আগে ছিলেন ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, এখন ছাত্রদলের
Published: 7th, May 2025 GMT
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক সাকিব আল-হাসান রাফি। এবার তিনি ওই কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক হয়েছেন। শুধু প্রচার সম্পাদকই নয় সভাপতি-সম্পাদক করা হয়েছে যাদের, তারাও ছিলেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সম্মুখভাগে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন পদ বঞ্চিতরা। সংবাদ সম্মেলন শেষে এর প্রতিবাদে সদ্যঘোষিত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি রাইসুল ইসলাম রুপুসহ দুই ছাত্রদল নেতা পদত্যাগ করেন।
গত ৬ মে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শামীম চৌধুরী ও সদস্য সচিব জাকারিয়া আহম্মেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে রবিউল ইসলামকে সভাপতি ও আসিবুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের ১০ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করা হয়। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় এই কমিটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশকিছু ভাইরাল হওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এবং পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, বর্তমান ছাত্রদলের কমিটি পাওয়া মো.
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাফসান আহম্মেদ রাকিব স্টাটাস দিয়ে লিখেছেন, মজার ব্যাপার হলো একজন ছোটভাই ছাত্রলীগে যে পোস্টে ছিল, ছাত্রদলেও সেই পোস্টেই আছে—শুধু নামটা বদলেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া বর্তমান কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম জানান, আমি দীর্ঘদিন যাবৎ বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত, কখনো ছাত্রলীগ করিনি। তবে যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে ওইদিন আমাকে ডেকে নিয়ে প্রোগ্রাম করিয়েছে ছাত্রলীগ।
এ বিষয়ে কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ও ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক সাকিব আল-হাসান রাফি বলেন, আমার পরিবার ও আমি সবসময় বিএনপি করে আসছি। আমি যদি এই কলেজে লেখাপড়া করি তাহলে ছাত্রলীগের কমিটিতে আমার নাম থাকতে হবে এ কথা বলে জোরপূর্বক তখনকার ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সম্পাদক আমার নাম রাখে। কিন্তু আমি কখনো ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করিনি। আমি ছাত্রদলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী।
এ বিষয়ে জানতে মহিপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি তানজিল আলম ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা মোবাইল রিসিভ করেনি।
জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান শামীম চৌধুরী বলেন, আমরা তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে কমিটি দিয়েছি। আমরা জেনেছি তারা দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে তাদের বিষয়ে যে অভিযোগগুলো আসছে, তা খতিয়ে দেখছে দল। পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আরও খোঁজখবর নিয়ে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ছ ত রদল র কল জ ছ ত র র জন ত র কম ট
এছাড়াও পড়ুন:
একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ
চট্টগ্রাম নগরীর অলিগলিতে প্রতিদিন জমে ওঠা প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের অজান্তেই হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের সম্পদ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা উঠলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে দুর্গন্ধযুক্ত ডাস্টবিন বা বিশাল ল্যান্ডফিলের ছবি। অথচ সে চিত্রটাই বদলে দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার সমন্বিত উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি নতুন মডেল, যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য রূপ নিচ্ছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যে।
এই উদ্যোগের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো– ‘সার্কুলার ইকোনমি’র ধারণা প্রতিষ্ঠা, অর্থাৎ একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে অর্থনৈতিক চক্রে ফিরিয়ে আনা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন একটি ওয়ার্ডের বাসিন্দা হুসনেআরা একজন সক্রিয় রিসাইকলার। প্রতিদিন সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন থেকে গড়ে ৭০-১৫০ কেজি প্লাস্টিক, পলিথিন ও ধাতব বর্জ্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তিনি সরবরাহ করেন স্থানীয় ডিলারদের কাছে। এ কাজ থেকে মাসে আয় হয় প্রায় ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। উদ্যোগের আওতায় কাজ করে হুসনেআরা শুধু নিজের জীবিকা নির্বাহই করছেন না, বরং অপচনশীল কঠিন বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখছেন।
‘আগে লোকজন বলত, এসব কুড়িয়ে কী হবে? এখন বোঝে, আমি পরিবেশও বাঁচাই, ঘরও চালাই’– বলেন হুসনেআরা। সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করতে খানিকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমি চাই না ওদের ওপর ভর করে চলি, যতদিন পারি নিজে কষ্ট করে খাই।’
হুসনেআরার এই নিষ্ঠা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি তাঁকে চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠ ভাঙারিওয়ালা হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে, যা তাঁর মতো আরও অনেককেই কঠোর পরিশ্রম ও পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহ ও মর্যাদা দিয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে হুসনেআরার মতো প্রায় তিন হাজার বর্জ্য সংগ্রাহক প্রতিদিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত আছেন, যা এ উদ্যোগটিকে একটি সফল পরিবেশ-অর্থনীতি সম্মিলিত মডেলে রূপ দিয়েছে।
চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। ২০২২ সাল থেকে চালু হওয়া ‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ উদ্যোগের আওতায় এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ হাজার টনের বেশি কঠিন বর্জ্য, যার মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ প্লাস্টিক এবং ৭০ শতাংশ সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক।
আমাদের দেশের প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের আকার বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করে থাকে। এ শিল্পে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ লাখ মানুষ নিয়োজিত। এটি দেশের ১২তম বৃহৎ রপ্তানি খাত, যেখান থেকে প্রতিবছর ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় হয়। তাছাড়া সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে এ খাত থেকে।
একজন বর্জ্য সংগ্রাহক মাসে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন, যা একদিকে তাদের জীবিকা নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে শহরকে করে তুলছে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য।
শিক্ষার্থী
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম কলেজ