জনগণকে জিম্মি করা যাবে না কোনোভাবে
Published: 12th, May 2025 GMT
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলোর অনলাইন জরিপে উঠে আসে, দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি কোনোভাবেই সমর্থন করেন না ৯৩ শতাংশ মানুষ। জরিপে প্রশ্ন করা হয়, ‘বর্তমান সময়ে দাবি আদায়ে রাস্তা বন্ধ ও সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি সমর্থন করেন কি?’ এ প্রশ্নের জবাবে ৯৩ শতাংশ মানুষ ‘না’ বলেছেন।
প্রায় প্রতিদিনই নিত্যযানজটের এই ঢাকা শহরে সড়ক বন্ধ করে কোনো না কোনো সংগঠন কর্মসূচি পালন করে থাকে। আবার কখনো শিক্ষার্থীদের সংঘাতে কিংবা শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনের জের ধরেও সড়ক–মহাসড়ক বন্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে টানা তিন দিন আন্দোলনের পর শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার পর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীরা শাহবাগ ছাড়েন। কিন্তু রোববারও সেখানে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা অবস্থান নেওয়ায়।
শুধু ঢাকা শহর নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক বন্ধ করে সমাবেশ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। রোববার গাজীপুরের দুটি পোশাক কারখানা-স্টাইল ক্রাফট লিমিটেড ও ইয়াং ওয়ানস বিডির শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। দুই কারখানায় ১ হাজার ৮০০ শ্রমিক কাজ করেন এবং তাঁদের ১৪ মাসের বকেয়া পড়েছে। এর আগের দিন গাজীপুর মহানগরীর মাস্টারবাড়ি এলাকায় বাসচালকের সহকারীর ধাক্কায় শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।
যেদিন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে এনসিপিসহ কয়েকটি সংগঠন সমাবেশ করল, সেদিনই ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, জনদুর্ভোগ এড়াতে রাস্তা ছেড়ে অন্য কোথাও আন্দোলন করলে ভালো হয়।
কিন্তু সরকারের কাজ তো কেবল বিজ্ঞপ্তি বা সদুপদেশ দেওয়া নয়। মানুষ নির্দেশনা মানছে কি না, সেটাও তাদের দেখতে হবে। আরও উদ্বেগজনক ঘটনা হলো সরকার কোনো পক্ষের দাবি তখনই মানে, যখন তারা সড়ক বন্ধ করে আন্দোলনে নামে। যদি তাদের দাবি ন্যায়সংগত হয়, সড়ক বন্ধ করার আগে কেন মানা হবে না? ৯ মাস পরও জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার দাবিতে যদি রাজপথে আন্দোলন করতে হয়, সেটা সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের লজ্জার ঘটনাই বটে।
দাবি আদায়ে আন্দোলন করা বা কর্মসূচি নেওয়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে হবে, জনগণ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে। ঢাকা শহরে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে যান চলাচল বন্ধ থাকলে পুরো শহরই অচল হয়ে পড়ে। কয়েক দিন আগে তেজগাঁওয়ে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
ভবিষ্যতে ঢাকা শহর অচল কিংবা জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি হয়, এমন কর্মসূচি থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিরত থাকবেন বলে আশা করি। ন্যায়সংগত দাবি আদায় করতে জনগণকে জিম্মি করার মতো অন্যায্য পথ কখনো কাম্য নয়। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে আরও বেশি দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গণভোটে সংস্কারের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ বলবে জামায়াতসহ আট দল: গোলাম পরওয়ার
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য যে গণভোট হবে, সেখানে তাঁর দলসহ আট দল সংস্কারের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ বলবে। জনগণকেও গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনরত আট দল এই যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে। এর আগে বেলা ১১টায় আল ফালাহ মিলনায়তনে আট দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেন। এরপর সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আট দল শুরু থেকেই সংস্কারের পক্ষে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সংস্কারের অনেক বিষয়ে একটি দল বিরোধিতা করেছে। তাই জাতিকে সংস্কারের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। সরকারও যেন আগে কী ছিল, নতুন করে কী কী সংস্কার হচ্ছে, সেটি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করে, প্রচারপত্র বিলি করে, জাতীয় প্রচারমাধ্যমে প্রচার করে জনগণকে জানায়।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, অনলাইনে একটি দলের কর্মী বাহিনী আগে থেকেই গণভোটে ‘না’-এর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে কারা সংস্কারের পক্ষে নেই, সংস্কারের বিরোধিতা করছে, জাতি তাদের চিনতে পারল। গোটা জাতি সংস্কারের পক্ষে। যারা এর বিপক্ষে যাবে, জাতি নিশ্চয়ই তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
আগের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছিলেন, তিনজন উপদেষ্টা সরকারপ্রধানকে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। তাঁরা একটি দলের হয়ে কাজ করছেন।
সেই তিনজন উপদেষ্টা কারা, সে বিষয়ে আজ জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, তাঁদের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ আট দলের কাছে। প্রয়োজন হলে সেগুলো সময়মতো সামনে আনা হবে। সরকার যেন এ বিষয়ে সজাগ থাকে। প্রধান উপদেষ্টা যেন তাঁর নিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রাখেন।
আট দলের কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আট দলের লিয়াজোঁ কমিটি আছে। শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে তাদের দায়িত্ব দেওয়া আছে। তারা আলোচনা করে কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। দলগুলোর সব দাবি পূরণ হয়নি। এ জন্য আন্দোলন চলমান থাকবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আট দলের কর্মসূচির কারণে জাতীয় নির্বাচন প্রভাবিত হবে না। বরং এই আন্দোলনের কারণে সংস্কার প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো গণভোটে যাচ্ছে। এটা আন্দোলনেরই ফসল। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতেই এই আন্দোলন ভূমিকা রাখবে।
গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে ‘জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছেন কেন’—জামায়াতের উদ্দেশ্যে এমন প্রশ্ন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভালো হয়ে যান।
এ বিষয়ে জামায়াতের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘উনি যা বলেছেন, আমাদের ৮ দলের একই কথা ওনার জন্য প্রযোজ্য। এটা ওনাকে অনুরোধ করছি।’
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আগামীকাল সোমবার ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণা উপলক্ষে আট দল কোনো কর্মসূচি দেবে কি না, জানতে চাইলে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আট দল ফ্যাসিবাদবিরোধী আগের কর্মসূচিগুলোর সময় মাঠে ছিল। আগামীকালও তারা মাঠে থাকবে। কোনো নাশকতা করতে দেওয়া হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম ও এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহারসহ আট দলের শীর্ষ নেতারা।