কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নবদিগন্তের অন্বেষণ
Published: 13th, May 2025 GMT
দোহায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রখর তাপমাত্রায় মোহাম্মদ রহিম বাংলাদেশ দূতাবাসের বাইরে অন্তহীন লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর কপাল থেকে শ্রান্তির স্বেদবিন্দু ঝরছে। তৃষ্ণায় কণ্ঠনালি শুকিয়ে কাঠ। তবু তাঁকে প্রতীক্ষার কঠিন বাস্তবতা থেকে একচুলও নড়ানো যায়নি। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) লাগবে। এটি শেষ সুযোগ। শত শত প্রবাসী শ্রমিক সূর্যের প্রখর তেজ উপেক্ষা করে ধীরলয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে দিচ্ছেন না।
ঘর ছেড়ে আসা এই খেটে খাওয়া মানুষেরা মাতৃভূমির রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের স্বপ্নে স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে অকুণ্ঠচিত্তে কারাবাসের ঝুঁকিও নিয়েছিলেন। তাঁদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারই পতিত স্বৈরাচারের খাদের কিনারে রেখে যাওয়া অর্থনীতি ফেরানোর চালিকা শক্তি। রহিম ও তাঁর মতো কোটি বাংলাদেশি উৎসুক নয়নে তাকিয়ে আছেন, এই পরিবর্তনের ঢেউ তাঁদের প্রবাসজীবনের কঠিন বাস্তবতায় কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলে কি না।
বিংশ শতাব্দীর ডিজাইন দিয়ে একবিংশ শতাব্দীর আকাঙ্ক্ষা পূরণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রয়োজন কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনা কাঠামোর আমূল পরিবর্তন। কীভাবে এই রাষ্ট্র তার অগণিত প্রবাসী নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত, বাণিজ্য বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রভাব জোরালোভাবে বিস্তার করবে? চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি ও ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি ভূরাজনৈতিক খেলার মঞ্চে কীভাবে শান্তি, সমৃদ্ধির বঙ্গোপসাগর অঞ্চল গড়ে তুলবে? এমনই অনেক প্রশ্ন নিয়ে তর্ক–বিতর্ক জরুরি।
উপাত্তভিত্তিক পুনর্বিন্যাসবাংলাদেশের কূটনৈতিক কৌশলগত পুনর্বিন্যাসে জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক স্থায়ী রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে স্বাধীন, আত্মনির্ভরশীল ও পারস্পরিক অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি আবশ্যক। একইভাবে কূটনৈতিক অবস্থানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণও জরুরি। কূটনৈতিক অবস্থানের গুরুত্ব নির্ধারণে অন্যান্য বিবেচনার সঙ্গে সুস্পষ্ট ও ন্যায়সংগত মূল্যায়ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পাঁচটি প্রধান সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই মূল্যায়ন ব্যবস্থা তৈরি হতে পারে। প্রথমত, রাজনৈতিক সম্পর্ক—মোট গুরুত্বের ৩০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কৌশলগত তাৎপর্যের গভীরতা বিবেচিত হবে।
দ্বিতীয়ত, বাণিজ্য (২৫ শতাংশ)—বর্তমান অর্থনৈতিক লেনদেন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা। তৃতীয়ত, প্রবাসীর আকার (২০ শতাংশ)—বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সংখ্যা ও গুরুত্ব। চতুর্থত, নিরাপত্তা–সংশ্লিষ্টতা (১৫ শতাংশ)—সম্ভাব্য নিরাপত্তাঝুঁকি এবং সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা। এবং পঞ্চমত, বহুপক্ষীয় সম্পৃক্ততা (১০ শতাংশ)—আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ফোরামে সক্রিয়তার গুরুত্ব।
এই পাঁচ সূচকের ওপর ভিত্তি করে বর্তমানের ও সম্ভাব্য কূটনৈতিক মিশন শূন্য থেকে ১–এর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মান লাভ করবে। যেসব অবস্থানের মান শূন্য দশমিক ৭ বা তার বেশি হবে, ওই স্থান পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস স্থাপনের জন্য বিবেচিত হবে। শূন্য দশমিক ৪ থেকে শূন্য দশমিক ৭ মানযুক্ত স্থানে কনস্যুলেট স্থাপন যুক্তিযুক্ত এবং শূন্য দশমিক ৪-এর চেয়ে কম মানযুক্ত স্থানে নিকটবর্তী দূতাবাস থেকে অনাবাসী রাষ্ট্রদূত কূটনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
এ ধরনের নৈর্ব্যক্তিক প্রক্রিয়া জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে কূটনৈতিক মিশন স্থাপন, সম্প্রসারণ ও পুনর্গঠনে বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
কৌশলগত পুনর্গঠনবঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে তীব্র উত্তেজনায় লিপ্ত থাকলেও বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে। চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীন বাংলাদেশে অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছে। বৈশ্বিক শক্তিদ্বয়ের পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে চলমান টানাপোড়েন এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট ও জাতিগত সংঘাতের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে তার নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে কার্যকরভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।
প্রায় ৮০ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের উন্নত পরিষেবা প্রদানের জন্য রিয়াদ, দুবাই, মাসকাট ও দোহার কূটনৈতিক কার্যক্রমকে জরুরি ভিত্তিতে সম্প্রসারণ অপরিহার্য। একই সঙ্গে ওই উপসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত কূটনৈতিক পোস্টগুলোকে একত্র করে কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। দুর্নীতিগ্রস্ত অভিবাসনপ্রক্রিয়া, ভিসার নামে হয়রানি, ভুল চাকরি ও বেতনের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমেই প্রবাসী শ্রমিকদের দুর্ভোগের সূত্রপাত। এই সমস্যার সমাধান ঢাকায় শুরু হওয়া উচিত। অ্যাপভিত্তিক কনস্যুলার সেবা সময়ের দাবি।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক দৃশ্যপটও বিবেচনায় আনতে হবে। বর্তমানে বার্ষিক প্রায় ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে বসবাস করেন। মনে রাখা জরুরি, ভবিষ্যতের শ্রমবাজার নিয়ে অনিশ্চয়তা বিদ্যমান বিধায় ১৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঊর্ধ্বে বাণিজ্যে সক্ষমতায় পৌঁছাতে হবে।
আরও পড়ুনপ্রবাসীদের মেধা ও দক্ষতাকে সরকার কীভাবে ব্যবহার করবে৩১ আগস্ট ২০২৪ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য সুচিন্তিত নীতির প্রয়োজন। যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলসের এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র তথা বার্লিন মিশন সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। অন্যান্য মিশন একত্র করা যেতে পারে। ডি-৮–ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে কার্যকর করতে তুরস্কের দূতাবাসকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সব প্রতিবেশীই সর্বাধিক গুরুত্ব দাবি করে। দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর পাশাপাশি আসিয়ানও প্রতিবেশী। ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ উন্মোচনে আসিয়ান সদস্যপদ প্রাপ্তি অতীব জরুরি।
বাংলাদেশ ১৭ কোটি ভোক্তার বাজার। আসিয়ান তিন ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ব্লক। বিপুল পরিমাণে অভিবাসী মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে কর্মরত। আসিয়ান ও পূর্ব এশিয়ায় বয়সী মানুষ দ্রুতগতিতে বাড়ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের সাড়ে ৪ কোটির বেশি ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী। সদস্যপদ উভয়ের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করবে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মিশনগুলোর জন্য আলাদা কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন।
আফ্রিকায় গুরুত্ব বিবেচনা করে পুনর্গঠন করা যেতে পারে। আফ্রিকান ইউনিয়ন হাব, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য প্রবেশদ্বার এবং ফ্রাঙ্কোফোন আফ্রিকার কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের দিকেই মনোযোগ দেওয়া যায়।
সমন্বিত ব্যবস্থাপনা কাঠামোপ্রয়োজন সমন্বিত কাঠামো, ‘সমগ্র সরকার’ভিত্তিক কৌশল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্য অন্য মন্ত্রণালয়েরও ওপর নির্ভরশীল। ‘এক দেশ, এক কৌশল’ নীতির ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একা নয়; বরং অর্থ, বাণিজ্য, প্রবাসীকল্যাণ, প্রতিরক্ষা, শিল্প, পরিকল্পনা, কৃষি, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিয়ে সমন্বিত কূটনৈতিক কাঠামো জরুরি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘জাতীয় কূটনৈতিক সমন্বয় পরিষদ’-এর মাসিক সভায় অগ্রাধিকার ও কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ এবং আন্তমন্ত্রণালয় দ্বন্দ্বের সমাধান করা হবে।
সমন্বিত কৌশল বাস্তবায়ন–সংক্রান্ত বিধানাবলি প্রণয়ন ছাড়াও নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রাতিষ্ঠানিক সহমর্মিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও মিশনভিত্তিক সীমিত কূটনৈতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বর্তমান উইংগুলোর ব্যাপক পুনর্গঠন এবং শক্তিশালী ‘কর্মদক্ষতা ব্যবস্থাপনা কাঠামো’ প্রবর্তন জরুরি। প্রতি ছয় মাস অন্তর প্রধান সূচকগুলোর ভিত্তিতে স্কোরিং অনুযায়ী সব কার্যক্রমের মূল্যায়ন হতে পারে। মূল্যায়নের আলোকে ‘ট্যালেন্ট অপটিমাইজেশন’–পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। কৌশলগত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নতুন উইং, যেমন ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালাইসিস ইউনিট’ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যাপক কূটনৈতিক গতি বৃদ্ধির প্রয়োজন। একই কারণে মিশনগুলোর বাজেট বরাদ্দকাঠামোয় পরিবর্তন আনা জরুরি। কৌশলগত মিশনে জনবল ও ব্যয় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দূতাবাস রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। মিশন পর্যায়ে রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে ‘সমন্বিত কান্ট্রি টিম’ গঠনের পাশাপাশি আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের জন্য ‘ডিজিটাল ড্যাশবোর্ড’ চালু করা যেতে পারে। কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর, সমন্বিত ও ভবিষ্যৎমুখী করতে গুণগত সংস্কার আবশ্যক।
রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ন য দশম ক ক টন ত ক ক ত ক টন ত ক সমন ব ত ক পরর ষ ট র র জন ত ক ক শলগত র জন য প রব স অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার
উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের যাত্রায় অংশীদার হতে জাপানসহ বিশ্বের ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
রবিবার (১১ মে) বিকেলে ওসাকার কানসাই এ ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২৫ এর "বাংলাদেশ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগ অন্বেষণ করে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একসাথে কাজ করতে হবে।”
আরো পড়ুন:
বাণিজ্য উপদেষ্টা
জাপানে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন, বাংলাদেশ এ সুযোগ নিতে পারে
জাপান সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
দর্শকদের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন ভিজিট করার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়েছে।ঐতিহ্যের সাথে ভবিষ্যৎ সমাজের সেতুবন্ধের প্রতীক হিসেবে প্যাভিলিয়ন কাঠের কাঠামো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে যা শূন্য কার্বন ও টেকসই অনুশীলনের উদাহরণ।”
তিনি বলেন, “বিশ্বে বাংলাদেশ এখন প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের এক অনন্য উদাহরণ। আর্থ-সামাজিক ব্যাপক উন্নয়নের সাথে সাথে দেশটি এখন ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছে।”
ক্রমবর্ধমান তরুণ জনসংখ্যা এবং স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি দেশের মানুষকে সমৃদ্ধির স্তরে উন্নীত করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, “ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি, আসিয়ান দেশগুলোর কৌশলগত কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এ কারণে এই অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বাণিজ্য অংশীদার হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।”
তরুণদের দ্বারা সংগঠিত জুলাই আগস্ট বিপ্লব বাংলাদেশে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে বিশ্বের উন্নত দেশসমূহ তৈরি পোশাক, চামড়া, ওষুধ, হালকা প্রকৌশল, আইটি, পাট ও পাটজাত পণ্য, সিরামিক শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ওগুশি মাসাকি বলেন, “১৯৭২ সাল থেকে জাপান বাংলাদেশের সাথে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধ আছে। প্রতিনিয়ত এ সম্পর্ক গতিশীল হচ্ছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়ায়ও জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”
জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দাউদ আলী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ওগুশি মাসাকি "বাংলাদেশ দিবস’ উদযাপনের অংশ হিসেবে নিজ নিজ দেশের জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
এরপর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড স্মিফনি অব বাংলাদেশ।
পরে বাণিজ্য উপদেষ্টা ও জাপানের প্রতিমন্ত্রী ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে জাপান প্যাভিলিয়ন ও বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখেন এবং দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলেন।
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ