চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা
Published: 23rd, May 2025 GMT
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলোতে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। গত কয়েক বছরের মতো চলতি মৌসুমেও গাছ থেকে আম নামানোর সময়সীমা নির্ধারণ করেনি প্রশাসন। তবে ধারণা করা হচ্ছে কিছুদিন পরেই পরিপক্ব আম বাজারজাত করতে পারবেন বাগান মালিকরা।
গতবারের তুলনায় এবছর আমের ফলন ‘কিছুটা’ ভালো হওয়ায় লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন তারা। এ মৌসুমে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভবনা দেখছেন জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা।
কৃষি সম্প্রসারণের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় ১০০ হেক্টর কমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষাবাদ হচ্ছে। পাঁচ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়েছে শিবগঞ্জে। এখানে ২০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আম গাছ রয়েছে। এছাড়া ভোলাহাট উপজেলায় ৩ হাজার ৬৩৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। যা উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম জমিতে আম চাষ। চলতি বছর প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৩ মেট্রিক টন হিসেব করে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি বিপণনের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি আমের মৌসুমে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করছেন বাগান মালিকরা। এসব আম প্রতিকেজি গড়ে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। এমন হিসেব করে এ বছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছরে প্রায় শতভাগ আম গাছে মুকুল এসেছিল। এতে চাষিরা আমের বাম্পার ফলন নিয়ে দারুণ আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু আবহাওয়াজনিত কারণে এবার আশানুরূপ গুটির দেখা পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিকভাবে এবার বেশি ফলনের বছর হলেও আমের গুটি এসেছে খুবই কম। ফলে গুটিতে স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় কাঙ্খিত আমের ফলন পওয়া যায়নি।
আম চাষি গোলাম মোস্তাফা সুমন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এবার আমের ফলন খুব একটা ভালো না। যেভাবে মুকুল এসেছিল সেভাবে গাছে আম দাঁড়ায়নি। মৌসুমের শুরুর দিকে বিরূপ আবহওয়ায় আমের মুকুল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে কম গুটি বের হয়েছে। তীব্র খরায় আমের গুটি ঝরে গেছে। সবমিলিয়ে এবার আমের ফলন খুব একটা ভালো না।”
তিনি আরও বলেন, “বিরূপ আবাহওয়ার মধ্যেও যেসব বাগানে মুকুল ও গুটি টিকে গেছে, সেসব বাগানে থোকায় থোকায় আম ঝুলছে। যে বাগানে আমের মুকুল ও গুটি টেকেনি সেখানে কাঙ্খিত আমের দেখা নেই বললেই চলে।”
দেশের বিভিন্ন জেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে আম চাষাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের চাহিদা অন্য জেলার থেকে বেশি। এ জেলার আম অত্যন্ত সুস্বাদু। ফলে ভোজন রসিকরা চাঁপাইবাবগঞ্জের আম কখন পাকবে সেই দিনক্ষণের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ জেলার আম বাগানগুলোয় তিন দফা মুকুল আসে। যেসব গাছে অগ্রিম মুকুল আসে, সেই সব গাছে পরিপক্ব হয়ে আম পেকে যায় আগেই। তবে কিছু বাগানে বিছিন্নভাবে গোপলভোগসহ গুটি আম পাকার খবর শোনা গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি মুনজের আলম মানিক রাইজিংবিডিকে বলেন, “এ বছর গাছ থেকে আম নামানোর জন্য নিদিষ্ট সময়সীমা নেই। যখন আম পাকবে তখনই বাজারে নামানো যাবে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু-কিছু বাগানে গোপালভোগ আম পাকার খবর শোনা গেছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজারে আম নামার সম্ভাবনা আছে। তবে এই মাসের শেষের দিকে গোপলভোগ ও গুটি আম বাজারে বিক্রি হবে বলে ধরাণা করা হচ্ছে।”
প্রাকৃতিকভাবে এবার আমের জন্য বেশি ফলনের বছর। চলতি মৌসুমে বাগানিরা আমের ফলন নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও গতবারের তুলনায় বেশি আম রয়েছে বাগানে। ধারণা করা হচ্ছে এবার আমের দাম তুলনামূলক কমই হবে। আম বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে আমের চাহিদার থেকে আমের সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম কমে যায়।
ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম রাইজিংবিডিকে বলেন, “এখনও বাজারে আম নামেনি। ধারণা করা হচ্ছে- শুরুর দিকে রকমভেদে ৮০০ টাকা থেকে মণ দরে বিক্রি হবে গুটি, আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত গোপালভোগ এবং দুই হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হবে ক্ষীরশাপাত আম। সরবরাহের উপর নির্ভর করে আমের দাম বাড়তে বা কমতে পারে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.
বাণিজ্যের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোমিনুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, “এবার প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসেবে প্রতিকেজি আম ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে দুই হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা করা হচ্ছে।”
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ আম র ফলন আম চ ষ আম ন ম আম প ক র আম ব
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ নিয়ে টালবাহানা চলছে
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেমেছিলাম, যে পরিবর্তন দেখতে চেয়েছিলাম, সেই পরিবর্তন এখনও দেখতে পাচ্ছি না। বরং আমাদের সামান্য যে চাওয়া ছিল, জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ– সেটি নিয়েও টালবাহানা করা হচ্ছে।’
সিরাজগঞ্জ শহরে পথসভা: ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র সপ্তম দিন সোমবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন এলাকার স্বাধীনতা স্কয়ারে পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম গণঅভ্যুত্থানের পর নিরপেক্ষ প্রশাসন চাই, বিচার ব্যবস্থা চাই। আমরা আগে দেখতাম, তারা একটা দলের হয়ে কাজ করত। আমরা চাই না এখনও তারা সেটা করুক। আমরা দেখেছি, আয়নাঘর থেকে শুরু করে কত কিছু করা হয়েছে। তাহলে আমরা বিচার ও সংস্কার ছাড়া কীভাবে নির্বাচনের দিকে যাবো? বিচার না হলে কীভাবে আমরা শহীদ ভাইবোনদের পরিবারের সামনে গিয়ে দাঁড়াব?
সিরাজগঞ্জের সম্ভাবনাময় তাঁতশিল্পকে অবজ্ঞা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামীতে এগুলোকে তুলে ধরা হবে, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে।’
আমরা কোনো আপস করব না: পাবনায় পথসভায় নাহিদ ইসলাম: সোমবার রাত ১১টায় পাবনা শহরের ট্রাফিক মোড়ে আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের স্বার্থে আসুন ঐক্যবদ্ধ হই। দেশের উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমরা কোনো আপস করব না। জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে থাকবো যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত। পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ এনসিপির পদযাত্রা উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণকে সাথে নিয়ে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটিয়েছিলাম। সেই আন্দোলনে আমরা কারও সঙ্গে আপস করিনি, ভবিষ্যতেও করব না।
গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, আমার ভাই-বোনেরা শহীদ হয়েছেন। তাদের শহীদি মর্যাদা ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। এজন্য প্রয়োজন জুলাই সনদ। এই দাবিতে আমরা অনড় অবস্থানে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, ডা. তাসলিমা জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, নাটোর জেলা যুগ্ম সমন্বয়কারী আব্দুর মান্নাফসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। পথসভা শেষে নেতাকর্মীরা কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
এর আগে দুপুরে নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড়ের স্বাধীনতা চত্বরে পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের পতন হলেই হবে না, দেশের মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। সে জন্য জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে, গণঅভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। গণঅভ্যুত্থানে যে ভাইবোনেরা নেমে এসেছিল, যেসব মানুষ শহীদ হয়েছিল, তাদের সেই শহীদি মর্যাদা রাষ্ট্রকে দিতে হবে। সংবিধানে স্বীকৃতি থাকতে হবে। এর জন্য আমাদের প্রয়োজন জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ।’
নাটোরে এনসিপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। হুঁশিয়ারি দিতে চাই। মাত্র এক বছর আগে কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে যারা ক্ষমতায় দীর্ঘায়িত হতে চেয়েছিল, তাদের আজকের বাংলাদেশে ঠাঁই হয়নি। যদি এখনও আমরা সেই স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন থেকে শিক্ষা না নিই, তবে তাদের পরিণতিও সেই দিকেই যাবে।’
এ সময় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রোববার পদযাত্রার ষষ্ঠ দিনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে যান নাহিদ ইসলামসহ এনসিপির অন্য নেতারা। এ ছাড়া এদিন তারা নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার কুজাইল বাজার সফর করেন। রোববার নওগাঁ শহরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি)