সকালের হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী । নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস শুধু ওজন কমাতেই সাহায্য করে না বরং সারাদিন হৃদরোগের স্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি এবং শক্তি বাড়ায়। তবে সকালের হাঁটার সময় যদি আপনি কিছু ভুল করেন, তাহলে এর উপকারিতা কমে যেতে পারে, এমনকী লাভের বদলে শরীরের ক্ষতিও হতে পারে । এ কারণে সকালে হাঁটার আগে কিছু বিষয় এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন-

খালি পেটে হাঁটা উচিত নয়: অনেকের ধারণা, খালি পেটে হাঁটলে বেশি ক্যালোরি ঝরবে, এটা ঠিক নয়। খালি পেটে হাঁটার ফলে শরীরে শক্তির অভাব হতে পারে, যার ফলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে । এ কারণে হাঁটার আগে হালকা এবং পুষ্টিকর খাবার খান, যেমন- কলা, ভেজানো বাদাম অথবা এক গ্লাস হালকা গরম পানি। যদি হাঁটার সময় বেশি হয়, তাহলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন ।

ওয়ার্ম-আপ এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়: গরম না করে দ্রুত হাঁটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে । পেশিতে টান, জয়েন্টে ব্যথা বা আঘাতের ঝুঁকি বেড়ে যায় । এজন্য হাঁটার আগে ৫-১০ মিনিট হালকা স্ট্রেচিং বা ওয়ার্ম-আপ করুন । এর পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে আপনার ঘাড়, কাঁধ, বাহু, কোমর এবং পা আলতো করে নাড়াচাড়া করুন ।

কফি খাওয়া এড়িয়ে চলুন : অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কফি পানের অভ্যাস আছে ৷ কিন্তু হাঁটার আগে কফি পান করলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে । কফিতে উপস্থিত ক্যাফেইন প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়, যা শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি করে। কফি খেতে চাইলে হাঁটার পরে খান। হাঁটার আগে ডাবের পানি বা সাধারণ পানি পান করা ভালো ।

টয়লেট এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয় : হাঁটতে যাওয়ার আগে অবশ্যই টয়লেট সেরে বের হবেন। তা না হলে শরীরে অস্বস্তি তৈরি হবে। হাঁটার সময় যদি আপনার টয়লেটে যাওয়ার ইচ্ছা হয়, তাহলে তা এড়িয়ে যাবেন না।

পানি খেতে ভুলবেন না: সারা রাত পানি পান না করার কারণে সকালে ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শরীর পানিশূন্য হয়ে যায় । হাঁটার আগে যদি পানি পান না করা হয়, তাহলে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা বা পেশিতে টান লাগতে পারে । সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ১-২ গ্লাস পানি পান করুন । দীর্ঘ সময় হাঁটতে চাইলে সঙ্গে পানির বোতল রাখুন। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট র আগ

এছাড়াও পড়ুন:

১৮ মাসে এসেছেন নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত ও সহিংসতার কারণে গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি আরও বলেছে, ২০১৭ সালের পর বাংলাদেশে সর্বোচ্চসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এটি।

ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে গত জুন পর্যন্ত কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোয় এসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জুন পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজার। আর অন্যরা নিবন্ধন ছাড়াই আশ্রয়শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। নতুন করে আসা এসব রোহিঙ্গার বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউএনএইচসিআরের সদর দপ্তরে সংস্থাটির মুখপাত্র বাবর বালুচ সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের নিশানা করে সহিংসতা ও তাদের ওপর নিপীড়ন চলছে। এ ছাড়া মিয়ানমারজুড়ে চলছে সশস্ত্র সংঘাত। এতে বাধ্য হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া অব্যাহত রয়েছে।

বাবর বালুচ বলেন, ‘২০১৭ সালের পর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এটি। সেই বছর প্রাণঘাতী সহিংসতার মুখে ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইনে তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন।’

রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আগে থেকেই বাংলাদেশে আছেন। বেশির ভাগই ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তাঁদের সঙ্গে নতুন করে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা যুক্ত হলেন।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র। মাত্র ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছেন জানিয়ে বাবর বালুচ বলেন, এসব আশ্রয়শিবির বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি হয়ে উঠেছে।

তহবিল–সংকটে ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিলের তীব্র সংকট চলছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় তহবিল পাওয়া না গেলে এসব রোহিঙ্গাকে খাবারের মতো জরুরি সহায়তা প্রদান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ২৫ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিলের জন্য আবেদন জানালেও এর মাত্র ৩৫ শতাংশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।

রোহিঙ্গাদের সহায়তার ক্ষেত্রে তহবিলের এ ঘাটতি অনেক বেশি উল্লেখ করে বাবর বালুচ বলেন, ‘আমাদের যা প্রয়োজন আর যা পেয়েছি সেই হিসাব যদি করেন, তাহলে এ ব্যবধান অনেক বেশি। এ তহবিল–ঘাটতি রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। কারণ, দৈনিক ভিত্তিতে খাবার ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পুরোপুরি মানবিক ত্রাণসহায়তার ওপর নির্ভরশীল।’

ইউএনএইচসিআর বলছে, প্রয়োজনীয় তহবিল না পেলে আগামী সেপ্টেম্বের থেকে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত ও ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তা বন্ধ হয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে বড় সংকট দেখা দিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের দিক থেকে হুমকি ক্রমেই বাড়ছে—এমন উদ্বেগ থেকে প্রধান দাতা এসব দেশ ত্রাণসহায়তার বদলে তাদের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে।

বাংলাদেশে আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা তহবিল–সংকটে ঝুঁকির মুখে ছিলেন। এর মধ্য নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় ত্রাণসহায়তার ক্ষেত্রে সংকট আরও বাড়বে বলে জানান বাবর বালুচ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই তহবিলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে আরও লাখো রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় নতুন করে আসা রোহিঙ্গা ও আগে থাকা অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন চাহিদা অপূর্ণ থেকে যাবে। এখন নতুন করে অতিরিক্ত তহবিল যদি পাওয়া না যায়, তাহলে খাবার ও সব রোহিঙ্গার জরুরি ত্রাণসহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ