যেভাবেই হোক বিশ্বকাপের মঞ্চে যেতে হবে
Published: 8th, July 2025 GMT
চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। ইয়াঙ্গুন থেকে ব্যাংকক হয়ে মধ্যরাতে ঢাকায় পা রেখেছেন। বিমানবন্দর থেকে হাতিরঝিলের অ্যাম্ফিথিয়েটারে বাফুফের সংবর্ধনা। ঘুমাতে ঘুমাতে ভোর, তার পরও গতকাল দুপুরে সমকাল কার্যালয়ে আসলেন। একান্ত সাক্ষাৎকারে মন খুলে কথা বললেন নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার প্রান্তি। শোনালেন বিশ্বকাপে যাওয়ার স্বপ্নের কথা, পাশাপাশি আক্ষেপ করলেন মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো মাঠ না থাকার, লিগ না হওয়ার এবং আর্থিকভাবে আরেকটু সচ্ছলতার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়
সমকাল: অভিনন্দন, দেশকে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অবশেষে এশিয়া কাপে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো, কেমন লাগছে?
আফঈদা খন্দকার: আসলে এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এটি আমাদের সবার কষ্টের ফল। দীর্ঘদিন আমরা যে কষ্টটা করেছি, তারই ফল এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করা।
সমকাল: কী ধরনের কষ্টের কথা বলছেন?
আফঈদা: সব মিলিয়েই অনেক কষ্ট করেছি আমরা। পরিবার থেকে দূরে এসে ফেডারেশনে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্প করে আসছি। আমি ক্যাম্পে যোগদান করেছি ২০১৮ সালে। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত টানা এখানে ক্যাম্পে আছি। ঈদসহ যত উৎসব বেশির ভাগ সময় ফেডারেশনে করতে হয়েছে। আর পড়াশোনার একটু ক্ষতি হচ্ছে। কারণ সারা বছরই যেহেতু ক্যাম্পে থাকতে হয়, তাই ক্লাস করার সুযোগ থাকে না।
সমকাল: পড়ালেখার সঙ্গে খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়া, কীভাবে ব্যালান্স করেন?
আফঈদা: আমাদের অনুশীলন থাকে সকালে, দুপুরে জিম সেশন থাকে। রাতে ফ্রি থাকি। ওই সময় একটু পড়াশোনা করি। কারণ পড়ালেখা না থাকলে ভবিষ্যতে কী করব। ফুটবল তো বেশিদিন খেলতে পারব না। পড়ালেখা আর ফুটবল, দুইটা মিলিয়ে ভালো কিছু করতে পারব। এ জন্যই সবাইকে বলব, খেলাধুলার পাশাপাশি পড়ালেখাটাও ঠিকভাবে চালিয়ে নিতে।
সমকাল: ফুটবলে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ দেখছেন কেন?
আফঈদা: আমাদের দেশে এখনও সেভাবে নারী ফুটবলকে ভালো চোখে দেখা হয় না। তবে ধীরে ধীরে মানুষ ফুটবলের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। তা ছাড়া একটা বয়সের পর কিন্তু ফুটবল খেলতে পারব না। আর আমাদের দেশে তেমন লিগও হয় না যে আমরা আর্থিকভাবে বেশি কিছু পাব। দিন শেষে কিন্তু আমাদের আর্থিক দুর্বলতাটা সবদিক থেকেই আসে। লিগ হয় না, ফেডারেশন আমাদের যে বেতন দিচ্ছে, ওটাতে আমাদের ওইভাবে চলে না। তাই ভবিষ্যতে আমরা কী করব, সেই চিন্তাটা এসেই যায়।
সমকাল: মেয়েরা বাফুফে থেকে যে বেতন পাচ্ছে, আপনি কি মনে করেন সেটি আরও বাড়ানো উচিত?
আফঈদা: আমরা সাফল্য এনে দিচ্ছি, আমাদের পারিশ্রমিকও যেন বাড়ানো হয়; এটি আমাদের চাওয়া। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকলে কোনো দিক থেকে ভালো থাকা যায় না। একটা বুট কিনতে গেলেও অনেক টাকা লাগে। নিজেকে চলতে হয়, সঙ্গে পরিবারকেও চালাতে হয়।
সমকাল: এশিয়া কাপের মঞ্চ থেকে বিশ্বকাপ খেলার হাতছানিও আছে। আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে?
আফঈদা: আমরা অনেক দিন আগে থেকেই বলতাম, আমাদের চোখ বিশ্বকাপের দিকে। এই পথটা পাড়ি দিতে হলে অনেক বাধা আসবে, অনেক পরিশ্রম করতে হবে। আমরা তা করে যাচ্ছি। যেভাবেই হোক বিশ্বকাপের মঞ্চে যেতে হবে।
সমকাল: এশিয়ান কাপের বাকি ১০ মাসের মতো। এই সময় কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকলে ভালো হতো বলে মনে করেন?
আফঈদা: প্রথমে সরকারের কাছে চাইব, আমাদের নির্দিষ্ট একটা মাঠ দেওয়া হোক। আমাদের মাঠের সমস্যা আছে। একবার বসুন্ধরা, একবার জাতীয় স্টেডিয়াম– বিভিন্ন ক্লাবের মাঠে যেতে হয়। নির্দিষ্ট একটা ট্রেনিং গ্রাউন্ড থাকলে প্রতিদিন অনুশীলন করতে পারতাম। পাশাপাশি আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা দরকার। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে খেলতে যাওয়ার আগে বাফুফে আমাদের ফিটনেস ট্রেইনার দিয়েছে, ইয়োগা টিচার দিয়েছে। এখন আমরা যদি বাইরের দেশে গিয়ে ট্রেনিং করতে পারি, ওদের সুবিধাগুলো পাই, তাহলে অনেক ভালো হবে। কারণ আমাদের দেশে এসব সুযোগ-সুবিধা কম।
সমকাল: টানা দুইবার সাফ জয়, নাকি এশিয়ান কাপ। কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?
আফঈদা: সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জিতেছি বলেই আমাদের সাহস বেড়ে গেছে, আমরা এশিয়াতে যেতে পারব। পরপর দুইবার সাফ জেতা, এটিও কম বড় অর্জন নয়। ২০২৪ সাল পর্যন্ত ওটাই সবচেয়ে বড় ছিল। ২০২৫ সালে এসে আমরা এশিয়াতে কোয়ালিফাই করেছি। প্রতিবছরই কিন্তু একেকটা নতুন যাত্রা।
সমকাল: গ্রুপে ফেভারিট ছিল মিয়ানমার। তাদের হটিয়ে সেরা হয়েছে বাংলাদেশ। সাফল্যের পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে?
আফঈদা: পেছনের গল্প বললে যার কথা না বললেই নয়, তিনি আমাদের কিরণ (মাহফুজা আক্তার কিরণ) ম্যাডাম। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল আমরা পাচ্ছি। তাঁর কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমরা একটা ক্যাম্প করছি, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও আছে কিনা জানা নেই। এটা যদি আমরা না করতাম, তাহলে এই সাফল্য আসত না। খেলার এক মাস, তিন মাস আগে অনুশীলন করে কোনো টিমের জন্য সাফল্য এনে দেওয়া খুব কঠিন।
সমকাল: পিটার বাটলারের হাই লাইন ডিফেন্স কৌশলটা আপনারা কীভাবে রপ্ত করেছেন?
আফঈদা: আসলে তিনি আসার পর থেকেই আমাদের হাই লাইন ডিফেন্সে খেলার কৌশলটা শুরু হয়েছে। এক থেকে দেড় বছর তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। যখনই গেম ট্রেনিং করেছি, তখনই আমাদের ভুল হলে খেলা থামিয়ে বলেন, তোমরা হাই লাইন ডিফেন্সে খেলবা, এক সিরিয়ালে থাকবা, তাহলে তোমাদের জন্য সুবিধা হব। আমরা এটা খেলে দেখেছি, এটা ভালো। চারজন একই লাইনে থাকা কঠিন, তবে সেটা আমরা রপ্ত করেছি।
সমকাল: ঋতুপর্ণাকে অনেকেই বলেন বাংলাদেশের মেসি। আপনি তাঁকে কী বলবেন?
আফঈদা: মেসি মেসির মতো। ঋতু আপু তাঁর মতোই। আলাদা কোনো বিশেষণ দিতে চাই না।
সমকাল: বেশ কয়েকজন সিনিয়র ফুটবলারের মধ্যেও অধিনায়ক আপনি। কতটা চ্যালেঞ্জিং মনে করেন?
আফঈদা: এটি চ্যালেঞ্জিং ঠিক না। আমি যদি নিজে থেকে গিয়ে তাদের (সিনিয়র) সঙ্গে কাজ করি, আবার তারাও যদি আমার সঙ্গে কাজ করেন, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। তারা সিনিয়র দেখে আমি তাদের কাছে যাব না, এ রকম করলে তো হবে না। আমাকে যেহেতু ফেডারেশন অধিনায়ক বানিয়েছে, তাই আমাকে সবাইকে নিয়েই চলতে হবে।
সমকাল: কোন দেশে গিয়ে অনুশীলন করলে ভালো হয়?
আফঈদা: আমরা যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কাতারে গিয়েছিলাম, সেখানে ওদের একটা একাডেমি দেখেছি। সেখানে অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের টিম ক্যাম্প করতে যায়। এক জায়গায় সবকিছু আছে। আমার দেখা ওইটা সবচেয়ে ভালো।
সমকাল: মিয়ানমার থেকে ফিরেই মধ্যরাতে আপনাদের সংবর্ধনা দিয়েছে বাফুফে।
আফঈদা: আমরা শুনেছিলাম, আমাদের সংবর্ধনা রাতে দেওয়া হবে। কারণ আমাদের দু’জন প্লেয়ার ভুটান চলে যাবে। তাদের ছাড়া তো আমরা কিছু করব না। রাতে সংবর্ধনা দিয়ে বাফুফে কাউকে হতাশ করেনি। এত মানুষ থাকবে, ভাবতে পারিনি। ভেবেছি, রাত আড়াইটার দিকে হয়তো কোনো দর্শক থাকবে না। কিন্তু ফুটবলটাকে এত মানুষ ভালোবাসে– এটি কালকে সমর্থকরা প্রমাণ করে দিয়েছেন।
সমকাল: সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের কোনো বিশেষ ঘোষণা আসেনি। এটি নিয়ে আফসোস আছে কিনা?
আফঈদা: না, এটি নিয়ে আফসোস হয়নি। এখন ফেডারেশন আর সরকার কী করে, সেটি দেখা যাবে। আর আগেরটা (দেড় কোটি টাকা) তারা বলেছেন তো দেবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র স ব শ বক প আম দ র দ স ফল য ই ল ইন আর থ ক র জন য ফ টবল সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ফেরার রাতে হাতিরঝিলে আলোকছটার মাঝে মেয়েরা, কিন্তু পুরস্কারের আলো কোথায়
রাত তিনটা পেরিয়ে গেছে। ঢাকার ঘুমন্ত শহর যেন জেগে উঠেছে এক ঝলক আলো আর হাততালির শব্দে। হাতিরঝিলের এম্ফিথিয়েটার মঞ্চে তখন ধীরে ধীরে উঠে আসছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়েরা। ক্লান্ত মুখ কিন্তু তাতে দমে যাওয়ার লক্ষণ নেই। চোখে সাহস, ঠোঁটে হাসি। যেন অজান্তেই বলছেন, ‘আমরা ফিরেছি, বিজয় নিয়ে। তবে এখনও পথ বাকি।’
গতরাত দেড়টায় মিয়ানমার জয় করে ফিরেছেন তাঁরা। প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের টিকিট কেটে তাঁদের এই ফেরাটা হলো বীরের মতো। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি আনা হয়েছে হাতিরঝিলে। গভীর রাতেও হাজার খানেক দর্শক অপেক্ষায় ছিলেন তাঁদের জন্য, মুখে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ ধ্বনি নিয়ে। একে একে মঞ্চে ডাক হয় রুপণা চাকমা, শিউলি, শামসুন্নাহার, আফঈদা, তহুরা, কোহাতি, মনিকা, মারিয়া, ঋতু ও অন্যদের। বাফুফের সদস্যরা তাঁদের বরণ করেন ফুলের তোড়ায়। মেয়েরা মঞ্চে বসেন যেন মাথায় গর্বের অদৃশ্য মুকুট পরে।
মেয়েদের ছবি দিয়ে বানানো বড় বড় বিলবোর্ড, ব্যানারে সাজানো অনুষ্ঠানস্থলকে বর্নিল করতে চেষ্টার কসুর করেনি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। ডিজিটাল যুগে যাবতীয় ডিজিটাল রংই থাকল পুরোটা জুড়ে। বড় পর্দায় দেখানো হয়েছে মিয়ানমার-কীর্তির খন্ড ছবিগুলো। কখনো ঋতুপর্ণার গোল, কখনো রুপণার সেভ...। কিন্তু চোখে লাগার মতো ছিল পুরস্কারের অভাব। কোনো প্রতীকী চেক, অর্থ পুরস্কার এমনকি একটি ঘোষণাও এল না। যেন আলো আর অভিনন্দন জানানোর সঙ্গে অনুষ্ঠানের চাকচিক্যই হয়ে উঠেছিল স্বীকৃতির প্রতীক।
ঝলমলে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বক্তব্য শুরু করলে নড়চড়ে বসেছেন অনেকে। কোনো ঘোষণা কী তিনি দেবেন! কিন্তু সেই পথে হাঁটেননি তাবিথ। মেয়েদের প্রশংসাই করে গেছেন নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে, ‘আপনারা দুটি কাজ করেছেন। নতুন করে ইতিহাস লিখছেন। এবং আমাদের সমাজের মন মানসিকতা বদলানোর যাত্রায় এগিয়ে নিচ্ছেন।’ কিন্তু বাফুফে সভাপতির কাছ থেকে নগদ কিছু চাইছিল দর্শকেরাও। সেই প্রত্যাশা মেটেনি তাবিথ এভাবে বক্তব্য শেষ করায়, ‘ যেভাবে আমরা নারী দলের পেছনে ছিলাম আগামীতেও থাকব। আমরা আপনাদের ওপর আস্থা রাখছি। এবং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের পেছনে আমরা আছি।’
বললেন ২০২৬ এশিয়া কাপ, যেটি বিশ্বকাপ বাছাই পর্বও, তা নিয়ে স্বপ্নের কথা। এখন শুধু ‘মিশন অস্ট্রেলিয়া ’ বলে শেষ করেন তাবিথ। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ করতে শক্ত কাঠামো লাগে। লিগ আয়োজনসহ সঠিক পরিকল্পনা দরকার। সেসব অনুচ্চারিতই রয়ে গেল বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসেই অভিনব এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে । পৃথিবীতে আর কোনো ক্রীড়া দল এভাবে মধ্যরাতে সংবর্ধনা পেয়েছ কি না সেটাও বিরাট গবেষণার বিষয়।
মঞ্চ আর গ্যালারি পানির ওপর। সে এক অনন্য পরিবেশ। তবে রাত গভীর হওয়ায় তিন পাশে গ্যালারির মাত্র এক তৃতীয়াংশ ভরেছে দর্শকে। তাঁদের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন ঋতুপর্ণা, যাঁর জোড়া গোলে মিয়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাস লিখেছে বাংলাদেশ। মাঠে চেনালেন নিজের জাত, চিনিয়েছেন মঞ্চেও। দৃপ্ত বার্তায় ঋতুপর্ণা বলেন , ‘আজকের যে পর্যায়ে এসেছি আমরা এটা একটা টিম ওয়ার্ক। ফুটবল কোনো ব্যক্তিগত খেলা নয়। বাংলাদেশের মেয়েরা জানে কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করতে হয়। আপনারা অমাদের ওপর বিশ্বাস রাখবেন। আমরা আপনাদের নিরাশ করব না। আমরা শুধু এশিয়া না, বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে চাই।’
ঋতুর এই আত্মবিশ্বাস ছুঁয়ে গেল প্রধান অতিথি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে, যিনি বললেন, যাঁর কাছে এই মুহুর্তে দেশের সেরা অ্যাথলেট রাঙামাটির মেয়ে। ঋতুকে লক্ষ্য করে প্রকাশ করেন নিজের উচ্ছাসও, ‘আপনি একটি কথা বলেছেন, আপনারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখবেন বাংলাদেশের মেয়েরা জানে কীভাবে প্রতিকুল পরিস্থিতিতে দৌড়াতে হয়, এটা দারুণ কথা। বাংলাদেশ আপনার জন্য গর্বিত।’
কোচ পিটার বাটলার শুরুতেই বাংলায় ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে মন জিতলেন সবার। মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে পরিশ্রম কতটা হয়েছে তা তুলে ধরেছেন। প্রশংসাও করেছেন তাঁদের ‘এই জয় সম্ভব হতো না যদি মেয়েরা নিজেদের শেষ বিন্দুও ঢেলে না দিত।’ উপস্থিত জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের কণ্ঠেও ঝরে মেয়েদের দরাজ প্রশংসা। সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি, আরও পেশাদার পরিকল্পনায় মেয়েদের গড়ে তোলা দরকার।
কিন্তু এই অভ্যর্থনা শেষে একটা প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছিল। শুধু ফুলের তোড়া আর সভাপতির বক্তব্য অনুযায়ী ‘আপনাদের পেছনে আছি’ কথাই কী যথেষ্ট? গত বছর সাফ জয়ের পর মেয়েদের দেড় কোটি টাকা বোনাস দেবে বলেছিল বাফুফে, কিন্তু নয় মাস পেরোলেও এখনো কানাকাড়িও খেলোয়াড়েরা পাননি। এবার তাই হয়তো কোনো ঘোষণাই এল না।
এই মেয়েরা যারা আজকের গর্ব, তাঁদের জন্য ঘরোয়া লিগ নেই। নেই প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ বা কোনো টুর্নামেন্ট। গত বছর মে মাসে শেষবার লিগ হয়েছিল, তারপর একটাও আয়োজন হয়নি। অথচ মেয়েরা দক্ষিণ এশিয়ার পেরিয়ে এশিয়ায় পৌঁছার দরজা খুলেছেন। নতুন পথও দেখিয়েছেন। পথটা মজবুত করার বড় দায়িত্ব এখন বাফুফের।
তবু এই রাত মনে থাকবে। এই রাত শুধু ক্লান্তি নয়,মেয়েদের কাছে আত্মসম্মান আর অঙ্গীকারেরও। রুপণা, ঋতু, আফঈদারা জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশ শুধু ‘বন্যার দেশ’ নয় এখন আর। এটা ‘ফুটবলের দেশ’ও। আর তাঁদের পাশে দাঁড়ানো এখন শুধু উৎসবের দায়িত্ব নয়, প্রয়োজনীয় সমর্থন দেওয়া সময়ের দাবিও।
অনুষ্ঠান শেষেই ঋতু আর মনিকা আবার রওনা দিলেন বিমানবন্দরের পথে। ভুটানে লিগ খেলতে হবে। এটাই তাঁদের বাস্তবতা। বিজয়ের উৎসব শেষে আবার লড়াই। কারণ, এই মেয়েরা জানেন কীভাবে চলতে হয়। আলো খুঁজে নিতে হয় নিজেদের মতো করে।