প্রায় ২৪ বছর আগে ট্রপিক্যাল গার্ডেন প্ল্যান্টস বইয়ে একটা ফুলের ছবি দেখে ফুলটা বাস্তবে দেখার জন্য উতলা হয়েছিলাম। ছবিতে ফুলটার চেহারা ছিল অন্য রকম— এ রকম ফুল কখনো আগে চোখে পড়েনি। বইটাতে ১৬৬৭টি ফুল ও বাহারি গাছের ছবির মধ্যে এই ১৭২ নম্বর ছবিটা ঘুরেফিরে আমার মনে ভেসে বেড়াচ্ছিল। কী অদ্ভুত চেহারা! এ ফুল কি এ দেশে আছে? বাংলাদেশের উদ্ভিদ তালিকাতেও এর নাম খুঁজে পাইনি। এ দেশের বইপত্র ঘেঁটেও সে সময় কোনো কুলকিনারা করতে না পেরে ধরে নিয়েছিলাম, ও ফুল বোধ হয় এ দেশে নেই। নানা জায়গায় ঘুরেছি, কত গাছপালা দেখেছি, কিন্তু ওই ফুলের ছবিটাকে মন থেকে মুছতে পারিনি।
অবশেষে প্রায় ২০ বছর আগে বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশে এক বসন্তে সে ফুলকে দেখে শিহরিত হয়েছিলাম। তাহলে দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সে ফুল এ দেশে আছে! কে কবে সে গাছ এনে বলধা উদ্যানে লাগিয়েছিলেন, কে জানে?
গাছটা খুব বেশি বড় নয়। মুগ্ধতা নিয়ে সে ফুলকে দেখে ছবি তুলে ফিরে এসে আবার বইপত্র নিয়ে বসেছিলাম। নাহ্, এর কোনো বাংলা বা স্থানীয় নাম পেলাম না। ট্রপিক্যাল গার্ডেন প্ল্যান্টস বইয়ে সে ফুলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম পেলাম Napoleonaea imperialis, গোত্র Lecythidaceae, ইংরেজি নাম Napoleon’s Hat Plant.
কয়েক বছর আর বলধায় যাওয়া হয়নি। ঢাকার গাছপালা অনুসন্ধান করতে গিয়ে সম্প্রতি বেশ কয়েকবার বলধা উদ্যানে গিয়েছি। কিন্তু কেন জানি না, সেই ফুলটা আর চোখে পড়েনি। ভেবেছিলাম, এত বছর পর বলধার সে গাছটা বোধ হয় মরে গেছে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল। ৭ চৈত্র, এক মেঘমাখা সকাল, ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে, কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিও পড়ল মেঘ থেকে। কিন্তু বাসা থেকে তো বলধা উদ্যানে যাব বলে বেরিয়ে পড়েছি। তাই ওসবের তোয়াক্কা না করে চলে গেলাম সেখানে। সিবিলি অংশে ঢুকতেই ডান পাশে হঠাৎ আবার সেই ফুলটার দিকে চোখ পড়ল। ছোট ঝোপালো গাছটায় প্রচুর ফুল ফুটেছে। দীর্ঘদিন পর আবার ফুলটাকে দেখে মন ভরে গেল।
ফুলটার ব্যতিক্রমী গড়ন ও রং আসলে আমাকে আকর্ষণ করেছিল বলেই এর প্রতি আমার আগ্রহটা বেড়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও আর কোথাও তাকে দেখিনি। তাই এবারের দেখাটা আমার পুনঃ আবিষ্কারের মতোই ঘটনা। রাজমুকুট ফুলের গাছ খুব বড় হয় না, ছোট ঝোপালো চিরসবুজ বৃক্ষ বা গুল্ম, শাখা-প্রশাখা দোলানো। গাছ বড়জোর ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছের কাণ্ড থেকে ফুল জন্মে। একটি গুচ্ছে দু-তিনটি ফুল থাকলেও একটি একটি করে তা ফোটে। ফুল ফোটে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত।
এই শোভাময়ী গাছটা কেন বাগানে বাগানে ছড়াচ্ছে না, সেটিই অবাক ব্যাপার।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্লভ সেই রাজমুকুট ফুল
প্রায় ২৪ বছর আগে ট্রপিক্যাল গার্ডেন প্ল্যান্টস বইয়ে একটা ফুলের ছবি দেখে ফুলটা বাস্তবে দেখার জন্য উতলা হয়েছিলাম। ছবিতে ফুলটার চেহারা ছিল অন্য রকম— এ রকম ফুল কখনো আগে চোখে পড়েনি। বইটাতে ১৬৬৭টি ফুল ও বাহারি গাছের ছবির মধ্যে এই ১৭২ নম্বর ছবিটা ঘুরেফিরে আমার মনে ভেসে বেড়াচ্ছিল। কী অদ্ভুত চেহারা! এ ফুল কি এ দেশে আছে? বাংলাদেশের উদ্ভিদ তালিকাতেও এর নাম খুঁজে পাইনি। এ দেশের বইপত্র ঘেঁটেও সে সময় কোনো কুলকিনারা করতে না পেরে ধরে নিয়েছিলাম, ও ফুল বোধ হয় এ দেশে নেই। নানা জায়গায় ঘুরেছি, কত গাছপালা দেখেছি, কিন্তু ওই ফুলের ছবিটাকে মন থেকে মুছতে পারিনি।
অবশেষে প্রায় ২০ বছর আগে বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশে এক বসন্তে সে ফুলকে দেখে শিহরিত হয়েছিলাম। তাহলে দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সে ফুল এ দেশে আছে! কে কবে সে গাছ এনে বলধা উদ্যানে লাগিয়েছিলেন, কে জানে?
গাছটা খুব বেশি বড় নয়। মুগ্ধতা নিয়ে সে ফুলকে দেখে ছবি তুলে ফিরে এসে আবার বইপত্র নিয়ে বসেছিলাম। নাহ্, এর কোনো বাংলা বা স্থানীয় নাম পেলাম না। ট্রপিক্যাল গার্ডেন প্ল্যান্টস বইয়ে সে ফুলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম পেলাম Napoleonaea imperialis, গোত্র Lecythidaceae, ইংরেজি নাম Napoleon’s Hat Plant. নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের রাজার মুকুট পরেছিলেন। তাঁর নামের সম্মানেই সে বছর এ গাছের এই উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম রাখা হয়েছিল। সম্রাট নেপোলিয়ান বিশেষ ধরনের টুপি পরতেন, যাকে বলা হতো নেপোলিয়ান টুপি। এই ফুলটাও দেখতে খানিকটা নেপোলিয়ানের টুপির মতো, তাই এ গাছের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে নেপোলিয়ান হ্যাট প্ল্যান্ট। বাংলায় কোনো নাম নেই, তবে ইংরেজি নামের সঙ্গে মিল রেখে এর নাম রাজমুকুট রাখা যেতে পারে, রানিমুকুট নয়। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নামটাও তা সমর্থন করে। কেননা উদ্ভিদতাত্ত্বিক নামের শেষাংশ ইম্পেরিয়ালিস, যার অর্থ ‘রাজভাব’ (Kingly) বা ‘রাজকীয়’ (Royal) অথবা সাম্রাজ্য, রাজাদেরই থাকে সাম্রাজ্য, রাজার মুকুট বা টুপিকে বলা হয় রাজমুকুট। তা ছাড়া ফুলের গড়ন ও রংটাও যেন সোনায় গড়া রাজমুকুটের মতো।
কয়েক বছর আর বলধায় যাওয়া হয়নি। ঢাকার গাছপালা অনুসন্ধান করতে গিয়ে সম্প্রতি বেশ কয়েকবার বলধা উদ্যানে গিয়েছি। কিন্তু কেন জানি না, সেই ফুলটা আর চোখে পড়েনি। ভেবেছিলাম, এত বছর পর বলধার সে গাছটা বোধ হয় মরে গেছে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল। ৭ চৈত্র, এক মেঘমাখা সকাল, ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে, কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিও পড়ল মেঘ থেকে। কিন্তু বাসা থেকে তো বলধা উদ্যানে যাব বলে বেরিয়ে পড়েছি। তাই ওসবের তোয়াক্কা না করে চলে গেলাম সেখানে। সিবিলি অংশে ঢুকতেই ডান পাশে হঠাৎ আবার সেই ফুলটার দিকে চোখ পড়ল। ছোট ঝোপালো গাছটায় প্রচুর ফুল ফুটেছে। দীর্ঘদিন পর আবার ফুলটাকে দেখে মন ভরে গেল।
ফুলটার ব্যতিক্রমী গড়ন ও রং আসলে আমাকে আকর্ষণ করেছিল বলেই এর প্রতি আমার আগ্রহটা বেড়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও আর কোথাও তাকে দেখিনি। তাই এবারের দেখাটা আমার পুনঃ আবিষ্কারের মতোই ঘটনা। রাজমুকুট ফুলের গাছ খুব বড় হয় না, ছোট ঝোপালো চিরসবুজ বৃক্ষ বা গুল্ম, শাখা-প্রশাখা দোলানো। গাছ বড়জোর ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছের কাণ্ড থেকে ফুল জন্মে। একটি গুচ্ছে দু-তিনটি ফুল থাকলেও একটি একটি করে তা ফোটে। ফুল ফোটে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত।
এই শোভাময়ী গাছটা কেন বাগানে বাগানে ছড়াচ্ছে না, সেটিই অবাক ব্যাপার।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক