চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ‘মব’ সৃষ্টি করে এক সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। তাঁরা হলেন নাফিস হাসান ওরফে ইফতি ও আসাদুজ্জামান আসাদ। পাঁচ মাস আগে তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দুটি হয়।

হামলার শিকার সাংবাদিকের নাম লিটন চৌধুরী। গত রোববার রাতে তাঁর ওপর হামলা হয়। তিনি সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনকণ্ঠ পত্রিকার সীতাকুণ্ড সংবাদদাতা। পুলিশের দাবি, ভুক্তভোগী লিটন চৌধুরী এখনো থানায় কোনো অভিযোগ দেননি। তাই এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এদিকে ভুক্তভোগী লিটন চৌধুরীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মানিব্যাগ, টাকা ও হাতঘড়ি গতকাল পর্যন্ত পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। তবে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রোববার রাতে সীতাকুণ্ডের পৌর সদরের রেলগেট এলাকার নিজ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন সাংবাদিক লিটন চৌধুরী। এ সময় মব সৃষ্টি করে কয়েকজন যুবক তাঁর ওপর হামলা চালান। ওই যুবকেরা লিটনকে বেধড়ক মারধর করতে করতে থানায় নিয়ে যান। হামলায় মাথায় গুরুতর জখম হয় লিটন চৌধুরীর। খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকেরা থানায় গেলে লিটনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় পুলিশ। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, মব সৃষ্টি করে সাংবাদিকের ওপর হামলার নেতৃত্বে ছিলেন আসাদুজ্জামান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইব্রাহিম, নুর ইলাহী, মো.

শুভ, নাফিস হাসান। তাঁদের মধ্যে আসাদুজ্জামান ও নাফিসের বিরুদ্ধে গত মে ও আগস্টে চাঁদা না পেয়ে মারধরের অভিযোগের দুটি মামলা রয়েছে। একটির বাদী শিরিন আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৯ আগস্ট তাঁর ভাই পুরোনো লোহার ব্যবসায়ী মামুনকে পৌরসভা সদরের দোকানে এসে আসামিরা মারধর করেন। এর আগে তাঁর কাছে আসামিরা দুই লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। দোকান থেকে এক লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যান আসামিরা।

আরেকটি মামলার বাদী আরিফুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভা সদরে নির্মাণকাজ করার সময় তাঁদের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। না পেয়ে আসামিরা নির্মাণশ্রমিক তছলিম উদ্দিন, সুমনসহ কয়েকজনকে মারধর করেন।

সাংবাদিককে মারধর ও চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জুলাই আন্দোলনে আহত হয়েছি। তখন সীতাকুণ্ডের সাংবাদিকেরা কেউ প্রতিবেদন করেনি। সবাই আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছে। তাই ক্ষোভে (লিটনকে) আটকানো হয়েছে।’ চাঁদাবাজির মামলার বিষয়ে বলেন, ‘আমার জানামতে একটি মামলা রয়েছে। সেটি মিথ্যা। সড়ক দখল করে মিছিলের কারণে অ্যাম্বুলেন্স আটকে যাওয়ার প্রতিবাদ করায় সাজানো মামলাটি হয়েছে।’ নিজেকে সীতাকুণ্ড কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পরিচয় দেন আসাদুজ্জামান।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, টাকা, মানিব্যাগ ও ঘড়ি ছিনতাই হয়েছে কি না, তা ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানাননি। এ ছাড়া এখনো ভুক্তভোগী কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। ফলে এখনো এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে আসামিদের চিহ্নিতকরণের চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগী সাংবাদিক অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মব সৃষ্টি করে লিটন চৌধুরীর ওপর হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সোমবার সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রেসক্লাবের সহসভাপতি মো. খাইরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাইয়ুম চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল ফারুক; সঞ্জয় চৌধুরী, আবুল খায়ের, দিদারুল হোসেন টুটুল, কামরুল ইসলাম, এস এম ইকবাল প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আস দ জ জ ম ন প রথম আল ক ল টন চ ধ র ল ইসল ম আস ম র ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

ইউএনওদের সিইসি: ব্যালট বাক্স দখল করে বাড়ি যাওয়ার পর হাজির হলেন, সেটা যেন না হয়

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ইউএনওদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের উদ্বোধনীতে সিইসি এ আহ্বান জানান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাসির উদ্দীন। ইউএনওদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র দখল করে, বাক্স দখল করে বাড়ি চলে গেছে, আর আপনি গিয়ে হাজির হলেন, সেটা যাতে না হয়।’

নির্বাচনে সব কটি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের কাজটি ইউএনওদের গুরুত্বের সঙ্গে করতে হবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, কোনো সংকট দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। ঘটনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে হবে না। কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করা যাবে না। আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে।

নাসির উদ্দীন বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও কারও চাপের কাছে নত হবে না। প্রচলিত আইন মেনেই নির্বাচন কমিশন সব নির্দেশনা দেবে।

ইউএনওদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, যে ধরনের কাজের দায়িত্বই পড়ুক না কেন, তা ন্যায়, আইনসংগত ও নিরপেক্ষভাবে পালন করতে হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, তাহমিদা আহমদ ও আব্দুর রহমানেল মাছউদ। স্বাগত বক্তব্য দেন নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচনী আচরণবিধির কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন আসতে পারে, সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে।

প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের জন্য ওসিভি (আউট অব কান্ট্রি ভোটিং) ও নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য আইসিপিভি (ইন কান্ট্রি পোস্টাল ভোট) সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীদের ধারণা দেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি জানান, আগামী ১৬ নভেম্বরে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অনলাইন অ্যাপ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা গুরুত্বপূর্ণ ও মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন বলে উল্লেখ করেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির কাজ এখন থেকেই করতে হবে। প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে, সে আবহাওয়া এখন থেকে সৃষ্টি করতে হবে।

নির্বাচনী দায়িত্ব সাহসের সঙ্গে পালন করার পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম। ইউএনওদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, নির্বাচন কমিশন সঠিক কাজ করা কর্মকর্তাদের পাশে থাকবে। তবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্যায় কাজ করলে কঠিন পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো মারামারি বা ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে উভয় পক্ষকেই ধরতে হবে। কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত অবশ্যই আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে, যাতে পক্ষপাতিত্বের বিতর্ক সৃষ্টি না হয়। যাঁরা আগামী নির্বাচনে ভালো দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে।

নির্বাচন পরিচালনাকালে কর্মকর্তাদের অতি উৎসাহী ও অতি সাহসী না হওয়ার পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত শুনতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তাহমিদা আহমদ বলেন, নিজেদের বিদ্যা, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কোনটা ভুল আর কোনটা সত্য, সে পার্থক্য বুঝে কাজ করতে হবে।

ভালো নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ভালো নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই কর্মকর্তাদের অর্পিত দায়িত্ব সঠিক ও সফলভাবে পালন করে বিশ্ব ও মানুষের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ