শৈশবের প্রিয় মুহূর্ত 

মায়ের সঙ্গে ছোট ভাইকে নিয়ে রেলের কূপে ভ্রমণ। শান্তিনিকেতনে পাঠভবনের দিনগুলোতে খেলার মাঠ।

যখন আপনি নবীন চিত্রশিল্পী

চোখ ভরা স্বপ্ন। আর প্রতিবাদের ভাষায় যা সমর্থন করি না তার বিপক্ষে যা হওয়ার কথা ভেবেছি তা করার চেষ্টা করা। তারই ধারাবাহিকতায় বন্ধুরা মিলে আয়োজন করা হলো প্রথম “সমকালীন নবীন শিল্পীদের প্রদর্শনী ১৯৯১’’ (Contemporary young artist’s exposition 1991).

আড্ডা-তর্কের সঙ্গী যাঁরা

পিতা দেবদাস চক্রবর্তী, শ্রদ্ধেয় মুর্তজা বশীর, সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ, মোহাম্মদ খসরু, সেন্টু রায়, আখতার হুসেন, বন্ধুবর শাহরিয়ার খান, শাহানা হুদা, পুত্র সৃজন...।

প্রথম প্রদর্শনী ঘিরে স্মৃতি

ছোট ছোট জলরঙের ছবিতে (মিনিয়েচার) বড় স্বপ্ন দেখেছি। প্রদর্শনীর আগে সমালোচনা এবং পরামর্শ শোনার জন্য এক সন্ধ্যায় ভূতের গলির বাড়িতে পিতৃবন্ধু কবি শামসুর রাহমান, শিল্পী নিতুন কুন্ডু, মুর্তজা বশীর, সাদেক খান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ এবং সুবীর চৌধুরীর উপস্থিতি। সেই সঙ্গে বশীর চাচার পরামর্শ– শোন গৌতম আমাকে ফতেহ লোহানী বলেছিল “যশ ও খ্যাতি পিছলধরা শেওলা-রাস্তা। তোমার পায়ে ক্রেপের স্যান্ডেল। সাবধানে হাঁটতে হবে নয়তো পিছল খেয়ে পড়বে–’’ কথাটা মনে রেখো।

প্রিয় চিত্রশিল্পী যারা এবং যে কারণে তাঁরা প্রিয়

দেশে এবং বিদেশে অসংখ্য প্রিয় শিল্পী, বিবিধ কারণে। তবু বলি। কামরুল হাসান, এস এম সুলতান, রশীদ চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, গণেশ পাইন, রামকিঙ্কর বেইজ, মনজিৎ বাওয়া, সোমনাথ হোড়, পিকাসো, মার্ক শাগাল, ডেভিড হকনি... 

এখন যা আঁকছেন–

যা আঁকা শুরু করেছিলাম সেগুলো, তার সঙ্গে নতুন বিষয় এবং এইসব নিয়ে আরও বিশদ বিস্তারের চেষ্টা।

প্রিয় উদ্ধৃতি

‘আমি জানি এই ধ্বংসের দায়ভাগে
আমরা দুজনে সমান অংশীদার;
অপরে পাওনা আদায় করেছে আগে,
আমাদের ’পরে দেনা শোধবার ভার।
তাই অসহ্য লাগে ও–আত্মরতি।
অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
ভ্রান্তিবিলাস সাজে না দুর্বিপাকে।’
—সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
এবং
‘... মরা ছাড়া তোমাদের কিছুই রোচেনা
তোমাদের হিসেবী খাতায় বীর নেই
শহীদ রয়েছে শুধু।’
—হাসান হাফিজুর রহমান v

lগ্রন্থনা-ফরিদুল ইসলাম নির্জন

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

১৮ মাসে এসেছেন নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত ও সহিংসতার কারণে গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি আরও বলেছে, ২০১৭ সালের পর বাংলাদেশে সর্বোচ্চসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এটি।

ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে গত জুন পর্যন্ত কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোয় এসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জুন পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজার। আর অন্যরা নিবন্ধন ছাড়াই আশ্রয়শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। নতুন করে আসা এসব রোহিঙ্গার বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউএনএইচসিআরের সদর দপ্তরে সংস্থাটির মুখপাত্র বাবর বালুচ সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের নিশানা করে সহিংসতা ও তাদের ওপর নিপীড়ন চলছে। এ ছাড়া মিয়ানমারজুড়ে চলছে সশস্ত্র সংঘাত। এতে বাধ্য হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া অব্যাহত রয়েছে।

বাবর বালুচ বলেন, ‘২০১৭ সালের পর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এটি। সেই বছর প্রাণঘাতী সহিংসতার মুখে ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইনে তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন।’

রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আগে থেকেই বাংলাদেশে আছেন। বেশির ভাগই ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তাঁদের সঙ্গে নতুন করে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা যুক্ত হলেন।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র। মাত্র ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছেন জানিয়ে বাবর বালুচ বলেন, এসব আশ্রয়শিবির বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি হয়ে উঠেছে।

তহবিল–সংকটে ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিলের তীব্র সংকট চলছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় তহবিল পাওয়া না গেলে এসব রোহিঙ্গাকে খাবারের মতো জরুরি সহায়তা প্রদান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ২৫ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিলের জন্য আবেদন জানালেও এর মাত্র ৩৫ শতাংশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

রোহিঙ্গাদের সহায়তার ক্ষেত্রে তহবিলের এ ঘাটতি অনেক বেশি উল্লেখ করে বাবর বালুচ বলেন, ‘আমাদের যা প্রয়োজন আর যা পেয়েছি সেই হিসাব যদি করেন, তাহলে এ ব্যবধান অনেক বেশি। এ তহবিল–ঘাটতি রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। কারণ, দৈনিক ভিত্তিতে খাবার ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পুরোপুরি মানবিক ত্রাণসহায়তার ওপর নির্ভরশীল।’

ইউএনএইচসিআর বলছে, প্রয়োজনীয় তহবিল না পেলে আগামী সেপ্টেম্বের থেকে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত ও ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তা বন্ধ হয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে বড় সংকট দেখা দিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের দিক থেকে হুমকি ক্রমেই বাড়ছে—এমন উদ্বেগ থেকে প্রধান দাতা এসব দেশ ত্রাণসহায়তার বদলে তাদের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে।

বাংলাদেশে আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা তহবিল–সংকটে ঝুঁকির মুখে ছিলেন। এর মধ্য নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় ত্রাণসহায়তার ক্ষেত্রে সংকট আরও বাড়বে বলে জানান বাবর বালুচ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই তহবিলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে আরও লাখো রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় নতুন করে আসা রোহিঙ্গা ও আগে থাকা অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন চাহিদা অপূর্ণ থেকে যাবে। এখন নতুন করে অতিরিক্ত তহবিল যদি পাওয়া না যায়, তাহলে খাবার ও সব রোহিঙ্গার জরুরি ত্রাণসহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ