আসামিদের সাজা কার্যকর না হওয়ায় হতাশ স্বজনেরা
Published: 20th, May 2025 GMT
ফেনীর আলোচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা একরামুল হক একরাম হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) বিরুদ্ধে আসামিদের আপিলের শুনানি উচ্চ আদালতে ঝুলে আছে। ১১ বছর আগের নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে আসামিদের সাজা কার্যকর না হওয়ায় হতাশ নিহত একরামের স্বজনেরা। এখনো ধরা পড়েননি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ আসামির মধ্যে ১৬ জন।
আজ মঙ্গলবার একরামুল হত্যার ১১ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০১৪ সালের ২০ মে সকালে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় একরামকে প্রকাশ্যে গাড়ির মধ্যে পিটিয়ে, কুপিয়ে, গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের (২০২৪ সাল) মে মাসে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে একরাম হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানি কার্যতালিকাভুক্ত হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার পতনের পর তা পিছিয়ে যায়। আগামী জুন মাসের শেষের দিকে মামলার শুনানি শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। একরাম হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স শুনানি কার্যতালিকাভুক্ত ও নতুন বেঞ্চ গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
যেভাবে হত্যাকাণ্ড
২০১৪ সালের ২০ মে সকালে ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ার নিজ বাসা থেকে ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতাল ঘুরে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদে যাচ্ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক। তাঁকে বহনকারী গাড়িটি শহরের একাডেমি এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা গাড়ির গতিরোধ করে। এ সময় চেয়ারম্যান একরামকে প্রকাশ্যে গাড়ির মধ্যে পিটিয়ে, কুপিয়ে, গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পরে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে ঝলসে দেওয়া হয় মরদেহ। এ ঘটনার ভিডিও সে সময় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
‘আমি ওই মামলা বা সাজার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে ফৌজদারি মামলা যেকোনো সময় করা যায়। হয়তো ওই ঘটনায় নতুন করে আমি মামলা করতে পারি’।তাসমিন আক্তার, নিহত একরামুলের স্ত্রীদেশে ভীতি জাগানিয়া রোমহর্ষ ওই ঘটনায় নিহত একরামের বড় ভাই জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে ফুলগাজীর বিএনপি নেতা ও উপজেলা নির্বাচনে একরামের প্রতিদ্বন্দ্বী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ওরফে মিনার চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩৩ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে একই বছরের ৩০ আগস্ট ৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এর মধ্যে সোহেল নামের এক আসামি র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।
মামলার রায়
ঘটনার চার বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে ৩৯ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন ফেনীর তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক। রায়ে দোষী সাব্যস্ত না হওয়ায় খালাস পান বিএনপির নেতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল ওরফে টুপি বেলাল, জিয়াউল আলম মিস্টারসহ ১৬ জন। ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামিরা সবাই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা। স্থানীয় নির্বাচন থেকে আসামিদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে একরামকে হত্যা করা হয়েছে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেছেন।
মৃত্যুদণ্ডের সাজা নিয়ে আত্মগোপনে আছেন ১৬ জন। তাঁরা হলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ হোসেন, আবিদুল ইসলাম (জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে ও ফেনী-২ আসনের পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর মামাতো ভাই), আরমান হোসেন, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন, জাহেদুল হাসেম, এমরান হোসেন, রাহাত মো. এরফান, জসিম উদ্দিন, একরাম হোসেন ওরফে আকরাম, শফিকুর রহমান, কফিল উদ্দিন মাহমুদ, মোসলে উদ্দিন, ইসমাইল হোসেন, মহিউদ্দিন আনিছ, মো. বাবলু ও টিটু। তাঁদের মধ্যে আটজন বিচার চলার সময় জামিনে মুক্ত হয়ে পালিয়ে যান। এ ছাড়া দণ্ডিত বাকিরা কারাগারে আছেন।
জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সব সময় সচেষ্ট রয়েছে। তবে বিভিন্ন সূত্রে পুলিশ অবগত হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন আসামি বিদেশে পালিয়ে রয়েছেন।
হতাশ পরিবার
উচ্চ আদালতে বিচার আটকে যাওয়া এবং আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন একরামুল হকের বড় ভাই মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচার থমকে আছে। রায় কার্যকরে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দেশান্তরি পলাতক আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। একরামের তিন সন্তান এখন অধ্যয়নরত রয়েছে। তাদের জন্য হলেও আসামিদের সাজা কার্যকর করা হোক।’
এদিকে দীর্ঘ ১১ বছর পর গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন নিহত একরামুল হকের স্ত্রী তাসমিন আক্তার। তিনি অনুযোগের সুরে বলেন, ‘নৃশংস হত্যার ১১ বছর অতিবাহিত হলেও আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আমি একরামের স্ত্রী, আমাকে ঘটনার পর মামলার বাদী হতে দেয়নি একটি পক্ষ। হত্যায় কারা জড়িত ছিল তা তো আমি জানি। আমাকে মামলার বাদী না হতে দেওয়ায় আমি ওই মামলা বা সাজার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে ফৌজদারি মামলা যেকোনো সময় করা যায়। হয়তো ওই ঘটনায় নতুন করে আমি মামলা করতে পারি। তবে সেটি আপনাদের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে সবাইকে অবগত করা হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: একর ম র ত একর ম ক র যকর একর ম হ ১১ বছর উপজ ল হওয় য় আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত সামরিক স্থাপনাগুলোতে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ জুন) বিকেলে চালানো এ হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার ডেপুটি হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন।
রবিবার রাতে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
ইরানে আবারো হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরো জানিয়েছে, তেহরানে ইসরায়েলের নতুন হামলায় আইআরজিসির তৃতীয় ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহসেন বাঘেরিও নিহত হয়েছেন।
এর আগে, শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের প্রথম হামলায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসির কমান্ডার হোসেইন সালামিসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ছয় জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল ইরান।
রবিবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার ইরানজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ জন। হতাহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ জন নারী এবং বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ