হিউম্যান রিসোর্স নাকি হিউম্যান ক্যাপিটাল?
Published: 16th, May 2025 GMT
বাংলাদেশের যে সমাজে প্রতিদিন নতুন উদাহরণ সৃষ্টি হয়, সেখানে হিউম্যান রিসোর্সের নামে একটি বড় সংখ্যক জনসংখ্যার ধারণা রয়েছে। কিন্তু সেই জনসংখ্যা কখনোই হিউম্যান ক্যাপিটাল বা শক্তিতে রূপান্তরিত হয় না। সমাজে যখন শক্তির জায়গা গ্রহণ করা হয়, তখন সেই শক্তি যদি দক্ষতা, মেধা এবং সৃজনশীলতায় রূপান্তরিত না হয়, তা কেবল একটি সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায়।
আজও আমরা একটি বিশ্বস্ত তত্ত্বে বিশ্বাস করি যে, জনসংখ্যা দিয়েই সমাজের উন্নতি সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এটি এক অগোচর বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে অর্থনৈতিক প্রগতি দৃশ্যমান, অন্যদিকে এ দেশে আরও বড় ও গভীর সমস্যা লুকিয়ে থাকে। তা হলো, ‘হিউম্যান ক্যাপিটাল’ হয়ে উঠতে না পারা। বাস্তবতা এটাই যে, দক্ষগুণে মানবসম্পদ হয়ে উঠতে না পারলে উন্নতির দ্বারে পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিস্ময়কর। কিন্তু সেই জনসংখ্যা যদি দক্ষতা, শক্তি ও প্রতিভায় পূর্ণ না হয়, তবে তা দুর্বল ভিত্তি তৈরি করে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার বাস্তবায়ন মূলত ভোগ করে যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে যখন বিদেশি কোম্পানি কিংবা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বাংলাদেশে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে আসে, তারা আমাদের জনসংখ্যার সক্ষমতা এবং পেশাগত দক্ষতায় সন্দেহ প্রকাশ করে। সঠিকভাবে প্রস্তুত না হওয়া কর্মী, সৃজনশীলতা এবং দক্ষতার অভাব এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
একটি ছোট্ট উদাহরণ: একজন উচ্চশিক্ষিত তরুণ চাকরি খুঁজে পাচ্ছে, কিন্তু তার মধ্যে উপযুক্ত দক্ষতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। যার কারণে সে তার নিজস্ব শক্তি থেকে পিছিয়ে থাকে, যা স্মিথ বলে গিয়েছেন বহুকাল আগে। এই সমস্যা ধীরে ধীরে একটি ঘূর্ণাবর্তে পরিণত হয় এবং বাংলাদেশের উন্নতি রুখে দেয়। আমাদের নীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ঐতিহ্যগত দ্বন্দ্ব, যা এ সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে তা হলো, আমরা ‘নবায়ন’ বা ‘উন্নয়ন’ শুধু সংখ্যার দিকে তাকিয়ে করি। কিন্তু হিউম্যান ক্যাপিটাল রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত সমাধান সম্ভব নয়।
যদি এই সমস্যা ঠিক না করা হয়, তবে এর ভবিষ্যতে প্রভাব আরও গভীর হতে পারে। বিশেষত দেশ যেভাবে চলছে, সেখানে দক্ষতার অভাব আমাদের প্রগতি ঠেকিয়ে দেবে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে আমাদের শ্রমবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পাবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। যেমন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষ শ্রমিকের অভাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানি তাদের উৎপাদন বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। দেশের তরুণদের মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও অধিকাংশই চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ নয়, যা একটি বিশাল প্রভাব ফেলবে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ হতাশ হয়ে পড়তে পারে এবং সেখান থেকে অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.
বাংলাদেশে যদি হিউম্যান রিসোর্সকে প্রকৃত হিউম্যান ক্যাপিটালে রূপান্তর করা যায়, তবে একদিন আমাদের দেশ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম হবে। যখন আমরা জনগণকে তাদের প্রকৃত দক্ষতায় উজ্জীবিত করতে সক্ষম হবো, তখন সেই সময়ের দিকে এগিয়ে যাব, যেখানে হিউম্যান রিসোর্স এবং হিউম্যান ক্যাপিটালের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। এটি একটি সমাধানযোগ্য সমস্যা এবং সঠিক পদক্ষেপগুলো আমাদের সমাজের উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারবে।
ড. তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব: ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক; দাউদ ইব্রাহিম হাসান:
ডেটা অ্যানালিস্ট
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জনস খ য আম দ র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় বৈষম্যবিরোধী নেতার পদত্যাগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগর যুগ্ম মুখ্য সংগঠক শেখ রাফসান জানী পদত্যাগ করেছেন। সোমবার নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে পদত্যাগপত্র সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
খুলনায় অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন রাফসান তাদের মধ্যে অন্যতম। আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট গগণবাবু রোডে পুলিশের গুলিতে মারাত্মক জখম হন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে রাফসান উল্লেখ করেন, ‘গত জুলাইতে এক কঠিন পদযাত্রার মাধ্যমে আমরা এক ব্যানার গড়ে তুলেছিলাম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। কিন্তু ৫ আগস্টের পর খুলনাতে স্বার্থ, দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি আর পদ দখলের লড়াইতে ব্যানারে ঘুণ ধরতে শুরু করে। খুবির ক্ষমতার ঈর্ষা আর পাঞ্জাবীওয়ালার কূটচালে ব্যানার থেকে বিপ্লবীদের সরিয়ে সুবিধাবাদীদের স্থান করে দেওয়ার এক খেলা শুরু হয়। ফলাফল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা এক ঘুণে পচে যাওয়া ফার্নিচারে পরিণত হয়েছে আজ।’
পদত্যাগের পর এখন থেকে ছাত্রদলের সঙ্গে রাজনৈতিক জীবন শুরু করবেন বলেও জানান তিনি। এ ব্যাপারে রাফসান জানী বলেন, আন্দোলনে আমি ও আমার বাবা অনেক রক্ত ও শ্রম দিয়েছি। বিনিময়ে আমার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ চাপিয়েছে আমার ব্যানারের লোকজন। তখন থেকেই আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। আমার আত্মত্যাগের কাছে কোনো পদ বড় হতে পারে না।