পিচঢালা গ্রামীণ সড়ক। চারদিকে সবুজ। সড়কের দক্ষিণ পাশে মেঘনা নদীর একটি শাখা। শান্ত সেই নদীর মোহনার এক কিলোমিটারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ডাল ও তৈলবীজ বর্ধন খামার, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এবং বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান)। ওই সড়কের পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট। বিশাল আয়তনের এসব গবেষণা কেন্দ্র নোয়াখালীর উপকূলীয় সুবর্ণচরের কৃষকের বাতিঘর হিসেবে কাজ করছে। সম্ভাবনার উপকূলে পানি সংকট, লবণাক্ততাসহ নানা দুর্যোগে কৃষি পড়েছে চ্যালেঞ্জে। তবুও জোয়ার-ভাটার উপকূলে কৃষক নতুন স্বপ্ন দেখেন।
কৃষকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, এত চ্যালেঞ্জ-ঝুঁকি সত্ত্বেও কৃষির এই শস্য নিবিড়ায়নের পেছনে কোন কোন শক্তি কাজ করেছে? তারা প্রধান উদ্দীপনা হিসেবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, দক্ষ সম্প্রসারণ সেবা, কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, সরকারি সহায়তা উল্লেখ করেছেন। লবণাক্ততার কারণে এক যুগ আগে যে জমিতে ধানের চাষ করা যেত না, সেখানে এখন বছরজুড়ে রকমারি ফসল ফলাচ্ছেন কৃষকরা। লোনা জমি এখন হয়ে উঠেছে উর্বরভূমি। নদীর বুকে জেগে ওঠা নতুন চরগুলো পরিণত হয়েছে সবজির রাজ্যে। তবে কৃষক দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন পানি সংকট, দুর্বল বাজার ব্যবস্থা, ভরা মৌসুমে ফসলের দাম পড়ে যাওয়া ও কৃষিঋণ পেতে ভোগান্তির কথাও।
এখানকার চাষাবাদ পদ্ধতি দেশের অন্য সব এলাকা থেকে আলাদা। একই সঙ্গে জলাশয়ে হচ্ছে মাছ চাষ, পানিতে সাঁতার কাটছে হাঁস। তার পাড়ে কখনও শিম, কখনও শসা, কখনও আবার করলা, লাউ, কুমড়া, পটোলের চাষ হচ্ছে। বাড়ির পাশের জলাশয়ের পানির ওপর গড়া মাচায় লতানো সবজি চাষাবাদের এই পদ্ধতির নাম ‘সর্জন’।
এক সময়ের বনদস্যুকবলিত সুবর্ণচরের দক্ষিণের চরাঞ্চলে কৃষিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রায় ১৬৭ একর পতিত জমিতে ২০১৩-১৮ মেয়াদে ‘নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ডাল ও তৈলবীজ বর্ধন খামার এবং বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বিএডিসি। নতুন করে ২০১৯ থেকে ২০২৪ মেয়াদে ‘ডাল ও তৈলবীজ বর্ধন খামার আধুনিকীকরণ এবং চুক্তিবদ্ধ চাষিদের মাধ্যমে বীজ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। বিএডিসির মতো অন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোও শুধু জাত উদ্ভাবন নয়, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও দিচ্ছে।
যেমন দুই একর জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ব্রি-৭৪ জাতের ধান চাষ করেছেন সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা এলাকার কৃষক মো.
গতকাল শনিবার কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান সুবর্ণচরের কৃষিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দেখেন। স্থানীয় কৃষকসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় সচিব বলেন, ‘সুবর্ণচরে পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমরা সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। খাল খনন, আধুনিক সেচ নালা, সেচ স্কিম, কমিউনিটিভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা, স্লুইস গেট মেরামতের মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের পানির দক্ষ ব্যবহার সম্ভব। লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা ও খরা প্রতিরোধী ফসলের জাত উপকূলের কৃষির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তিনির্ভর কৃষির সম্প্রসারণ আরও কীভাবে বাড়ানো যায় সেই উদ্যোগ নেব। আধুনিক সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও শক্তিশালী বাজার তৈরি করে আমরা মূল্য বঞ্চনা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি। প্রযুক্তি, পরিকল্পনা, বাজেট, আর কৃষকের ঘাম-শ্রমের সমন্বয় করতে পারলে সুবর্ণচরের মতো অন্য উপকূলীয় এলাকাগুলোও রোল মডেল হবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
পাকিস্তানের সংসদ সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরকে গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন অব্যাহতি দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে দেশটিতে স্বৈরতন্ত্রের পথ আরো প্রশস্ত হয়েছে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
আরো পড়ুন:
শাকিবের নায়িকা পাকিস্তানের হানিয়া
ঢাকায় পৌঁছেছেন আলী আজমত
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী দেশটির সংসদে গত বৃহস্পতিবার পাস হয়েছে। এতে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ক্ষমতা আরো বাড়ানো হয়েছে। এটি দেশের শীর্ষ আদালতগুলোর পরিচালনা পদ্ধতিতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে।
যারা এই পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলছেন তাদের মতে, এই সিদ্ধান্ত সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশাসনিক কাঠামো প্রদান করবে, একই সাথে আদালতে মামলার জট কমাতেও সাহায্য করবে।
পারমাণবিক অস্ত্রধারী এই দেশটির রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে সেনাবাহিনী। কখনও কখনও তারা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে, আবার অনেক সময় পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নেড়েছে।
বিস্তারিত আসছে...
ঢাকা/ফিরোজ