মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট কাটাখালী এলাকায় বাসা অ্যাডভোকেট মো. রোমান হোসেনের। প্রতিদিন তাঁকে পেশাগত কাজে আসা-যাওয়া করতে হয় মুন্সীগঞ্জ-কাটাখালী-মাকহাটি সড়ক দিয়ে। বেহাল এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিনই দুর্ভোগের শিকার হতে হয় তাঁকে। রোমান হোসেনের ভাষ্য, অটোরিকশা চালকরা পর্যন্ত যেতে টালবাহানা করেন।
এই সড়কের মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সার্কিট হাউস থেকে ঘাসিপুকুর পাড় পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশের অবস্থা খুবই করুণ। পথেই পড়ে কাটাখালী-ঋষিবাড়ি হয়ে নুরাইতলী, লোহারপুল, সাতানিখিল, বাগেশ্বর বাজার এলাকা। জেলা শহর থেকে সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আলদী বাজার, পুরা ও দিঘিরপাড় বাজার এলাকার মানুষের কাছে এই সড়কের বিকল্প নেই। পৌরসভার সীমানা শেষে সদর উপজেলার মহাকালী ইউনিয়ন হয়ে মাকহাটি জিসি উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকা হয়ে সড়কটির একটি অংশ আলদী বাজার লিংক রোডে, আরেক অংশ
মাকহাটি বাজারের ওপর দিয়ে গেছে। মাকহাটি বাজারের পূর্ব দিকে সড়কটি সদরের মাকহাটি-চরডুমুরিয়া সড়ক ও পশ্চিম দিকে আলদীবাজার-দিঘিরপাড় সড়কে যুক্ত হয়েছে।
প্রতিটি এলাকায় রাস্তা ভেঙে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে পানি জমে থাকে। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। জেলা শহরের সঙ্গে সদর উপজেলার একটি অংশ এবং পাশের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাজারো মানুষের যোগাযোগের জন্য এই সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সার্কিট হাউস থেকে কাটাখালীর ঋষিবাড়ি পর্যন্ত প্রায় সোয়া এক কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই করুণ। সড়কের মাঝে মাঝে কার্পেটিং উঠে গেছে। কোথাও খানাখন্দে জমে আছে পানি। সাতানিখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন সড়কের পূর্ব পাশ দেবে গেছে। ফলে মনে হয় সড়কটি বুঝি কাত হয়ে গেছে। এ ছাড়া বাগেশ্বর বাজার পর্যন্ত ছোট-বড় গর্তে ভরা। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় যাত্রীরা গালাগাল করেন বলে জানান পলাশ শেখ নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সঙ্গে শহরের যোগাযোগে এই সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। দিনে হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। সড়কের অবস্থা দেখে সবাই ক্ষুব্ধ।
সাতানিখিল এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য, সাতানিখিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে অবৈধ ড্রেজারের পাইপ বসিয়েছে স্থানীয় একটি চক্র। এ কারণে সড়কটির পূর্ব পাশের বিশাল অংশ ধসে যায়। বালুদস্যুরা ধসে পড়া স্থানে বালু ফেললেও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।
স্থানীয় লোকজনের দেওয়া তথ্যমতে, কয়েক বছর আগে সড়কটি পৃথকভাবে সংস্কার করেছিল মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এর পর দীর্ঘদিন ধরেই এ অবস্থা চলছে।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সীমানা পর্যন্ত সড়কের এই অবস্থা প্রসঙ্গে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন, সড়কটির সংস্কারের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। শিগগির দেড় কিলোমিটার এলাকার খানাখন্দ সংস্কার করা হবে। পৌরসভার সীমানার বাইরের সড়ক সংস্কার করবে
এলজিইডি। তারাও পৃথকভাবে প্রকল্প তৈরি করেছে বলে শুনেছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক প রসভ র স উপজ ল র সড়ক র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
সড়ক নদীতে দুর্ভোগে ১০ গ্রামের মানুষ
নদীতে বিলীন হয়েছে গ্রামীণ সড়ক। এতে ১০ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে তাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে।
টুঙ্গিপাড়ার ডুমরিয়া ইউনিয়নে ডুমরিয়া-সড়াবাড়ী সড়কের চিতলিয়া নামক স্থানে গত বুধবার দুপুরে ফাটল ধরে। সড়কটির ২৫০ ফুট শৈলদহ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত সড়ক সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
ডুমরিয়ার চিতলিয়া গ্রামের সুধীর বিশ্বাস ও লতা বেগম বলেন, বুধবার থেকে এ সড়ক দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল বন্ধ। ডুমরিয়া, ভৈরবনগর, তারইল, জামাইবাজার, মামারবাজার, চিতলিয়া, সড়াবাড়ী, পাকুরতিয়াসহ ১০ গ্রামের মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন করতে পারছেন না। তাদের বাঁশবাড়িয়া হয়ে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।
একই গ্রামের রহমত মল্লিক বলেন, শৈলদহ নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে গত ৩০ ডিসেম্বর এ সড়কের সেতু ভেঙে যায়। এর চার মাস পর সড়কটি ভেঙে পড়ল। এতে একটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই পরিবারকে ইউএনও খাদ্যসহ অন্যান্য সহায়তা করেছেন। ভাঙনকবলিত এলাকার অন্তত ২৫টি বসতবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়নের পানি সরবরাহ লাইন নদীভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। তাই দ্রুত নদীভাঙন প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে চিতলিয়া গ্রামের মানুষ সহায়সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বে। মানচিত্র থেকে চিতলিয়া গ্রাম হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
চিতলিয়া গ্রামের অমর বিশ্বাস বলেন, এই সড়ক দিয়ে তারা ডুমরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ও বাজারে যাতায়াত করেন। সড়ক ভেঙে যাওয়ায় তারা সহজে যাতায়াত করতে পারছেন না।
টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও মঈনুল হক বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত লতা বেগমের পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে এ পরিবারকে একটি বসতঘর করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ডুমরিয়া ও পাটগাতী ইউনিয়নের সংযোগ সড়ক ভেঙে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেই সঙ্গে সড়কটিও দ্রুত সংস্কার করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।