দুর্ঘটনা-দুর্যোগের পর শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কী করা উচিত
Published: 3rd, August 2025 GMT
ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনা মানসিকভাবে পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিকট শব্দ, আতঙ্কে ছোটাছুটি, কান্না আর চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ দৃশ্য—এসব শিশুদের মনে এক গভীর মানসিক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
ঘটনার পরপরই যেটা ঘটে, সেটিকে বলে অ্যাকিউট স্ট্রেস রিঅ্যাকশন বা এএসআর। এটি দুর্বলতা নয়; বরং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক একটি প্রতিক্রিয়া। এমন দুর্ঘটনায় অনেকে স্তব্ধ হয়ে যায়, কেউ অস্বাভাবিক চুপচাপ হয়ে পড়ে, কেউবা বারবার আতঙ্কে কেঁদে ফেলে। ঘুম না হওয়া, দুঃস্বপ্ন দেখা, রুচি কমে যাওয়া কিংবা আচরণে হঠাৎ রাগ বা ভয়—এসবই এই প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ।
যেসব লক্ষণ দেখা যায়আতঙ্ক বা স্তব্ধতা।
হঠাৎ নীরব হয়ে যাওয়া।
কান্না বেড়ে যাওয়া বা ঘন ঘন কান্না।
ঘুমের সমস্যা ও দুঃস্বপ্ন দেখা।
স্কুলে যেতে অনীহা।
পেটব্যথা, মাথাব্যথা বা ক্ষুধা কমে যাওয়া।
বারবার একই ঘটনা বলা বা আঁকা।
আচরণে রাগ, বিরক্তি বা অতিরিক্ত ভীতি।
মা–বাবার সঙ্গে সব সময় লেগে থাকা।
এসব লক্ষণ যদি তিন–চার সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং দৈনন্দিন কাজে বাধা দেয়, তাহলে একে অ্যাকিউট স্ট্রেস ডিজঅর্ডার বলা হয়। আর যদি সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি না হয়; বরং মানসিক আঘাত দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ওঠে, তাহলে তা পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের দিকে রূপ নিতে পারে।
আরও পড়ুনএই সাত ধরনের খাবার খেলে ৭০ বছর বয়সেও থাকবেন তরুণ০২ আগস্ট ২০২৫অভিভাবকদের করণীয়শুনুন ও সময় দিন: শিশুর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করুন—‘তুমি কেমন আছো?’, ‘তুমি কি ভয় পেয়েছিলে?’ শিশুদের বলার সুযোগ দিন, কথা বলতে দিন। তাদের থামিয়ে দেবেন না।
ভয়কে স্বীকার করুন: ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই’ না বলে বলুন, ‘আমি বুঝি তুমি ভয় পেয়েছ, আমিও ভয় পেয়েছিলাম।’
পর্যবেক্ষণ করুন আচরণগত পরিবর্তন: ঘুম, খাওয়া, আচরণ বা মনোযোগে পরিবর্তন লক্ষ করলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুনশিশুর ভালো ঘুমের জন্য যেসব অভ্যাস করাবেন৩০ জুলাই ২০২৫স্কুলে মানসিক সহায়তা কেন্দ্র চালু করুন: এ ধরনের ঘটনায় স্কুলপর্যায়ে গ্রুপ থেরাপি, চিত্রাঙ্কন, গল্প বলা কিংবা কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা জরুরি। শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রশান্তি ফিরিয়ে আনা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
আমরা সবাই চাই শিশুরা হাসবে, খেলবে, স্বপ্ন দেখবে। কিন্তু কোনো অস্বাভাবিক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর সেই স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে, তারা এখন কেমন আছে। এটা শুধু চিকিৎসকের দায়িত্ব নয়; মা, বাবা, শিক্ষক, প্রতিবেশী—সবারই দায়িত্ব।
ডা.
টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ, সহকারী অধ্যাপক ও শিশু মনোরোগবিশেষজ্ঞ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।
ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।
আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।