ফুলবাড়ীতে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) বা চর্মরোগে সহস্রাধিক গরু আক্রান্ত হয়েছে। গত এক মাসে এ রোগে ১৮টি গরু মারা গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
ফুলবাড়ী প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় নিবন্ধিত খামার ৪০টি। অনিবন্ধিত ৫৩৭টি। গরুর রয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি, মহিষ ৭০টি, ছাগল ৮৫ হাজার ৬৯০টি এবং ভেড়া ৫ হাজার ৫৩টি।
জানা যায়, এলএসডি রোগটি এক ধরনের চর্মরোগ হলেও এতে গরুর মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। এটি ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। গরু-বাছুর প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয়। একপর্যায়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। জ্বরের সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়। একপর্যায়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গার চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্ট হয়। এই ক্ষত শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। গরু ঝিম মেরে থাকে ও কাঁপতে শুরু করে। কিডনির ওপর প্রভাব পড়ার ফলে গরু মারাও যায়।
উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাত ইউনিয়নে লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বেশি আক্রান্ত হয়েছে পৌরসভা ও এলুয়াড়ী ইউনিয়নে। গত এক মাসে সহস্রাধিক গরু আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ১৮টি। এর মধ্যে বেতদিঘী ইউনিয়নের চিন্তামন গ্রামের লিটন হোসেন, খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের অম্রবাড়ী গ্রামের টুরু চন্দ্র, রওশন ও রতন, পৌরসভার চকচকা গ্রামের মেহেদুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, সোহেল, আমানত, সাজু, নজরুল, জনি এবং পৌরসভার বারোকোনা গ্রামের কাশেম, তেঁতুলডাঙ্গার সুজন মিয়া, আশরাফুলের একটি করে বাছুর মারা গেছে। গত বৃহস্পতিবার পূর্ব রামচন্দ্রপুর গ্রামের বেলাল হোসেন ও চকসাহাবাজপুরের মন্টুর একটি করে বাছুর মারা গেছে।
এলুয়াড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নবিউল ইসলাম বলেন, এক মাসে লাম্পি স্কিন রোগে ১৮টি গরু মারা গেছে শুনেছি। অনেকেই ভয়ে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
সাবেক ইউপি সদস্য আ.
প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের এলএসপি (লাইভ স্টক সার্ভিস প্রোপ্রাইটর) সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, এলএসডি রোগে গরু দুর্বল হয়ে পড়ে। রোগের ব্যাপারে খামারিদের সচেতন করে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত গরুকে আলাদা রাখতে বলা হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার হাসান বলেন, আক্রান্ত পশুর জন্য ৫০টি টিকা (লাম্পি ভ্যাক্স) বরাদ্দ এসেছে। একটি টিকা ১০টি গরুকে দেওয়া যায়। দাম পড়ে ২৭০০ টাকা। আক্রান্ত পশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বরাদ্দ বাড়ালে এবং দাম কমানো গেলে খামারিরা উপকৃত হবেন। তিনি আরও বলেন, আক্রান্ত পশু দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক দিলে মারা যেতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসাহাক আলী বলেন, আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাগেরহাটে ভূমি কার্যালয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে তিন ভুয়া সাংবাদিক আটক
বাগেরহাটে সাংবাদিক পরিচয়ে ভূমি কার্যালয়ে চাঁদাবাজি করতে যাওয়ার অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট শহরের পুরাতন বাজার এলাকার ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় (তহসিল কার্যালয়) থেকে তাঁদের আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন মনিরুজ্জামান, মো. মোস্তফা শিকদার ও মো. নাসির সরদার। তাঁদের কাছ থেকে সাংবাদিক লেখা তিনটি আইডি কার্ড পাওয়া গেছে। কার্ডের তথ্য অনুযায়ী, মনিরুজ্জামান এসটিভি বাংলার ক্রাইম রিপোর্টার, মোস্তফা ও নাসির সাপ্তাহিক তথ্য বাণী ও দৈনিক রূপবাণী পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার।
বাগেরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম নুরুন্নবী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা প্রথমে আমার দপ্তরে আসেন। তাঁরা সেখানে নাজির ও সার্ভেয়ারের খোঁজ করতে থাকেন। একই সঙ্গে তাঁরা অন্যান্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাওয়ার পথ জানতে চান। একপর্যায়ে তাঁদের একজন আমার অফিসের সার্ভেয়ারের কাছে বলেন যে তাঁদের কিছু টাকা দরকার, তাঁরা ঢাকা থেকে আসছেন। পরে সেখান থেকে তাঁরা পাশের তহসিল অফিসে যান। পরে খবর পেয়ে আমি সেখানে গেলে তাঁরা নিজেদের অবৈধ আইপি টিভির সাংবাদিক পরিচয় দেন। আমি নিজেও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী। আমি তাঁদের জিজ্ঞাসা করি, আইপি টিভির তো বৈধতা নেই। একপর্যায়ে তাঁরা বলেন, তাঁরা ঢাকা থেকে আসছেন, একটা মাদকের স্টোরি করার জন্য এবং এখানে এসে বসছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করে থানা-পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ এসে তাঁদের আটক করে নিয়ে যায়।’
বাগেরহাট সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহামুদ-উল-হাসান বলেন, তাঁরা একটি প্রতারক চক্র। সাংবাদিকের ভুয়া পরিচয় দিয়ে তাঁরা টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ঢাকায় যাওয়ার ভাড়া নেই বলে তাঁরা টাকা চান। এ ঘটনায় ভুয়া পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান বলেন, কিছু ব্যক্তি সাংবাদিকতা পেশার পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন, যা প্রকৃত সাংবাদিকদের জন্য লজ্জাজনক। আটক তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।