ব্রাজিলের পরম আনন্দ, ব্রাজিলের চরম বেদনা
Published: 8th, July 2025 GMT
যদি বলি, ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের চরমতম বেদনা আর পরমতম আনন্দ—দুটিরই আমি প্রত্যক্ষদর্শী, পাল্টা প্রশ্ন কী হবে, তা অনুমান করতে পারি। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের চরমতম বেদনা বললে তো প্রথমেই মনে পড়ে ‘মারাকানাজো’—মারাকানা স্টেডিয়ামে ১৯৫০ বিশ্বকাপ ফুটবলের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিলের ২-১ গোলে সেই পরাজয়। আমার জন্মেরও আগের সেই ম্যাচের প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার সুযোগ কোথায়?
যৌক্তিক প্রশ্ন এবং সেই প্রশ্নের উত্তরও আপনি জানেন। ‘মারাকানাজো’ আমি দেখিনি। তবে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের দুঃখগাথায় ‘মারাকানাজো’র প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা (না সেটিকে ছাড়িয়ে যাওয়া?) ‘মিনেরেইজো’ তো দেখেছি। ‘মারাকানাজো’ কী, এটা প্রায় সবারই জানা, ধরে নিয়েও একটু কি ব্যাখ্যা করা উচিত? করিই না হয়।
আরও পড়ুনওয়ানডের যে ১০টি রেকর্ড (হয়তো) ভাঙবে না কোনো দিন১৮ জুন ২০২৫১৯৫০ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ওই একটা বিশ্বকাপেই ফাইনাল বলে কিছু ছিল না। তারপরও শেষ ম্যাচটা রূপ নিয়েছিল অলিখিত ফাইনালের। যে ম্যাচে ড্র করলেই ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন, উরুগুয়েকে জিততেই হবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে ব্রাজিলিয়ানরা এমনই নিশ্চিত ছিল যে শুরু হয়ে গিয়েছিল আগাম উদ্যাপন। রিওর পত্রিকা ও’মুন্দো ম্যাচের দিন ব্রাজিল দলের ছবি ছেপে ঘোষণা দিয়ে দেয়: ‘দিজ আর দ্য চ্যাম্পিয়নস।’ রিওর মেয়র বিজয়ী বীরদের স্যালুট জানিয়ে দেন। এই পটভূমি জানা থাকলে মারাকানায় প্রায় দুই লাখ দর্শকের সামনে সেই ম্যাচে পরাজয়ের তাৎপর্য বুঝতে সুবিধা হবে। কেন একটা ফুটবল ম্যাচে পরাজয় ব্রাজিলের জাতীয় ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছিল, সেটাও।
অল্প শোকে মানুষ কাঁদে, অধিক শোকে পাথর হয়ে যায়। অভাবনীয় কিছু হলে একটা সময় মনে হয় বিচিত্র আচরণ করতে শুরু করে। অ্যাটলেটিকো মিনেইরোর গ্যালারিও তখন তা-ই করছে। জার্মানদের পায়ে বল গেলে হাততালি দিচ্ছে, ব্রাজিলিয়ানদের পায়ে গেলে শিস।২০১৪ বিশ্বকাপ কাভার করতে ব্রাজিল যাওয়ার সময়ই মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম, ‘মারাকানাজো’র প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে খুঁজে বের করে তাঁর ইন্টারভিউ করব। সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। খুব যে চেষ্টা করেছি, তা-ও নয়। কারণ, সাও পাওলোতে ব্রাজিলে আমার প্রথম দিনেই পাওয়া একটা সতর্কবার্তা। ব্রেকফাস্ট করতে নেমে হোটেলের মধ্যবয়সী ম্যানেজারকে আমার ইচ্ছার কথা জানাতেই হেসে বলেছিলেন, ‘এমন অনেককেই পাবেন। তবে বিশ্বাস করবেন না। যতজন ব্রাজিলিয়ান ওই ম্যাচে মাঠে ছিল বলে দাবি করে, তা সত্যি হলে সেদিন মারাকানায় ২ লাখের বদলে ২০ লাখ দর্শক থাকার কথা।’
১৯৫০ বিশ্বকাপে মারাকানা স্টেডিয়ামে সেই হারে জাতীয় বিপর্যয় নেমে এসেছিল ব্রাজিলে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় শরৎ উৎসব উদ্যাপন
নানা আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরৎ উৎসব-১৪৩২ উদ্যাপিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় এ অনুষ্ঠান হয়। চারুকলা অনুষদের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত, নৃত্যকলা, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহযোগিতায় এ উৎসব হয়।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখের সভাপতিত্বে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শরৎ উৎসব। পরে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা। তিনি বলেন, ‘চারুকলার প্রাঙ্গণে যখনই আমরা আসি, যেকোনো উৎসবে বা অনুষ্ঠানে আমরা একত্র হই, তখন সব সময় একধরনের ভিন্ন আবহ সৃষ্টি হয়। এখানে আমরা আমাদের লোকজ ও বাঙালি সাহিত্য-সংস্কৃতির একটি সুন্দর প্রকাশ দেখতে পাই।’
অধ্যাপক সায়মা হক আরও বলেন, ‘আজকের শরৎ উৎসবের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এ ধরনের উৎসব মানুষে-মানুষে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। প্রতিযোগিতামূলক ও ব্যস্ত জীবনে আমরা প্রায়ই একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাই। এই উৎসবগুলো আমাদের পুনরায় একত্র করে, পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।’
এরপর চারুকলা অনুষদ, সংগীত, নৃত্যকলা এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে গান, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি করা হয়।
সাংস্কৃতিক আয়োজনের অংশ হিসেবে চিত্রকলা প্রদর্শনী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী তিনজন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের ফারিয়া নওশিন আহমেদ ও সাজ্জাদুল ইসলাম এবং গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের ফরহাদ আলী।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘আমাদের বৈচিত্র্যময় ঋতুপ্রবাহ আমাদের মনোজগৎকে পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দুই এই চারুকলা অনুষদ। এখন দেখা যায়, ফাল্গুনে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র বাংলাদেশ ও বিশ্বের বাঙালিরা এই উৎসব উদ্যাপন করে।
চারুকলা অনুষদ ঐতিহ্যগতভাবেই সমৃদ্ধ। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এই তিনের সমন্বিত ধারাকে আমরা সব সময়ই স্বাগত জানাই। আমাদের চিত্রকলা যেমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে, তেমনি সংগীত, নৃত্য ও নাটকেরও একই দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃষ্টিশীল চেতনা রয়েছে।’
শরৎ উৎসব নিজস্ব উৎসব উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা বহু বছর ধরে দেখেছি চারুকলার প্রাঙ্গণকে অনেক সময় বিভিন্ন মানুষের খেয়ালখুশিমতো ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, এখন আর সেটা হতে দেওয়া যাবে না এবং আমরা সেটি হতে দিচ্ছি না।’
সাদা দলের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম সরকার দেশের ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে নিয়মিতভাবে উদ্যাপনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্কা গোপ ও নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান তামান্না রহমান।