নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বিদ্বেষ কেন বাড়ছে
Published: 6th, May 2025 GMT
শেষ পর্যন্ত ‘সমতা’ বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘নারী-পুরুষের সমতা’ বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ অন্য সবকিছু বাদ দিলেও গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের মূলমন্ত্রই ছিল বৈষম্য নিরসন। সুতরাং আজ যদি নারী-পুরুষের সমতা অগ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের মূলমন্ত্র সম্পর্কেও প্রশ্ন ওঠে।
নারী-পুরুষের সমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মানে হচ্ছে নারী-পুরুষের মধ্যে অসমতাকে সমর্থন করা। বিষয়টি শুধু শঙ্কার অথবা ক্ষুব্ধতার নয়, বিষয়টি আতঙ্কের। কারণ, এর পেছনে নারীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও সহিংসতা সুস্পষ্ট। এবং এই বিদ্বেষ ও সহিংসতা সমাজে ক্রমবর্ধমান। কিন্তু কেন?
বাংলাদেশের নারীরা জীবনের প্রতি পদে বৈষম্যের শিকার। অর্থনৈতিক বলয়ে কর্মক্ষম বয়ঃকালে অন্তর্ভুক্ত নারীদের মাত্র ১৪ শতাংশ কাজ করে। এবং তারা বেতন ও কর্মপদোন্নতি বৈষম্যের শিকার। যারা কাজ করছে, তাদের ৯২ ভাগ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। দেশের ৭০ লাখ উদ্যোক্তার মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশ নারী। প্রায় ৩০ শতাংশ নারী মজুরিবিহীন সেবাকর্মে নিয়োজিত।
এসব কাজে বেতন যেমন কম, তেমনি ঝামেলা অনেক। মাত্র ৩৬ ভাগ নারীর ব্যাংকে জমা আছে। বাল্যবিবাহ বাংলাদেশের মেয়েদের সক্ষমতাকে নষ্ট করে। যদিও মেয়েদের আইনগত বিয়ের বয়স ১৮ বছর, তবু বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যায়। জীবনের কোনো না কোনো সময়ে বাংলাদেশের বিবাহিত নারীদের ৭৩ শতাংশ গৃহ-অভ্যন্তরে সহিংসতার শিকার হন।
আজকের বাংলাদেশে নারীর প্রতি সমতার বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষ প্রকাশ করা হয়েছে, তা শুধু নারীর প্রতি বিদ্বেষ নয়। সেটা সমতার প্রতি বিদ্বেষ, মানবতার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ, শুভবুদ্ধির প্রতি হুমকিনারীর প্রতি পুরুষের ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং বিদ্বেষ বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ; বিষাক্ত পুরুষতন্ত্র, চরম শ্রেষ্ঠবাদিতা, উগ্র মৌলবাদের বিস্তার, নারীবিদ্বেষী চর্চার বিস্তৃতি ইত্যাদি। এ রকমের বিদ্বেষের কারণেই পুরুষ নারীর স্বাধিকার কেড়ে নিতে চায়, তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, রোধ করতে চায় নারীকণ্ঠ, সীমিত করতে চায় তার স্বাধীন সত্তা এবং আত্মপরিচয়।
প্রথমত, বিষাক্ত পুরুষতন্ত্র আত্মপ্রকাশ করে ক্ষমতা প্রদর্শন, ক্রোধ ও যৌনতার মাধ্যমে। নারী যেখানে মনোবলে বলীয়ান, পুরুষ সেখানে দেহবলে বলীয়ান। দেহবলে বলীয়ান পুরুষ তার পেশিশক্তি প্রতিনিয়তই ব্যবহার করে। দেহবলই পুরুষকে উন্মত্ত করে, যুক্তিবিবর্জিত করে, সংঘাতপ্রবণ করে তোলে। এ পুরো দ্বন্দ্বে পুরুষ নারীকে তার ইচ্ছাপূরণের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখে। অতএব এমন বাধাকে তো শৃঙ্খলিত করতেই হবে পুরুষকে। বিষাক্ত পুরুষতান্ত্রিকতা মানবকে দানবে পরিণত করে এবং পুরুষকে নারীবিদ্বেষী করে তোলে।
দ্বিতীয়ত, নারী বিষয়ে পুরুষের একটি চরম শ্রেষ্ঠবাদী ধারণা কাজ করে। পুরুষ মনে করে যে সে সর্ব বিষয়ে নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর এবং তার অসাধ্য কিছু নেই। অন্যদিকে নারী জানে কোথায় তার শক্তি, কোথায় তার দুর্বলতা। নারীর দুর্বলতা পুরুষের পরিহাসের বিষয়, আর তার শক্তি পুরুষের অস্বস্তির কারণ। জীবনধারায় নারী-পুরুষকে পরিপূরক হিসেবে দেখে, কিন্তু পুরুষ নারীকে দেখে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে।
সুতরাং সম্পূরক হতে পুরুষের প্রবল আপত্তি। এই উগ্র শ্রেষ্ঠবাদী মনোভাবের কারণে পুরুষ নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ হিসেবে গণ্য করে, তার বুদ্ধি–বিবেচনা নিয়ে পরিহাস করে, তার মনন ও চিন্তাকে খাটো করে। নারীর বাস্তববাদিতা ও যুক্তিনির্ভরতা অযৌক্তিক পুরুষকে ক্ষিপ্ত করে এবং তখন সে নারীকে বন্দী করার জন্য ব্রতী হয়।
তৃতীয়ত, বলার অপেক্ষা রাখে না যে নারীর পরিপ্রেক্ষিতে উগ্র মৌলবাদী চিন্তাচেতনা নারীকে নিয়ন্ত্রণ করাকে সঠিক বলে মনে করে, নারীর ওপর পুরুষের কর্তৃত্বকে অনুমোদন করে এবং পুরুষকে নারীর ক্ষেত্রে ‘নৈতিক পুলিশের’ দায়িত্ব দেয়। আমাদের সমাজে এ–জাতীয় উগ্র মৌলবাদী চিন্তাচেতনা যত বিস্তার লাভ করবে, বিশেষত পুরুষের মধ্যে; ততই নারীর ওপর পুরুষের কর্তৃত্ববাদ, নিপীড়ন, নারীর স্বাধিকারের ওপর পুরুষের হস্তক্ষেপ বেড়ে যাবে।
তখন পুরুষ বলে দেবে কী পোশাক পরিধান করা নারীর উচিত, কোথায় কোথায় নারী যেতে পারবে, কী কী করার অনুমতি তার আছে। সেগুলোর কোনো লঙ্ঘন হলে যেকোনো পুরুষ শুধু পুরুষের অধিকারবলে সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারবে, নারীকে নিপীড়ন করতে পারবে, তাকে শাস্তি দিতে পারবে। নারীবিদ্বেষী চর্চার বিস্তৃতি এই উগ্র শ্রেষ্ঠত্ববাদকে আরও পাকাপোক্ত করেছে।
এই বিদ্বেষ ও নারীকে আক্রমণ এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা সমাজে বেড়েই চলেছে। সে আক্রমণ ও বিভিন্ন বলয়ে বিভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেটা রূপ নিচ্ছে দেহজ ও মানসিক নির্যাতনের; কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধর্ষণসহ নানা যৌন নিপীড়নের, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ আক্রমণের।
এ বছরের জানুয়ারি মাসে ২০৫ জন নারী এবং কিশোরী নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা আছে ৬৭টি। পরের মাসে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে ১৮৯টি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৪৮টি। বলা নিষ্প্রয়োজন যে বাস্তব ঘটনা প্রদত্ত এসব উপাত্তের চেয়ে অনেক বেশি।
আসলে বাংলাদেশের জন্য নারীর প্রতি বিদ্বেষ ও সহিংসতা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি আতঙ্কজনক পরিস্থিতি। বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে, এটা যেন আর ব্যতিক্রম নয়। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দায় স্বীকার করে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে শক্ত হাতে। নারীবিদ্বেষী চর্চাকে প্রতিহত করতে হবে যূথবদ্ধ ও সামাজিকভাবে। প্রতিবাদ ও প্রতিকার করতে হবে সবাই মিলে।
আজকের বাংলাদেশে নারীর প্রতি সমতার বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষ প্রকাশ করা হয়েছে, তা শুধু নারীর প্রতি বিদ্বেষ নয়, সেটা সমতার প্রতি বিদ্বেষ, মানবতার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ, শুভবুদ্ধির প্রতি হুমকি। সমতার সপক্ষে এ লড়াই আমাদের সবার এবং এ লড়াই লড়ার কোনো বিকল্প নেই। চূড়ান্ত বিচারে সমতার এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে।
● ড.
সেলিম জাহান জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কার্যালয়ের পরিচালক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর প র ক জ কর সমত র ব ষয়ট বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াবের বিবৃতির জবাবে যা বললেন উপপ্রেস সচিব
দৈনিক জনকণ্ঠ দখল, সাংবাদিকদের হুমকি, সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি, সচিবালয়ের অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কড়া বিবৃতি দিয়েছিল নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)।
সংগঠনটির বিবৃতির প্রসঙ্গে শুক্রবার (৮ আগস্ট) ফেসবুক পোস্ট দেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, “সম্প্রতি নোয়াব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তি পরিস্থিতি নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, আমরা তা স্বীকার করছি। তবে গত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীকার ক্ষুণ্ণ করেছে-এমন ইঙ্গিত আমরা দৃঢ়ভাবে ও স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।”
এ সময় মৌলিক মূল্যবোধ রক্ষায় ও উন্নত করতে সরকার সব অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
নোয়াবকে জবাব: সত্য ঘটনা তুলে ধরা শীর্ষক শিরোনামে উপপ্রেস সচিব নোয়াবের দেওয়া বিবৃতির বিভিন্ন বিষয় ব্যাখ্যা দেন:
১.গণমাধ্যমের কার্যক্রমে সরকারের হস্তক্ষেপ নেই
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো গণমাধ্যমের সম্পাদকীয়, পরিচালনা বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেনি। বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার মুখেও আমরা অসাধারণ সংযম দেখিয়েছি। টেলিভিশন টক শো ও কলামে এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রায়ই মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে। তবুও আমরা না সেন্সর করেছি, না প্রতিশোধ নিয়েছি; এমনকি প্ররোচিত হলেও আমরা অভিযোগ করিনি, লাইসেন্স স্থগিত করিনি। বরং আগের সরকারের সময় জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া কিছু গণমাধ্যমকে পুনরায় প্রকাশনা বা সম্প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছি। এটি আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতি অঙ্গীকারের স্পষ্ট প্রমাণ।
২. সরকারে প্রবেশাধিকার সবসময় উন্মুক্ত ছিল
সীমিত প্রবেশাধিকারের অভিযোগের বিপরীতে সাংবাদিকরা আমাদের উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীদের সঙ্গে সরাসরি ও উন্মুক্তভাবে যোগাযোগের সুযোগ পেয়েছেন। কোনো সাংবাদিককে তার গণমাধ্যমের পরিচয় বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে সাক্ষাৎকার বা ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত করা হয়নি। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি এবং আমাদের আচরণ সেটিরই প্রতিফলন।
৩. সচিবালয়ের অ্যাক্রেডিটেশন প্রক্রিয়ার সংস্কার
অ্যাক্রেডিটেশন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে নোয়াবের সমালোচনা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। আগের পদ্ধতিটি ছিল মারাত্মকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত; প্রবেশপত্র এমন ব্যক্তিদের হাতে পৌঁছেছিল যাদের কোনো বৈধ সাংবাদিকতার ভূমিকা ছিল না-যাদের মধ্যে কিছু ছিল রাজনীতিবিদ, লবিস্ট ও সুযোগসন্ধানী, যারা এই বিশেষ সুবিধা ব্যবহার করে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অন্যায্য প্রভাব বিস্তার করত।
আমরা সেই ভাঙা কাঠামো ভেঙে দিয়ে একটি অস্থায়ী পাস ব্যবস্থা চালু করেছি যা নিশ্চিত করছে যে প্রকৃত সাংবাদিকরা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন।এটি প্রবেশাধিকার সীমিত করার জন্য নয় বরং একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্য। আগের অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালায় সাংবাদিকদের সরকারপন্থি অবস্থান নিতে বাধ্য করার শর্ত ছিল। এমনকি এতে কিছু অপমানজনক ধারা ছিল যা সাংবাদিকদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি। অন্তর্বর্তী সরকার সেটি সংশোধন করেছে। দীর্ঘমেয়াদি নবায়ন সুবিধাসহ নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে।
৪. চাকরির নিরাপত্তা
স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন: যেসব সাংবাদিক তাদের চাকরি হারিয়েছেন, তা সরকারের নির্দেশে নয়, বরং গণমাধ্যম মালিকদের সম্পাদকীয় বা করপোরেট কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের কারণে হয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণরূপে মালিকপক্ষের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ফল, সরকারের কোনো চাপ বা নির্দেশ নয়।
৫. সাংবাদিকদের নিরাপত্তা: যৌথ দায়িত্ব
আমরা সব নাগরিকের মতো সাংবাদিকদের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার, তবে এই দায়িত্ব গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও যৌথভাবে ভাগ করে নিতে হবে।
এই বছরের শুরুর দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত মিডিয়া সংস্কার কমিশন একটি নতুন ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে, যাতে আইনি সুরক্ষা বৃদ্ধি পায় এবং সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ের কারণে স্ব-সেন্সরশিপ কমে। সরকার প্রস্তাবিত আইনটি প্রণয়নের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
৬. শিল্পের ভেতরেও আত্মসমালোচনার প্রয়োজন
আমরা গঠনমূলক সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও নোয়াবকে পরামর্শ দিচ্ছি প্রথমে নিজেদের ভেতরে নজর দিতে। নিজেদের সদস্যদের কার্যকলাপ পরীক্ষা করা উচিত-বিশেষ করে সাংবাদিকদের বেতন বঞ্চনা, শ্রম অধিকার হরণ, সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশে কাজ করানো এবং অসহনীয় কর্মপরিবেশ সৃষ্টির অভিযোগে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
একটি সূক্ষ্ম রূপান্তরের সময়কাল পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসন হিসেবে আমরা ইচ্ছাকৃতভাবেই ‘হ্যান্ডস-অফ’ পদ্ধতি বজায় রেখেছি, যাতে গণমাধ্যম ভয় বা হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের কাছে কেবল একটি স্লোগান নয়; এটি এমন একটি নীতি, যা আমরা পালন করি।
তথ্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী পক্ষকে লক্ষ্য করে উপস্থাপিত হলে নোয়াবের উদ্বেগ অধিক গুরুত্ব পেত। ঘটনাবলির ভুল ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে করা সাধারণীকৃত অভিযোগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অগ্রসর করে না, বরং বাংলাদেশের গণমাধ্যম খাতের প্রকৃত সমস্যাগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়।
আমরা স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই মৌলিক মূল্যবোধ রক্ষায় ও উন্নত করতে আমরা সকল অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ