গাজায় কি তাহলে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গেছে
Published: 22nd, October 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ১০ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে যুদ্ধবিরতি চলার মধ্যেও গত কয়েক দিনে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২৩০ জন।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা চলার মধ্যে ইসরায়েলি সেনারা একাধিকবার নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছেন এবং গাজায় বোমা বর্ষণ করেছেন। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে গত রোববার। ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন রাফা এলাকায় হামাস যোদ্ধারা তাদের সেনাদের ওপর হামলা করেছেন। আর এ অভিযোগ তুলে তারা গাজায় হামলা চালিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসা হয়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় নির্বিচার ও নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মোট ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ মানুষ আহত হয়েছেন। গাজায় ইসরায়েলের চালানো হত্যাযজ্ঞকে জাতিসংঘ–সমর্থিত একটি কমিশন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এখন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে কিছু প্রশ্ন উঠছে। তা হলো যুদ্ধবিরতি আসলে কে ভেঙেছে? এখনো কি যুদ্ধবিরতি চলছে? ফিলিস্তিনি জনগণ কি শেষ পর্যন্ত শান্তি ও সহায়তা পাচ্ছেন?
এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আমরা যা জানি—কেন বলা হচ্ছে যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন হয়েছে
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত রোববার বলেছে, হামাস চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং রাফায় সংগঠনটির দুই যোদ্ধা দুই ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছেন।
এরপর ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ‘ব্যাপক ও বিস্তৃত’ হামলা চালায়।
হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডস বলেছে, তারা কোনো সংঘর্ষের খবর জানে না। তাদের দাবি, রাফা এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং ওই এলাকায় কোনো ফিলিস্তিনি যোদ্ধার সঙ্গে ব্রিগেডসের যোগাযোগ হয়নি।
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের যে এই একটি অভিযোগই তোলা হয়েছে, তা নয়।
ইসরায়েল বলেছে, হামাস ২৮ জিম্মির মরদেহ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি করছে। এই জিম্মিরা গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলার সময় নিহত হয়েছিলেন।
হামাস শুরু থেকেই বলে আসছে, যুদ্ধে বিধ্বস্ত ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে সব জিম্মির মরদেহ এবং প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনির মরদেহ খুঁজে বের করতে ভারী খননযন্ত্রের প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ২০ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই যুদ্ধবিরতি হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে এবং কাতার, মিসর ও তুরস্কের সহায়তায় যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করা হয়।যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো কী ছিল
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ২০ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই যুদ্ধবিরতি হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে এবং কাতার, মিসর ও তুরস্কের সহায়তায় যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করা হয়।
হামাস বলছে, তারা সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার এবং একটি ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রশাসনের’ হাতে গাজার শাসনভার তুলে দেওয়ার শর্তও গ্রহণ করেছে।
বাকি দাবিগুলোর বিষয়ে হামাস বলেছে, এগুলোকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ফিলিস্তিনি জাতীয় কাঠামোর মধ্যে রেখে সমাধান করতে হবে। তারা ওই জাতীয় কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে এবং এতে তারা সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুনগাজায় ৯৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যার পরও ট্রাম্প বললেন, যুদ্ধবিরতি টিকে আছে২০ অক্টোবর ২০২৫ইসরায়েল কি চুক্তির শর্ত মানছে
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় বলেছে, ইসরায়েল ৮০ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং অন্তত ৯৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
গত শুক্রবার ইসরায়েলি সেনারা একটি বেসামরিক যানে গুলি চালান। এতে জেইতুন এলাকার আবু শাবান পরিবারের ১১ সদস্য নিহত হন। এর মধ্যে সাত শিশু এবং তিন নারী ছিলেন। পরিবারটি তাদের বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।
গত রোববার গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বিমান হামলা ও অন্যান্য হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হন।
গতকাল ইসরায়েল আবার চুক্তি মেনে চলবে বলে ঘোষণা দেওয়ার পরও তারা গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শুজাইয়া এলাকায় কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলের দাবি, ওই ফিলিস্তিনিরা ‘ইসরায়েলি সেনাদের জন্য হুমকি’ তৈরি করেছিলেন। তাঁরা ‘হলুদ সীমারেখা’ অতিক্রম করেছেন।
যুদ্ধবিরতি শুরুর পর গাজায় যে সীমা বরাবর ইসরায়েলি বাহিনী সরে এসেছে, তাকে ‘হলুদ সীমা’ বলা হয়। এই সীমানা পেরোনোর ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করে রেখেছে এবং রাফা ক্রসিং বন্ধ রেখেছে। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘকে ইসরায়েল বলেছে, তারা কেবল ৩০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেবে—যা চুক্তিতে উল্লিখিত সংখ্যার অর্ধেক।
গাজার মধ্যাঞ্চলীয় বুরেইজ শিবিরে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের একটি ভবন লক্ষ্য করে ইসরায়েলের হামলার পর ফিলিস্তিনিরা ছোটাছুটি করছেন। ১৯ অক্টোবর.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র গ জ য় ইসর ইসর য় ল র প রস ত ব কর ছ ন ইসর য র ইসর
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসির পর একসঙ্গে এইচএসসি পাস করলেন বাবা–মেয়ে, ফলে এগিয়ে বাবা
নাটোরের লালপুরে মেয়ে হালিমা খাতুনের (১৮) সঙ্গে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন বাবা আবদুল হান্নান (৪৩)। ফলাফলে মেয়েকে ছাড়িয়ে গেছেন বাবা। জিপিএ-৪.৩ নিয়ে পাশ করেছেন আবদুল হান্নান। অন্যদিকে তাঁর মেয়ে হালিমা পেয়েছেন ৩.৭১।
আবদুল হান্নান ও হালিমা লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। হান্নান রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কাকড়ামারি কলেজ থেকে এবং তাঁর মেয়ে হালিমা লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা অংশ নেন। এর আগে ২০২৩ সালে একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেন তাঁরা।
হালিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জন্মের আগেই আমার বাবা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু পাস করতে পারেননি। পরে ঘটনাটি জানার পর ধরেই নিয়েছিলাম, বাবা পড়ালেখায় ইতি টেনেছেন। কিন্তু ২০২৩ সালে বাবা কাউকে না জানিয়ে আবার এসএসসি পরীক্ষা দিতে বসলে ঘটনাটি আমাদের পরিবারে তো বটেই, দেশে আলোচিত হয়। এরপর বাবা পড়ালেখায় আরও সিরিয়াস (সচেতন) হন। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি আমার সঙ্গেই পড়ালেখা করেছেন। পরীক্ষা দিয়ে আমার চেয়েও ভালো ফল করেছেন। আমি এতে মন খারাপ করিনি। বরং বাবার ফল আমাকে আরও ভালো করার উৎসাহ জুগিয়েছে।’
পড়ালেখার প্রতি নিজের আগ্রহের কথা প্রকাশ করে আবদুল হান্নান জানান, ছোটবেলা থেকে তিনি পড়ালেখায় ভালো ছিলেন। কিন্তু অভাবের সংসারে পড়ালেখার জন্য তেমন পরিবেশ পাননি। ১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিশেষ কারণে অকৃতকার্য হন। পরিবারের প্রয়োজনে পড়ালেখা ছেড়ে গোপালপুর রেলগেটে চায়ের দোকান দিয়ে বসেন। এরপর বিয়ে করে সংসারী হন। কিন্তু মনের মধ্যে শিক্ষিত হওয়ার আগ্রহ দমে যায়নি। মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করার সময় হঠাৎ নিজেরও পরীক্ষায় বসার ভাবনা আসে। কাউকে না জানিয়ে তাই নিজেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পরীক্ষার সময় হঠাৎ বিষয়টি জানাজানি হয়। তখন আবারও অকৃতকার্য হওয়ার দুঃস্বপ্ন ভর করে।
একটু থেমে আবদুল হান্নান বলেন, তবে সৃষ্টিকর্তা নিরাশ করেননি। এসএসসি পাস করেন। এরপর প্রকাশ্যে পড়ালেখা শুরু করেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার কাকড়ামারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেন। মেয়ের সঙ্গে বসে পড়ালেখা করতে থাকেন এবং শেষে কাঙ্ক্ষিত ফলও পান। ফলাফলে মেয়েকে টপকে যাওয়ার ঘটনা অপ্রত্যাশিত হলেও তিনি বিস্মিত হননি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পড়ালেখা যখন নতুন করে শুরু করেছি, তখন শেষ পর্যন্ত (মাস্টার্স) পড়বই। চাকরি করার বয়স হয়তো থাকবে না। তাতে কিছুই আসে–যায় না। আমি এই সমাজের একজন উচ্চশিক্ষিত নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’
আবদুল হান্নানের ভাবনা ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন নাটোরের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোস্তম আলী হেলালী। তিনি বলেন, শিক্ষালাভের কোনো বয়স নেই। আবদুল হান্নান তাঁর মেয়ে হালিমা খাতুনের সঙ্গে এইচএসসি পাস করে এ কথা প্রমাণ করেছেন। তিনি চাকরির জন্য নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ছেন। এটা সমাজের জন্য একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তাঁদের উভয়কেই অভিনন্দন।