টানা বৃষ্টি, অপরিকল্পিত খনন ও নদী-খাল দখলের কারণে সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ঘরবাড়ি, রান্নাঘর, টয়লেট সবই পানিতে ডুবে যাচ্ছে। দূষিত পানি ও স্যানিটেশন সমস্যায় এরইমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ। অনেকে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

শনিবার (৫ জুলাই) সকালে সাতক্ষীরা জেলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ জুলফিকার আলী রিপন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা আরো দুই-একদিন চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আগামি সোমবার (৭ জুলাই) থেকে এ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে জানান তিনি।

শহরের কুখরালি এলাকার আমির হোসেন, তৌহিদুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, পৌরসভার কুখরালী উত্তরপাড়ার রাস্তাটি প্রায় একমাস যাবৎ ১০০ পরিবারের পাঁচ শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। শহরের ইটাগাছা, গড়েরকান্দা, কুখরালী ও বাঁকাল বারুইপাড়া এলাকার পানি আসে যে বিলে, সেই বিলের পানি বেরোনোর পথ বন্ধ করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বিগত পাঁচ বছর ধরে চলছে এই অবস্থা।

তারা জানান, বছরের চার থেকে পাঁচ মাস ওই এলাকায় হাঁটু পানি জমে থাকে। দীর্ঘ দিন পানি আটকে থাকায় চলাচলের রাস্তাটি গেছে নষ্ট হয়ে গেছে। পচা পানির কারণে দেখা দিয়েছে চর্মরোগ। স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে এলাকাটি। খাওয়ার পানি, রান্না, গোসল এবং দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানি সংগ্রহে খুব কষ্ট হচ্ছে মানুষের। এ অবস্থায় শিশুরাও ঠিকমত স্কুলে যেতে পারছে না পচাপানি ও সাপের ভয়ে।

একই অবস্থা সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের পূর্বপাশে। এ এলাকায় রামচন্দ্রপুর বিলের পানি উঠেছে আঙ্গিনায়। অন্তত অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘরে ও উঠোনে পানি থৈ থৈ করছে। নারী ও শিশুরা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা নদী ও খালগুলোতে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল পানি নিষ্কাশনের পথ সচল রাখা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে তলদেশ না কেটে পাড় উঁচু করে কৃত্রিম গভীরতা দেখানো হয়েছে। খালের প্রশস্ততা কমানো হয়েছে। যার ফলে বর্ষার পানি নদীতে না গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লোকালয়েই জমে থাকছে। এমনকি নদীর পানিও মাঝে মাঝে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।

পানিনবন্দি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার কামালনগর, ইটাগাছা, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দীপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজার বাগান, মুনজিতপুর, গদাইবিল ও পুরাতন সাতক্ষীরার নিম্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও জেলা গণফোরামের সভাপতি আলীনুর খান বাবুল বলেন, “সবার আগে প্রভাবশালীদের কবল থেকে পানি নিষ্কাশনের পথ জনস্বার্থে উন্মুক্ত করতে হবে। নদী-খাল খননে প্রকৃত গভীরতা বজায় রেখে এবং আদি ম্যাপ অনুযায়ি সঠিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারি খাল ও জলমহাল থেকে অবৈধ দখল, নেট-পাটা উচ্ছেদ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ইজারা বাতিল ও পরিবেশবান্ধব জলব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। অপরিকল্পিত ঘের নিষিদ্ধ ও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অকেজো স্লুইস গেট সংস্কার ও ত্রুটিপূর্ণ বাঁধ মেরামত করতে হবে।”

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ বলেন, “জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা ঘের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হবে।”

ঢাকা/শাহীন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এল ক য় অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

মব সৃষ্টি করে চালানো হয় লুটপাট, ঘটনা ধামাচাপা দিতে তল্লাশির নাটক

রাজশাহী নগরীর ভদ্রা পারিজাত আবাসিক এলাকার একটি ভবনের ফ্ল্যাটে নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনির সন্ধানে সেখানে তল্লাশি চালানোর নামে মব সৃষ্টি করে নগদ ২ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার ‘লুট’ করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

আজ শনিবার বেলা ১১টায় নগরীর একটি রেস্তোরায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সেই ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী হাবিবা আক্তার মুক্তা।

তিনি বলেন, ভদ্রা পারিজাত আবাসিক এলাকার ২ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ির লিফটের ৫ এর ৬ নম্বর ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। গত ৩ জুলাই দুপুর আনুমানিক দুইটার দিকে আমার একমাত্র মেয়ের জামাইয়ের ভাই মাহমুদ হাসান সিসিল একদল সন্ত্রাসী এনে আমার ফ্ল্যাটের সামনে মব সৃষ্টি করে বাড়িতে থাকা নগদ দুই লাখ টাকা এবং স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায় এবং আমাকে নির্যতন করে, যা ডাকাতির সামিল। এ সময় আমি বাসায় একা ছিলাম। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সিসিল বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে পুলিশ ও স্থানীয় কিছু মানুষ নিয়ে এনে আবারও আমার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তল্লাশির নাটক সাজায়। যার পুরো সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পুলিশসহ আমাদের কাছে রয়েছে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা লিপিবদ্ধ করেছি। সেই সাথে পুলিশকে সব তথ্যাদি প্রদান করা হয়েছে।

হাবিবা আক্তার মুক্তা আরও বলেন, মব সৃষ্টিকারী সিসিলের এসবের পেছনে রয়েছে তার ভাই ও আমার মেয়ে জামাই সিজারের পৈত্রিক সম্পত্তি আত্মসাৎ করা। আমার জামাই মেহেদী হাসান সিজারের বাবা রাজশাহীর একজন পরিচিত ঠিকাদার ছিলেন। তিনি ২০২১ সালে মারা যান। এরপর তার রেখে যাওয়া বহু মূল্যবান সম্পত্তি নিজে ভোগ দখলের জন্য আমার জামাইকে নানাভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে এই সিসিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জুন আমার জামাইয়ের বাড়িতে সিসিল সন্ত্রাসী নিয়ে গিয়ে হামলা চালায়। কোনোক্রমে তিনি লুকিয়ে থেকে রক্ষা পান। আমার স্বামী ও আমি যেহেতু সিজারের শ্বশুর ও শাশুড়ি। সে কারণে আমাদেরকে জিম্মি করে সিজারকে তার কথামতো পরিচালনা করতে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালায় সিসিল। এর পেছনে রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দেশ্য নিয়ে এই হামলা করা হয়। সিসিল নিজে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

মুক্তা আরও বলেন, আমার স্বামী এবং আমার মেয়ে জামাই কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। তবে সিসিল তার ভাই সিজারকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে পুরো সম্পত্তি নিজে আত্মসাতের জন্য এই মব সৃষ্টি করে আমাদেরকে জিম্মি করার পাশাপশি বাড়িতে ডাকাতি ও আমার মেয়ে জামাই সিজারকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই ষড়যন্ত্র করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ