সেদিন। ভরা পূর্ণিমা। চারপাশে মন উথাল-পাথাল করা জ্যোৎস্না। চাঁদের আলোয় যেন ভেসে যাচ্ছে গোটা গ্রাম। বইছে মৃদুমন্দ বাতাস। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন গোটা গ্রাম। ঘুম নেই শুধু একটি বাড়ির মানুষজনের চোখে। বারান্দায় হারমোনিয়াম নিয়ে বসেছেন সেই বাড়ির কর্তা মানুষটি। সুর মিলিয়ে তিনি গান গেয়ে চলেছেন একের পর এক। সুরের আবেশে জলে ভেসে যাচ্ছে তার দুই চোখ। তাকে ঘিরে বসেছে পরিবারের সবাই। মন্ত্রমুগ্ধ মানুষের দৃষ্টি সবার চোখে। বাইরে রহস্যময় চাঁদের আলো। আর ঘরে দরাজ কণ্ঠ। সব মিলিয়ে মন কেমন করা এক অনুভূতি। ঘুম কী আর আসে কারো চোখে? সুরের মায়ায় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ঘুমানোর কথা আর মনে থাকে না ছেলে-বুড়ো কারোরই।

বহুদিন আগের স্মৃতি সেসব। তখন সবে আট কী সাত বছর বয়স মুস্তাফা জামান আব্বাসীর। কিন্তু কুচবিহারের গ্রামে বসে বাংলার সঙ্গীত জগতের কিংবদন্তি বাবা আব্বাস উদ্দীনের কণ্ঠে সে গান শোনার স্মৃতি এখনো দিব্যি মনে আছে তার। এখনো চোখ বন্ধ করলে পরিষ্কার কানে বাজে বাবার দরাজ কণ্ঠ। বাবা বিগত হয়েছেন অনেক দিন। কিন্তু তার বিখ্যাত বাবার দরাজ কন্ঠের মতো এখনো সঙ্গীতের মোহ ছেড়ে যায়নি ছেলে আব্বাসীকে। ৭০ ছুঁই ছুঁই বয়সে এসেও আজ দেশের সঙ্গীত জগতের একটা দিক অনেকখানি আলোকিত করে রেখেছেন তিনি। কেবল আব্বাস উদ্দীনের ছেলে এই পরিচয়ের গণ্ডিতে নিজেকে আটকে রাখেননি তিনি। নিজে বড় মাপের একজন শিল্পী আব্বাসী। সেই মাপের কাজও করেছেন অনেক। বাবা ছেলের মধ্যে বপন করে গিয়েছিলেন সঙ্গীত প্রেমের যে বীজ, সেটা দিনে দিনে ডালপালা ছড়িয়ে হয়ে উঠেছে রীতিমতো মহীরুহ। কেবল দেশে নয়, বাংলাদেশের গানকে তিনি পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছেন বিশ্ব সঙ্গীত পরিমণ্ডলে। ভিনদেশে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির। বাংলার গানের কত রত্ন ছড়িয়ে আছে গ্রামবাংলার পথেঘাটে। গভীর মমতায় তিনি কুড়িয়ে এনেছেন সেসব মণি-মানিক্য। ছুটে গেছেন বাউল-ফকিরদের দরজায় দরজায়। সংগ্রহ করেছেন তাদের গান।

সুর সাধনায় মগ্ন মুস্তাফা জামান আব্বাসী, ২০০৬.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বান্দরবানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জিপ পাহাড়ি খাদে, নিহত ১

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় জিপ (চাঁদের গাড়ি) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৫০ ফুট নিচে পাহাড়ি খাদে পড়ে থংয়া ম্রো (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আরও ২০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে নারী-পুরুষ ও শিশুও রয়েছে।

শুক্রবার (১৬ মে) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার কলারঝিরি এলাকার জমিরাম পাড়া সংলগ্ন সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, সকালে আলীকদম-থানচি সড়কের ২৬ কিলোমিটার এলাকার মাংগু পাড়ার বাসিন্দারা একটি বিয়ের দাওয়াতে যোগ দিতে জিপ (চাঁদের গাড়ি) করে আলীকদম কলারঝিরি যাচ্ছিলেন। গাড়িটিতে থাকা সবাই ম্রো সম্প্রদায়ের এবং একই পাড়ার বাসিন্দা। গন্তব্যে পৌঁছার আগে জমিরাম পাড়ার পাশে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জিপটি প্রায় ৫০ ফুট নিচে পাহাড়ি খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই থংয়া ম্রো নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় নারী-পুরুষ ও শিশুসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা জহির উদ্দিন বলেন, “জিপটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৫০ ফুট পাহাড়ি খাদে পড়ে ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান বলে জেনেছি। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেছে। তারা আসলে ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।” 

ঢাকা/চাই মং/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ