কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড। গতকাল সোমবার এখানে আসেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট উপকূল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন তালুকদার। ওয়েবসাইটে এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র তালিকা দেখে উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি। বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে নতুন কেন্দ্র স্থাপনের আবেদন জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, আগে একই এলাকায় ভেন্যু কেন্দ্রে তাঁর কলেজের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এখন অনেক দূরে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ কলেজ কেন্দ্রে প্রায় ৬০০ পরীক্ষার্থীর অনেকেই যাবেন না।

এ সময় বোর্ড থেকে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, এবার কমলনগরে নতুন কেন্দ্র স্থাপন সম্ভব নয়। চূড়ান্ত তালিকা মন্ত্রণালয় ও বিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর ১৬৭টি ভেন্যু কেন্দ্র বাতিল হয়েছে। এ খবরে বোর্ডের অধীন ছয় জেলার বিভিন্ন উপজেলার কেন্দ্র বিন্যাস ও আপত্তি সমাধান করতে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা তাদের। অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিনের মতো অনেকে পছন্দের কেন্দ্র পেতে তদবির ও বোর্ডে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তাদের কেউ পেয়েছেন নিজের পছন্দের কেন্দ্র। অনেক প্রতিষ্ঠান গেছে পাশের জেলায়।

বোর্ড থেকে জানা গেছে, কলেজের শিক্ষার্থীদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নিকটবর্তী অন্য প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার বিতর্কিত ও সমালোচিত পদ্ধতি ছিল 'ভেন্যু কেন্দ্র' পদ্ধতি। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড এসব কেন্দ্র বাতিল করে। এতে কুমিল্লা বোর্ডের অধীন কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় কেন্দ্র চূড়ান্ত করতে গিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহে চূড়ান্ত করেছে ১৯৩টি কেন্দ্র। গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, এমন ১৬৭টি ভেন্যু কেন্দ্র বাতিল হয়েছে।

গত ২৮ এপ্রিল বোর্ডের ওয়েবসাইটে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর আগে খসড়া তালিকার কিছু কলেজের নাম প্রত্যাহার করে সংযুক্ত করা হয় অন্য কেন্দ্রে। খসড়া তালিকায় দেখা যায়, দেবিদ্বারের সুজাত আলী সরকারি কলেজ কেন্দ্রে এবিএম গোলাম মোস্তফা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ ও মোহাম্মদপুর সেরাজুল হক কলেজের নাম ছিল। চূড়ান্ত তালিকায় যাতায়াতে কুমিল্লা বোর্ড কম দূরত্ব হলেও সেরাজুল হক কলেজের শিক্ষার্থীদের একই উপজেলার রাজামেহার ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী কলেজ কেন্দ্রে দেওয়া হয়েছে। আর বড়শালঘর গোলাম মোস্তফা কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবার মিয়া আবদুল্লাহ ওয়াজেদ মহিলা কলেজে স্থানান্তর করা হয়।

বড়শালঘর থেকে কসবার কলেজের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। বিষয়টি নিয়ে কলেজের দায়িত্বশীল কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। বোর্ড সূত্র বলছে, দুটি কলেজই (শালঘর ও মোহাম্মদপুর) দেবিদ্বার সরকারি কলেজে থাকতে অপারগতা প্রকাশ করায় জটিলতা তৈরি হয়। দেবিদ্বার জোবেদা খাতুন মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে জামরগঞ্জ মীর আবদুল গফুর কলেজের মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী সংযুক্ত করা হয় বানিজী বিভাগ রাখা হয় জোবেদা খাতুন মহিলা কলেজে।

পরীক্ষার্থীদের আপত্তি ও স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে সরকারি কলেজ কেন্দ্রেই জাফরগঞ্জ কলেজের তিন বিভাগের ছয় শতাধিক পরীক্ষার্থীকে একসঙ্গে রাখা হয়েছে। সোমবার বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সালাহউদ্দিন এ তথ্য জানান। দেবিদ্বার উপজেলার মোহনপুর পাবলিক কলেজ কেন্দ্র রাখা হয়েছে পাশের উপজেলা চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে। অথচ পাশেই মোহাম্মদপুর সেরাজুল হক কলেজ কেন্দ্র। মুরাদনগরের বাঁশকাইট ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া কলেজের কেন্দ্র রাখা হয়েছিল প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের শামছুল হক কলেজে। পরে পরিবর্তন করে আনা হয় কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজে।

আগামী ২৬ জুন এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। শেষ হবে ১০ আগস্ট। এবার কুমিল্লা বোর্ডে পরীক্ষায় লক্ষাধিক পরীক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক রুনা নাছরীন বলেন, এবারই প্রথম ১৬৭টি ভেন্যু কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে কেন্দ্র বিন্যাস করতে গিয়ে কিছু অভিযোগ আসায় এগুলো নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে। ২০২৬ সালের পরীক্ষার আগে নতুন কেন্দ্র বিন্যাস হবে। এসব সমস্যাগুলো আর থাকবে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কল জ ক ন দ র পর ক ষ র থ র পর ক ষ উপজ ল র র উপজ ল ক কল জ কল জ র নত ন ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই ১৮৭ শিক্ষার্থীর তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নিতে নির্দেশ

সাভারের আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই ১৮৭ শিক্ষার্থী সমাজকর্ম, পরিসংখ্যান ও ভূগোল—এই তিন বিষয়ে পরীক্ষায় বসতে পারবেন। তাঁদের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়া ভূগোল ও পরিসংখ্যান পরীক্ষা আবারও নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৭ ও ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য সমাজকর্ম বিষয়ে ১৮৭ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার রুলসহ এ আদেশ দেন। ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গত ২৬ জুন শুরু হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ১৮৭ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সমাজকর্ম, পরিসংখ্যান ও ভূগোল পরীক্ষার আয়োজনে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. বাকির হোসেন মৃধা গত সপ্তাহে রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও তানিম খান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

আদেশের পর আইনজীবী মো. বাকির হোসেন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৮৭ শিক্ষার্থী কলেজটির ভুলের কারণে সমাজকর্ম, পরিসংখ্যান ও ভূগোল পরীক্ষা দিতে পারছিলেন না। কলেজটির এই বিষয়গুলোর অনুমতি ছিল না। যে কারণে নিজে আবেদনকারী হয়ে জনস্বার্থে রিটটি করেন। এই ১৮৭ জন শিক্ষার্থীর ওই তিন বিষয়ের পরীক্ষা নিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এখন ১৮৭ শিক্ষার্থী পরীক্ষাগুলো দিতে পারবেন।

সাভারের আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। গত ১৪ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড জানায়, আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্যক্রমে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে সমাজকর্ম, পরিসংখ্যান ও ভূগোল বিষয়ে পাঠদানের কোনো অনুমোদন না থাকায় পরও কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৮৬ জন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন এবং ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছে কলেজের অনুমোদনপ্রাপ্ত ভিন্ন তিনটি বিষয়ে। কলেজ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র পেয়েছে এবং তাতে সমাজকর্ম, পরিসংখ্যান ও ভূগোল বিষয়ে পরীক্ষাদানের সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও বোর্ডের সঙ্গে তারা কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি।

আদেশের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৮৭ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে হয়ে যাওয়া ভূগোল ও পরিসংখ্যান পরীক্ষা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৭ ও ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য সমাজকর্ম বিষয়ে ১৮৭ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসতে অনুমতি দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের গত ১৪ জুলাইয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আবশ্যিক পাঁচটি পত্রের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে কলেজ কর্তৃপক্ষ (আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়) বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৮৬ জন পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য মৌখিকভাবে অনুরোধ করে। ইতিমধ্যে পূর্বনির্ধারিতসংখ্যক প্রশ্নপত্র সব কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠিয়ে দেওয়ায় বোর্ডের পক্ষে কিছু করার ছিল না। আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়াও ঢাকা বোর্ডের আওতাধীন আরও ৬টি কলেজে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে তাঁদের সংখ্যা মাত্র ২২। অন্যদিকে আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৮৬ জন। উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ শতভাগ দায়ী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক দেবে এসএসসি উত্তীর্ণদের শিক্ষাবৃত্তি, মাসে আড়াই হাজার টাকা, করুন আবেদন
  • বাউবির স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • আশুলিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই ১৮৭ শিক্ষার্থীর তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নিতে নির্দেশ
  • রাজশাহীতে টানা বৃষ্টি, সকালে ভুগতে হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের