এই হত্যার ঘটনা আইয়ামে জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়েছে: গোলাম পরওয়ার
Published: 11th, July 2025 GMT
পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার নিন্দা জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে মাথায় পাথর মেরে শত শত মানুষের সামনে এই হত্যার ঘটনা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। এই নির্মম দৃশ্য জাহেলিয়াতের লোমহর্ষক নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতাকেই যেন স্মরণ করিয়ে দেয়। পাশবিক এই হত্যার ঘটনায় মানুষ বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এভাবে পাশবিক কায়দায় মানুষ হত্যা সভ্য সমাজে বিরল।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘৯ জুলাই বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে মো.
বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এসেছে, চকবাজার থানা যুবদলের কয়েকজন নেতা নিহত সোহাগের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে যুবদলের সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। দেশবাসীর প্রশ্ন, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের লালনপালনকারী দলের নেতারা যে রাজনীতির কথা বলে বেড়ান, সেই দলের হাতে জনগণের জানমাল কতটা নিরাপদ? এই দলের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র কখনোই নিরাপদ থাকতে পারে না।
এ ঘটনায় আবার সেই পতিত ফ্যাসিবাদেরই পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে মন্তব্য করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সরকারকে এই সব দুর্বৃত্তদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে এবং দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন গোলাম পরওয়ার।
সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার দাবি
এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে দলটি। এক বিবৃতিতে এবি পার্টির নেতারা বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। অথচ রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে একদল দুর্বৃত্ত সারা দেশে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশকে আবারও গণ–অভ্যুত্থানপূর্ববর্তী পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়ার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতিতে এবি পার্টির নেতারা বলেন, ‘দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, প্রশাসন কোথাও অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। রাজধানীসহ দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কারা অপরাধ করছে, রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে সরকারকে আবারও নতুন করে জনরোষের মুখোমুখি হতে হবে।’
অবিলম্বে সারা দেশে কম্বাইন্ড (সমন্বিত) অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজদের গ্রেপ্তার করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার দাবি জানান নেতারা।
আরও পড়ুনগণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন নৃশংসতার রাজনীতি চলতে পারে না২ ঘণ্টা আগেগণ অধিকার পরিষদের নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিপুরান ঢাকার ভাঙারি ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। দলটির সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও গভীরভাবে শোকাহত। অবিলম্বে এই নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘এ ঘটনা শুধু একজন ব্যক্তির ওপর নয়, মানবতা, আইন, ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার ওপর সরাসরি আঘাত। জনসমক্ষে প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে একজন মানুষকে হত্যা করা কেবল নৃশংসতাই নয়, এটি আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনা স্পষ্ট করে তুলেছে যে দেশের নাগরিক নিরাপত্তা এবং আইনের শাসন চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র গ র প ত র কর গ ল ম পরওয় র হত য ক ণ ড র জন ত ব যবস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন ও সরকার পরিবর্তনের সময় পরাশক্তির যে খেলা হয়, সেই খেলা এখন দেখতে পাচ্ছি: গোলাম পরওয়ার
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পরাশক্তির খেলা শুরু হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘দিল্লির আধিপত্যবাদের কালো থাবা চতুর্দিক থেকে ছেয়ে বসেছে। ব্যবসা–বাণিজ্য, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক নীতি, কূটনীতি এমনকি সামনের নির্বাচন নিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে কি করে ধূলায় মিশিয়ে দেওয়া যায়, তার চক্রান্ত এখনো বিদ্যমান। আমাদের দেশে নির্বাচন আর সরকার পরিবর্তনের সময় এলে পরাশক্তির যে খেলা হয়, সেই খেলা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল। ‘জুলাই ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন তত্ত্ব আসতেছে। আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার জন্য কোনো কায়দায় ইনক্লুসিভ নির্বাচন, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ, নানান ফিলোসফির নামে দেশের জনগণকে ব্যবহার করে, রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে চক্রান্ত চলছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসন ও ব্যক্তি হাসিনা বিদায় নিলেও আত্মতৃপ্তির ও স্বস্তির সুযোগ নেই। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। এর ফলে একজন ফ্যাসিস্ট গেলেও দেশ থেকে ফ্যাসিজমের বিদায় হয়নি।’
জুলাই অভ্যুত্থানের পর যতবার নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তখন বারবার একটি অপশক্তি সেই পথে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, কিছু দূর এগিয়ে আবার কিছু দূর পেছাচ্ছে। সামনের একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনাকে যারা রুখে দিতে চাইবে, সেই ফ্যাসিবাদের উত্থানকে রুখে দেওয়া হবে।
সরকারের দেওয়া ভোটের সময়সীমার ওপরে জামায়াত আস্থাশীল বলে জানান গোলাম পরওয়ার। তবে এই ভোট যেন আওয়ামী লীগ আমলের মতো না হয়, সেই নিশ্চয়তা চেয়েছেন তিনি।
গোলাম পরোয়ার বলেন, ঐকমত্য কমিশনে নানা রকম আলোচনা চলছে। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা বিভেদ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বির্তক থাকলেও দলে দলে বা ব্যক্তি ব্যক্তিতে যাতে বিভেদ না হয়। দল হিসেবে সবাই সবার মতামত দিচ্ছে, কমিশনে যুক্তিতর্ক হচ্ছে। তার মানে এই নয় যে কোনো দল নির্বাচন চায় না, এমন ব্যাখ্যা হতে পারে না।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকলেও প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা উচিত নয় বলে উল্লেখ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য গঠনের সময় শেষ হয়ে যায়নি বলে মনে করেন গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাইলে এখনই কিছু মৌলিক বিষয়ে একমত হতে হবে। বিভেদ, অনৈক্য ভুলে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু মিডিয়া হাউস, কিছু কিছু কর্পোরেট হাউজ থেকে কখনো কখনো পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে। একটা কথাকে এমনভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে, যা নিয়ে জাতির মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।