Risingbd:
2025-05-13@18:25:23 GMT

মিরাজের চোখ এক নম্বরে

Published: 13th, May 2025 GMT

মিরাজের চোখ এক নম্বরে

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরির পাশাপাশি বল হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। পুরস্কার হিসেবে উঠে এসেছেন টেস্টের সেরা অলরাউন্ড র‍্যাংকিংয়ের দ্বিতীয় স্থানে। তবে তাতেও সন্তুষ্ট নন মিরাজ।

তার চোখ র‍্যাংকিংয়ের প্রথম স্থানে। মঙ্গলবার মিরপুর শের-ই-বাংলায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মিরাজ বলেন, ‘‘অবশ্যই খুবই ভালো লাগার বিষয়। সত্যি কথা বলতে এক নম্বরে আসতে পারলে আরো ভালো লাগবে।’’

দ্বিতীয় স্থানে আসা ভালোলাগার বিষয় হলেও মিরাজের চোখ একে, ‘‘লক্ষ্য তো অবশ্যই অনেক উপরে যাওয়ার। দিন শেষে নিজে ফিট থাকতে হবে, ভালো খেলতে হবে, পারফরম্যান্স করতে হবে, তো ওভাবে অনেক বড় চিন্তা করছি না। ছোট ছোটভাবে আগাতে চেষ্টা করছি।’’

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ সিরিজকে সামনে রেখে নতুন কোচ নিয়োগ দিলো পাকিস্তান

ভারতের সঙ্গে খেললে কোহলিকে মিস করবেন লিটন

এদিকে বাংলাদেশের বোলিং কোচ হলেন শন টেইট। বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে কোচিংয়ের সময় মিরাাজ ছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির অধিনায়ক। পুরোনো অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেন এই অলরাউন্ডার।

‘‘দেখেন শন টেইটের সঙ্গে এর আগে আমি কাজ করেছিলাম। আমি যেবার বিপিএলে অধিনায়ক ছিলাম চিটাগংয়ের সেবার শন টেইট কিন্তু কোচ ছিল। তো আমার কাছে মনে হয় ওর সাথে বোঝাপড়াটা খুব ভালো ছিল। একজন মানুষ হিসেবে ও (শন টেইট) অনেক ভালো। অনেক দয়ালু এবং সাহায্যকারী।’’

২০২৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ডাগআউটে থাকবেন টেইট। মিরাজ মনে করেন তার মতো কোচ দলের জন্য ভালো।

‘‘আমার মনে হয় এরকম টাইপের কোচ থাকা দলের জন্য খুবই ভালো। আমি নিজেও ওকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি জানি ও খেলোয়াড়দের অনেক সাপোর্ট করে। এবং ও নিজে যেহেতু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলে। ও জানে এখানে কি করতে হবে। আমার মনে হয় এটা ভালো পজিটিভ দিক আমাদের দলের জন্য যে ওকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’’

ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইস স ন ট ইট

এছাড়াও পড়ুন:

নারী নির্যাতন দেখে পুরুষ দাঁত বের করে হাসে কেন!

সচল চিত্রটি ঘুরেফিরে বারবার অবয়বপত্রে ভেসে উঠছে। সম্ভবত কোনো লঞ্চে ওঠার আগে দুটো মেয়েকে একজন লোক তার বেল্ট দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। যারা সচল চিত্রটি অবয়বপত্রে সেঁটেছেন, তারা ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, অশালীন সাজের জন্য মেয়ে দুটোকে এমন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এটি যতবার চোখে এসেছে, ততবার প্রাণপণে নিজেকে বলেছি– ছবিটি মিথ্যে হোক। 
কেউ এসে অবয়বপত্রে বলুক, ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি; আসলে ওটা ঘটেনি। কিন্তু চাইলেই তো আর ছবিটি মিথ্যে হয়ে যাবে না। ‘অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?’

ছবিটি দেখতে দেখতে আমার তিনটি কথা মনে হয়েছে। এক. পুরো ঘটনা আবারও বিষাক্ত পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতার একটি প্রতিফলন। সেই ক্ষমতাবলে নারী এবং সমাজের ক্ষেত্রে একজন পুরুষ ‘নৈতিকতা পুলিশ’-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ। পুরুষই নারীর জন্য পোশাকের শোভনতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিচ্ছে এবং সে মানদণ্ড লঙ্ঘিত হলে নারীর শাস্তির বিধান কী, তা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। দুই. পুরুষের জন্য পোশাকের শোভনতার মানদণ্ড কে নির্ধারণ করবে? খালি গায়ে একজন পুরুষের ঘোরাফেরা যদি একজন নারীর কাছে অশোভন মনে হয়, তাহলে নারীটি কি ওই পুরুষকে ঝাঁটাপেটা করতে পারবেন? বৈষম্যহীন বাংলাদেশে সমাজ কি নারীকে সে ছাড়পত্র দেবে? 

যে বিষয়টি সবচেয়ে শঙ্কার সেটি হচ্ছে, উপর্যুক্ত নারকীয় ঘটনা ঘটার সময় আশপাশে বহু পুরুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। দাঁত বের করে হাসা এবং মোবাইল ফোনে ছবি তোলা ভিন্ন তারা আর কিছুই করেননি। মনে হচ্ছিল, মেয়েদের নির্যাতন এবং লাঞ্ছনায় উপস্থিত পুরুষেরা এক ধরনের বীভৎস আনন্দ পাচ্ছিলেন। সচল চিত্রে কাউকেই দেখলাম না, যিনি মেয়েদের বিরুদ্ধে এ নিগ্রহ রোধে এগিয়ে আসছেন অথবা নিদেনপক্ষে এ নারকীয় ঘটনার প্রতিবাদ করছেন। সেখানে পাঁচজন পুরুষ যদি মেয়ে দুটোর পাশে এসে দাঁড়াতেন, তাহলে ওই নারী নির্যাতনকারী কি পালিয়ে যেত, না কবিতার ওই কথাগুলোর মতো– ‘যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পলাইবে ধেয়ে;/ যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার, তখনি সে/ পথকুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে।’ না; আমরা নির্লিপ্ত নিরাসক্ত পুরুষেরা কিছুই করিনি। 
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আরও বেশ কিছু মৌলিক প্রশ্ন এসে যায়। প্রথমত, সব সময়েই দেখেছি, যে কোনো অন্যায়ে প্রতিবাদ ছিল আমাদের ভাষা; আর যূথবদ্ধতা ছিল আমাদের সংস্কৃতি। আমাদের সকল আন্দোলন ও সংগ্রাম– ’৫২ থেকে ’৬৯, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম, ’৯০ এবং ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থান; সবই আমরা করেছি যূথবদ্ধভাবে প্রতিবাদের মাধ্যমে। কিন্তু আজ যখন মেয়েদের ওপরে আঘাত আসছে নানাভাবে নানাদিক থেকে, তখন দুটো প্রবণতা অত্যন্ত স্পষ্ট– এক. সমাজ বড় বিভাজিত, যূথবদ্ধ নয়। তাই মেয়েদের ওপরে নানাবিধ আক্রমণকে আমরা, ছেলেরা নারীদের বিষয় বলেই মনে করছি। আমরা যেন ভাবছি, ওটা মেয়েদের সমস্যা। ওদের সমস্যা ওদেরকেই দেখতে হবে। আমরা ছেলেরা তাই নির্লিপ্ত থাকছি; নিরাপদ দূরত্বে থাকছি; মেয়েদের সঙ্গে যূথবদ্ধভাবে থাকছি না। কেমন যেন একটা বিভাজিত অবস্থা! অথচ মেয়েদের বিরুদ্ধে কথার ও ব্যবহারের যেসব হামলা হচ্ছে, সেগুলো মানবতার ওপরে হামলা; মানুষের অধিকারের বিরুদ্ধে আঘাত এবং শুভবুদ্ধির জন্য হুমকি। সেসব হামলা, আঘাত আর হুমকির বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছেলেমেয়ে উভয়ের। আজ সে সংগ্রামে মেয়েরা প্রতিবাদে সোচ্চার, কিন্তু সেখানে ছেলেরা কোথায়?  অন্য সব কথা বাদ দিলেও সে সংগ্রামে ছেলেদের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। কারণ মেয়েদের জীবনের বহু বাস্তবতা নির্ণীত হয় ছেলেদের কর্মকাণ্ড দ্বারা। অথচ কেন আমরা আজ বিভাজিত একটি অবস্থার মধ্যে আছি?

দ্বিতীয়ত, নারীদের মধ্যেও বিভাজন আছে। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, মেয়েদের বিরুদ্ধে আক্রমণের ব্যাপারে ছেলেরা যে শুধু নির্লিপ্ত বা নিরাসক্ত, তাই নয়। সে আক্রমণ তাদের অনেকের কাছে পরিহাস, হাসি-ঠাট্টা এবং বিজাতীয় আনন্দের ব্যাপার। তাই এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ছেলেরা প্রতিবাদ করে না; নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। তাদের উৎসাহ যতটা থাকে মোবাইল ফোনে ঘটনার ছবি তোলার ব্যাপারে, তাদের নিরুৎসাহ ততটাই থাকে মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর। মেয়েরা তাদের সংগ্রামে ছেলেদের পাশে পায় না। আসলে মেয়েদের বিরুদ্ধে অনভিপ্রেত ঘটনা প্রবাহ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ায় ছেলেরা সম্পৃক্ত নয়। 

তৃতীয়ত, কিছুদিন আগে দেশে ১০ সদস্যের একটি নারী সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছিল, যার সবাই ছিলেন নারী। সে কমিশনে পুরুষ সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি কি অভিপ্রেত ছিল না? ক’দিন আগে এই কমিশনের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ ও সুপারিশমালার বিরুদ্ধে যে ন্যক্কারজনক আক্রমণ করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে শুধু নারী নেত্রীরাই ছিলেন। সেখানে পুরুষদের উপস্থিতি কি নারীদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করত না?


এ প্রক্রিয়ায় তিনটি অনভিপ্রেত ফলাফল ঘটেছে। এক. পুরো প্রক্রিয়ায় ছেলেদের অনুপস্থিতিতে মনে হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো শুধু নারীবিষয়ক। এতে ছেলেদের কিছু বলার বা করার নেই। ফলে একটি সামগ্রিক বিষয় সীমাবদ্ধ এবং খণ্ডিত হয়ে গেছে এবং একটি কাঙ্ক্ষিত ও প্রয়োজনীয় সর্বাত্মক যূথবদ্ধ সংগ্রাম বিভাজিত হয়ে গেছে। দুই. উপরোক্ত বিভাজনের কারণে কমিশনের প্রতিবেদনের ওপরে যখন জঘন্য আক্রমণ হয়েছে, তখন সে আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য মেয়েদের পাশে ছেলেদের জোরালো উপস্থিতি দেখা যায়নি। ফলে নারীদের বিরুদ্ধে অপশক্তির অপপ্রচেষ্টা প্রতিহত করার সংগ্রাম দুর্বল হয়েছে। 

অবশ্য মঙ্গলবারের পত্রিকাগুলো এ বিষয়ে একটি ভিন্ন চিত্র উপস্থাপন করেছে। সেটা হলো, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে লক্ষ্য করে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের ১১০ নাগরিক, যেখানে সমাজের বিশিষ্ট নারীদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট পুরুষ আছেন। সমকালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওই বিবৃতিতে বেশ কড়া ভাষায় নারী কমিশনের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচারকারীদের সমালোচনা করা হয়েছে। তারা সরকারকে এ বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে বলেছেন এবং কমিশনকে সমর্থন ও সুরক্ষা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

যাক, শেষের কথা বলি। নারী অধিকার বিষয়টি শুধু নারীবিষয়ক নয়। এ অধিকার মানবাধিকারও বটে। নারীর কুশল শুধু তাদের কুশল নয়। তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নারী-পুরুষ উভয়ের কুশল। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মানুষের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস। সুতরাং চূড়ান্ত বিচারে এসব ব্যাপারেই পুরুষের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। যুদ্ধটা করতে হবে নারী-পুরুষ মিলে। এর কোনো বিকল্প নেই।

সেলিম জাহান: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

সম্পর্কিত নিবন্ধ