ভারতের ক্ষেত্রে যত গর্জালেন, ততটা বর্ষালেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে সই করেন ঠিকই, কিন্তু সেই ‘কালোতালিকা’ থেকে ছাড় দিলেন ভারতের ওষুধ, গাড়ির যন্ত্রাংশ, কপার, ধাতুসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকে।

বাস্তবতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের যত পণ্য রপ্তানি হয়, এগুলো তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পাশাপাশি ভারতের পণ্যে যে দণ্ড শুল্ক আরোপের কথা বলেছিলেন ট্রাম্প, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত জানাননি।

১ আগস্ট জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে, ২ এপ্রিল ঘোষিত সব ছাড় অব্যাহত থাকবে। এ অব্যাহতি ভারতকে বড় ধরনের স্বস্তি দিয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার উচ্চ বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ও শুল্ক নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে। খবর ফার্স্টপোস্ট

তবে নয়াদিল্লি সামগ্রিকভাবে সংযম বজায় রেখেছে। ট্রাম্পের এসব হুংকার সত্ত্বেও প্রস্তাবিত বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে চলমান আলোচনা যেন ভেস্তে না যায়, তা খেয়াল রেখে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল সংসদে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জানিয়ে দিলেন, অনেক ঝড়ঝাপটা, অনেক প্রতিকূলতা সামলানোর পরও ভারত-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অটুট আছে। যে সম্পর্ক আগামী দিনেও বজায় রেখে উভয় দেশ সমানতালে পারস্পরিক উন্নতির স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে।

এসব কূটনৈতিক বক্তব্যের মারপ্যাঁচের আড়ালে রাশিয়া থেকে ভারতের সরকারি তেল সংস্থাগুলোর অপরিশোধিত তেল কেনা ‘বন্ধের’ যে জল্পনা রটেছে, সে বিষয় সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, এখনো এমন কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই যার জোরে বলা যায়, ভারতীয় কোনো সংস্থা রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করেছে।

তবে জ্বালানি কেনার প্রশ্নে ভারত সব সময়ই বাজারের বিকল্প এবং বিশ্বের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিচার করেই সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, যেখানে তিনি দাবি করেছেন, পাকিস্তান-মার্কিন চুক্তির ফলে আগামী দিনে ভারতকেও পাকিস্তান থেকে তেল কিনতে হতে পারে। সে বিষয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। যদিও ভারতের বিরোধী দলের নেতা শশী থারুর বলেছেন, পাকিস্তানে তেলের তেমন একটা মজুত আছে বলে তাঁর জানা নেই।

বিশেষজ্ঞদের সিংহভাগের দাবি, যেসব রপ্তানিতে ‘ছাড়’ মিলল না, সেসব ক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম চামড়া-টেক্সটাইল ও মেশিনারিতে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ (২০ শতাংশ), থাইল্যান্ড (১৯ শতাংশ), মালয়েশিয়া (২৫ শতাংশ) প্রভৃতি দেশের শুল্কহার প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় সমস্যা বড় আকার নেবে না। তবে রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনা নিয়ে যে তোপ দেগেছিলেন ট্রাম্প, তাতে সত্যতার উপাদান কম থাকার কথাই বলছেন বিশেষজ্ঞদের সিংহভাগ। যুক্তি দেওয়া যেতেই পারে, রাশিয়ার ব্রহ্মস মিসাইল থেকে টি-৯০ ট্যাঙ্ক, এস–৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (যা অপারেশন সিঁদুরে সুপারহিট), সুখোই-৩০ এমকেআই ফাইটারের মতো একাধিক রুশ অস্ত্র ব্যবহার করছে ভারত।

কিন্তু ভারতের সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার শেষবার অস্ত্রচুক্তি হয়েছে ২০১৯ সালে; যৌথ উদ্যোগে ভারতে একে ২০৩ রাইফেল বানানো নিয়ে। এ ছাড়া ওপরের সব অস্ত্রই এখন ভারতে বানানো হচ্ছে (এস-৪০০ ছাড়া)। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে ভারতের অস্ত্র আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০১০-১৪ সালের মধ্যে ভারতের মোট আমদানির ৭২ শতাংশ আসত মস্কো থেকে, ২০২০-২৪ সালে তা নেমে এসেছে ৩৬ শতাংশে।

জ্বালানি কেনার ক্ষেত্রেও ট্রাম্পের যুক্তি একেবারে নির্জলা সত্যি, তা বলা যাচ্ছে না বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। গত সাত অর্থবছরের পরিসংখ্যান বলছে, রাশিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকেও কয়লা, অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোপণ্য আমদানি যথেষ্ট বাড়িয়েছে ভারত। কিছুদিন আগে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের পর রাশিয়ার তেল আমদানি কমেছে ২৫ শতাংশ, যেখানে মার্কিন তেল আমদানি বেড়েছে ১০০ শতাংশ। বার্ষিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের তেল আমদানি ২৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার চিন্তা করছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের বাণিজ্যিক স্বার্থেই ট্রাম্প তাঁর বিখ্যাত চাপ প্রয়োগের কৌশল ভারতের ওপর প্রয়োগ করছেন।

এর আগে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা দফায় দফায় বলেছেন, আগামী অক্টোবর মাস নাগাদ দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি হবে। ভারতের পক্ষ থেকে সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেই বোঝা যাচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব

বায়ার্ন মিউনিখ ৩–১ চেলসি

২০১২ সালে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইতিহাস গড়েছিল চেলসি। ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো পরেছিল ইউরোপসেরার মুকুট।

 তবে এরপর থেকে বায়ার্নের সঙ্গে মুখোমুখি সব ম্যাচেই হেরেছে চেলসি। লন্ডনের ক্লাবটি পারল না আজও। হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়েছে বায়ার্ন।

আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচের ২০ মিনিটে বায়ার্ন প্রথম গোলটা পেয়েছে উপহারসূচক। চেলসির সেন্টার–ব্যাক ট্রেভোহ চালোবাহ নিজেদের জালে বল জড়ালে এগিয়ে যায় বাভারিয়ানরা।

কিছুক্ষণ পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কেইন। এবার ভুল করে বসেন চেলসির মইসেস কাইসেদো। নিজেদের বক্সে কেইনকে কাইসেদো অযথা ট্যাকল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

নতুন মৌসুমে গোলের পর গোল করেই চলেছেন হ্যারি কেইন

সম্পর্কিত নিবন্ধ