গফরগাঁওয়ে সিফাত ও সাদাব নামে দুই শিশু নিখোঁজের একদিন পর পরিত্যক্ত একটি ডোবা থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সাদাবের সন্ধান মেলেনি। শনিবার চরশাখচূড়া গ্রাম থেকে নিখোঁজ সিফাতের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে সিফাতের পরিবারের কাছে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চাইলে দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়। সাদাবকেও অপহরণের অভিযোগ করেছে তার পরিবার। পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা।

পরিবারের সদস্যদের দাবি, পাগলা থানার চরশাখচূড়া ও দীঘিরপাড় গ্রামে গতকাল শুক্রবার দুপুরে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশু দুটি। খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পাগলা থানার ওসি মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম।

জানা গেছে, সৌদি প্রবাসী নূর ইসলামের ছেলে ও চরশাখচূড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাত গত শুক্রবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিল। দিনভর সাম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন স্বজনরা। কোথাও তার খোঁজ মেলেনি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশু সিফাতের নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করেন স্বজনরা। এই সুযোগে এক ধরনের প্রতারক চক্র অপহরণের কথা বলে নিহত শিশুটির পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের নামে কিছু টাকা আদায় করে।

শনিবার সকাল ৭টার দিকে শিশুটির বাড়ি থেকে আনুমানিক ১৫০ গজ দূরে একটি পরিত্যক্ত পুকুরে তার লাশ ভাসতে দেখেন এলাকাবাসী। পরে তারা পাগলা থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। সুরতহাল রিপোর্ট অনুযায়ী লাশের শরীরে দৃশ্যমান কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

নিহত সিফাতের মা সাবিনা আহাজারি করতে করতে বলেন, তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে। তাদের কোনো শক্র নেই। গ্রামের শহিদুলের ছেলে আরমান তাঁর কলেজ পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে বাড়িতে এসে ঝগড়া করে এবং এর পর তাদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। এ ঘটনার পর থেকে আরমান গা-ঢাকা দিয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।

নিহত সিফাতের মামা জিসান জানান, তাঁর ভাগনে নিখোঁজ হওয়ার পর যখন খোঁজাখুঁজি করছেন, এমন সময় তাঁর ভগ্নিপতি নুর ইসলাম প্রবাস থেকে ফোন করে বলেন, তাঁর কাছে ২০ হাজার টাকা চেয়েছে ছেলেকে জীবিত উদ্ধারের জন্য। পরে অপহরণকারীদের ফোন নম্বর দিলে যোগাযোগ করা হয়, তখন তাদের দেওয়া নম্বরে প্রথমে ২ হাজার টাকা বিকাশ করেন তিনি। পরে অপহরণকারীরা উল্টাপাল্টা কথা বললে আর টাকা দেননি।

পুলিশ জানায়, শিশু সিফাতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া নান্দাইল উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের বারঘুরিয়া গ্রামের প্রবাসী আল আমিনের ছেলে সাদাব তার মায়ের সঙ্গে গফরগাঁও উপজেলার দীঘিরপাড় গ্রামে নানার বাড়িতে বাস করত। গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খেলার জন্য ঘর থেকে বের হয় শিশুটি। এর পর থেকে নিখোঁজ সে। বাড়ির আশপাশের সব পুকুর ও সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও শিশুটির খোঁজ না পেয়ে উৎকণ্ঠায় আছে পরিবার।

শিশুটির মা সুমাইয়া আক্তার দাবি করেন, তাঁর একমাত্র ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাগলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন শিশুটির নানা সুলতান মিয়া।

পাগলা থানার ওসি মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম বলেছেন, শিশু সিফাতের ঘটনা অপহরণ ও মুক্তিপণের কোনো বিষয় নয়। এখানে শক্রতাসহ সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি কারণ নিয়ে তদন্ত চলছে। শিশু সাদাবকে উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তারা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পটিয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ, দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার
  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত