রাজকী বেগমের চোখের সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। তাঁর ছেলেমেয়েদেরও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আহাজারি করতে করতে রাজকী বেগম বলছিলেন, ‘আমার তিনটে ছেলে-মেয়ে এতিম হয়ে গেছে, আমার স্বামী হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই।’

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শিলিমপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত শনিবার সকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজকী বেগমের স্বামী হাসিম মোল্যা (৩৮)। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রোববার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে হাসিম মোল্যার মরদেহ এসে পৌঁছায়। আসরের নামাজ পর জানাজা শেষে স্থানীয় বাগমারা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালিয়ার হামিদপুর ইউনিয়নের শিলিমপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শনিবার সকালে ঠান্ডু মোল্যা ও জনি মোল্যা পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ১৩ জন ও ২ পুলিশ সদস্য আহত হন৷ স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে গুরুতর আহত জনি মোল্যা ও তাঁর ভাই হাসিম মোল্যাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসিম মোল্যা মারা যান। ওই ঘটনায় সিরাজ মোল্যা ও আজিজার শেখ নামের দুজনকে ১টি একনলা বন্দুক, ২০টি গুলিসহ আটক করা হয়।

গতকাল বিকেলে শিলিমপুরে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার পরিবেশ থমথমে। নিহত ব্যক্তির প্রতিপক্ষ ঠান্ডু মোল্যা পক্ষের কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানো হয়েছে। মরদেহ আসার খবরে আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকজন ভিড় করেছেন হাসিম মোল্যাদের বাড়িতে। অঝোরে কাঁদছেন বৃদ্ধ মা জাহিদা বেগম। তাঁর পাশেই কাঁদছেন হাসিম মোল্যার স্ত্রী রাজকী বেগম।

রাজকী বেগমের অভিযোগ, বাড়ির পাশে তাঁর সামনেই প্রতিপক্ষের লোকজন স্বামী ও সন্তানকে কুপিয়েছিলেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বামী মারা গেছেন। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজকী বেগম বলেন, ‘আমার সামনেই ওরা (প্রতিপক্ষ) স্বামীর মাথায় কোপ দেয়, হাত কেটে ফেলে। আমি কইছি, আর মারিস না, আমার কথা শুনল না। পাশেই আমার সন্তানরেও ওরা কোপাইয়ে ফেলাই থুইছে। ওই সময় আমার কেয়ামত হয়ে যাচ্ছে। আমি স্বামীর কাছে আসব, নাকি সন্তানের কাছে যাব। আমার ছেলের এক পায়ে তিনটে কোপ দেছে। আমি এসবের বিচার চাই।’

নিহত হাসিম মোল্যার বোন নাজনীন আক্তার বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আমার এক ভাইয়ের হাত কেটে দেছে, ভাতিজাকে কুপিয়েছে। আমার আরেক ভাইকে খুন করিছে যারা, তাদের ফাঁসি চাই।’

এদিকে হাসিম মোল্যার মৃত্যুর পর প্রতিপক্ষ ঠান্ডু মোল্যা পক্ষের লোকজন এলাকায় না থাকায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

গতকাল রাত ১০টার দিকে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক। নিহত হাসিমের মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবার এখনো কোনো মামলা করেনি। তবে পুলিশকে মারধর এবং অস্ত্র, গুলিসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব গম র ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের নিন্দা জানাচ্ছেন রাষ্ট্রদূতরা

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের গাজা দখলের পরিকল্পনার নিন্দা জানানো শুরু করেছেন পরিষদে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা। রবিবার অধিবেশন শুরুর পরপরই তারা নিন্দা জানানো শুরু করেন।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি পলিয়ানস্কি ইসরায়েলের পরিকল্পনাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, ‘বেপরোয়াভাবে শত্রুতা তীব্রতর করার পরিবর্তে সক্রিয় কূটনীতির বদৌলতে’ হামাস ১৪০ জনেরও বেশি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে।

পলিয়ানস্কি বলেছেন, “ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সহিংসতা আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে ইসরায়েলি জিম্মিদের নিরাপত্তা এবং জীবন বিপন্ন হয়েছে।”

তিনি ইসরায়েলকে গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার জন্য অভিযুক্ত করে বলেছেন, “এই অমানবিক হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার আগে আরো কত ফিলিস্তিনিকে মারতে হবে?”

জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং জানিয়েছেন, গাজার পরিস্থিতি ‘আরো বিপজ্জনক দিকে বিকশিত হচ্ছে।’

তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে ‘গাজা দখলের যেকোনো প্রচেষ্টার দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করতে হবে’ এবং গাজা শহরে সামরিক আক্রমণ পুনর্নবীকরণের ইসরায়েলের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাতে হবে।

ফু বলেছেন, “এই সমস্যার সমাধানের উপায় সামরিক নয়।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ