সুরা মরিয়ম পবিত্র কোরআনের ১৯তম সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এতে মোট ৯৮টি আয়াত রয়েছে। এই সুরায় নবী জাকারিয়া (আ.) ও তাঁর পুত্র ইয়াহিয়া (আ.)–এর ঘটনার পর মরিয়ম (আ.) ও ঈসা (আ.)–এর অলৌকিক জন্মবৃত্তান্ত বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে ঈসা (আ.)–কে আল্লাহর পুত্র বলে দাবি করা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, এটি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। সুরার শেষাংশে বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহর ভালোবাসা ও সতর্কবার্তা উল্লেখ রয়েছে।
ঈসা (আ.
)–এর জন্মের অলৌকিক ঘটনা
সুরা মরিয়মের ১৬ থেকে ৪০ নম্বর আয়াতে মরিয়ম (আ.) ও ঈসা (আ.)–এর জন্মের বিস্ময়কর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর কুদরতে মরিয়ম (আ.) স্বামী ছাড়াই গর্ভবতী হন। প্রসবের সময় তিনি নির্জন স্থানে চলে যান এবং বেদনায় কাতর হয়ে বলেন, ‘হায়! এর আগে যদি আমি মরে যেতাম এবং মানুষ আমাকে সম্পূর্ণ ভুলে যেত!’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ২৩)
এ সময় ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘এ সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন ও মানবজাতির জন্য রহমত। এটি আল্লাহর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
এ ঘটনা প্রমাণ করে যে ঈসা (আ.) একজন নবী ছিলেন, তিনি আল্লাহর পুত্র নন।
আরও পড়ুনযে কারণে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়া হয়০৮ এপ্রিল ২০২৫ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পিতার সংলাপ
এই সুরায় ইবরাহিম (আ.)–এর কাহিনিও বর্ণিত হয়েছে। তিনি তাঁর মূর্তিপূজারী পিতাকে সত্যের দাওয়াত দেন, ‘হে আমার পিতা, যে শোনে না, দেখে না এবং তোমার কোনো উপকারে আসে না, তুমি কেন তার ইবাদত কর?... শয়তানের আনুগত্য করো না, সে তো দয়াময়ের অবাধ্য!’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ৪২–৪৪)
পিতা হুমকি দিলে ইবরাহিম (আ.) বলেন, ‘তোমার জন্য শান্তি কামনা করি। আমি আমার রবের কাছে তোমার ক্ষমাপ্রার্থনা করব।’ অবশেষে ইবরাহিম (আ.)–কে আল্লাহ নবী হিসেবে মনোনীত করেন এবং তাঁর বংশধরদের মধ্যে অনেক নবী প্রেরণ করেন।
অন্যান্য নবীদের আলোচনা
সুরা মরিয়মে আরও উল্লেখ রয়েছে, মুসা (আ.) ও হারুন (আ.)–এর নবুয়ত, ইসমাইল (আ.)–এর সততা ও ইদরিস (আ.)–এর উচ্চ মর্যাদার কথা।
সুরার শেষে আল্লাহ মুমিনদের জন্য আশার বাণী শোনান, ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, দয়াময় তাদের জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ৯৬)
এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনকে সহজ ভাষায় নাজিল করার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, ‘আমি তোমার ভাষায় কোরআন সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি এর মাধ্যমে সতর্ককারীদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ৯৭)
আরও পড়ুনযাঁর নামে কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে০৮ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়বে না: শেখ বশিরউদ্দীন
ভারত আরও চারটি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাংলাদেশের রপ্তানিতে তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, এমন কোনো বিষয়ে ছাড় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়নি। দুই দেশের মধ্যে খাদ্য ও কৃষিপণ্যের আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি মেটানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে দর–কষাকষি চালিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সে বিষয়ে ১৫ শতাংশের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ।
আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা থাকলেও এতটা অস্থিতিশীল নয় যে ব্যবসা–বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। তাই রপ্তানির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে তাতে সমস্যা হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের নতুন বিধিনিষেধের আওতায় সে দেশের ব্যবসায়ীরা এখন বাংলাদেশ থেকে চার ধরনের পাটের পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারবেন না। শুধু দেশটির মুম্বাইয়ের নভসেবা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানির সুযোগ আছে। এমন বিধিনিষেধ দিয়ে গতকাল সোমবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য মহাপরিচালকের কার্যালয় (ডিজিএফটি) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে গত কয়েক মাসে কয়েক দফায় অশুল্ক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। এর আগে গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দেয় দেশটি। তার আগে ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করে দেশটি।
এদিকে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভারত বাতিল করার এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করেছে। এর আগে বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ ছিল।