নরওয়ের ট্রন্ডহিমসফোর্ড শহরের বাইনেসেট এলাকায় নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন জোহান হেলবার্গ নামের এক ব্যক্তি। ঠিক তখনই ১৩৫ মিটার লম্বা একটি বড় পণ্যবাহী জাহাজ তাঁর বাগানে এসে আটকে পড়ল। এ সময় জাহাজটি ওই ব্যক্তির বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে ছিল।

জাহাজটি ওই ব্যক্তির বাড়ির খুব কাছাকাছি এসে ধাক্কা দিলেও বাড়ির বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। আর গভীর ঘুমে থাকা ওই ব্যক্তিরও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেনি।

পরে এক প্রতিবেশী দৌড়ে এসে দরজায় কড়া নাড়লে ওই ব্যক্তি ঘুম থেকে ওঠেন।

হেলবার্গ বললেন, ‘বাড়ির ডোরবেল এমন সময় বেজে উঠল, যখন আমি সাধারণত দরজা খুলতে চাই না। আমি আবার ঘুমাতে ভালোবাসি। কিন্তু বেল এত জোরে বাজছিল যে আমি দরজা খুলতে বাধ্য হলাম।’

হেলবার্গ আরও বললেন, দরজার সামনে এক পরিচিত মানুষ দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি বললেন, ‘তুমি কি জাহাজটা দেখোনি?’

ওই ব্যক্তির কথা শুনে হেলবার্গ জানালায় গিয়ে দেখেন, বিরাট একটি জাহাজ তাঁর ঘরের খুব কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা রজার গুস্তাফসন জানান, তারা ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত করবে। প্রাথমিকভাবে নাবিকদের কারও মদ বা মাদক সেবনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি এবং জাহাজ থেকে কোনো তেল ছড়িয়ে পড়েনি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জোয়ার ওঠার সময় তাদের জাহাজটি সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

ছবিতে স্পষ্ট দেখা গেছে, বাড়ির কতটা কাছে এসে দাঁড়িয়েছিল বিশাল জাহাজটি। আর কতটুকুই বা দূরত্ব ছিল হেলবার্গের ঘরের সঙ্গে। তবু গভীর ঘুমে থাকার কারণে তিনি কিছুই টের পাননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ জট

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি থেকে ভিয়েতনাম কতটা লাভবান হবে

ভিয়েতনামের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থান কং গার্মেন্ট অ্যাডিডাস, ক্যালভিন ক্লেইন ও কলাম্বিয়ার মতো বড় ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করে। তারা আশা করেছিল, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি হয়ে যাওয়ায় স্বস্তি পাওয়া যাবে।

৯ জুলাইয়ের সময়সীমার মধ্যে যে দুটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি হয়েছিল, ভিয়েতনাম তার মধ্যে একটি। ফলে উচ্চ শুল্কের খড়্গ এড়ানো গেছে, ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীরা এমনটাই মনে করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের আশার সেই বেলুন চুপসে যাচ্ছে। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

চুক্তির বিস্তারিত কিছুই এখনো পরিষ্কার নয়। ট্রাম্প যেখানে ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছেন। ২ এপ্রিল ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই তুলনায় এই ২০ শতাংশ অনেক কম। কিন্তু কোনো পক্ষই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশ করেনি। হ্যানয় শুধু বলছে, ‘ন্যায়সংগত ও ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য কাঠামো’ ঠিক করা গেছে।

সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে চুক্তির একটি অংশ নিয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, যেসব পণ্য অন্য দেশ থেকে ঘুরপথে ভিয়েতনামের মাধ্যমে রপ্তানি হবে (ট্রান্সশিপমেন্ট), সেগুলোর ওপর ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসতে পারে। তবে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে, তা বলা হয়নি।

থান কং গার্মেন্টের চেয়ারম্যান ত্রান নু তুং বলেন, ‘চীনের কাঁচামাল দিয়ে ভিয়েতনামে তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে গেলে কত শুল্ক দিতে হবে—২০, ৩০ না ৩৫ শতাংশ? কেউ তা জানে না। আমাদের শুধু অপেক্ষা করতে হবে।’

তুং আরও বলেন, এখন যে শুল্ক আছে, সেটা ১৫ থেকে ১৭ শতাংশের মতো। ট্রাম্পের ২০ শতাংশ প্রস্তাবিত হার খুব একটা বেশি নয়, কিন্তু ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ হিসেবে ধরা হলে বাড়তি চাপ পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির দিক থেকে ভিয়েতনাম এখন তৃতীয় বৃহত্তম—চীন ও মেক্সিকোর পরই তার স্থান। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১২৩ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। কিন্তু এত বড় রপ্তানিনির্ভর দেশের (রপ্তানি-জিডিপি অনুপাত ৯০ শতাংশের কাছাকাছি) জন্য ট্রাম্পের এই অনিশ্চিত শুল্কনীতি বড় ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

সমস্যা আরও যে কারণে ঘনীভূত হয়েছে, তা হলো দেশটিতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে চীন থেকে—গত বছর নতুন প্রকল্পের এক-তৃতীয়াংশই ছিল চীনভিত্তিক। বাজারে অনেক দিন ধরেই জল্পনাকল্পনা, চীনা কোম্পানিগুলো মার্কিন শুল্ক এড়াতে ভিয়েতনামকে ‘বাইপাস পথ’ হিসেবে ব্যবহার করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ শব্দের সংজ্ঞা যদি কেবল চীনের পণ্যে ‘মেড ইন ভিয়েতনাম’ মোড়ক লাগিয়ে রপ্তানি করা বোঝায়, তাহলে অত প্রভাব পড়বে না। চীনা কাঁচামালের একটি নির্দিষ্ট মাত্রার ব্যবহারও যদি এই শ্রেণিতে ফেলা হয়, তাহলে অনেক ভিয়েতনামী কোম্পানি সমস্যায় পড়বে।

একজন আমেরিকান ব্যবসায়ী হ্যানয় থেকে বলেন, চীনা কাঁচামাল বাদ দিয়ে পোশাক তৈরি সম্ভব নয়। শুধু ভিয়েতনাম নয়, কোনো দেশেই এখন তা সম্ভব নয়, এটাই বাস্তবতা।

আরেকটি বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ভিয়েতনামের জন্য যে ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হলো, সেটা কি প্রতিবেশীদের তুলনায় ভালো, নাকি খারাপ। ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলের কারণে অনেক কোম্পানি এখন চীন ছেড়ে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ বা ফিলিপাইনমুখী। এখন কারা কতটা সুবিধা পেল, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের ধারা তার ভিত্তিতেই ঠিক হবে।

ট্রাম্প ইতিমধ্যে নতুন সময়সীমা ঘোষণা করেছেন, আগামী ১ আগস্ট। তার আগেই অন্যান্য দেশকে চুক্তি করতে হবে। ডেজান শিরা অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের মার্কো ফোস্টার বলছেন, ভিয়েতনাম জিতল কী হারল, তা নির্ভর করছে বাকিরা কী চুক্তি করছে, তার ওপর।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভিয়েতনামে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ২১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৫০ কোটি। গত বছরের তুলনায় যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা এখনো আসছেন। দেশটিতে উৎপাদন খরচ কম, কর সুবিধা বেশি।

তবে হানি-ক্যান-ডু কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ গ্রিনস্পনের সাবধান বাণী, ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলেও মার্কিন বাজারে দাম বাড়বে। পরিণামে মূল্যস্ফীতি বাড়বে আর ক্রেতারা কম কিনবে। ফলে ব্যবসা ও চাকরি—দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তুং জানিয়েছেন, সময়সীমার আগে মার্কিন ক্রেতারা হুড়াহুড়ি করে কার্যাদেশ দিয়েছে। সে কারণে তৃতীয় প্রান্তিকে কার্যাদেশ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে গেছে। তাঁর মতে, ভিয়েতনামের পোশাকশিল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাঁচামাল, যেমন তুলা, সুতা, চেইন, ইলাস্টিক—চীন থেকে আসে। ফলে চীনকে বাদ দিয়ে চলা সম্ভব নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ