বিশ্বজুড়ে সুপারইয়ট বা বড় আকারের প্রমোদতরির বাজার এখন গরম। অতিধনীরা চাইছেন, এসব প্রমোদতরি আরও বড় এবং আরও বিলাসবহুল হোক, যেন একেকটি ভাসমান রাজপ্রাসাদ।

ইতালির পাওলা ত্রিফিরো এই জগতের পরিচিত মুখ। আইন পেশায় সফল হওয়া এই নারী ও তাঁর স্বামী মিলে এক যুগে ১২টির বেশি প্রমোদতরির মালিক হয়েছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন তাঁরা, তা–ও আবার রাজকীয় ভঙ্গিমায়। পাওলা ত্রিফিরো বলেন, তাঁদের প্রমোদতরিগুলো ৫০ মিটার বা ১৬৪ ফুট বা তার চেয়েও বড়, সেগুলো যেন ভাসমান পাঁচ তারকা হোটেল। ডিজাইনের ক্ষেত্রেও নিজের মত দেন তিনি। রান্নাঘরের জায়গা যেন বড় হয়, সেটা নিশ্চিত করেন আগে থেকেই। অন্তত ১৫ জন অতিথির জন্য ভালো পদের খাবার রান্না করা তাঁদের জন্য খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

পাওলা ত্রিফিরো বলেন, ভালো খাওয়াদাওয়ায় অভ্যস্ত হলে সমস্যা হলো, সব জায়গায় ভালো রেস্তোরাঁ পাওয়া যায় না—এই বাস্তবতা মাথায় রাখতেই হয়। তাঁর মতে, প্রমোদতরির আকার বড় হলে ভ্রমণ আরও নিরাপদ মনে হয়। তিমির পাশে ভেসে চলা হোক, কিংবা ফিজির জেলেদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানানো—বড় প্রমোদতরি হলে ভরসা পাওয়া যায়; নিরাপত্তাও বোধ করা সম্ভব।

প্রকৃত অর্থে সুপারইয়ট বা বড় আকারের প্রমোদতরি বলতে কী বোঝায়, তার আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা নেই। তবে নৌযানবিষয়ক পরিচিত ম্যাগাজিন বোট ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সুপারইয়ট হচ্ছে বিলাসবহুল, কমপক্ষে ২৪ মিটার বা ৭৮ ফুট বা তার চেয়ে বড় ব্যক্তিমালিকানাধীন নৌযান, যে নৌযান পরিচালনা করেন পেশাদার নাবিকেরা।

ম্যাগাজিনটি আরও জানায়, কোভিড-১৯-এর পর বিশ্বজুড়ে বড় আকারের প্রমোদতরির বিক্রি হু হু করে বেড়ে যায়। মহামারির সময় যখন বিলাসবহুল হোটেলগুলো বন্ধ হয়ে যায়, তখন ধনীরা বিকল্প হিসেবে বড় প্রমোদতরির দিকে ঝুঁকে পড়েন।

বোট ইন্টারন্যাশনালের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ২৪টি নতুন বিলাসবহুল ও বড় আকারের প্রমোদতরি নির্মিত হয় বা তার কার্যাদেশ দেওয়া হয়, আগের বছরের তুলনায় যা ২৫ শতাংশ বেশি এবং তখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০২৩ সালে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২০৩, এটিও নতুন রেকর্ড।

ইতালির বড় আকারের প্রমোদতরি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আমেরের সহপ্রতিষ্ঠাতা বারবারা আর্মেরিও বলেন, মহামারির পর মানুষ তাঁদের সুপারইয়টকে নিজেদের এবং আত্মীয়দের জন্য নিরাপদ একান্ত পরিসর হিসেবে ভাবতে শুরু করে।

বারবারা আর্মেরিও আরও বলেন, অতিধনীরা তখন ব্যক্তিগত পরিসর ও স্বাধীনতাকে আগের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেন। প্রমোদতরির ক্ষেত্রে তাঁদের চাওয়া হলো বড় জানালা ও খোলা জায়গা থাকতে হবে। এমন ব্যবস্থা থাকবে, যেন সাগরের পানির আরও কাছাকাছি যাওয়া যায়।

বোট ইন্টারন্যাশনালের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে এই বিলাসবহুল প্রমোদতরি তৈরি বা নির্মাণের সংখ্যা কিছুটা কমে ১ হাজার ১৩৮-এ নামতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সংখ্যায় কমলেও এসব তরির আকার বড় হচ্ছে।

এ বছর এখন পর্যন্ত ৭৬ মিটার বা তার বেশি দৈর্ঘ্যের ৬১টি বিলাসবহুল প্রমোদতরি তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালে এই সময় পর্যন্ত ছিল ৫৫টি। আবার ৪৬ থেকে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রমোদতরির সংখ্যাও বেড়ে হয়েছে ১৭৫, আগের বছর যা ছিল ১৫৯। অন্যদিকে ২৪ থেকে ২৭ মিটার বা ৭৮ ফুট থেকে ৮৯ ফুটের সবচেয়ে ছোট বিলাসবহুল প্রমোদতরির বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে ২৮৬, ২০২৪ সালে তা ছিল ৩২১।

বারবারা আর্মেরিও বলেন, কোভিড-পরবর্তী সময়ে যাঁরা প্রথম বিলাসবহুল প্রমোদতরি কিনেছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন বড় মডেলে চলে যাচ্ছেন, এটা এখন স্পষ্ট।

বোট ইন্টারন্যাশনালের প্রধান সম্পাদক স্টুয়ার্ট ক্যাম্পবেল বলেন, ‘যে-ই হোক না কেন, ছোট হোক বা বড়—নকশাকার ও নৌ স্থপতিরা এখন খুব দক্ষতার সঙ্গে নকশা করছেন। ফলে একই আকারের প্রমোদতরিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খোলা জায়গা রাখা যাচ্ছে।

ফলে এখনকার বিলাসবহুল প্রমোদতরিগুলোতে হেলিপ্যাড থেকে শুরু করে সিনেমা হল, জিম, বিউটি স্যালন—সবই থাকছে। যেন ভাসমান এক প্রাসাদ।

দাম কত

এবার দেখে নেওয়া যাক এসব প্রমোদতরির দাম কত হতে পারে। ছোট আকারের নতুন একটি প্রমোদতরির দাম পড়তে পারে ৩ কোটি ৬০ লাখ ইউরো। ১০৫ মিটার বা ৩৪৪ ফুট লম্বা সব ধরনের বিলাসী সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন প্রমোদতরির দাম পড়বে ২৯ কোটি ৫০ লাখ ইউরো পর্যন্ত।

বিশ্বজুড়ে তৈরি হওয়া সুপারইয়টের অর্ধেকই তৈরি হয় ইতালিতে। বর্তমানে ইতালির জাহাজ কারখানাগুলো প্রায় ২২ হাজার ১৯৫ মিটার (অর্থাৎ প্রায় ২২ কিলোমিটার বা ১৩ মাইল) দৈর্ঘ্যের প্রমোদতরি নির্মাণে ব্যস্ত। এই তালিকায় ইতালির পরই আছে তুরস্ক; এরপর আছে নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, তাইওয়ান, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।

২০২৩ সালে ইতালির জাহাজ নির্মাতারা বিলাসবহুল প্রমোদতরি বানিয়ে আয় করেছে ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৮৩০ কোটি ইউরো। এই অঙ্ক এই খাতের সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়।

বারবারা আর্মেরিও বলেন, ‘তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর সীমিতসংখ্যক উচ্চমানের প্রমোদতরি তৈরি করে। আমাদের প্রতিটি কাজ নিখুঁত শৈল্পিক, প্রতিটি প্রমোদতরি একেকটি মহৎ শিল্পকর্মের মতো; এগুলোর নকশা ও উপকরণ একেবারে আলাদা।’

বারবারা আর্মেরিও আরও বলেন, ইতালির প্রমোদতরি শিল্প দক্ষ স্থানীয় কারিগরদের ওপর ভর করে টিকে আছে। এই শিল্পের জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবই ইতালিতে পাওয়া যায়। যেমন মার্বেল প্রয়োজন হলে লিগুরিয়ার উপকূলে তুসকানির প্রাকৃতিক পাথরের খনিতে চলে যাওয়া সম্ভব।

কারা কেনেন

মূলত শতকোটিপতি ও ধনীরাই এসব প্রমোদতরি কেনেন। তাঁদের বড় একটি অংশই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বোট ইন্টারন্যাশনালের তথ্যানুসারে, এখনো মার্কিন ক্রেতারাই সংখ্যায় এগিয়ে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও মেক্সিকোর ধনীদের আগ্রহও চোখে পড়ার মতো বাড়ছে।

অন্যদিকে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়ার ওপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রুশ ক্রেতাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। রুশ ধনীদের ওপর চাপ পড়ায় তাঁরা আর আগের মতো প্রমোদতরি কেনার দিকে ঝুঁকছেন না। তবে কেন এত মানুষ বিলাসবহুল প্রমোদতরি কিনতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে পাওলা ত্রিফিরো বলেন, ঘুরে বেড়ানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে এই বিলাসবহুল প্রমোদতরি সবচেয়ে বড় সঙ্গী।

পাওলা ত্রিফিরো আরও বলেন, ‘নতুন নতুন জায়গা দেখার কৌতূহল থেকেই আমি সাগর পাড়ি দিই—নিজের প্রমোদতরির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি।’

পাওলা ত্রিফিরো আরও বলেন, ‘বিলাসবহুল প্রমোদতরির আরেকটি বিষয় হলো, কর্মীদের খুশি রাখা জরুরি; স্থলভাগে যা বেতন পেতেন, সাগরে তার দ্বিগুণ দেওয়া হয়। আমাদের ক্যাপ্টেন ২২ বছর ধরে আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ম র ও র জন য ও বল ন ব রব র আরও ব

এছাড়াও পড়ুন:

বড় হচ্ছে প্রমোদতরির আকার, দামই–বা পড়ছে কত

বিশ্বজুড়ে সুপারইয়ট বা বড় আকারের প্রমোদতরির বাজার এখন গরম। অতিধনীরা চাইছেন, এসব প্রমোদতরি আরও বড় এবং আরও বিলাসবহুল হোক, যেন একেকটি ভাসমান রাজপ্রাসাদ।

ইতালির পাওলা ত্রিফিরো এই জগতের পরিচিত মুখ। আইন পেশায় সফল হওয়া এই নারী ও তাঁর স্বামী মিলে এক যুগে ১২টির বেশি প্রমোদতরির মালিক হয়েছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন তাঁরা, তা–ও আবার রাজকীয় ভঙ্গিমায়। পাওলা ত্রিফিরো বলেন, তাঁদের প্রমোদতরিগুলো ৫০ মিটার বা ১৬৪ ফুট বা তার চেয়েও বড়, সেগুলো যেন ভাসমান পাঁচ তারকা হোটেল। ডিজাইনের ক্ষেত্রেও নিজের মত দেন তিনি। রান্নাঘরের জায়গা যেন বড় হয়, সেটা নিশ্চিত করেন আগে থেকেই। অন্তত ১৫ জন অতিথির জন্য ভালো পদের খাবার রান্না করা তাঁদের জন্য খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।

পাওলা ত্রিফিরো বলেন, ভালো খাওয়াদাওয়ায় অভ্যস্ত হলে সমস্যা হলো, সব জায়গায় ভালো রেস্তোরাঁ পাওয়া যায় না—এই বাস্তবতা মাথায় রাখতেই হয়। তাঁর মতে, প্রমোদতরির আকার বড় হলে ভ্রমণ আরও নিরাপদ মনে হয়। তিমির পাশে ভেসে চলা হোক, কিংবা ফিজির জেলেদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানানো—বড় প্রমোদতরি হলে ভরসা পাওয়া যায়; নিরাপত্তাও বোধ করা সম্ভব।

প্রকৃত অর্থে সুপারইয়ট বা বড় আকারের প্রমোদতরি বলতে কী বোঝায়, তার আনুষ্ঠানিক সংজ্ঞা নেই। তবে নৌযানবিষয়ক পরিচিত ম্যাগাজিন বোট ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সুপারইয়ট হচ্ছে বিলাসবহুল, কমপক্ষে ২৪ মিটার বা ৭৮ ফুট বা তার চেয়ে বড় ব্যক্তিমালিকানাধীন নৌযান, যে নৌযান পরিচালনা করেন পেশাদার নাবিকেরা।

ম্যাগাজিনটি আরও জানায়, কোভিড-১৯-এর পর বিশ্বজুড়ে বড় আকারের প্রমোদতরির বিক্রি হু হু করে বেড়ে যায়। মহামারির সময় যখন বিলাসবহুল হোটেলগুলো বন্ধ হয়ে যায়, তখন ধনীরা বিকল্প হিসেবে বড় প্রমোদতরির দিকে ঝুঁকে পড়েন।

বোট ইন্টারন্যাশনালের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ২৪টি নতুন বিলাসবহুল ও বড় আকারের প্রমোদতরি নির্মিত হয় বা তার কার্যাদেশ দেওয়া হয়, আগের বছরের তুলনায় যা ২৫ শতাংশ বেশি এবং তখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড। ২০২৩ সালে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২০৩, এটিও নতুন রেকর্ড।

ইতালির বড় আকারের প্রমোদতরি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আমেরের সহপ্রতিষ্ঠাতা বারবারা আর্মেরিও বলেন, মহামারির পর মানুষ তাঁদের সুপারইয়টকে নিজেদের এবং আত্মীয়দের জন্য নিরাপদ একান্ত পরিসর হিসেবে ভাবতে শুরু করে।

বারবারা আর্মেরিও আরও বলেন, অতিধনীরা তখন ব্যক্তিগত পরিসর ও স্বাধীনতাকে আগের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেন। প্রমোদতরির ক্ষেত্রে তাঁদের চাওয়া হলো বড় জানালা ও খোলা জায়গা থাকতে হবে। এমন ব্যবস্থা থাকবে, যেন সাগরের পানির আরও কাছাকাছি যাওয়া যায়।

বোট ইন্টারন্যাশনালের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে এই বিলাসবহুল প্রমোদতরি তৈরি বা নির্মাণের সংখ্যা কিছুটা কমে ১ হাজার ১৩৮-এ নামতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সংখ্যায় কমলেও এসব তরির আকার বড় হচ্ছে।

এ বছর এখন পর্যন্ত ৭৬ মিটার বা তার বেশি দৈর্ঘ্যের ৬১টি বিলাসবহুল প্রমোদতরি তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালে এই সময় পর্যন্ত ছিল ৫৫টি। আবার ৪৬ থেকে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রমোদতরির সংখ্যাও বেড়ে হয়েছে ১৭৫, আগের বছর যা ছিল ১৫৯। অন্যদিকে ২৪ থেকে ২৭ মিটার বা ৭৮ ফুট থেকে ৮৯ ফুটের সবচেয়ে ছোট বিলাসবহুল প্রমোদতরির বিক্রি কমে দাঁড়িয়েছে ২৮৬, ২০২৪ সালে তা ছিল ৩২১।

বারবারা আর্মেরিও বলেন, কোভিড-পরবর্তী সময়ে যাঁরা প্রথম বিলাসবহুল প্রমোদতরি কিনেছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন বড় মডেলে চলে যাচ্ছেন, এটা এখন স্পষ্ট।

বোট ইন্টারন্যাশনালের প্রধান সম্পাদক স্টুয়ার্ট ক্যাম্পবেল বলেন, ‘যে-ই হোক না কেন, ছোট হোক বা বড়—নকশাকার ও নৌ স্থপতিরা এখন খুব দক্ষতার সঙ্গে নকশা করছেন। ফলে একই আকারের প্রমোদতরিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খোলা জায়গা রাখা যাচ্ছে।

ফলে এখনকার বিলাসবহুল প্রমোদতরিগুলোতে হেলিপ্যাড থেকে শুরু করে সিনেমা হল, জিম, বিউটি স্যালন—সবই থাকছে। যেন ভাসমান এক প্রাসাদ।

দাম কত

এবার দেখে নেওয়া যাক এসব প্রমোদতরির দাম কত হতে পারে। ছোট আকারের নতুন একটি প্রমোদতরির দাম পড়তে পারে ৩ কোটি ৬০ লাখ ইউরো। ১০৫ মিটার বা ৩৪৪ ফুট লম্বা সব ধরনের বিলাসী সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন প্রমোদতরির দাম পড়বে ২৯ কোটি ৫০ লাখ ইউরো পর্যন্ত।

বিশ্বজুড়ে তৈরি হওয়া সুপারইয়টের অর্ধেকই তৈরি হয় ইতালিতে। বর্তমানে ইতালির জাহাজ কারখানাগুলো প্রায় ২২ হাজার ১৯৫ মিটার (অর্থাৎ প্রায় ২২ কিলোমিটার বা ১৩ মাইল) দৈর্ঘ্যের প্রমোদতরি নির্মাণে ব্যস্ত। এই তালিকায় ইতালির পরই আছে তুরস্ক; এরপর আছে নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, তাইওয়ান, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।

২০২৩ সালে ইতালির জাহাজ নির্মাতারা বিলাসবহুল প্রমোদতরি বানিয়ে আয় করেছে ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৮৩০ কোটি ইউরো। এই অঙ্ক এই খাতের সর্বকালের সর্বোচ্চ আয়।

বারবারা আর্মেরিও বলেন, ‘তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর সীমিতসংখ্যক উচ্চমানের প্রমোদতরি তৈরি করে। আমাদের প্রতিটি কাজ নিখুঁত শৈল্পিক, প্রতিটি প্রমোদতরি একেকটি মহৎ শিল্পকর্মের মতো; এগুলোর নকশা ও উপকরণ একেবারে আলাদা।’

বারবারা আর্মেরিও আরও বলেন, ইতালির প্রমোদতরি শিল্প দক্ষ স্থানীয় কারিগরদের ওপর ভর করে টিকে আছে। এই শিল্পের জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবই ইতালিতে পাওয়া যায়। যেমন মার্বেল প্রয়োজন হলে লিগুরিয়ার উপকূলে তুসকানির প্রাকৃতিক পাথরের খনিতে চলে যাওয়া সম্ভব।

কারা কেনেন

মূলত শতকোটিপতি ও ধনীরাই এসব প্রমোদতরি কেনেন। তাঁদের বড় একটি অংশই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বোট ইন্টারন্যাশনালের তথ্যানুসারে, এখনো মার্কিন ক্রেতারাই সংখ্যায় এগিয়ে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও মেক্সিকোর ধনীদের আগ্রহও চোখে পড়ার মতো বাড়ছে।

অন্যদিকে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়ার ওপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রুশ ক্রেতাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে। রুশ ধনীদের ওপর চাপ পড়ায় তাঁরা আর আগের মতো প্রমোদতরি কেনার দিকে ঝুঁকছেন না। তবে কেন এত মানুষ বিলাসবহুল প্রমোদতরি কিনতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে পাওলা ত্রিফিরো বলেন, ঘুরে বেড়ানোর তীব্র আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে এই বিলাসবহুল প্রমোদতরি সবচেয়ে বড় সঙ্গী।

পাওলা ত্রিফিরো আরও বলেন, ‘নতুন নতুন জায়গা দেখার কৌতূহল থেকেই আমি সাগর পাড়ি দিই—নিজের প্রমোদতরির নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি।’

পাওলা ত্রিফিরো আরও বলেন, ‘বিলাসবহুল প্রমোদতরির আরেকটি বিষয় হলো, কর্মীদের খুশি রাখা জরুরি; স্থলভাগে যা বেতন পেতেন, সাগরে তার দ্বিগুণ দেওয়া হয়। আমাদের ক্যাপ্টেন ২২ বছর ধরে আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ