সরকারকে ইতিবাচক প্রচার বাড়াতে হবে
Published: 22nd, October 2025 GMT
মারাত্মক পানিদূষণ, উচ্চ জনঘনত্ব, কার্যকর স্যানিটেশনের ঘাটতিসহ নানা কারণে বাংলাদেশ টাইফয়েড জ্বরের উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ একটি দেশ। ২০২১ সালের জরিপ থেকে জানা যায়, প্রতিবছর দেশে ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ৮ হাজার মানুষ, যাদের ৬৮ শতাংশই শিশু। দেখা যাচ্ছে, শিশুদের ক্ষেত্রে টাইফয়েড অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ রোগ। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের টাইফয়েড প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা অত্যন্ত সময়োচিত সিদ্ধান্ত।
কিন্তু উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, এই টিকা নিয়ে একশ্রেণির মানুষ নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে অভিভাবকদের মধ্যে। এই অপপ্রচার ও গুজব মোকাবিলার করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পাল্টা যে ধরনের ইতিবাচক প্রচার দরকার, তার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এতে সরকার টিকা দেওয়ার যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, সেটা অর্জনে বাধা তৈরি হতে পারে।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ১২ অক্টোবর টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। এ ক্যাম্পেইন চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এবারে ৪ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে দুই কোটি শিশু নিবন্ধনের আওতায় আসে। এর মধ্যে টিকা নিয়েছে ১ কোটি ৪ লাখের বেশি শিশু। অন্যান্য টিকার মতো টাইফয়েডের টিকা নেওয়ার স্থান লালচে হওয়া, সামান্য ব্যথা, মৃদু জ্বর, ক্লান্তি ভাবের মতো সামান্য কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
টাইফয়েডে সব বয়সীরা আক্রান্ত হলেও শিশু ও কম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। একসময় টাইফয়েডে আক্রান্ত রোগীদের ৩০ শতাংশই মারা যেত, অ্যান্টিবায়েটিক আবিষ্কারের কারণে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে আনা গেছে। কিন্তু জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে সবচেয়ে বিপদের জায়গা হলো টাইফয়েডের জীবাণু ওষুধপ্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে টিকা হতে পারে টাইফয়েড থেকে সুরক্ষার অন্যতম একটি কার্যকর উপায়।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), গ্যাভি–দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় ইপিআইয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশে টাইফয়েডের যে টিকা দেওয়া হচ্ছে, সেটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরীক্ষিত ও অনুমোদিত টিকা। বাংলাদেশে এই টিকা প্রথম ব্যবহৃত হচ্ছে, এমনটিও নয়। ২০১৯ সালে পাকিস্তানে, ২০২২ সালে নেপালে শিশুদের টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হয়েছে। টাইফয়েডের টিকা দেওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম দেশ।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে উগ্র ডানপন্থী ও রক্ষণশীল গোষ্ঠীর বিরোধিতা লক্ষ করা যায়। এই বিরোধিতা অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচারে রূপ নেয়। এর আগে কোভিড ভাইরাসের টিকার ক্ষেত্রেও একই ধরনের গুজব ও অপপ্রচার দেখা গেছে। কিন্তু আশার বিষয় হচ্ছে, টিকা নেওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সফল একটি দেশ। ১৯৭৯ সালে শুরু হওয়া ইপিআই কার্যক্রমে এখন ১১টি টিকা দেওয়া হয়। প্রতিবছর প্রায় ৪২ লাখ শিশুকে বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের টিকা দেওয়া হচ্ছে, তাতে প্রায় ১ লাখ শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে।
অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, টিকা ক্যাম্পেইনের সাফল্য নির্ভর করে এর প্রচারণার ওপর। একসময় টেলিভিশন ও রেডিওতে ব্যাপক প্রচারণার ফলে সাধারণ মানুষের ভেতরে টিকাসংক্রান্ত সচেতনতা ব্যাপকভাবে গড়ে ওঠে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠায় এবং এখানে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর সুযোগ থাকায় সরকারকে অবশ্যই প্রচারণার কৌশল উন্নত ও হালনাগাদ করতে হবে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টাইফয়েডের টিকা নিয়ে ইতিবাচক প্রচার বাড়াতে হবে। যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট ইফয় ড র ট ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউএনওদের সিইসি: ব্যালট বাক্স দখল করে বাড়ি যাওয়ার পর হাজির হলেন, সেটা যেন না হয়
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ইউএনওদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের উদ্বোধনীতে সিইসি এ আহ্বান জানান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাসির উদ্দীন। ইউএনওদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র দখল করে, বাক্স দখল করে বাড়ি চলে গেছে, আর আপনি গিয়ে হাজির হলেন, সেটা যাতে না হয়।’
নির্বাচনে সব কটি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের কাজটি ইউএনওদের গুরুত্বের সঙ্গে করতে হবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, কোনো সংকট দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। ঘটনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে হবে না। কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করা যাবে না। আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে।
নাসির উদ্দীন বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও কারও চাপের কাছে নত হবে না। প্রচলিত আইন মেনেই নির্বাচন কমিশন সব নির্দেশনা দেবে।
ইউএনওদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, যে ধরনের কাজের দায়িত্বই পড়ুক না কেন, তা ন্যায়, আইনসংগত ও নিরপেক্ষভাবে পালন করতে হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, তাহমিদা আহমদ ও আব্দুর রহমানেল মাছউদ। স্বাগত বক্তব্য দেন নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচনী আচরণবিধির কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন আসতে পারে, সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে।
প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের জন্য ওসিভি (আউট অব কান্ট্রি ভোটিং) ও নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য আইসিপিভি (ইন কান্ট্রি পোস্টাল ভোট) সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীদের ধারণা দেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি জানান, আগামী ১৬ নভেম্বরে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অনলাইন অ্যাপ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা গুরুত্বপূর্ণ ও মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন বলে উল্লেখ করেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির কাজ এখন থেকেই করতে হবে। প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে, সে আবহাওয়া এখন থেকে সৃষ্টি করতে হবে।
নির্বাচনী দায়িত্ব সাহসের সঙ্গে পালন করার পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম। ইউএনওদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, নির্বাচন কমিশন সঠিক কাজ করা কর্মকর্তাদের পাশে থাকবে। তবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্যায় কাজ করলে কঠিন পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো মারামারি বা ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে উভয় পক্ষকেই ধরতে হবে। কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত অবশ্যই আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে, যাতে পক্ষপাতিত্বের বিতর্ক সৃষ্টি না হয়। যাঁরা আগামী নির্বাচনে ভালো দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে।
নির্বাচন পরিচালনাকালে কর্মকর্তাদের অতি উৎসাহী ও অতি সাহসী না হওয়ার পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত শুনতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তাহমিদা আহমদ বলেন, নিজেদের বিদ্যা, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কোনটা ভুল আর কোনটা সত্য, সে পার্থক্য বুঝে কাজ করতে হবে।
ভালো নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ভালো নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই কর্মকর্তাদের অর্পিত দায়িত্ব সঠিক ও সফলভাবে পালন করে বিশ্ব ও মানুষের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হবে।