প্রায় ১৫৮ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে চাঁদপুরের কচুয়ার সাচার রথযাত্রা। এই রথযাত্রা অত্র অঞ্চলের একটি সনাতনী মিলনমেলার ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। 

শুক্রবার (২৭ জুন) বিকাল ৫টায় সাচার বাজারে লাখো ভক্ত দড়ি টেনে রথ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়। যার উল্টো রথ আগামী ৪ জুলাই শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে।

রথযাত্রায় আগত সনাতনীরা জানান, এখানে রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে কয়েকশ’ ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। জগন্নাথ দর্শনের পাশাপাশি তাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কেনাকাটা করতে পারেন দর্শনার্থীরা। সাচার জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রায় এলে এখানে অবস্থিত দুর্গা মন্দির, লোকনাথ মন্দির এবং কালী মন্দিরও ঘুরে দেখা যায়। তাই সাচারের রথযাত্রা সনাতনীদের কাছে আবেগ ও অনুভূতির স্থান।

সরজমিনে দেখা যায়, রথে সুসজ্জিত জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রাকে বাতাস দিচ্ছেন সেবায়েতগণ। আর ভক্তরা সে রথের দড়ি ধরে সুশৃঙ্খলভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। এর মাঝে ভক্তদের উৎফুল্ল করতে রথ থেকে সেবায়েতগণ ফল ও ফুল ছুড়ে দিচ্ছেন। তা ভক্তরা পরম আনন্দে গ্রহণ করছেন।

মন্দিরের ভক্ত সাংবাদিক রাজিব সরকার জানান, ১২৭৭ বঙ্গাব্দে সাচারে এই রথের প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর থেকেই আষাঢ়ে জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রার প্রতিমূর্তি স্থাপন করে প্রথম রথ ও ফিরতি রথযাত্রা হয়ে আসছে। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বে সাচারের রথটিতে দাপর, ত্রেতা ও কলিযুগের বহু কাহিনি কাঠে খোদাই করে তা রথের শোভা বর্ধনে ব্যবহার করা হয়। 

যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা সৌন্দর্য মণ্ডিত সাচারের রথটি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর পোড়া রথের সেই ধ্বংসাবশেষই রথ হিসেবে টানা হতো। পরে এক সময় এখানকার তৎকালীন এমপি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে যাওয়া রথটি ভারত থেকে শিল্পী এনে নতুনভাবে নির্মাণ করে দেন।

সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের অর্থ সম্পাদক গনেশ চন্দ্র ধর জানান, পুরো মন্দিরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া গরম ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে জাগো হিন্দু পরিষদ, গীতা স্কুল পরিচালনা পরিষদ, গীতা সংঘসহ একাধিক সনাতনী সংগঠন এখানে মন্দিরের ভেতরেই আগত ভক্তবৃন্দের সেবায় ক্যাম্প স্থাপন করে সেবা দিচ্ছে। কেউ কেউ বিনামূল্যে ওষুধ, পানি এবং শরবত সরবরাহ করছে। সবার একটাই আকাঙ্খা- জগন্নাথ যেন সকল ভক্তের মনের আশা পূরণ করেন।

চাঁদপুরের কচুয়ার সাচার জগন্নাথ ধাম পূজা ও সাংস্কৃতিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব সাহা ও সভাপতি বটু কৃষ্ণ বসু বলেন, “রথযাত্রায় কচুয়া ও চাঁদপুর ছাড়াও পুরোদেশতো বটেই ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বহু বিদেশি সনাতনীরা এখানে আসেন। এশিয়া উপমহাদেশে তাই সাচারের রথযাত্রা বেশ জনপ্রিয়। এবারো সাচার মন্দির থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত জড়ো হয়ে লাখো সনাতনী ভক্তবৃন্দ রথটানায় অংশ নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক ও সুধীমহলকে সাথে নিয়ে রথযাত্রা নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে আমরা কয়েকশ’ সনাতনী যুবকদের সাথে নিয়ে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম তৎপর রেখেছি। মানুষের দান অনুদানে এগিয়ে নেওয়া এই সাচার মন্দির দর্শনে সকল সনাতনী সবসময় আসবেন এই প্রত্যাশাই করছি।”

প্রসঙ্গত, সাচার অঞ্চলের একজন জমিদার ছিলেন গঙ্গা গোবিন্দ। তিনি ভারতের পুরীতে গিয়েছিলেন জগন্নাথ দর্শনে। কিন্তু ওই সময়ে তিনি জগন্নাথের দর্শন পাননি। সে রাতে তিনি স্বপ্নে আদেশ পান- তার নিজ এলাকা সাচারেই যেন রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। 

পরে তিনি এলাকায় ফিরে রথযাত্রার প্রচলন করেন। চাঁদপুরের কচুয়ার এই সাচার এলাকাটি তৎকালীন ঐ সময়ে ভারতের ত্রীপুরা রাজ্যের সাচার এলাকা নামে পরিচিত ছিল। 

জমিদার গঙ্গা গোবিন্দ এখন নেই, তবে জমিদার বাড়িটি এখনও রয়েছে। তার প্রচলেন পর থেকে প্রতি বছর আয়োজতি হয়ে আসছে রথযাত্রা। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের রথযাত্রায় যেন সনাতনীদের ঢল নেমেছে।

ঢাকা/অমরেশ/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র র রথয ত র রথয ত র য় জগন ন থ মন দ র

এছাড়াও পড়ুন:

চুয়েটে বড় পর্দায় শেখ হাসিনার মামলার রায় সম্প্রচার

বড় একটি টেবিলে রাখা হয়েছে একটি ল্যাপটপ, প্রজেক্টর ও সাউন্ডবক্স। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে আছে টেবিলের পাশে। সামনে থাকা একটি বড় পর্দায় আটকে আছে সবার দৃষ্টি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় সরাসরি দেখানো হচ্ছে সেই বড় পর্দায়।

আজ সোমবার বেলা একটার দিকে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর এলাকার ১ নম্বর ক্যানটিনের সামনে এভাবেই প্রজেক্টরের মাধ্যমে শেখ হাসিনার মামলার রায়ের সরাসরি সম্প্রচার দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়।

চুয়েটের কিছু শিক্ষার্থীর আয়োজনে বড় পর্দায় রায় দেখানোর এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় বড় পর্দায় রায় দেখার সময় কথা হয় চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইফতেখার মাহমুদের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের পাশাপাশি পুরো দেশের মানুষ রায় কী হয়, তা দেখার অপেক্ষায়। চুয়েট শিক্ষার্থীরাও একইভাবে এই রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আজ ঘোষণা করা হচ্ছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার রায় ঘোষণা করছেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে সাবেক আইজিপি মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী নামে পরিচিত) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ