অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। সীমান্ত সুরক্ষার সঙ্গে সীমান্তের ওপারে যে–ই থাকবে, তার সঙ্গেই যোগাযোগ রাখবে বাংলাদেশ। কে কী বলল, যায় আসে না।’

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে খলিলুর রহমান এ মন্তব্য করেন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মি। সীমান্ত সুরক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশ অনানুষ্ঠানিকভাবে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। দুই পক্ষের ওই যোগাযোগ বিষয়ে গত মাসে একটি কূটনৈতিক পত্র দিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা।

আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগের বিষয়ে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মতামতের বিষয়ে জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্র। নিজ স্বার্থে যার সঙ্গে ইচ্ছা, তার সঙ্গে কথা বলব। কে কী বলল, যায় আসে না। আমরা একটা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন করেছি এবং সেটি বাস্তবায়ন করছি। মিয়ানমার আরাকান আর্মিকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তারাও (মিয়ানমার) তো তাদের (আরাকান আর্মি) সঙ্গে যোগাযোগ করছে।’

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘একটি জিনিস বিবেচনায় রাখতে হবে। বাংলাদেশের সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ। এ সীমান্ত বাংলাদেশকে ম্যানেজ করতে হবে, রক্ষা করতে হবে, শান্তিপূর্ণ রাখতে হবে। ফলে ওপারে যে–ই থাক, তার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখব। মিয়ানমার আর্মি যদি সেখানে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, তাহলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। আগে তো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।’

রাখাইন থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকে বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে না উল্লেখ করে খলিলুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ চেষ্টা করছে, যাতে নতুন করে রোহিঙ্গা না আসে। কথাটি খুব জোরের সঙ্গে আরাকান আর্মিকে জানিয়েছি। জাতিসংঘের মাধ্যমে আরাকান আর্মিকে জানিয়েছি যে আরাকানে যে নতুন প্রশাসন তৈরি হচ্ছে, তার সব স্তরে রোহিঙ্গাদের দেখতে চায় বাংলাদেশ। যদি সেটি তারা (আরাকান আর্মি) না করে, তাহলে সেটি হবে জাতিগত নিধনের একটি নিদর্শন, যেটি কোনোভাবেই আমরা সমর্থন করতে পারি না। পদক্ষেপটি যদি আরাকান আর্মি না নেয়, তাহলে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল হবে।’

আরাকান আর্মিকে দেওয়া এ বার্তার জবাব বাংলাদেশ পেয়েছে কি না, জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, ‘না, আমরা প্রশ্ন করেছি। জবাব এলে বিচার–বিবেচনা করে দেখব কী ধরনের জবাব পাচ্ছি। এখানে কোনো রাখঢাক নেই, বিষয়টি সাদা–কালো। হয় তারা জাতিগত নিধনের পক্ষে, নয় বিপক্ষে। আমরা পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের জাতিগত নিধন সমর্থন করি না। এটি আরাকান আর্মির জন্য একটি পরীক্ষা। আমরা অপেক্ষা করছি, এ পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হতে পারছে কি না।’

মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের যোগাযোগ আর বোঝাপড়া নিয়ে জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া রয়েছে। কিছুদিন আগে ভূমিকম্পে বাংলাদেশ থেকে সহযোগিতা গেছে, মিয়ানমারের অনুরোধের অপেক্ষা করা হয়নি। মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা, বাণিজ্যসহ সব দিকে যোগাযোগ রয়েছে। কোনো সমস্যা সমাধান চাইলে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে হবে, না হলে সমস্যার সমাধান হবে না।’

মিয়ানমারের সার্বভৌম ও অখণ্ডতার কথা বাংলাদেশ বলছে, আরেক দিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ সাংঘর্ষিক কি না, উত্তরে খলিলুর রহমান বলেন, ‘না, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগটি বাস্তবিক প্রয়োজনীয়তা। ওপারে সীমান্তে তারা (আরাকান আর্মি) আছে, তাদের সঙ্গে তো আমাদের কাজ করতে হবে।’

মানবিক করিডর বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘সব পক্ষ রাজি কি না, আমরা দেখব। রাজি হলেই যে আমরা মানবিক সাহায্য দেব, এমন কোনো কথা নেই। এখানে অন্যান্য বিষয়ও রয়েছে। আরাকানে যে নতুন কর্তৃপক্ষ তৈরি হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব চায়। সেখানে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে, তাদের ওপর যাতে কোনো অত্যাচার না হয়, তাদের সঙ্গে যেন বৈষম্য করা না হয়, তারা যাতে দলে দলে বাংলাদেশে না আসে—এ বিষয়গুলো মানতে হবে। জাতিগত নিধন কোনো অবস্থাতেই বাংলাদেশ মানবে না।’

১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার ঘর বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন করলে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি এসেছে ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে জুলাই–আগস্ট পর্যন্ত। পুরোটাই এসেছে সেখানকার যুদ্ধাবস্থার কারণে। এর আগেও যারা এসেছিল, তারা বন কেটে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব রেখেছিল। বনের এ গাছগুলো পুনরায় ফিরিয়ে আনতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে, অনেক কষ্টও হয়েছে। ফলে পরিবেশগত বিষয় গবেষণা না করে বাংলাদেশ কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম ক উপদ ষ ট সরক র র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

এপ্রিলে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১১ জনের মৃত্যু: এইচআরএসএস

রাজনৈতিক সহিংসতায় গত এপ্রিল মাসে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ১১ জন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরএসএস বলেছে, এপ্রিলে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির আটজন এবং আওয়ামী লীগের তিনজন রয়েছেন। গত মাসে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৭৮টি। এ সময় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৭২৭ জন। তবে মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা কমেছে। মার্চ মাসে এই সংখ্যা ছিল ৯৭টি। মার্চে নিহত হয়েছিলেন ২৩ জন। এসব ঘটনায় আহত হন অন্তত ৭৫৫ জন।

এপ্রিল মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এইচআরএসএস বলছে, রাজনৈতিক সহিংসতার ৭৮টি ঘটনার মধ্যে ৩৯টি বিএনপির অন্তঃকোন্দলের কারণে হয়েছে। এসব ঘটনায় ৭ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন ৪৬৭ জন। বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ২৫টি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০২ জন।

এইচআরএসএস আরও বলেছে, গত মাসে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দুটি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন তিনজন। বিএনপি-এনসিপির মধ্যে তিনটি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ছয়জন। আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে তিনটি সংঘর্ষে আহত হয়েছেন চারজন। এনসিপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের চারটি ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচজন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে তিনটি ঘটনায় ১ জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, ভুক্তভোগীদের পরিবার ও এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এপ্রিলে র‍্যাবের গুলিতে একজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। থানা হেফাজতে একজন মারা গেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ