বৈশ্বিক সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহে অঙ্গীকার হোক নিরাপদ সড়ক
Published: 12th, May 2025 GMT
এ বছর বৈশ্বিক সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ ১২ থেকে ১৮ মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সড়কে অকালমৃত্যু কমিয়ে আনার লক্ষ্যে জাতিসংঘ প্রতি দু’বছর পর সড়ক নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করে থাকে। ‘এবার সপ্তাহটির প্রতিপাদ্য- ‘জীবনের জন্য সড়ক : হাঁটা ও সাইকেল চালানো নিরাপদ করা’ আমাদের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি-২০২৩ এর তথ্য বলছে, বাংলাদেশে রোডক্র্যাশে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে প্রায় ৮৭ জনের। বাংলাদেশে রোডক্র্যাশে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়কে মানুষের জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ। প্রয়োজন একটি ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’।
প্রতিনিয়ত রোডক্র্যাশে মারা যাচ্ছে যানবাহনের চালক-যাত্রী। বাদ যাচ্ছে না পথচারীও। সড়কে চলতে গিয়ে রোডক্র্যাশে পড়ে লাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে অনেককে। কোনোভাবেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। বরং সড়কে বেপরোয়া গতির গাড়িচাপা ও ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, মাদক গ্রহণ করে গাড়ি চালানো, সড়কের সাইন-মার্কিং-জেব্রা ক্রসিং চালক ও পথচারীদের না মানার প্রবণতাকে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া যথাস্থানে সঠিকভাবে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ না করা এবং ব্যবহারোপযোগী না থাকা, রাস্তায় হাঁটা ও পারাপারের সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, হেডফোনে গান শোনা, চ্যাট করা, সড়ক ঘেঁষে বসতবাড়ি নির্মাণ ও সড়কের ওপর হাটবাজার গড়ে ওঠায় পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে।
রোডক্র্যাশ রোধ করতে সড়কে বিশৃঙ্খলা কমাতে হবে। এতে যে ধরনের পরিকল্পনা করার কথা এবং যে আইনের বাস্তবায়ন দরকার, তা না করে সড়কে বিশৃঙ্খলা বাড়ানো হচ্ছে। ফলে রোডক্র্যাশ নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার অন্যতম উপাদান ছোট ছোট যানবাহন। এর মধ্যে অন্যতম মোটরসাইকেল, ব্যাটারীচালিক রিক্স, অটোরিক্স, নসিমন-করিমন ইত্যাদি। এসব বাহন সড়কে ঝুঁকি তৈরি করছে। এ থেকে পরিত্রাণে সব যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সড়ক নিরাপদ করতে সুশৃঙ্খল করার কোনো বিকল্প নেই।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসেবে দেশে ৫১১টি রোডক্র্যাশ হয়েছে। এতে ৪৮৩ জন নিহত আর ৫৬৬ জন আহত হয়েছেন। রোডক্র্যাশের সার্বিক হার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না- যা আমাদের জন্য উদ্বেগজনক। অথচ এসব অনাকাঙ্ক্ষিত মৃতু্য প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই কতটা আন্তরিক সে প্রশ্ন থেকে যায়।
দেশের সাম্প্রতিক অর্থনীতিতে রোডক্র্যাশে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে জিডিপির প্রায় ২.
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বাংলাদেশে বছরে ৩১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় রোডক্র্যাশে; আহত হন ৩ লাখের বেশি। এই প্রতিরোধযোগ্য রোডক্র্যাশ প্রতিরোধে দরকার সড়ক নিরাপত্তা আইন। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর ২০২০-২০৩০ সালের পরিকল্পনায় বিশ্বে রোডক্র্যাশ ও হতাহতের সংখ্যা ৫০ শতাংশ নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ৫টি রিস্ক ফ্যাক্টর- সিট বেল্ট, অতিরিক্ত গতি, স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট, ড্রিংক ড্রাইভিং, শিশু আসন চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অতি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো অর্জনের মাধ্যমে সবার জন্য নিরাপদ, সুরক্ষিত, সহজলভ্য ও টেকসই জীবন নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া জাতিসংঘ সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম পাঁচটি পিলারও চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হলো: সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী এবং সড়ক দুর্ঘটনা পরবর্তী করণীয়। বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তায় এই বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ অপরিহার্য। এর জন্য প্রয়োজন একটি ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর তথ্যানুযায়ী সড়কে গত বছর প্রতিদিন গড়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৩ সালের রোডক্র্যাশের চিত্র তুলে ধরে বিআরটিএ জানান, ২০২৩ সালে সারা দেশে ৫ হাজার ৪৯৫টি রোডক্র্যাশ ঘটে। এতে ৫ হাজার ২৪ জনের মৃত্যু হয়। সেই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গত বছর রোডক্র্যাশে ৭ হাজার ৪৯৫ জন আহত হয়েছে বলেও জানায় বিআরটিএ।
আমাদের বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ মূলত সড়কে পরিবহনের জন্য আইন এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিধিমালা। তাই পরিবহন ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি এ আইনে সাম্প্রতিক সংশোধনীর সময়ে গতি নিয়ন্ত্রণ, হেলমেট ও সিটবেল্টের মতো কিছু বিষয় সংযোজন করা হলেও তা রোডক্র্যাশের কারণে মানুষের মৃত্যু ও বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষার করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২০১৮ সালে করা হয় সড়ক পরিবহন আইন- লক্ষ্য ছিল সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো। তবে ছয় বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও সড়কে প্রাণহানি কমেনি। সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অনেকটা উপেক্ষিতই থেকে গেছে। এ জন্য সড়কে প্রাণহানি কমাতে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের জরুরি।
সড়কে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে নিরাপদ সড়ক সংক্রান্ত আলাদা আইন প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আমি মনে করি, সড়কে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে নিরাপদ সড়ক সংক্রান্ত আলাদা আইন প্রণয়ন ও এর যথাযথ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের সকলের আশু পদক্ষেপ কামনা করছি।
লেখক: অ্যাডভোকেসি অফিসার, রোড সেইফটি প্রকল্প, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন
তারা//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত কর ন র পদ স ব আরট এ দ র ঘটন জন র ম র জন র লক ষ য র জন য ট কসই সড়ক প পথচ র
এছাড়াও পড়ুন:
রিয়ালের হয়ে আলো ছড়ানো কে এই নতুন ‘রাউল’
২১ বছর বয়সী গনসালো গার্সিয়াকে রিয়াল মাদ্রিদের স্কোয়াডের আশপাশে দেখা যাচ্ছিল অনেক দিন ধরে। ২০২৩ সালের আগস্টে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র চোটে পড়ার পর প্রথম রিয়ালের স্কোয়াডে ডাক পান গার্সিয়া।
একই বছরের ২৬ নভেম্বর লা লিগায় কাদিজের বিপক্ষে রিয়ালের ৩–০ গোলে জেতা ম্যাচে ১২ মিনিটের জন্য মাঠে দেখা যায় তাঁকে। পরের ম্যাচে গ্রানাদার বিপক্ষে ২–০ গোলের জয়ে ম্যাচে তাঁকে মাঠে দেখা যায় ৫ মিনিটের জন্য।
২০২৪–২৫ মৌসুমেও লিগে তিন ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন গার্সিয়া। মৌসুমের শেষ ৩ ম্যাচে যথাক্রমে ১৬, ২৪ ও ১৩ মিনিটের জন্য মাঠে দেখা যায় তাঁকে। এর মধ্যে সেভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে একটি গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে লা লিগায় ৫ ম্যাচ খেললেও খুব একটা নজর কাড়তে পারেননি গার্সিয়া। অবশ্য নজর কাড়ার মতো মাঠে সময়ও পাননি তিনি। রিয়ালের মূল দলে সেভাবে সুযোগ না পেলেও রিয়াল মাদ্রিদ কাস্তিয়াতে নিয়মিত আলো ছড়াচ্ছিলেন এই তরুণ।
আরও পড়ুনভিনিসিয়ুসের আলোয় পথ দেখে শেষ ষোলোয় রিয়াল১৩ ঘণ্টা আগে২০০৪ সালে মাদ্রিদে জন্ম নেওয়া গার্সিয়া প্রথম আলোচনায় আসেন কোপা দেল রের কোয়ার্টার ফাইনালে লেগানেসের বিপক্ষে গোল করে। আর নিজের সত্যিকারের আগমনী বার্তাটা গার্সিয়া দিয়েছেন ক্লাব বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচ খেলে।
শট নিচ্ছেন গার্সিয়া