সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ  উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের  মালিকানাধীন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বেক্সিমকো গ্রুপের দখলে থাকা রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি রাস্তা উদ্ধার  করলেন  গ্রামবাসি।

শনিবার (১৭ মে) দুপুরে উপজেলার গুতিয়াবো এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে। এতোদিন স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ায় গ্রামবাসী সম্মিলিতভাবে  সড়কটি উদ্ধার করেন।   

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ৩০ বছরের পুরনো প্রায় ১০ গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা  রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে দক্ষিণবাগ গোপালিবাড়ি পর্যন্ত  ১ কিলোমিটার জুরে বালি ফেলে কালভার্ট ও সড়ক তলিয়ে দেয়। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ৩ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ  উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান তার মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের নামে বেশ কয়েক বিঘা জমি ক্রয় করেন।

এরপর ৩০ বছরের পুরনো ইউনিয়ন পরিষদের সেই রাস্তাটি বালু ফেলে ভরাট করে ফেলে এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে তা দখলে নিয়ে নেয়। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেও কোন ফল পায়নি। উল্টো পুলিশ দিয়ে নানাভাবে প্রতিবাদীদের হয়রানি করা হতো।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ জেলা সুরা সদস্য এ্যাডভোকেট ইস্রাফিল হোসেন বলেন, আওয়ামীলীগের দরবেশ খ্যাত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ  উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের প্রভাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করলেও সুরাহা পাননি এলাকাবাসী। উল্টো মামলা,হামলার শিকার হতেন তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আলম হোসেন বলেন, আমাদের একমাত্র চলাচলের সরকারী রাস্তা গত ১৬ বছর ধরে দখলে রাখে আবাসন কোম্পানি।   ৫ আগষ্টের পর থেকে রাস্তাটি উদ্ধারে আমরা গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধ হই। আজ সবাই মিলে নিজেদের রাস্তা উদ্ধার করি। এতে কিছু অংশ আমার পৈত্রিক জমি দিয়ে রাস্তাটি গড়তে অংশ নিয়েছি।   

স্থানীয় বাসিন্দা ও রূপগঞ্জ  উপজেলা যুবদল নেতা আবু মোহাম্মদ মাসুম বলেন,  বিগত ১ যুগ ধরে বালি ফেলে রাখা  কোটি টাকা  সরকারি বরাদ্দের পাকা রাস্তাটি উদ্ধার করতে দরবেশের অবৈধভাবে দখল করা পাকা প্রাচীর ভেঙে দিয়েছে এলাকাবাসি।

পাশাপাশি বালির উপর রাস্তাটি চিহ্নিত করে গ্রামবাসির উদ্যোগে মাটি ভরাট করা হয়েছে। এমনভাবে প্রতিটি এলাকায় প্রকাশ্যে অন্যায় অত্যচার করেছে বিগত আওয়ামী সরকার। 

স্থানীয় বাসিন্দা বাছির উদ্দিন বলেন,গুতিয়াবো গ্রামে এক সময় ইউনিয়নের হাট বসতো। প্রতি শনিবার ও বুধবার। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অবস্থান এখানেই।  যদিও ভূমি অফিসে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এসব কার্যালয়ে, হাটবাজারে যাতায়াতের রাস্তা বালির তলায় ফেলে রেখেছিলো সালমান এফ রহমান ও  কিছু আবাসন কোম্পানির লোকজন। আজ আমাদের গ্রামবাসির উদ্যোগে আমাদের রাস্তা উদ্ধার করেছি। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও পূর্বাচল রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার তাছবির হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তাটি বালির তলায় ফেলে রাখে কয়েকটি আবাসন কোম্পানি।

কিছু অংশে পাকা স্থাপনা করে সড়ক দখলে রেখেছিলো সালমান এফ রহমানের কোম্পানি বেক্সিমকো। এটি আইনি প্রক্রিয়ায় উদ্ধার হওয়ার কথা।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ এল ক ব স গ র মব স র পগঞ জ ন বল ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কুমিল্লায় প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধর, সালিসে ‘তালাক’ ও আরেক পুরুষের সঙ্গে বিয়ে

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে প্রবাসীর স্ত্রীকে হাত বেঁধে মারধর করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য। উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নে ছয়দিন আগে ঘটনাটি ঘটে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে, প্রবাসীর স্ত্রীকে নির্যাতনের পরদিন গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে স্থানীয়ভাবে সালিস বসে। সেখানে প্রবাসীর সঙ্গে ওই নারীর ‘বিবাহবিচ্ছেদ’ ঘটানো হয় এবং আরেক পুরুষের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

৩ শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগ, শিক্ষককে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় গ্রাম পুলিশকে মারধরের অভিযোগ

অভিযুক্ত বজলুর রহমান কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউপির সদস্য। সালিসে নির্যাতনের শিকার নারীকে বিল্লাল হোসেন (৪২) নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিল্লালের প্রথম স্ত্রীর চারটি মেয়ে রয়েছে। নির্যাতনের শিকার ওই নারীর দুইটি ছেলে রয়েছে। তাদের মধ্যে ছোট ছেলের বয়স তিন বছর।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, দুই হাত বেঁধে প্রবাসীর স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন ইউপি সদস্য বজলুর রহমান। লাঠির আঘাতে ওই নারী চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। একপর্যায়ের ওই গৃহবধূর চুল ধরে টানাহেঁচড়াও করা হয়। এ ছাড়া তাকে বিভিন্নভাবে গালমন্দ করা হয়। এ সময় অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে আটক হওয়া ওই ব্যক্তি পাশেই বসে ছিলেন।

স্থানীয় অন্তত পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে ১৬ অক্টোবর দিবাগত রাত ১টার দিকে প্রবাসীর ঘর থেকে তার স্ত্রী ও বিল্লাল হোসেনকে আটক করেন স্থানীয় লোকজন। এরপর বিল্লালকে স্থানীয় লোকজন মারধর করে আটকে রাখেন। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে ইউপি সদস্য বজলুর রহমান প্রবাসীর স্ত্রীর হাত বেঁধে পেটাতে শুরু করেন। পরদিন এ ঘটনায় গ্রামবাসীকে নিয়ে সালিস বৈঠক বসান ইউপি সদস্য।

সালিসে ওই নারীকে প্রথমে প্রবাসীর সঙ্গে ‘বিবাহবিচ্ছেদ’ ঘটানো হয়। পরে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে আটক হওয়া বিল্লালের সঙ্গে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

এ সম্পর্কে গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বলেন, ‘ওই নারী সম্পর্কে আমার ভাতিজার স্ত্রী। প্রায় আট বছর ধরে তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক চলছিল। গত বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে গ্রামের লোকজন তাদের হাতেনাতে আটক করেন। রাত দেড়টার দিকে আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে চরম উত্তেজনা দেখতে পাই। এরই মধ্যে গ্রামের লোকজন আটক হওয়া বিল্লালকে গণধোলাই দেন। আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর কেউ কেউ বলতে থাকেন, নারী-পুরুষ দুজনই অপরাধ করেছে, তাহলে একজনকে কেন মারা হয়েছে। পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে আমি ভাতিজার স্ত্রীকে একটি চিকন লাঠি দিয়ে চার থেকে পাঁচটি আঘাত করেছি। তখন আমার প্রতিপক্ষের কেউ একজন এই ঘটনা ভিডিও করেন। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “ওই ঘটনার পরদিন শুক্রবার সকালে গ্রামের প্রায় ৩০০ মানুষ সালিসে বসে। পরে সবার এবং ওই নারীর স্বামীর সিদ্ধান্তে তাদের বিচ্ছেদ করানো হয়। এরপর পাঁচ লাখ টাকা কাবিনে যার সঙ্গে ওই নারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল, তার সঙ্গে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

এ বিষয়ে জানতে নির্যাতনের শিকার নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ঘটনাটি কয়েক দিন আগের। আজ (গতকাল) রাতে বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী বা তার পক্ষে কেউ এ ঘটনায় অভিযোগ করতে রাজি হচ্ছেন না। এরপরও পুলিশ ঘটনায় জড়িত বর্তমান মেম্বার বজলুর রহমানকে আটকের চেষ্টা করছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ