দোহায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রখর তাপমাত্রায় মোহাম্মদ রহিম বাংলাদেশ দূতাবাসের বাইরে অন্তহীন লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর কপাল থেকে শ্রান্তির স্বেদবিন্দু ঝরছে। তৃষ্ণায় কণ্ঠনালি শুকিয়ে কাঠ। তবু তাঁকে প্রতীক্ষার কঠিন বাস্তবতা থেকে একচুলও নড়ানো যায়নি। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) লাগবে। এটি শেষ সুযোগ। শত শত প্রবাসী শ্রমিক সূর্যের প্রখর তেজ উপেক্ষা করে ধীরলয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে দিচ্ছেন না।

ঘর ছেড়ে আসা এই খেটে খাওয়া মানুষেরা মাতৃভূমির রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের স্বপ্নে স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে অকুণ্ঠচিত্তে কারাবাসের ঝুঁকিও নিয়েছিলেন। তাঁদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারই পতিত স্বৈরাচারের খাদের কিনারে রেখে যাওয়া অর্থনীতি ফেরানোর চালিকা শক্তি। রহিম ও তাঁর মতো কোটি বাংলাদেশি উৎসুক নয়নে তাকিয়ে আছেন, এই পরিবর্তনের ঢেউ তাঁদের প্রবাসজীবনের কঠিন বাস্তবতায় কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলে কি না।

বিংশ শতাব্দীর ডিজাইন দিয়ে একবিংশ শতাব্দীর আকাঙ্ক্ষা পূরণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রয়োজন কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনা কাঠামোর আমূল পরিবর্তন। কীভাবে এই রাষ্ট্র তার অগণিত প্রবাসী নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত, বাণিজ্য বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রভাব জোরালোভাবে বিস্তার করবে? চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি ও ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি ভূরাজনৈতিক খেলার মঞ্চে কীভাবে শান্তি, সমৃদ্ধির বঙ্গোপসাগর অঞ্চল গড়ে তুলবে? এমনই অনেক প্রশ্ন নিয়ে তর্ক–বিতর্ক জরুরি।

উপাত্তভিত্তিক পুনর্বিন্যাস

বাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশলগত পুনর্বিন্যাসে জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক স্থায়ী রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে স্বাধীন, আত্মনির্ভরশীল ও পারস্পরিক অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি আবশ্যক। একইভাবে কূটনৈতিক অবস্থানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণও জরুরি। কূটনৈতিক অবস্থানের গুরুত্ব নির্ধারণে অন্যান্য বিবেচনার সঙ্গে সুস্পষ্ট ও ন্যায়সংগত মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পাঁচটি প্রধান সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই মূল্যায়ন ব্যবস্থা তৈরি হতে পারে। প্রথমত, রাজনৈতিক সম্পর্ক—মোট গুরুত্বের ৩০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কৌশলগত তাৎপর্যের গভীরতা বিবেচিত হবে।

দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য (২৫ শতাংশ)—বর্তমান অর্থনৈতিক লেনদেন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা। তৃতীয়ত, প্রবাসীর আকার (২০ শতাংশ)—বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সংখ্যা ও গুরুত্ব। চতুর্থত, নিরাপত্তা–সংশ্লিষ্টতা (১৫ শতাংশ)—সম্ভাব্য নিরাপত্তাঝুঁকি এবং সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা। এবং পঞ্চমত, বহুপক্ষীয় সম্পৃক্ততা (১০ শতাংশ)—আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ফোরামে সক্রিয়তার গুরুত্ব।

এই পাঁচ সূচকের ওপর ভিত্তি করে বর্তমানের ও সম্ভাব্য কূটনৈতিক মিশন শূন্য থেকে ১–এর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মান লাভ করবে। যেসব অবস্থানের মান শূন্য দশমিক ৭ বা তার বেশি হবে, ওই স্থান পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস স্থাপনের জন্য বিবেচিত হবে। শূন্য দশমিক ৪ থেকে শূন্য দশমিক ৭ মানযুক্ত স্থানে কনস্যুলেট স্থাপন যুক্তিযুক্ত এবং শূন্য দশমিক ৪-এর চেয়ে কম মানযুক্ত স্থানে নিকটবর্তী দূতাবাস থেকে অনাবাসী রাষ্ট্রদূত কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

এ ধরনের নৈর্ব্যক্তিক প্রক্রিয়া জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে কূটনৈতিক মিশন স্থাপন, সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠনে বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

কৌশলগত পুনর্গঠন

বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে তীব্র উত্তেজনায় লিপ্ত থাকলেও বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীন বাংলাদেশে অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছে। বৈশ্বিক শক্তিদ্বয়ের পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে চলমান টানাপোড়েন এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট ও জাতিগত সংঘাতের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে তার নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে কার্যকরভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।

প্রায় ৮০ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের উন্নত পরিষেবা প্রদানের জন্য রিয়াদ, দুবাই, মাসকাট ও দোহার কূটনৈতিক কার্যক্রমকে জরুরি ভিত্তিতে সম্প্রসারণ অপরিহার্য। একই সঙ্গে ওই উপসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত কূটনৈতিক পোস্টগুলোকে একত্র করে কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। দুর্নীতিগ্রস্ত অভিবাসনপ্রক্রিয়া, ভিসার নামে হয়রানি, ভুল চাকরি ও বেতনের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমেই প্রবাসী শ্রমিকদের দুর্ভোগের সূত্রপাত। এই সমস্যার সমাধান ঢাকায় শুরু হওয়া উচিত। অ্যাপভিত্তিক কনস্যুলার সেবা সময়ের দাবি।

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক দৃশ্যপটও বিবেচনায় আনতে হবে। বর্তমানে বার্ষিক প্রায় ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে বসবাস করেন। মনে রাখা জরুরি, ভবিষ্যতের শ্রমবাজার নিয়ে অনিশ্চয়তা বিদ্যমান বিধায় ১৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঊর্ধ্বে বাণিজ্যে সক্ষমতায় পৌঁছাতে হবে।

আরও পড়ুনপ্রবাসীদের মেধা ও দক্ষতাকে সরকার কীভাবে ব্যবহার করবে৩১ আগস্ট ২০২৪

ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য সুচিন্তিত নীতির প্রয়োজন। যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলসের এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র তথা বার্লিন মিশন সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। অন্যান্য মিশন একত্র করা যেতে পারে। ডি-৮–ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে কার্যকর করতে তুরস্কের দূতাবাসকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সব প্রতিবেশীই সর্বাধিক গুরুত্ব দাবি করে। দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর পাশাপাশি আসিয়ানও প্রতিবেশী। ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ উন্মোচনে আসিয়ান সদস্যপদ প্রাপ্তি অতীব জরুরি।

বাংলাদেশ ১৭ কোটি ভোক্তার বাজার। আসিয়ান তিন ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ব্লক। বিপুল পরিমাণে অভিবাসী মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে কর্মরত। আসিয়ান ও পূর্ব এশিয়ায় বয়সী মানুষ দ্রুতগতিতে বাড়ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের সাড়ে ৪ কোটির বেশি ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী। সদস্যপদ উভয়ের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করবে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মিশনগুলোর জন্য আলাদা কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন।

আফ্রিকায় গুরুত্ব বিবেচনা করে পুনর্গঠন করা যেতে পারে। আফ্রিকান ইউনিয়ন হাব, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য প্রবেশদ্বার এবং ফ্রাঙ্কোফোন আফ্রিকার কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের দিকেই মনোযোগ দেওয়া যায়।

সমন্বিত ব্যবস্থাপনা কাঠামো

প্রয়োজন সমন্বিত কাঠামো, ‘সমগ্র সরকার’ভিত্তিক কৌশল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্য অন্য মন্ত্রণালয়েরও ওপর নির্ভরশীল। ‘এক দেশ, এক কৌশল’ নীতির ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একা নয়; বরং অর্থ, বাণিজ্য, প্রবাসীকল্যাণ, প্রতিরক্ষা, শিল্প, পরিকল্পনা, কৃষি, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিয়ে সমন্বিত কূটনৈতিক কাঠামো জরুরি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘জাতীয় কূটনৈতিক সমন্বয় পরিষদ’-এর মাসিক সভায় অগ্রাধিকার ও কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ এবং আন্তমন্ত্রণালয় দ্বন্দ্বের সমাধান করা হবে।

সমন্বিত কৌশল বাস্তবায়ন–সংক্রান্ত বিধানাবলি প্রণয়ন ছাড়াও নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রাতিষ্ঠানিক সহমর্মিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও মিশনভিত্তিক সীমিত কূটনৈতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বর্তমান উইংগুলোর ব্যাপক পুনর্গঠন এবং শক্তিশালী ‘কর্মদক্ষতা ব্যবস্থাপনা কাঠামো’ প্রবর্তন জরুরি। প্রতি ছয় মাস অন্তর প্রধান সূচকগুলোর ভিত্তিতে স্কোরিং অনুযায়ী সব কার্যক্রমের মূল্যায়ন হতে পারে। মূল্যায়নের আলোকে ‘ট্যালেন্ট অপটিমাইজেশন’–পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। কৌশলগত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নতুন উইং, যেমন ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালাইসিস ইউনিট’ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যাপক কূটনৈতিক গতি বৃদ্ধির প্রয়োজন। একই কারণে মিশনগুলোর বাজেট বরাদ্দকাঠামোয় পরিবর্তন আনা জরুরি। কৌশলগত মিশনে জনবল ও ব্যয় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দূতাবাস রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। মিশন পর্যায়ে রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে ‘সমন্বিত কান্ট্রি টিম’ গঠনের পাশাপাশি আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের জন্য ‘ডিজিটাল ড্যাশবোর্ড’ চালু করা যেতে পারে। কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর, সমন্বিত ও ভবিষ্যৎমুখী করতে গুণগত সংস্কার আবশ্যক।

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ন য দশম ক ক টন ত ক ক ত ক টন ত ক সমন ব ত ক পরর ষ ট র র জন ত ক ক শলগত র জন য প রব স অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সফরে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার হয়েছে: মালয়েশিয়ার মন্ত্রী

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুতিওন ইসমাইল বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সদ্যসমাপ্ত কুয়ালালামপুর সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে, বিশেষ করে ‘কৌশলগত এবং উচ্চ প্রভাবসম্পন্ন বহুমুখী খাতে সহযোগিতা জোরদারে’ ইতিবাচক অগ্রগতি এনেছে।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইসমাইল বৃহস্পতিবার এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রীয় সফর ‘শুধু একটি কূটনৈতিক ঘটনা নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ নানা উদ্যোগের একটি মোড় ঘোরানো মুহূর্ত’।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি ও ইতিবাচক উন্নয়ন, বিশেষ করে কৌশলগত ও উচ্চ প্রভাবসম্পন্ন বহুমুখী খাতে সহযোগিতা জোরদারের অগ্রগতি দেখে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এ সফরের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, হালাল পণ্য, এসটিইএম, গবেষণা, শিক্ষা, সেমিকন্ডাক্টর ও ব্লু ইকোনমি খাতে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি ‘নোট অব এক্সচেঞ্জ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার সফরে এসকর্ট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী ইসমাইল বলেন, এই চুক্তিগুলো ভবিষ্যতে আরও অগ্রসর, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পারস্পরিকভাবে লাভজনক সম্পর্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি বহন করে।

তিনি উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগগুলোর একটি হলো মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা (এমইভি) কার্যকর করা। এই এমইভি বৈধ শ্রমিকদের নিজ দেশে পরিবারের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ ও ভ্রমণের পর নতুন ভিসার আবেদন ছাড়াই আবার মালয়েশিয়ায় ফেরত আসার অনুমতি দেবে।

মালয়েশিয়ার মন্ত্রী এ পদক্ষেপকে ‘বাংলাদেশিদের বিশাল অবদানের প্রতি মালয়েশিয়ার কৃতজ্ঞতার প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেন, যাঁরা শুধু বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাতে চালিকা শক্তি নন, বরং দেশটির বৃহত্তর সমাজের অংশ হয়ে উঠেছেন।

ইসমাইল বলেন, এই নীতি প্রণয়নের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো বৈধ বিদেশি শ্রমিকদের কল্যাণ জোরদার করা। তাঁরা কোথা থেকে এসেছেন বা কী করেছেন, সেটা বিবেচ্য নয়।

ইসমাইল আরও বলেন, এমইভি কার্যকর হওয়া বিদেশি শ্রমিক ব্যবস্থাপনায় মালয়েশিয়ার আরও বন্ধুত্বপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অগ্রসর দৃষ্টিভঙ্গির পথপ্রদর্শক হিসেবে সাহসিকতার প্রতিফলন ঘটাবে। এই ব্যবস্থার বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (কেডিএন) এবং মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় (কেএসএম) বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করবে।

মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, অধ্যাপক ইউনূসের সফর দুই দেশের মধ্যে ‘বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ’ আরও জোরদার করবে, যেহেতু ‘মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত’।

তিনি বলেন, কুয়ালালামপুরে অধ্যাপক ইউনূসকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ।

ইসমাইল জানান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের আলোচনায় বাণিজ্য, শিক্ষা ও শ্রমশক্তির মতো ঐতিহ্যবাহী খাতগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নতুন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘একজন সহকারী মন্ত্রী হিসেবে আমি প্রত্যক্ষ করেছি, কীভাবে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ও আলোচনাগুলো উন্মুক্ততার মনোভাব, দক্ষতা ভাগাভাগির ইচ্ছা এবং একসঙ্গে আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ ছিল।’

দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় হিসেবে কেডিএন মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তায় এর প্রভাবকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়া শরণার্থী সমস্যা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিষয়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লক্ষ করেছে এবং কূটনৈতিক চ্যানেল ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধানের প্রচেষ্টায় সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

কেডিএন বিশ্বাস করে, আঞ্চলিক শান্তি কেবল আসিয়ানের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব এবং এ কারণে মন্ত্রণালয় মিয়ানমারে আসিয়ানের শান্তি মিশনকে সমর্থন করে।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলে স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন।

ইসমাইল বলেন, কেডিএন এসব নীতি ও চুক্তির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যার মধ্যে বিদেশি শ্রমিক ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়ন তদারকি অন্তর্ভুক্ত।

তিনি আরও বলেন, এই কূটনৈতিক সম্পর্ক শুধু কাগজে-কলমে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং দুই দেশের নাগরিকদের জীবনে বাস্তব প্রভাব ফেলে—চাকরির সুযোগ, দক্ষতা উন্নয়ন থেকে শুরু করে যৌথ অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত।

ইসমাইল বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, দৃঢ়ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদার হিসেবে আরও বহু দূর এগিয়ে যেতে পারবে, যা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং সুবিধা ভাগাভাগির মানসিকতা দ্বারা পরিচালিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মার্কিন শুল্কনীতি: যে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ আমাদের মাথায় নিতেই হবে
  • অধ্যাপক ইউনূসের সফরে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার হয়েছে: মালয়েশিয়ার মন্ত্রী