সদ্য বরখাস্ত রুশ মন্ত্রীর মরদেহ মিলল গাড়ির ভেতর, শরীরে গুলির চিহ্ন
Published: 8th, July 2025 GMT
বরখাস্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়ার এক মন্ত্রী ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির তদন্ত কর্মকর্তা। তার শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।
রোমান স্তারোভোয়িত নামে ৫৩ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি রাশিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন। মরদেহ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টা আগে ক্রেমলিন থেকে ভ্লাদিমির পুতিনের সই করা একটি আদেশে তাকে মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
সোমবার মস্কোর উপকণ্ঠে একটি গাড়ির ভেতর তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, রোমান স্তারোভোয়িত আত্মহত্যা করেছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমও আত্মহত্যার কথা জানিয়েছে।
২০২৪ সালের মে মাস থেকে তিনি যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলের গভর্নর ছিলেন। রাশিয়ার এই অঞ্চলের বেশ কিছুটা অংশ দখল করে নিয়েছিল ইউক্রেন। সম্প্রতি সেখানে ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে রুশ সেনাদের তীব্র লড়াই হয়েছে।
রাশিয়ার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, স্তারোভোয়িতকে সরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে কুরস্ক অঞ্চলে দুর্নীতি এবং সীমান্ত অঞ্চল সুরক্ষিত করার তহবিল তছরুপের একটি সম্ভাব্য মামলার যোগসূত্র থাকতে পারে। রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, আজ ওদিন্তোসোভো এলাকায় নিজের প্রাইভেট কারের ভেতর সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী রোমান স্তারোভোয়িতের মরদেহ পাওয়া গেছে। তাঁর শরীরে গুলির আঘাতের চিহ্ন ছিল। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলছেন, এই বরখাস্তের সঙ্গে ‘আস্থাহীনতার’কোনো সম্পর্ক নেই।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিল হচ্ছে
সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান বাতিল হচ্ছে। বিদ্যমান চারটি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা বাতিল করে নতুন অধ্যাদেশ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এর ফলে রাজনৈতিক দলগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে না। প্রার্থীরা সবাই হবেন নির্দলীয়, যা এখন স্বতন্ত্র নামে পরিচিত।
দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার বন্ধে দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিভিন্ন দল ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এ বিধান বাদ দিলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নন এমন অনেক যোগ্য ব্যক্তিও নির্বাচনে আগ্রহী হবেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চারটি খসড়া অধ্যাদেশের বিষয়ে তিনি জেনেছেন। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জিয়াউল হকএ–সংক্রান্ত চারটি আলাদা অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করে ১ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর উপদেষ্টা পরিষদ হয়ে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সম্মতি নিয়ে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুরাইয়া আখতার জাহান মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আইন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মো. জিয়াউল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চারটি খসড়া অধ্যাদেশের বিষয়ে তিনি জেনেছেন। এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে রাজনীতিতে আলোচনা আছে। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দল আগে স্থানীয় নির্বাচন চাইছে। এরই মধ্যে স্থানীয় সরকারকাঠামোর চারটি আইনের দলীয় প্রতীকের ধারা বাতিল করতে যাচ্ছে সরকার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দিতে বিএনপি দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির ৩১ দফাতেও এটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি আমাদের দলের যে দাবি ছিল, তার প্রতিফলন।’
দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পদ্ধতি বাতিলের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হলে জাতীয় রাজনীতির বিরোধ স্থানীয় পর্যায়ে চলে যায়। অনেক ভালো সামাজিক নেতৃত্ব দলীয়ভাবে প্রভাবিত হন। সব মিলিয়ে স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হওয়াটাই ভালো।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের জন্য তৈরি করা চারটি খসড়া অধ্যাদেশের সারসংক্ষেপে বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে সঠিকভাবে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নির্বাচনে সব পর্যায়ের জনগণের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে চারটি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা বাতিল করা প্রয়োজন।
স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ দিতে বিএনপি দাবি জানিয়ে আসছে। বিএনপির ৩১ দফাতেও এটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি আমাদের দলের যে দাবি ছিল, তার প্রতিফলন।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় ৮ আগস্ট। এরপর সব সিটি করপোরেশনের মেয়র, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এসব পদে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ করা না হলেও অনেক জায়গায় চেয়ারম্যানরা পলাতক। সেসব জায়গায় প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, আলাদা করে চারটি অধ্যাদেশের প্রয়োজন নেই। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ আইনকে একটি অধ্যাদেশে আনা সম্ভব। সেটা কেন করা হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর মতে, এক দিনেই চারটি নির্বাচন করা সম্ভব।বর্তমানে স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় পাঁচটি স্তর রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ৪ হাজার ৫৮১টি। এ ছাড়া ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ, ৬৪টি জেলা পরিষদ (তিন পার্বত্য জেলাসহ), ৩৩০টি পৌরসভা ও ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, জেলা পরিষদে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচন হয় না। তাই জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতীকের বিধানটি বাতিল বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত হয়।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব পুরোটা আমলে নেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, আলাদা করে চারটি অধ্যাদেশের প্রয়োজন নেই। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ আইনকে একটি অধ্যাদেশে আনা সম্ভব। সেটা কেন করা হলো না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর মতে, এক দিনেই চারটি নির্বাচন করা সম্ভব। আলাদা আলাদা নির্বাচনের দরকার নেই। সংস্কার না করে কোনো নির্বাচন করা ঠিক হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।