বাংলাদেশে উদ্বেগজনক হারে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিবছর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নেয় ৬ থেকে ৮ হাজার শিশু। বর্তমানে দেশে এ রোগীর সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ হাজার। তবে আক্রান্ত শিশুর জন্মের এক থেকে দুই বছরের মধ্যে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট (অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন) করে সম্পূর্ণ সুস্থ করা সম্ভব। সচেতন হলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সহজ।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মালিবাগে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। ৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সহযোগিতায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘থ্যালাসেমিয়ার জন্য সামাজিক ঐক্য গড়ি, রোগীর অগ্রাধিকার নিশ্চিত করি’।

সম্মেলনের শুরুতেই থ্যালাসেমিয়া রোগটি নিয়ে বিস্তারিত উপস্থাপনা তুলে ধরেন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ও মুগদা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ। এ রোগে হিমোগ্লোবিনের গঠন নির্ধারণকারী জিন ত্রুটিযুক্ত হয়। এই জিনের একটি অংশ যদি ত্রুটিযুক্ত হয়, তখন সেই ব্যক্তি হবেন বাহক। তাই বাবা ও মা দুজনই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, শুধু তখনই তাঁদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মানোর ঝুঁকি থাকে। একজন বাহক কিন্তু অন্যজন বাহক না হলে সন্তানের থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জরিপের বরাত দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, বাংলাদেশের ১ কোটি ৮২ লাখের বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক, যা মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ (বিবিএস)। বাহকের এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে রোগীর সংখ্যাও।

এই রোগের লক্ষণ নিয়ে অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, শিশুর জন্মের এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই এই রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। যেমন শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়া, শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, ঘন ঘন রোগসংক্রমণ, খেতে না চাওয়া, ওজন না বাড়া, জন্ডিস, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি। এ রোগে অনেক সময় শিশুর পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যেতে পারে।

বিয়ের আগে দুজনকেই একটি রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। এটিকে বলা হয় সিবিসি টেস্ট বা কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট টেস্ট। এই একটি পরীক্ষা করতে খরচ হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এ ছাড়া রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বিশ্লেষণ করে অথবা ডিএনএ বা জেনেটিক পরীক্ষা মাধ্যমেও থ্যালাসেমিয়ার বাহক শনাক্ত করা যেতে পারে।

এই চিকিৎসক বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগীকে সারা জীবন ভুগতে হয়। মাসে মাসে রক্ত নেওয়া ছাড়াও নিতে হয় অন্যান্য অনেক চিকিৎসা। থ্যালাসেমিয়ার রোগীরা হৃদ্‌রোগ, যকৃতের রোগ, ডায়াবেটিস—এমনকি বন্ধ্যাত্বেও ভোগেন। তাই শিশুর জন্মের এক থেকে দুই বছরের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া শনাক্ত করে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট (অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন) করে শিশুকে সম্পূর্ণ সুস্থ করা সম্ভব বলে জানান এই চিকিৎসক।

আরও পড়ুনথ্যালাসেমিয়া রোগী আর বাহক কিন্তু এক নয়৩১ অক্টোবর ২০২৩

চিকিৎসার চেয়ে সচেতনতার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা বেশি সহজ উল্লেখ করে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, বাহককে জানতে হবে যে তিনি বাহক। তিনি এমন একজনকে বিয়ে করবেন, যিনি বাহক নন। তাহলে তাঁদের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কোনো ভয় থাকবে না। এর জন্য বিয়ের আগে দুজনকেই একটি রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। এটিকে বলা হয় সিবিসি টেস্ট বা কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট টেস্ট। এই একটি পরীক্ষা করতে খরচ হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। এ ছাড়া রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বিশ্লেষণ করে অথবা ডিএনএ বা জেনেটিক পরীক্ষা মাধ্যমেও থ্যালাসেমিয়ার বাহক শনাক্ত করা যেতে পারে।

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে দুজন বাহককে বিয়ে করতে নিরুৎসাহিত করেন চিকিৎসক জান্নাতুল। তবে দুজন বাহকের বিয়ে হয়ে গেলে এবং তাঁরা সন্তান নিতে চাইলে তাঁদের অবশ্যই প্রি–ন্যাটাল বা প্রসবপূর্ব পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসাধীন থাকার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, গর্ভাবস্থার ১২ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভের শিশুর থ্যালাসেমিয়া আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সারা জীবন রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। চিকিৎসায় ন্যূনতম মাসিক খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে যে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে হয়, তাতে খরচ ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা.

সৈয়দা মাসুমা রহমান বলেন, যিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক, তিনি কিন্তু রোগী নন। এটি অবশ্যই ভালো যে রোগটির কোনো লক্ষণই বাহকের শরীরে প্রকাশ পায় না। কিন্তু বাহক যদি না জেনে আরেকজন বাহককে বিয়ে করেন, তাহলে তাঁদের সন্তান গুরুতর থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মাতে পারে। এটি প্রতিরোধে তাই ব্যক্তিপর্যায়ের জনসচেতনতা প্রয়োজন।

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে তরুণদের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়ে সৈয়দা মাসুমা রহমান বলেন, ‘বিয়ের আগে একটি ছোট্ট পরীক্ষাই পারে আপনার ভবিষ্যৎ পরিবারকে রক্ষা করতে।’

আরও পড়ুনকেউ থ্যালাসেমিয়া বাহক কিনা, তা বুঝবেন কীভাবে এবং থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা কী০৮ মে ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: থ য ল স ম য় র ব হক চ ক ৎসক পর ক ষ ন ব হক এই র গ ব হকক ই একট

এছাড়াও পড়ুন:

ঝালকাঠিতে রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পোস্টার

ঝালকাঠিতে ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ঝালকাঠি জেলা শাখার সদস্যরা শহরের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাতে ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগের পক্ষে বরিশাল-ঝালকাঠি আঞ্চলিক মহাসড়কের নলছিটি থানার বিসিক, প্রতাপ, বরইতলা, ভৈরবপাশা, ষাটপাকিয়া, শ্রীরামপুর, আমিরাবাদসহ সড়কের পাশে থাকা বিভিন্ন মাইলফলকে এসব পোস্টার লাগানো হয়।

শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে বিষয়টি সকলে নজরে আসে।

একাধিক সূত্র জানায়, রাতের আঁধারেই এসব পোস্টার লাগানো হয়। ঘটনার পরপরই ঝালকাঠি-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠি পেট্রোল পাম্প মোড়সহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়। পাশাপাশি টহলে রয়েছে জেলা পুলিশের বিভিন্ন টিম। পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদও চলছে।

জেলা বিএনপির সদস্য (দপ্তরের দায়িত্বে) অ্যাডভোকেট মো. মিজানুর রহমান মুবিন বলেন, ‘‘নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ রাতের আঁধারে পোস্টারিং করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। গণঅভ্যুত্থানের পর তাদের সাহস নেই প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি করার, তাই চোরের মতো রাতের আঁধারে পোস্টার লাগিয়েছে।’’

এদিকে, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ঝালকাঠি জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ মধু তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্টারের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ঝালকাঠির বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগানো হয়েছে। যারা পোস্টার লাগিয়েছে, তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’’

নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুস ছালাম বলেন, “পোস্টারগুলো কারা লাগিয়েছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি অনুসন্ধান করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘মহাসড়কে টহল পুলিশ কর্তব্য পালন করছে। হয়তো রাতের আঁধারে কেউ চোখ ফাঁকি দিয়ে পোস্টার লাগিয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা এ কাজ করেছে, তাদের শনাক্তেরও চেষ্টা চলছে।”

ঢাকা/অলোক/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ