খাওয়াদাওয়া কেনাকাটাতেও জমজমাট খিলগাঁও
Published: 8th, August 2025 GMT
পূর্ব-পশ্চিম দুই দিকে দুটি রেলক্রসিং। পাশ দিয়ে অতীশ দীপংকর সড়ক। তবে রাজধানীর মানুষজন একে বিশ্বরোড বলেই চেনেন। এই সড়কের সমান্তরালে খিলগাঁও রেলক্রসিং থেকে শুরু করে এলাকার ভেতর দিয়ে পশ্চিম দিকে মালিবাগ রেলক্রসিংয়ের কাছাকাছি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বিশ্বরোডে গিয়ে মিলেছে শহীদ বাকি সড়ক। বেশ চওড়া এই সড়কটি অধুনা খাদ্যরসিকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হরেক রকম খাবারের দোকানের জন্য। চায়নিজ থেকে শুরু করে ভারতীয়, মোগলাই থেকে দেশি চুইঝালের গরুর মাংস, কাবাব থেকে কাচ্চি, রসগোল্লা-চমচম, চা-কফি কী নেই এখানে!
খিলগাঁও ঢাকার একটি প্রাচীন এলাকা। অধুনা বিলুপ্ত পাণ্ডু নদের তীরে খিলগাঁও এলাকাটি তখন ছিল নদীকেন্দ্রিক বাণিজ্যিক এলাকা। অনাবাদি পতিত ভূমি ছিল অনেক। অনাবাদি জমিকে ‘খিল’ বলা হতো। সেই থেকে এই গ্রামীণ এলাকাটির ‘খিলগাঁও’ নামকরণ বলে মনে করা হয়। কালক্রমে এখানে জনবসতি গড়ে ওঠে।
আধুনিক পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে খিলগাঁও গড়ে তোলা হয় গত শতকের ষাটের দশকে। এটি রাজধানীর পরিকল্পিত আবাসিক এলাকাগুলোর একটি। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন তৎকলীন ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি), বর্তমানে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) খিলগাঁও আবাসিক এলাকা গড়ে তোলে। সে সময় ফুলবাড়িয়া থেকে রেলস্টেশন কমলাপুরে স্থানান্তর করা হয়েছিল। খিলগাঁও আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার প্রধান লক্ষ্য ছিল কমলাপুরের বাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আবাসনের ব্যবস্থা ও শহরের উত্তরমুখী সম্প্রসারণ করা।
একটি পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও খিলগাঁওয়ের মূল মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি, তা সত্ত্বেও এলাকার ভেতরের প্রশস্ত রাস্তা ও ফুটপাত, সারিবদ্ধ আবাসিক ভবন, অনেক গাছপালা, ছিমছাম পরিবেশ খিলগাঁও এলাকাটিকে সৌন্দর্য ও আভিজাত্য এনে দিয়েছে। সিটি করপোরেশনের একটি বড় খেলার মাঠও আছে। খিলগাঁও আবাসিক এলাকার ভেতরে যাঁরা আগে আসেননি, তাঁদের কাছে প্রথম দর্শনে বেশ চমকপ্রদ মনে হবে।
আবাসিক এলাকার পাশাপাশি খিলগাঁও বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। এখানে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ব্যাংক-বিমা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টারসহ অসংখ্য হোটেল–রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে। দুপুরের পর থেকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খিলগাঁও তালতলা সুপার মার্কেটের সামনের এই সড়কটির দুই পাশের খাবারের দোকানগুলোকে কেন্দ্র করে তরুণ-তরুণী ও আশপাশের এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে জমজমাট পরিবেশে সৃষ্টি হয়।
এখানে প্রথম দিকের খাবারের দোকানের মধ্য ভূতের আড্ডা, পালকি, ব্লুমুন, পিঠাঘর অন্যতম। সম্প্রতি এক বিকেলে পিঠাঘরের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম জানালেন, ফুটপাতের পাশের দোকান থেকে বহুতল অভিজাত বাণিজ্যিক ভবনের জাঁকজমকপূর্ণ রেস্তোরাঁ মিলিয়ে প্রায় তিন শর মতো খাবারের দোকান আছে এই এলাকায়। বার্গার, পিৎজা, পাস্তা থেকে ডাল, ভর্তা–ভাজিসহযোগে সাদা ভাত সবই পাওয়া যাবে। প্রধানত শীতকাল পিঠার মৌসুম হলেও তাদের পিঠাঘরে এখন নারকেলপুলি, পাটিসাপটা, বাঁশপাতা, মালপোয়া ও নকশি পিঠা পাওয়া যায়। দাম প্রতিটি ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। যাঁরা ভারতীয় খাবারে আগ্রহী, তাঁদের জন্য আছে দোসা, ছোলাবাটুরা, রাজকচুরি প্রভৃতি। ফুচকাপ্রেমীরা নিতে পারেন দই–ফুচকার স্বাদ।
নানা পদের মুখরোচক খাবার পাওয়া যায় খিলগাঁও–তালতলার এসব দোকানপাটে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে কুমার নদে বইঠার ছন্দে জমজমাট নৌকাবাইচ
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার হোগলাকান্দিতে কুমার নদে দুই দিনব্যাপী নৌকাবাইচ সমাপ্ত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রতিযোগিতার সমাপনী দিনে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ দেখতে নদের দুই পাড়ে ভিড় করেন কয়েক হাজার দর্শক।
হোগলাকান্দি গ্রামের যুবসমাজের আয়োজনে প্রতিযোগিতাটি হয়। এতে মোট ছয়টি নৌকা অংশ নেয়। এর মধ্যে ‘যুব এক্সপ্রেস’ নামের নৌকাটি প্রথম স্থান অধিকার করে।
গতকাল দুপুর থেকে নৌকাবাইচ দেখতে আসা দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। নানা বয়সী মানুষ, বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা মুঠোফোনে নৌকাবাইচের দৃশ্য ধারণ করছিলেন। নৌকাগুলো যখন জল কেটে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন নদীর দুই পাড় থেকে দর্শকেরা করতালি ও স্লোগান দিয়ে মাঝি-মাল্লাদের উৎসাহ দিচ্ছিলেন।
প্রতিবছর পরিবার-পরিজন নিয়ে নৌকাবাইচ দেখতে আসেন জানিয়ে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার বাসিন্দা ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘নৌকাবাইচের পাশাপাশি হোগলাকান্দিতে গ্রামীণ মেলা বসে। এ দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি। এই মেলায় একে অপরের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়, সব মিলিয়ে আনন্দে দিনটি কাটে।’
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নৌকাবাইচ দেখতে এসেছিল দশম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা আক্তার। সে জানায়, ‘এখানে এসে নৌকাবাইচ দেখে খুব ভালো লাগছে। মেলা থেকে মাটির তৈজসপত্রসহ কিছু জিনিস কিনেছি। নাগরদোলায় উঠলাম, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি খেলাম—সব মিলিয়ে খুব ভালো কেটেছে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রতিযোগিতাটির প্রথম দিনের আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম। তিনি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। তিনি বলেন, গ্রামীণ মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে এ ধরনের প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আয়োজক কমিটির প্রধান গিয়াস উদ্দিন বলেন, গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে, নতুন প্রজন্মকে শিকড়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং সাধারণ মানুষকে বিনোদন দিতেই এই আয়োজন।
হোগলাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও সমাজ সেবক আব্দুর রাজ্জাক মোল্যার সভাপতিত্বে এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার দেবনাথ, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহশ্রমবিষয়ক সম্পাদক মঈনুল ইসলাম, সহসাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম মোস্তফা মোল্যা, উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব আরিফুল ইসলাম, ছাত্রদলের সভাপতি আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।