নতুন মুখ ও পুরনোদের নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দল ঘোষণা
Published: 6th, May 2025 GMT
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সফরে তারুণ্যনির্ভর দল ঘোষণা করেছে। মোট ছয়টি ওয়ানডে ম্যাচের এই ইউরোপ সফরে নেতৃত্বের ভার থাকছে অভিজ্ঞ ব্যাটার শেই হোপের কাঁধে।
সবার নজর কেড়েছেন তরুণ আগ্রাসী ব্যাটার আমির জঙ্গু। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে ৭৯ বলে শতরান করে যিনি ক্রিকেট মহলে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন, তিনি এবারও দলে জায়গা করে নিয়েছেন। সঙ্গে রয়েছেন মাত্র ১৮ বছর বয়সী উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান জুয়েল অ্যান্ড্রু। যিনি আবারও জাতীয় দলে ফিরলেন।
চোটের কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে না পারা শামার জোসেফ এবং ম্যাথিউ ফোর্ড এবার চাঙ্গা হয়ে স্কোয়াডে ফিরেছেন। তবে দলে নেই শিমরন হেটমেয়ার। কারণ, তিনি বর্তমানে ব্যস্ত আইপিএলে।
আরো পড়ুন:
দ.
ড্রেসিংরুমে সেরা ফিল্ডারকে ‘মেডেল’ দিয়ে পুরস্কৃত
ক্যারিবীয় শিবিরে এসেছে কিছু পরিবর্তনও। বোলিং কোচ হিসেবে জেমস ফ্র্যাঙ্কলিনকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবেক ক্যারিবীয় পেসার রবি রামপালকে। আর আয়ারল্যান্ড অংশে দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন আইরিশ ক্রিকেটের পরিচিত মুখ কেভিন ও’ব্রায়েন। কোচিং স্টাফে থাকবেন তিনি।
সফরের সূচি অনুযায়ী, ২১ মে থেকে শুরু হবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। এরপর ২৯ মে থেকে ইংল্যান্ডের মাটিতে নামবে ক্যারিবীয়রা। ওয়ানডের পর রয়েছে আরও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ইংলিশদের বিপক্ষে।
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাস্তববাদী বাংলাদেশপন্থাই হোক রাজনীতির ভিত্তি
বিশ্ব রাজনীতি অনেক আগেই বুঝে গেছে, বাম আর ডান– এই দুই মেরুর সংঘাত কোনো বাস্তব সমাধান দিতে পারে না। নতুন শতাব্দীর চ্যালেঞ্জগুলো এতটাই জটিল, বাম বা ডান ঘরানার আদর্শিক কাঠামো দিয়ে উত্তর মেলে না। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত নির্ভরতা, তথ্যযুদ্ধ, গণমনস্তত্ত্বের অস্থিরতা– এসব একুশ শতকের এমন প্রশ্ন, যার উত্তর দিতে গেলে প্রয়োজন দেশকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জন্যও সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক স্লোগান হতে পারে– ‘বাংলাদেশপন্থির হবে বাংলাদেশ’।
বাম-ডানের ভাঙা আয়না
রাজনৈতিক দর্শনে ‘বাম’ বলতে বোঝায় সমাজতান্ত্রিক, সমতানির্ভর, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে। আর ‘ডান’ নির্দেশ করে ব্যক্তিস্বাধীনতা, মুক্তবাজার অর্থনীতি ও ঐতিহ্যভিত্তিক মূল্যবোধ। যদিও ফ্রেডরিক নিটশে বলেছিলেন, ‘সমস্ত সত্যই দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়’। অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট ‘ইজম’ দিয়ে সব ব্যাখ্যা করা যায় না। বাংলাদেশের বাস্তবতা এই দার্শনিক সত্যটি আরও জীবন্ত করে তোলে। এখানে বামপন্থিরা বিপ্লবের কথা বলেন। কিন্তু যখনই ক্ষমতার কাছে যান, তখন রূপ পাল্টে যায়। ডানপন্থিরা কথা বলেন বাজার ও জাতীয়তাবাদের। অথচ বৈশ্বিক পুঁজির শৃঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারেন না।
বাংলাদেশপন্থি ভাবনার আবশ্যকতা
‘বাংলাদেশপন্থা’ কোনো একক মতবাদ নয়; একটি বাস্তববাদী রাজনৈতিক দর্শন, যার মূল কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ। এই দর্শনে প্রাধান্য পাবে জনমানুষের চাহিদা, সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ও ভৌগোলিক বাস্তবতা। আধুনিক উন্নয়ন দর্শনের ভাষায়– ‘ডেভেলপমেন্ট ইজ অ্যাবাউট পিপল, নট থিংস’। আর্থিক প্রবৃদ্ধি যদি জনজীবনের উন্নয়ন না ঘটায়, তবে সে প্রবৃদ্ধি অন্তঃসারশূন্য। বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি এই জায়গাতেই দাঁড়ায়– এটি সংখ্যা নয়, মানুষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে।
প্রয়োগের উদাহরণ
বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণে ‘বাংলাদেশপন্থি’ দৃষ্টিভঙ্গি এক নতুন বাস্তবতাভিত্তিক ধারা উপস্থাপন করে, যেখানে প্রথাগত বাম-ডান রাজনীতির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে স্থানীয় অভিজ্ঞতা, সাংস্কৃতিক অন্তর্দৃষ্টি ও স্বার্থভিত্তিক সিদ্ধান্তই মুখ্য হয়ে ওঠে। যেমন– বামপন্থিরা বরাবরই কৃষকের পক্ষে রাষ্ট্রীয় সহায়তার কথা বলেন। অন্যদিকে ডানপন্থিরা কৃষিকে বাজারের হাতে ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা এত সরল নয়। এখানে কৃষক মাটির মানুষ। তার শতাব্দীপ্রাচীন অভিজ্ঞতা আছে; তবে দরকার আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা এবং এমন নীতি, যা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও বাজারচালিত প্রণোদনার মধ্যে ভারসাম্য রাখে। বাংলাদেশপন্থা স্থানীয় চাহিদা ও জ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়ে বাস্তবভিত্তিক সমাধান খোঁজে।
যেখানে বামপন্থি নীতিনির্ধারকরা বিজ্ঞানমনস্কতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর জোর দেন; ডানপন্থিরা ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের পক্ষে থাকেন। সেখানে বাংলাদেশপন্থা বলে, শিক্ষা হতে হবে সর্বাঙ্গীণ। বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন ও ধর্ম– সবই শিক্ষার্থীর জ্ঞানভান্ডারে থাকা চাই; তবে সেটি তার নিজস্ব ভাষায় ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে। এই দৃষ্টিভঙ্গি তাকে বিশ্বমানব তৈরি করবে ঠিকই, তবে শিকড়হীন নয়, সংস্কারশীল নয়,
বরং সমন্বয়ধর্মী।
যেমন পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে বামপন্থিরা কিছুটা চীনের দিকে ঝোঁকেন; ডানপন্থিরা পশ্চিমা শক্তিকে অগ্রাধিকার দেন। কিন্তু বাংলাদেশপন্থি পররাষ্ট্রনীতি বলে– অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ হবে কেবল একটি মাত্র মানদণ্ডে: বাংলাদেশের স্বার্থ যেখানে বেশি রক্ষা পায়, সেই চুক্তিই গৃহীত হবে। এটি কোনো এক পক্ষের প্রতি আনুগত্য নয়, বরং বাস্তবভিত্তিক, অনুগমন নয়। নিজস্ব অবস্থান থেকে পারস্পরিক শ্রদ্ধাভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলার কৌশল।
তিনটি নীতির ক্ষেত্রেই বোঝা যায়, বাংলাদেশপন্থা শূন্য থেকে তৈরি শব্দ নয়; গভীর বাস্তবতার প্রতিফলন, যা দেশের মানুষ, মাটি, সংস্কৃতি ও বৈশ্বিক অবস্থানের সমন্বয় ঘটিয়ে ভবিষ্যতের পথ রচনা করতে চায়।
দর্শন ও মনস্তত্ত্বের ভাষ্যে
এই রাজনীতির ভিত গড়ে তোলা যায় ‘প্রাগমাটিজম’ দর্শনের ওপর। উইলিয়াম জেমস ও জন ডিউই বলেছিলেন, ‘সত্য সেই, যা কার্যকর।’ আদর্শ নয়, বাস্তবতায় দাঁড়ানো মতবাদই টিকে থাকে। এ ছাড়া ‘কগনিটিভ ডিজোন্যান্স’ তত্ত্বমতে, মানুষ নিজের বিশ্বাস ও বাস্তব অভিজ্ঞতার মিল না পেলে অস্বস্তিতে পড়ে। বর্তমান প্রজন্মও দেখতে পাচ্ছে, আদর্শিক কথার চেয়ে প্রয়োজন বাস্তব পরিবর্তন। এই পরিবর্তনই ‘বাংলাদেশপন্থা’র ভিত্তি গড়তে পারে।
সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে
তরুণদের বড় অংশ আদর্শিক রাজনীতিতে ক্লান্ত। তাদের চাওয়া ভালো চাকরি, সুশাসন, নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা। তারা দেখতে চায় এমন রাজনৈতিক দর্শন, যেখানে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ দুটোই থাকে। তারা কোনো দল নয়, বাংলাদেশকে ভালোবাসে। যেমন ইতালির ফাইভ স্টার বা ফ্রান্সের ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন বাম-ডানের সীমা অতিক্রম করে সমাজকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে তুলেছে, তেমনি বাংলাদেশেও সময় এসেছে এমন নতুন ঘরানার রাজনীতির।
সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ
বাংলাদেশপন্থা শুধু রাজনৈতিক বা নীতিনির্ধারণের ধরন নয়; বরং সাংস্কৃতিক পুনর্নির্মাণের প্রয়াস। যে দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে এসে সংস্কৃতিকে মানবিক অভিজ্ঞতার কেন্দ্রে স্থাপন করে। এখানে ‘বাংলাদেশ’ বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন পরিসর, যেখানে মানুষের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও ঐতিহ্য স্থান পায় গভীর মানবিক চেতনায়।
রবীন্দ্রনাথ যে মানবতাবাদের কথা বলেছিলেন, সেটি ছিল রাষ্ট্রের সীমানা অতিক্রম করে বিশ্বনাগরিক চেতনার আকাঙ্ক্ষা; বাংলাদেশপন্থা সেই চিন্তাকে বাঙালি অভিজ্ঞতার পরিসরে ধারণ করে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে গান, নাটক, লোককথা, ঘুড়ি ওড়ানো, পুকুরপাড়ে বসে গল্প বলার সংস্কৃতিকে নিছক ‘লোকজ’ বলে পেছনে ফেলে দেওয়া যায় না। বরং এগুলো হচ্ছে জীবনের গভীর সৌন্দর্য ও সহনশীলতার ধারক, যা মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবতে শেখায়। বাংলাদেশপন্থা সংস্কৃতিকে অস্তিত্ববাদী অভিব্যক্তি হিসেবে দেখছে– যেখানে ‘আমি কে’ প্রশ্নটি রাজনীতি দিয়ে নয়; অভিজ্ঞতা, গল্প, সুর ও ভাষার মধ্য দিয়ে উত্তর পায়। তাই এই দৃষ্টিভঙ্গি নতুন মতবাদ চাপিয়ে দেওয়ার বদলে মানুষের অভ্যন্তরীণ বিকাশ, মর্মজ্ঞান ও সহানুভূতির বিকাশে বিশ্বাস রাখে। এটি মূলত ‘কালচারাল হিউম্যানিজম’। যেখানে মানবতাকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতির নতুন পাঠ রচনা করা হয়; যেখানে ‘বাঙালি হওয়া’ মানে শুধু জাতিগোষ্ঠী নয়, বরং অভিজ্ঞতালব্ধ দার্শনিক অবস্থান।
সময় এসেছে, পথ বদলানোর আজকের তরুণ, আজকের শিক্ষক, আজকের কৃষক– তারা আর কোনো লেবেল চায় না। তারা চায় উত্তর। উত্তর দিতে হলে পুরোনো আদর্শের খোলস ছাড়তে হবে। বাংলাদেশের সামনে এখন সুবর্ণ সুযোগ নতুন রাজনৈতিক ভাষা গড়ে তোলার; যেখানে ‘ইজম’ নয়; ‘স্বার্থ’, ‘সংস্কৃতি’ আর ‘মানবিকতা’ হবে মূল চালিকাশক্তি।
আজকের এই স্লোগান তাই শুধু কথার কথা নয়; আগামী দিনের রাজনীতির নতুন যাত্রার সূচনা– ‘বাম’-‘ডান’-এর দিন শেষ। বাংলাদেশপন্থির হোক বাংলাদেশ।
আলাউদ্দীন মোহাম্মদ: যুগ্ম সদস্য সচিব, জাতীয় নাগরিক পার্টি