পৌরাণিক গল্প নিয়ে পরিচালক নীতেশ তিওয়ারি নির্মাণ করছেন ‘রামায়ণ’ সিনেমা। এতে রামের ভূমিকায় অভিনয় করছেন রণবীর কাপুর। আর সীতা চরিত্র রূপায়ন করছেন দক্ষিণী সিনেমার দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী সাই পল্লবী।

এরই আগে ‘রামায়ণ’ সিনেমায় সাই পল্লবী ও রণবীর কাপুরের বেশ কিছু লুক প্রকাশ্যে আসে। তারপর আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। কয়েক দিন আগে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটির অফিশিয়াল লুক। ৩ মিনিট ৪ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিওতে ভিএফএক্সর কাজ বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। তারপর চর্চায় পরিণত হয়েছে ‘রামায়ণ’। বিগ বাজেটের এ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য রণবীর কাপুর ও সাই পল্লবী কত টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছেন তা নিয়েও ফিসফাস কম হচ্ছে না।

সিয়াসাত ডটকমের তথ্য অনুসারে, ‘রামায়ণ’ সিনেমায় ‘রাম’ চরিত্রে অভিনয় করছেন রণবীর কাপুর। এ সিনেমায় সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিয়েছেন তিনি। সিনেমাটি দুই পার্টে মুক্তি পাবে। প্রতি পার্টের জন্য ৭৫ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা)। দুই পার্টের জন্য রণবীর কাপুর পারিশ্রমিক নিচ্ছেন ১৫০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা)। 

আরো পড়ুন:

কত টাকা আয় করল নাগা-সাই পল্লবীর সিনেমা?

মুক্তির পর সাই পল্লবী-নাগার সিনেমা ফাঁস

অন্যদিকে, সাই পল্লবী ‘সীতা’ চরিত্রে অভিনয় করছেন। ঐশ্বরিক এই চরিত্রে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য উল্লেখযোগ্য হারে পারিশ্রমিক বাড়িয়েছেন। সাধারণত, সাই পল্লবী আড়াই থেকে ৩ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়ে থাকেন। সেখানে সিনেমাটির প্রতি পার্টের জন্য ৬ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা) পারিশ্রমিক নিয়েছেন। দুই পার্টে সাই পল্লবীর পারিশ্রমিক দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা)। 

‘রামায়ণ’ সিনেমায় লক্ষ্মণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন রবি দুবে, হনুমান চরিত্র রূপায়ন করেছেন সানি দেওল, রাবণ চরিত্রে দেখা যাবে যশকে। যদিও এসব অভিনেতাদের পারিশ্রমিকের তথ্য পাওয়া যায়নি। ‘কেজিএফ’ তারকা যশ সিনেমাটির সহপ্রযোজক হিসেবে কাজ করছেন।    

সিনেমাটির বাজেট নিয়ে শুরু থেকেই জোরালো চর্চা চলছে। এর আগে বলিউড হাঙ্গামাকে একটি সূত্র বলেন, “রামায়ণ কেবল একটি সিনেমা নয়, এটি আবেগ। সিনেমাটিকে বিশ্বব্যাপী দর্শনীয় করে তুলতে সবরকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নির্মাতারা। ‘রামায়ণ’ সিনেমার প্রথম পার্টের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডলার (৮৩৫ কোটি রুপি) বাজেট ধরা হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা (রুপি থেকে টাকার হিসাবে)। এ সিনেমা ফ্র্যাঞ্চাইজি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজেট আরো বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছেন প্রযোজক নমিত মালহোত্রা।”

‘রামায়ণ’ সিনেমার পোস্ট প্রোডাকশনের কাজের জন্য ৬০০ দিন ব্যয় হবে। এর ভিএফএক্সের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অস্কারজয়ী সংস্থা ডিএনইজিকে। হিন্দি, তামিল, তেলেগু ছাড়া আরো বেশ কিছু ভাষায় সিনেমাটি মুক্তি পাবে। ২০২৬ সালের দীপাবলিতে মুক্তি পাবে ‘রামায়ণ’ সিনেমার প্রথম পার্ট। ২০২৭ সালের দীপাবলিতে মুক্তি পাবে সিনেমাটির দ্বিতীয় পার্ট।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রণব র ক প র প র ট র জন য রণব র ক প র চর ত র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

প্যানেলে গাঁথা পিয়ালের স্বপ্ন

যখন পর্দায় একেকটি দৃশ্য বদলে যায় নিখুঁতভাবে, যখন দর্শকের হৃদয় কাঁপে কোনো সংলাপের টানটান আবেগে, তখন খুব কম মানুষই খেয়াল করে, এসবের পেছনে একজন মানুষ আছেন– যিনি নিজ হাতে গড়েন গল্পের ছন্দ। এখন ঢাকার পোস্ট-প্রোডাকশন জগতে এক পরিচিত নাম জোবায়ের আবির পিয়াল। বগুড়ার এ তরুণের পথচলাটা ছিল যেমন পরিশ্রমে ভরা, তেমনি প্রেরণায়। 

তাঁর ভিডিও এডিটিংয়ের শুরুটা ছিল কৌতূহল থেকে। ছোটবেলায় সিনেমা দেখার সময় তাঁর মাথায় ঘুরত ‘এই দৃশ্যগুলো বানানো হয় কীভাবে?’ আলোর খেলা, শব্দের ছন্দ আর সময়ের নিখুঁত ব্যবস্থাপনায় কীভাবে তৈরি হয়? সেই আগ্রহই তাঁকে টেনে নিয়ে যায় ভিডিও এডিটিংয়ের এক নতুন জগতে। প্রথমে একটি সাধারণ ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে হাতেখড়ি। এরপর তাঁর সামনে খুলে যায় ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে নতুন নতুন সব দরজা। প্রতিটি কাট, প্রতিটি ট্রানজিশন যেন হয়ে উঠল গল্প বলার নিজস্ব এক টুল। প্রতিদিন এডিটিং টেবিলে তিনি শুরু করেন এক নিঃসঙ্গ অথচ রোমাঞ্চকর যাত্রা। পিয়াল বললেন, ‘শুরুর দিকে কিছুই জানতাম না। তখন শুধু জানতে চেয়েছি দৃশ্যগুলো কীভাবে তৈরি হয়। যখন কাটা শুরু করলাম তখনই খুঁজে পেলাম নিজের ভাষা। প্রতিটি কাটই তখন মনে হতো একেকটা শব্দ, যা দিয়ে আমি একটি গল্প বলতে পারি।’ এই কৌতূহলই তাঁকে টেনে নিয়ে আসে ঢাকায়। পোস্ট-প্রোডাকশন হাউসে সহকারী সম্পাদক হিসেবে শুরু হয় পিয়ালের জীবন। সেখানেই পান ভিডিও এডিটিংয়ের প্রথম গুরু ইকবাল কবির জুয়েলকে। পিয়াল বলেন, ‘জুয়েল ভাই শুধু বস ছিলেন না, ছিলেন আমার শিক্ষক। তাঁর হাত ধরেই বুঝতে শিখি, এডিটিং মানে শুধু দৃশ্য সাজানো নয়, গল্পের ভেতরের আবেগ বের করে আনা।’

এরপর এক দশকেরও বেশি সময়ের যাত্রা। বর্তমানে পিয়াল কাজ করছেন আলফাআই লিমিটেড-এ চিফ ভিডিও এডিটর হিসেবে। তাঁর প্রতিটি কাজেই যেন থাকে এক ধরনের ভিজ্যুয়াল সংবেদনশীলতা। শাহরিয়ার শাকিলের নেতৃত্বে কাজ করতে গিয়ে পেয়েছেন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। 

পিয়াল বলেন, ‘শাকিল ভাই সবসময় বলেন, একজন সম্পাদক যদি নির্মাণের সব স্তরে থাকতে পারে, তাহলে সে কেবল কাজ করে না, নির্মাণের আত্মাকেও ধরতে পারে।’ এই কথাটা আমি হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করি।

পিয়ালের কাজের পরিসর বিশাল। ওয়েব সিরিজ মহানগর, সিন্ডিকেট, আগস্ট ১৪, জিম্মি, কথোপকথন– এসব জনপ্রিয় প্রজেক্টের পেছনে তাঁর নিখুঁত কাট, আবেগ তৈরি করা টাইমিং, আর গল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। পিয়াল বলেন, ‘আমি প্রতিবার ভাবি– এই গল্পটা যদি আমার হতো, আমি কীভাবে বলতাম? সেই ভাবনা থেকেই আমি কাজ শুরু করি।’

ফিচার ফিল্ম দাগি-তে প্রধান এডিটর, সুড়ঙ্গ-এ পোস্ট-প্রোডাকশন সুপারভাইজার, তুফান ও তাণ্ডব-এ সহ-সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন পিয়াল। একক নাটকের সংখ্যাও তিনশর বেশি। তবে শুধু এডিটর হিসেবে নয়, তিনি কাজ করেছেন নন-ফিকশন প্রজেক্টেও। এক ডিশ দুই কুক, হলিডে প্ল্যানার, দ্য বক্স এসব কাজের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সহযোগী পরিচালকও। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে দিয়েছে নির্মাণের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট বোঝার সুযোগ। আর ভিএফএক্স? সেটিও তাঁর আরেক দক্ষতার ক্ষেত্র। 

‘সিন্ডিকেট’, ‘আগস্ট ১৪’, ‘মাইসেলফ অ্যালেন স্বপন’, ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’ এগুলোতে ভিএফএক্স ডিজাইন ও এক্সিকিউশনের কাজেও রেখেছেন নিজের ছাপ। পিয়ালের ভাষায়, ‘ভিএফএক্স যদি ঠিকভাবে ব্যবহার না হয়, তাহলে সেটি গল্পের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন একটি চাকচিক্য হয়ে দাঁড়ায়। যখন গল্পের ছন্দে থাকে, তখন সেটি জাদুর মতো কাজ করে।’

পিয়াল তাঁর এই দীর্ঘ যাত্রায় পাশে পেয়েছেন দেশের বহু খ্যাতিমান নির্মাতা– শিহাব শাহীন, আসফাক নিপুণ, কাজল আরেফিন অমি, মিজানুর রহমান আরিয়ান, ভিকি জাহেদ, সুমন আনোয়ারকে– যাদের সান্নিধ্য তাঁকে করেছে আরও পরিপক্ব, আরও গভীর দর্শনসম্পন্ন। পিয়ালের কাজগুলো দেখে বলা যায় পর্দার আড়ালে থেকেও তিনি হয়ে উঠেছেন হাজারো গল্পের নেপথ্য নায়ক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্যানেলে গাঁথা পিয়ালের স্বপ্ন