গতকাল শনিবার রাতে কানের স্বল্পদৈর্ঘ্য শাখার পুরস্কার ঘোষণার পর আলাদা করে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে অংশ নেন বাংলাদেশের নির্মাতা আদনান আল রাজীব। বাংলাদেশের এই নির্মাতা ‘আলী’ স্বল্পদৈর্ঘ্যের জন্য স্পেশাল মেনশন স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁকে দিয়েই শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব, ‘আপনাকে দিয়েই শুরু করি। যদি কিছু মনে না করেন, এই যে স্পেশাল মেনশন জিতলেন, এর অর্থ আপনার কাছে কী?’

উপস্থাপকের এমন প্রশ্নে আদনান বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য অবশ্যই বিশেষ। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্যও। আপনারা জানেন, প্রথমবারের মতো আমাদের জন্য এটাই অনেক বড় একটা অর্জন। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ একটা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় মানুষ ভালোভাবে একটু নিশ্বাস নেওয়া সুযোগ খুঁজছে। এই পুরস্কারটি জিতে আমরা কিছুটা হলেও সেটাই দিতে পেরেছি। এটা দেশের মানুষের মাঝে একটা আশার সঞ্চার যেমন ঘটাবে, তেমনি বাংলাদেশ নিয়ে একটা ইতিবাচক ধারণাও তৈরি করবে।’

সংবাদ সম্মেলনে রাজীব। ছবি: উৎসবের সাইট থেকে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আলীর মতো গায়কদের পুরস্কারটি উৎসর্গ করছি: আদনান আল রাজীব

কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ইতিহাস— এ যেন স্বপ্নের মতোই শোনায়। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবের পর্দায় রূপ দিলেন নির্মাতা আদনান আল রাজীব। তার নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আলী’ ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে পেয়েছে বিচারকদের বিশেষ সম্মাননা (স্পেশাল মেনশন)।

২৪ মে (বাংলাদেশ সময়) রাত ১০টা ৪০ মিনিট। কানের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে তখন কানায় কানায় পূর্ণ। সবার চোখ মঞ্চের দিকে। ঠিক তখনই জার্মান পরিচালক ও এবারের স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগ ও ‘লা সিনেফ’-এর প্রধান বিচারক মারেন আদে ঘোষণা করেন—বাংলাদেশের ‘আলী’ পেয়েছে স্পেশাল মেনশন। অতিথি সারিতে বসে থাকা আদনান উঠে দাঁড়ালে গর্জে ওঠে করতালি। সেই মুহূর্তটি যেন বাংলাদেশের জন্য এক ইতিহাসে মোড়ানো গর্ব।

কাকে উৎসর্গ করবেন এই পুরস্কার? এমন এক প্রশ্নে আদনান আল রাজীবের উত্তর ছিল অনন্য। এ নির্মাতা বলেন, “আলী এমন একটি গল্পের সিনেমা, যেখানে একজন আলী প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে এসেছেন। নীরবেই যিনি সংগীতচর্চা চালিয়ে যান। আলীর মতো এমন মেধাবী গায়কদের উৎসর্গ করছি আমার এই সিনেমা—যারা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন এবং নীরবে তাদের সংগীতচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন।”

আরো পড়ুন:

আমাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট বানানো হয়েছে: বাঁধন

কান চলচ্চিত্র উৎসবের বিজয়ীরা

একই সুরে আদনান আল রাজীব তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “এটা বাংলাদেশের জন্য।”

‘আলী’ একটি ১৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এর কেন্দ্রে রয়েছে উপকূলীয় এক শহরের কিশোর, যেখানে নারীদের গান গাওয়ার অনুমতি নেই। শহরে যাওয়ার সুযোগ পেতে সে একটি গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। চমকপ্রদ তথ্য হলো— আলী নারীকণ্ঠেও গাইতে পারে! এই ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয় করেছেন আল আমিন।

এবার কানে জমা পড়েছিল ৪ হাজার ৭৮১টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। সেখান থেকে নির্বাচিত হয় মাত্র ১১টি। ‘আলী’ ছিল সেই সম্মানজনক তালিকায় একমাত্র বাংলাদেশি চলচ্চিত্র।

পুরস্কার ঘোষণার পর রাজীব ফটোকলে অংশ নেন স্বর্ণপাম জয়ী ইসরায়েলি পরিচালক তৌফিক বারহোমের সঙ্গে। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন তারা। এই ঐতিহাসিক অর্জনে স্বভাবতই সামাজিকমাধ্যমে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি দেশের জনপ্রিয় মুখরা। শাকিব খান, জয়া আহসান, মেহজাবীন চৌধুরী, আজমেরী হক বাঁধন, চয়নিকা চৌধুরী, যুবরাজ শামীম, নিরব হোসেনসহ অনেকেই শুভকামনায় ভাসিয়েছেন রাজীবকে।

‘আলী’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের স্বপ্ন, সংগ্রাম আর সম্ভাবনার প্রতীক। নীরব প্রতিভাবানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজীব দেখালেন, গল্প যদি সত্য হয়— তাহলে সীমান্ত ভেদ করে সে পৌঁছে যায় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মঞ্চেও।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলীর মতো গায়কদের পুরস্কারটি উৎসর্গ করছি: আদনান আল রাজীব