দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাত চায় না ঢাকা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 6th, May 2025 GMT
দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো ধরনের সংঘাত চায় না ঢাকা বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চায় আলাপ আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান হোক।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে পরররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ঘটনা যা ঘটেছে, আর পাকিস্তান কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটি অবহিত করার জন্য পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করেছিলেন। আমার কাছে তিনি কোনো সহযোগিতা চাননি। বাংলাদেশ চায় যে শান্তি বজায় থাকুক। উত্তেজনা প্রশমনে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উত্তেজনা বাড়তে পারে, এমন কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে, এটাই বাংলাদেশের প্রত্যাশা। বাংলাদেশ চায় আলাপ আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান হোক।
ঢাকার বার্তা দিল্লিকে দেওয়া হবে কি না- উত্তরে তিনি বলেন, দিল্লি যদি ঢাকার কাছে জানতে চায়, তাহলে ঢাকা একই কথা বলবে। তবে আগ বাড়িয়ে কিছু বলবে না ঢাকা। ইসলামাবাদ থেকে যেহেতু ফোন এসেছে, তাই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ শান্তি চায়, আমরা চাই না এখানে কোনো সংঘাত হোক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট পরর ষ ট র
এছাড়াও পড়ুন:
সকল পক্ষের দায়িত্বশীলতা কাম্য
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটে যেই অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হইতেছে, উহা হতাশাজনক। আড়াই মাস পর রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়টি খুলিলেও শিক্ষকরা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন নাই। মঙ্গলবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে দেড় বৎসরের পরীক্ষাজটের মধ্যে রহিয়াছে; তাহার উপর সাম্প্রতিক অচলাবস্থা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি বৃদ্ধি বৈ হ্রাস করিবে না। শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করিবার যেই ঘোষণা দিয়াছেন, উহাও পরিস্থিতি জটিলতর করিয়া তুলিবে। শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমা প্রার্থনা করিবার পর শিক্ষক সমিতির পক্ষে উহা গ্রহণ করাই উচিত হইবে।
কুয়েটের অচলাবস্থার সূচনা হইয়াছে চলতি বৎসরের ১৮ ফেব্রুয়ারি। ঐ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ প্রশ্নে ছাত্রদলের সহিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘাতের অঘটন ঘটে। ইহার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। বস্তুত উক্ত ঘটনার পর কুয়েট প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লইতে ব্যর্থ হয়। হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় না আনিয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার এবং তাহাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। যেই কারণে শেষ পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনের সূচনা করেন। এমনকি তাহারা আমরণ অনশন কর্মসূচিও পালন করিয়াছেন। অবশেষে কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দিয়া সরকার অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ দিয়াছে।
প্রশ্ন হইল, কোন বিবেচনায় ‘অন্তর্বর্তী’ উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হইয়াছে? নিকট অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রকার নিয়োগের দৃষ্টান্ত আমরা দেখি নাই। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যরূপে কুয়েট হইতেই স্বনামধন্য কোনো অধ্যাপককে এই দায়িত্ব দেওয়া যাইত, যাঁহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রহিয়াছে। ‘অন্তর্বর্তী’ সরকার ক্ষমতাসীন; তজ্জন্যই কি অন্য বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ‘অন্তর্বর্তী’ উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হইয়াছে? বস্তুত সরকার চিন্তাভাবনা করিয়াই একজন পূর্ণাঙ্গ উপাচার্য নিয়োগ দিতে পারিত। যাহাই হউক, সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী উপাচার্য সোমবার পৃথকভাবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণের সহিত দীর্ঘ বৈঠক করিয়াছেন। উপাচার্যের আহ্বানে সাড়া দিয়া শিক্ষার্থীরা ক্ষমা প্রার্থনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং তদনুযায়ী সোমবার অপরাহ্ণ ৩টায় শিক্ষকদের নিকট ক্ষমা চাহিয়া শ্রেণি কার্যক্রম সূচনা করিতে উপাচার্যকে পত্রও দিয়াছেন। ইহার পর অপরাহ্ণে শিক্ষকদের সহিত উপাচার্যের বৈঠকের পরও বিদ্যমান সংকটের সমাধান না হওয়া হতাশাব্যঞ্জক।
অস্বীকার করা যাইবে না, শিক্ষকদের কটূক্তি ও লাঞ্ছনা করিয়া শিক্ষার্থীরা অন্যায় করিয়াছেন। কিন্তু যেহেতু তাহারা স্বীয় ভ্রান্তি উপলব্ধি করিয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিয়াছেন; শিক্ষকদের উচিত হইবে উহা গ্রহণ করিয়া শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা। শিক্ষার্থীদের আরও দায়িত্বশীল হইয়া শ্রেণিকক্ষে মনোযোগী হওয়া জরুরি। তাহারা ঠুনকো অজুহাতে যেইভাবে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করিয়া নানামুখী তৎপরতায় যুক্ত হন, উহা আদতে তাহাদেরই ক্ষতির কারণ। কথায় কথায় কর্মসূচি না দিয়া বরং শিক্ষক ও প্রশাসনের সহিত বৈঠক করিয়া সামাধানের চেষ্টাই শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকারে থাকা উচিত।
স্মরণে রাখিতে হইবে, অনতিবিলম্বে কুয়েটে শিক্ষা কার্যক্রম আরম্ভ না হইলে উহা যদ্রূপ সাত সহস্র শিক্ষার্থীকে বিপাকে ফেলিবে, তদ্রূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশও অস্থিতিশীল রাখিবে। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন দীর্ঘতর হইলে উহা তাহাদের পরিবারেও সংকট তৈয়ার করিবে। সর্বোপরি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক না হইলে উহা শিক্ষকদের জন্যও অমঙ্গলজনক হইতে পারে। সমকালের সহিত সাক্ষাৎকারে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলিয়াছেন, তাহারাও দ্রুত শ্রেণিকক্ষে প্রত্যাবর্তন করিতে চাহেন। আমাদের বিশ্বাস, তাহাদের এই সদিচ্ছাকে কার্যে পরিণত করিয়া সংকট নিরসনে নিজেরাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করিবেন।