বাংলাদেশের যে সমাজে প্রতিদিন নতুন উদাহরণ সৃষ্টি হয়, সেখানে হিউম্যান রিসোর্সের নামে একটি বড় সংখ্যক জনসংখ্যার ধারণা রয়েছে। কিন্তু সেই জনসংখ্যা কখনোই হিউম্যান ক্যাপিটাল বা শক্তিতে রূপান্তরিত হয় না। সমাজে যখন শক্তির জায়গা গ্রহণ করা হয়, তখন সেই শক্তি যদি দক্ষতা, মেধা এবং সৃজনশীলতায় রূপান্তরিত না হয়, তা কেবল একটি সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায়।

আজও আমরা একটি বিশ্বস্ত তত্ত্বে বিশ্বাস করি যে, জনসংখ্যা দিয়েই সমাজের উন্নতি সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এটি এক অগোচর বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে অর্থনৈতিক প্রগতি দৃশ্যমান, অন্যদিকে এ দেশে আরও বড় ও গভীর সমস্যা লুকিয়ে থাকে। তা হলো, ‘হিউম্যান ক্যাপিটাল’ হয়ে উঠতে না পারা। বাস্তবতা এটাই যে, দক্ষগুণে মানবসম্পদ হয়ে উঠতে না পারলে উন্নতির দ্বারে পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিস্ময়কর। কিন্তু সেই জনসংখ্যা যদি দক্ষতা, শক্তি ও প্রতিভায় পূর্ণ না হয়, তবে তা দুর্বল ভিত্তি তৈরি করে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার বাস্তবায়ন মূলত ভোগ করে যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে যখন বিদেশি কোম্পানি কিংবা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বাংলাদেশে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে আসে, তারা আমাদের জনসংখ্যার সক্ষমতা এবং পেশাগত দক্ষতায় সন্দেহ প্রকাশ করে। সঠিকভাবে প্রস্তুত না হওয়া কর্মী, সৃজনশীলতা এবং দক্ষতার অভাব এই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। 

একটি ছোট্ট উদাহরণ: একজন উচ্চশিক্ষিত তরুণ চাকরি খুঁজে পাচ্ছে, কিন্তু তার মধ্যে উপযুক্ত দক্ষতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। যার কারণে সে তার নিজস্ব শক্তি থেকে পিছিয়ে থাকে, যা স্মিথ বলে গিয়েছেন বহুকাল আগে। এই সমস্যা ধীরে ধীরে একটি ঘূর্ণাবর্তে পরিণত হয় এবং বাংলাদেশের উন্নতি রুখে দেয়। আমাদের নীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ঐতিহ্যগত দ্বন্দ্ব, যা এ সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে তা হলো, আমরা ‘নবায়ন’ বা ‘উন্নয়ন’ শুধু সংখ্যার দিকে তাকিয়ে করি। কিন্তু হিউম্যান ক্যাপিটাল রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত সমাধান সম্ভব নয়।
যদি এই সমস্যা ঠিক না করা হয়, তবে এর ভবিষ্যতে প্রভাব আরও গভীর হতে পারে। বিশেষত দেশ যেভাবে চলছে, সেখানে দক্ষতার অভাব আমাদের প্রগতি ঠেকিয়ে দেবে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে আমাদের শ্রমবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পাবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। যেমন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষ শ্রমিকের অভাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোম্পানি তাদের উৎপাদন বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। দেশের তরুণদের মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও অধিকাংশই চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ নয়, যা একটি বিশাল প্রভাব ফেলবে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ হতাশ হয়ে পড়তে পারে এবং সেখান থেকে অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং সামাজিক ব্যবসার ধারণা উদ্ভাবন করেছেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি হলো, জনসংখ্যা শুধু সংখ্যা নয়; বরং তাদের দক্ষতা, উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতাকে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে পারলে একটি দেশ উন্নত জাতিতে পরিণত হতে পারে।
বাংলাদেশে যদি হিউম্যান রিসোর্সকে প্রকৃত হিউম্যান ক্যাপিটালে রূপান্তর করা যায়, তবে একদিন আমাদের দেশ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম হবে। যখন আমরা জনগণকে তাদের প্রকৃত দক্ষতায় উজ্জীবিত করতে সক্ষম হবো, তখন সেই সময়ের দিকে এগিয়ে যাব, যেখানে হিউম্যান রিসোর্স এবং হিউম্যান ক্যাপিটালের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। এটি একটি সমাধানযোগ্য সমস্যা এবং সঠিক পদক্ষেপগুলো আমাদের সমাজের উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারবে।

ড. তারনিমা ওয়ারদা আন্দালিব: ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক; দাউদ ইব্রাহিম হাসান: 
ডেটা অ্যানালিস্ট

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জনস খ য আম দ র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

কোরবানির ঈদে ৩০ লাখের বেশি বাস টিকিট নিয়ে প্রস্তুত bdtickets

সামনেই কোরবানির ঈদ। ১০ দিনের এক দীর্ঘ ছুটিতে ঢাকা ছেড়ে মানুষ ছুটবে প্রিয়জনের টানে। কেউ যাবে গাড়িতে, কেউ ট্রেনে, কেউবা আবার লঞ্চে চড়ে পাড়ি দেবে দূরপাল্লার পথ। প্রাথমিক হিসাব বলছে, এবার ঈদে প্রায় ২ কোটি মানুষ ঢাকা ছাড়বে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে। যাদের মধ্যে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মানুষ বাড়ি ফিরবে বাসে। আর এই বিপুলসংখ্যক মানুষের ঈদযাত্রাকে আরামদায়ক ও হ্যাসেল ফ্রি করতে দেশের সবচেয়ে বড় বাস টিকিট বুকিং প্ল্যাটফর্ম bdtickets নিয়েছে বিশেষ প্রস্তুতি।

bdtickets জানিয়েছে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে তারা প্রায় ৩০ লাখের বেশি বাস টিকিট বিক্রি করবে www.bdticktes.com ওয়েবসাইট থেকে। কোনো প্রকার এক্সট্রা চার্জ ছাড়াই। আর গ্রাহকেরা ঘরে বসেই তাঁদের পছন্দমতো বাস, সময় ও সিট নির্বাচন করে কোনো হ্যাসেল ছাড়াই কাটতে পারবেন বাস টিকিট। শুধু তা–ই নয়, পুরো প্রক্রিয়াটি হবে একদম ঝামেলাবিহীন ও স্বচ্ছ।

এ বিষয়ে bdtickets-এর হেড অব ক্যাম্পেইন শাফায়েত শাহনূর বলেন, ‘ঈদ মানেই আপনজনের কাছে ফেরার তাগিদ—মায়ের হাতের রান্না, বাবার ডাক, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে গল্প...এই টানেই মানুষ ছুটে যায় নিজের শিকড়ে। কিন্তু সেই ফেরার পথটাই যখন হয় টিকিট সংকট, দীর্ঘ লাইন আর কালোবাজারির ভোগান্তিতে ভরা, তখন ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। আমরা চাই, মানুষ যেন সেই কষ্টটা না পায়। গরমে ঘেমে, বৃষ্টিতে ভিজে লাইনে দাঁড়ানোর দিন শেষ-bdtickets চায় সবাই যেন ঘরে বসেই, দিন-রাত যখন ইচ্ছে, অনলাইনে নিজের পছন্দের বাসের সিট কাটতে পারে, ন্যায্য দামে, নিশ্চিন্তে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে টিকিট খুঁজতে খুঁজতে অনেক সময় পছন্দের সিট তো দূরের কথা, বাসও মেলে না। তাই আগে থেকেই টিকিট কাটা বুদ্ধিমানের কাজ, কারণ ভালো বাস, ভালো সিট পেলেই যাত্রাটা হয়ে ওঠে আনন্দময়।’

এ প্রসঙ্গে ইমতিয়াজ আহমেদ নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘গতবার ঈদে বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল টিকিটের জন্য। কিন্তু এবার bdtickets অ্যাপ থেকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই বাস সিলেক্ট করে পেমেন্ট করে ফেলেছি। এখন আরামে ঈদে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারছি।’

উল্লেখ্য, টিকিট বুকিং চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এবং যেকোনো প্রয়োজনে সপ্তাহের সাত দিন ১৬৪৬০ নম্বরে ফোন করে কাস্টমার কেয়ারের সহায়তা নেওয়া যাবে। এ ছাড়া ঈদের আনন্দ শেষেও bdtickets গ্রাহকদের দেবে রিটার্ন টিকিটে আকর্ষণীয় অফার। বিস্তারিত জানতে হলে ভিজিট করুন bdtickets-এর ফেসবুক পেজে বা ওয়েবসাইটে।

বাড়ি ফেরা হোক হ্যাসেল ফ্রি!

ঈদে টিকিট মানেই-bdtickets।

সম্পর্কিত নিবন্ধ