মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলার আসামি ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ঢাকা সেনানিবাসের সাবজেলে নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির।  

আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে এই সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে থাকা কারা কর্তৃপক্ষের প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। পরে সবুজ রঙের প্রিজন ভ্যানটি ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে। ১৫ সেনা কর্মকর্তার আইনজীবী এম সরোয়ার হোসেন আজ ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর মক্কেলদের সাবজেলে (উপকারাগার) রাখা হবে।

পরে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক মো.

জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ১৫ সেনা সদস্যকে ঢাকা সেনানিবাসের যে সাবজেলে রাখা হবে সেখানে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই তিন মামলায় ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিল প্রসিকিউশন।

১১ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৫ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) আছেন।

১২ অক্টোবর ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সেনা সদরে ‘এমইএস বিল্ডিং নম্বর-৫৪’ ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুন১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সাবজেলে রাখা হবে: আসামিদের আইনজীবী২৯ মিনিট আগে

মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আজ সকালে ৭টার পর ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি নিয়ে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ আদেশ দেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

যাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন—মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম।

আরও পড়ুনকর্মকর্তাদের সেনা হেফাজতে রেখে ট্রাইব্যুনালে আনা-নেওয়ার চিন্তা১২ অক্টোবর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ক ১৫ স ন অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

৫ মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন সাবেক প্রধান বিচারপতির

প্রায় তিন মাস ধরে কারাগারে থাকা সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক জামিনে মুক্তি পেতে আবেদন করেছেন হাইকোর্টে।

পৃথক পাঁচটি মামলায় নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে উচ্চ আদালতে জামিন চেয়ে করা তাঁর আবেদন আজ সোমবার বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় ১০২৭ থেকে ১০৩১ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। আগামী সপ্তাহে আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।

খায়রুল হকের আইনজীবী আজ সকালে আবেদনের বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী। পরে আবেদনকারীপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ মামলায় পৃথক পাঁচটি আবেদন গতকাল রোববার আদালতে জমা দেওয়া হয়, যা আদালতের আজকের কার্যতালিকায় ওঠে। সকালে আবেদনের বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করা হয়। আদালত বলেছেন, আবেদনগুলো শুনানির জন্য আগামী রোববার কার্যতালিকায় আসবে। সেদিন আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যুবদলের কর্মী আবদুল কাইয়ুম হত্যা মামলা এবং রায় জালিয়াতি এবং বিধিবহির্ভূতভাবে একটি প্লট গ্রহণের মামলায় জামিন চেয়ে আবেদনগুলো করেন বিচারপতি খায়রুল হক।

আরও পড়ুনআসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট৩০ জুলাই ২০২৫

এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। ওই রায়ের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পর গত ২৪ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে গত বছরের ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে করা একটি মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাঁকে।

আরও পড়ুনসাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক রিমান্ড শেষে কারাগারে০৭ আগস্ট ২০২৫

তত্ত্বাবধায়ক সরকার–সংক্রান্ত রায় জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের ২৭ আগস্ট শাহবাগ থানায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন একটি মামলা করেন। একই অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় গত ২৫ আগস্ট আরেকটি মামলা করেন জনৈক নুরুল ইসলাম মোল্লা। এ ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে প্লট গ্রহণের অভিযোগে চলতি বছরের আগস্টে একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই পাঁচ মামলায় জামিন চাওয়া হয়েছে বলে জানান আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহীন।

যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম হত্যা মামলা বাতিল ও জামিন চেয়ে গত ৭ আগস্ট হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন খায়রুল হক। গত ১৭ আগস্ট তাঁর আইনজীবীরা আদালতে সময়ের আরজি জানান, যা মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। ওই আবেদন এখন শুনানির অপেক্ষায়।

আরও পড়ুনসাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ, অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক২৪ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সাবজেলে রাখা হবে: আইনজীবী
  • ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সাবজেলে রাখা হবে: আসামিদের আইনজীবী
  • টাঙ্গাইলে জালিয়াতির মামলায় অধ্যক্ষ কারাগারে
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতার কারাদণ্ড
  • শেখ হাসিনার ‘মেটিকুলাস প্ল্যান’ ছিল: ট্রাইব্যুনাল
  • ৯ সচিব ও সিনিয়র সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসর
  • ৯ সচিব বাধ্যতামূলক অবসরে 
  • ৫ মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন সাবেক প্রধান বিচারপতির
  • কলেজছাত্রের চরিত্রকে না