি মাসের মধ্যেই মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুরে চলাচল করা বাসগুলোকে একইভাবে কাউন্টারের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। এখন থেকে বাস কাউন্টার পদ্ধতিতে চালাতে হবে এবং যাত্রীদের নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করে বাসে যাতায়াত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এম এ বাতেন, কোষাধ্যক্ষ এ এস এম আহম্মেদ খোকন, দপ্তর সম্পাদক কাজী মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জোরপূর্বক উচ্ছেদ বন্ধ করুন—বাসিন্দাদের দাবি
মিরপুর ১৪ নম্বরের হাউজিং স্টাফ কোয়ার্টারের ৫৭৬টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের ভবন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিবারগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা দাবি করেছেন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বাসা ছাড়ার নোটিশ অবৈধ। সরকার উচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে এলাকার বাসিন্দারা পরবর্তী সময়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেবেন।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর–রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। মিরপুর ১৪ স্টাফ কোয়ার্টার কর্মচারী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান স্টাফ কোয়ার্টার কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি আবু জাফর। তিনি ওই এলাকার ২০ নম্বর ভবনের ৩২ নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা।
আবু জাফর বলেন, সর্বশেষ ২০১০ সালের ২৬ আগস্ট জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ৮১তম বোর্ড সভায় ফ্ল্যাটগুলোর পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল আদায়ের পর তা বরাদ্দধারীদের কাছে বিক্রি বা স্থায়ী বন্দোবস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ১০৬তম বোর্ড সভায় জমিসহ প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫৮৩ টাকা। গত ৫০ বছরে বিভিন্ন সময়ে এই ফ্ল্যাটগুলো তাঁদের পূর্বপুরুষদের কাছে জমিসহ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোনো লিখিত নোটিশ না দিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ৫৭৬টি ফ্ল্যাটকে পরিত্যক্ত বা বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। এর দুদিনের মাথায় গতকাল বুধবার জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের লোকজন এলাকায় গিয়ে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চায়। পরে বাসিন্দাদের অনুরোধে সেটা আর করেননি। বিষয়টি অমানবিক।সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, কোনো লিখিত নোটিশ না দিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ৫৭৬টি ফ্ল্যাটকে পরিত্যক্ত বা বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। এর দুদিনের মাথায় গতকাল বুধবার জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের লোকজন এলাকায় গিয়ে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চায়। পরে বাসিন্দাদের অনুরোধে সেটা আর করেননি। বিষয়টি অমানবিক।
স্টাফ কোয়ার্টার কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তিতে ভবনগুলো বসবাসের অনুপযোগী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে নির্মিত ১৫টি ভবন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও একটি ভবন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে বিক্রি করা হয়। ওই ভবনগুলোতে এখনো মানুষ বসবাস করছে। একই সময়ে নির্মিত কিছু ভবন বসবাসের অযোগ্য হলে বাকিগুলোতে কীভাবে মানুষ বসবাস করছে বলে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পূর্ত মন্ত্রণালয় তাদের বোর্ড সভায় একাধিকবার এই কোয়ার্টারগুলো আমাদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমরা সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন চাই। যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেই অনুযায়ী দাম পরিশোধ করতে আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু যেভাবে বাসা ছাড়তে বলা হয়েছে এবং দুদিনের মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছে, এটা অমানবিক।’
পূর্ত মন্ত্রণালয় তাদের বোর্ড সভায় একাধিকবার এই কোয়ার্টারগুলো আমাদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমরা সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন চাই। যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেই অনুযায়ী দাম পরিশোধ করতে আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু যেভাবে বাসা ছাড়তে বলা হয়েছে এবং দুদিনের মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছে, এটা অমানবিক।আবুল কাশেম, স্টাফ কোয়ার্টার কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকমিরপুর স্টাফ কোয়ার্টারে উচ্ছেদের প্রতিবাদজাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের টাঙানো বিজ্ঞপ্তিটি প্রথম আলোর কাছে এসেছে। গত ৩০ নভেম্বর এই বিজ্ঞপ্তিটি দেশের দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়ও প্রচার করে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনে চারতলা বিশিষ্ট ২১টি ভবনকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত বা বসবাসের অযোগ্য ঘোষণা করেছে। যেহেতু ভবনগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও বসবাসের জন্য নিরাপদ নয়, তাই বর্তমানে ভবনে বসবাসকারীদের দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া ওই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, তাঁরা যে ভবনগুলোতে বসবাস করছেন, সেই ভবনগুলোর পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের যাবতীয় কাগজপত্র তাঁদের নামে আছে। এ ছাড়া জন্মসূত্রে গত ৫০ বছর তাঁরা এই এলাকায় বসবাস করছেন। এখন উচ্ছেদ করা হলে অসহায় হয়ে রাস্তায় নামবে অনেক পরিবার।
হাউজিং স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার ৫ নম্বর ভবনের ৩২ নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, ‘ভবনগুলোতে এমন অনেক বাসিন্দা আছেন, যাঁরা সত্যি অসহায়। যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের জন্ম, জাতীয় পরিচয়পত্র সবকিছু এখানে। এখন উচ্ছেদ করা হলে আমরা কোথায় যাব? আমাদের সঙ্গে আচরণ করা হচ্ছে ভাড়াটিয়ার মতো। অথচ ৫০ বছর ধরে আমরা এসব ভবনে বসবাস করছি। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের যাবতীয় কাগজ আমাদের নামে করা। কোনো ভাড়াটিয়ার নামে কি বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের কাগজ হয়?’
সংবাদ সম্মেলনে ‘পরিত্যক্ত দেখিয়ে উচ্ছেদ নয়, সত্যিকারের মূল্যায়ন চাই’; ‘নিরাপদ সংস্কার চাই, জোরপূর্বক উচ্ছেদ নয়’; ‘শান্তিপূর্ণ দাবি আদায়ে প্রশাসনের সাহায্য চাই’; ‘বাসিন্দাদের অধিকার মানুন, উচ্ছেদ বন্ধ করুন’ প্রভৃতি স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন আয়োজকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্টাফ কোয়ার্টার কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন, সন্তান কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক ফারুক হোসেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ সামিউলের বাবা মো. সাকিবুর রহমানসহ ৫৭৬ পরিবারের প্রতিনিধিরা।