Prothomalo:
2025-11-17@12:34:29 GMT

দুর্লভ সেই রাজমুকুট ফুল

Published: 9th, May 2025 GMT

প্রায় ২৪ বছর আগে ট্রপিক্যাল গার্ডেন প্ল্যান্টস বইয়ে একটা ফুলের ছবি দেখে ফুলটা বাস্তবে দেখার জন্য উতলা হয়েছিলাম। ছবিতে ফুলটার চেহারা ছিল অন্য রকম— এ রকম ফুল কখনো আগে চোখে পড়েনি। বইটাতে ১৬৬৭টি ফুল ও বাহারি গাছের ছবির মধ্যে এই ১৭২ নম্বর ছবিটা ঘুরেফিরে আমার মনে ভেসে বেড়াচ্ছিল। কী অদ্ভুত চেহারা! এ ফুল কি এ দেশে আছে? বাংলাদেশের উদ্ভিদ তালিকাতেও এর নাম খুঁজে পাইনি। এ দেশের বইপত্র ঘেঁটেও সে সময় কোনো কুলকিনারা করতে না পেরে ধরে নিয়েছিলাম, ও ফুল বোধ হয় এ দেশে নেই। নানা জায়গায় ঘুরেছি, কত গাছপালা দেখেছি, কিন্তু ওই ফুলের ছবিটাকে মন থেকে মুছতে পারিনি।

অবশেষে প্রায় ২০ বছর আগে বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশে এক বসন্তে সে ফুলকে দেখে শিহরিত হয়েছিলাম। তাহলে দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সে ফুল এ দেশে আছে! কে কবে সে গাছ এনে বলধা উদ্যানে লাগিয়েছিলেন, কে জানে?

গাছটা খুব বেশি বড় নয়। মুগ্ধতা নিয়ে সে ফুলকে দেখে ছবি তুলে ফিরে এসে আবার বইপত্র নিয়ে বসেছিলাম। নাহ্, এর কোনো বাংলা বা স্থানীয় নাম পেলাম না। ট্রপিক্যাল গার্ডেন প্ল্যান্টস বইয়ে সে ফুলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম পেলাম Napoleonaea imperialis, গোত্র Lecythidaceae, ইংরেজি নাম Napoleon’s Hat Plant.

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সের রাজার মুকুট পরেছিলেন। তাঁর নামের সম্মানেই সে বছর এ গাছের এই উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম রাখা হয়েছিল। সম্রাট নেপোলিয়ান বিশেষ ধরনের টুপি পরতেন, যাকে বলা হতো নেপোলিয়ান টুপি। এই ফুলটাও দেখতে খানিকটা নেপোলিয়ানের টুপির মতো, তাই এ গাছের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে নেপোলিয়ান হ্যাট প্ল্যান্ট। বাংলায় কোনো নাম নেই, তবে ইংরেজি নামের সঙ্গে মিল রেখে এর নাম রাজমুকুট রাখা যেতে পারে, রানিমুকুট নয়। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নামটাও তা সমর্থন করে। কেননা উদ্ভিদতাত্ত্বিক নামের শেষাংশ ইম্পেরিয়ালিস, যার অর্থ ‘রাজভাব’ (Kingly) বা ‘রাজকীয়’ (Royal) অথবা সাম্রাজ্য, রাজাদেরই থাকে সাম্রাজ্য, রাজার মুকুট বা টুপিকে বলা হয় রাজমুকুট। তা ছাড়া ফুলের গড়ন ও রংটাও যেন সোনায় গড়া রাজমুকুটের মতো।

কয়েক বছর আর বলধায় যাওয়া হয়নি। ঢাকার গাছপালা অনুসন্ধান করতে গিয়ে সম্প্রতি বেশ কয়েকবার বলধা উদ্যানে গিয়েছি। কিন্তু কেন জানি না, সেই ফুলটা আর চোখে পড়েনি। ভেবেছিলাম, এত বছর পর বলধার সে গাছটা বোধ হয় মরে গেছে। কিন্তু আমার ধারণা ভুল। ৭ চৈত্র, এক মেঘমাখা সকাল, ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে, কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিও পড়ল মেঘ থেকে। কিন্তু বাসা থেকে তো বলধা উদ্যানে যাব বলে বেরিয়ে পড়েছি। তাই ওসবের তোয়াক্কা না করে চলে গেলাম সেখানে। সিবিলি অংশে ঢুকতেই ডান পাশে হঠাৎ আবার সেই ফুলটার দিকে চোখ পড়ল। ছোট ঝোপালো গাছটায় প্রচুর ফুল ফুটেছে। দীর্ঘদিন পর আবার ফুলটাকে দেখে মন ভরে গেল।

ফুলটার ব্যতিক্রমী গড়ন ও রং আসলে আমাকে আকর্ষণ করেছিল বলেই এর প্রতি আমার আগ্রহটা বেড়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও আর কোথাও তাকে দেখিনি। তাই এবারের দেখাটা আমার পুনঃ আবিষ্কারের মতোই ঘটনা। রাজমুকুট ফুলের গাছ খুব বড় হয় না, ছোট ঝোপালো চিরসবুজ বৃক্ষ বা গুল্ম, শাখা-প্রশাখা দোলানো। গাছ বড়জোর ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছের কাণ্ড থেকে ফুল জন্মে। একটি গুচ্ছে দু-তিনটি ফুল থাকলেও একটি একটি করে তা ফোটে। ফুল ফোটে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত।

এই শোভাময়ী গাছটা কেন বাগানে বাগানে ছড়াচ্ছে না, সেটিই অবাক ব্যাপার।

মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তর এগিয়ে নেওয়া। এ জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেই সংস্কার নিশ্চিত করা। আর কয়েক মাস পর নির্বাচন। নির্বাচন ভালোমতো করার জন্য যা যা করা দরকার, সেটি করার জন্য এখন মনোযোগ দেওয়া দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ ফিরিয়ে আনা। অথচ এসব দিকে সরকারের মনোযোগ বা সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনের এসব বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে যেটিতে তাদের এখতিয়ার নেই, সেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতেই সরকারের যত আগ্রহ। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সরকার এসব চুক্তি করছে। দেশের মানুষ, বিশেষজ্ঞ—কারও কথা না শুনে, জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা না করে ভয় দেখিয়ে একের পর এক চুক্তি করছে সরকার।

একটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার এ রকম অস্থায়ী সরকারের থাকে না। এসবের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার হয়। শুধু নির্বাচিত সরকারও এভাবে করতে পারে না। নির্বাচিত সরকার এ ধরনের চুক্তি করলে সেগুলো সংসদে তুলতে হবে, সেখানে তর্ক-বিতর্ক হবে, দেশের মানুষ জানবে। আর কয় মাস পর নির্বাচন। এই সময় সরকারের এই ধরনের চুক্তিতে এত আগ্রহ কেন? বন্দর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি যদি দেশের উন্নয়নের জন্যই হয়, তাহলে এত গোপনীয়তা, অস্বচ্ছতা ও তাড়াহুড়া কেন?

চুক্তি নিয়ে এই সরকারের অতি আগ্রহ বড় সন্দেহের কারণ। মনে হচ্ছে বিদেশি কোম্পানির কিছু লবিস্ট এই সরকার চালাচ্ছে। তাদের কাজ হলো কোনো না কোনোভাবে বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় গোপনে অস্বচ্ছভাবে চুক্তি করে ফেলা। সেটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, যাতে পরবর্তী কোনো সরকার এসে কিছু করতে না পারে। কিন্তু এই চুক্তির বোঝা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে বহু বছর।

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, স্বচ্ছতা নিয়মনীতি মেনে কাজ হবে, তার প্রতি এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছু নয়। একই সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলাপ-আলোচনা করছে, অথচ সরকারের জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতা নিয়ে তারা যে নিশ্চুপ থাকল, সেটার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে।

আমরা দেখেছি, এ রকম চুক্তির আগে সব সময় যুক্তি দেওয়া হয়, বিদেশি কোম্পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কোম্পানি। আবার মানুষের মধ্যে এই বোধ তৈরি করা হয় যে আমরা পারব না। আমাদের পক্ষে কিছুই সম্ভব নয়। বিদেশিরা এলে কাজ হবে। আবার আমরা থাকলে দুর্নীতি হবে। বিদেশিরা এলে দুর্নীতি হবে না। এই হীনম্মন্যতা তৈরি করে এবং তার ওপর ভর করে বিদেশি কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। বিদেশিদের পক্ষে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালাতে থাকে তাদের সুবিধাভোগী দেশি লোকজন। কিন্তু বিদেশিরা এলে যে দুর্নীতি হবে না, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে দেওয়া হয়? আন্তর্জাতিকভাবে কি দুর্নীতি হয় না? চুক্তির আগে মাশুল যে বাড়ানো হলো, এটাও তো দুর্নীতির একটা ধরন।

বিদেশি কোম্পানি যে দক্ষ, আন্তর্জাতিক যে স্বীকৃতি, সেই কোম্পানিগুলো কিন্তু এমনিতেই গড়ে ওঠেনি। জাতীয় সক্ষমতার প্রক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠেছে এসব কোম্পানি। বাংলাদেশকেও জাতীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়াতে হবে। সে জন্য নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটা দেশ শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, যখন নিজের সক্ষমতা তৈরি হয়। এই সরকার দেশকে বিপন্ন করে তার উল্টো দিকে যাত্রা করছে।

লেখক পরিচয়: অর্থনীতিবিদ ও সম্পাদক, সর্বজনকথা

সম্পর্কিত নিবন্ধ