কিছুদিন আগের ঘটনা। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টাল ছোট করে একটি সংবাদ ছাপে। সেখানে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান দীর্ঘ ৬৫ বছর পর তাঁর বাবার স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল খুঁজে পেয়েছেন। খবরটি ছোট হলেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পুরোনো নম্বরপত্র বা সার্টিফিকেট খুঁজে পাওয়া বাস্তবপক্ষেই দুষ্কর।

ফল খুঁজে পাওয়ার কথা উপাচার্য তাঁর ফেসবুকে আবেগময় ভাষায় লিখে জানান। তাঁর বক্তব্য এমন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো আর্কাইভাল রেকর্ড থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতায় অনেক চেষ্টার পর আমার বাবার ১৯৬০ সালের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে মাস্টার্স পরীক্ষার ফলাফল খুঁজে পেলাম। তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। ফজলুল হক মুসলিম হলে সংযুক্ত ছিলেন। সন্তান হিসেবে ভালো লাগছে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

বোঝাই যাচ্ছে, পুরোনো নম্বরপত্র ও ফল খুঁজে পাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। এই সমস্যা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়; দেশের পুরোনো সব বিশ্ববিদ্যালয়ের একই সমস্যা। বিশাল বিশাল কাগজে লেখা মোটা খাতা বাঁধাই করে ফল সংরক্ষণ করা হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই এসব কাগজ ও কাগজের লেখা বা ছাপা নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। এর ওপর আছে বিভিন্ন পরীক্ষার হাজার হাজার খাতা সংরক্ষণের জটিলতা। ফলে কেউ এসে পুরোনো নম্বরপত্র বা সার্টিফিকেটের কপি চাইলেই তা পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।

পুরো ব্যাপারটিই এমন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষার্থীর ফল খুঁজে বের করতে বেগ পেতে না হয়। প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে রেজাল্ট সংরক্ষণ ও সংগ্রহ করার কাজটি সহজ করা দরকার

কয়েক বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ উদ্‌যাপন করে বেশ আড়ম্বরে। তখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা বের হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সে সময় বিভিন্ন বিভাগ ও শিক্ষকের কাছ থেকে নতুন গবেষণা ও প্রকল্পও আহ্বান করেছিল। কিন্তু জরুরি এই বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া হয়নি। একটি প্রকল্পের অধীন শত বছরের ফলাফলকে স্ক্যান করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার ছিল।

মাঝেমধ্যে পুরোনো রেজাল্টের অনিয়ম নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তখন অনুসন্ধান বা তদন্তের জন্য পুরোনো ফলবিন্যাসপত্র দেখতে হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়া বা অন্য কোনো কারণে একজন ব্যক্তির পুরোনো সার্টিফিকেট ও নম্বরপত্রের প্রয়োজন হয়। বিদ্যমান সংরক্ষণপদ্ধতির কারণে তাঁকে দ্রুততম সময়ে সেই সার্টিফিকেট বা নম্বরপত্র সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।

সাধারণত সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কমিটির দুজন শিক্ষক পরীক্ষার ফল তৈরি করেন। তাঁরা আলাদা আলাদাভাবে দুটি ফলবিন্যাসপত্র বানান। পরে দুজনে সেটি মিলিয়ে দেখেন। কোনো অসামঞ্জস্য থাকলে সেখানে কেটে সংশোধন করেন। ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে হাতে লিখে আর রেজাল্ট তৈরি করা হয় না। এখন কম্পিউটারে সফটকপিতে রেজাল্ট তৈরি করে তারপর প্রিন্ট দেওয়া হয়। ফলে কাটাকাটি কম হয়।

এর মধ্যে কোনো শিক্ষার্থী ফেল করলে তাঁর আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকে। এমনকি কোনো কোনো শিক্ষার্থী নম্বর কম পেয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে ফলোন্নয়নের জন্য আবার পরীক্ষা দেন। তখন ফলবিন্যাসপত্রে কেটে নতুন করে নম্বর বসাতে হয়। বিভিন্ন পরীক্ষার ফলবিন্যাসপত্র একত্রে বাঁধাই করে রাখা হয়। পোকামাকড় ও প্রাকৃতিক নানা কারণে কয়েক বছরের মধ্যে সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে শুরু করে। ফলে পুরোনো ফলাফল স্ক্যান করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এখন পর্যন্ত বড় বড় কাগজে টেবুলেশন বা চূড়ান্ত ফলবিন্যাসের কাজ করা হয়। এসব কাগজ নিখুঁতভাবে স্ক্যান করাও কঠিন। তা ছাড়া অতীতের সব ফলাফল সংরক্ষণ করা হলেও সেগুলো জীর্ণ হয়ে পড়েছে। বেশি আগের কাগজগুলো ধরার আগেই ছিঁড়ে যায়। তা ছাড়া আগের দিনের কালিও অনেক জায়গায় মুছে গেছে বা অস্পষ্ট হয়ে গেছে।  

মাঝেমধ্যে পুরোনো রেজাল্টের অনিয়ম নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তখন অনুসন্ধান বা তদন্তের জন্য পুরোনো ফলবিন্যাসপত্র দেখতে হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়া বা অন্য কোনো কারণে একজন ব্যক্তির পুরোনো সার্টিফিকেট ও নম্বরপত্রের প্রয়োজন হয়। বিদ্যমান সংরক্ষণপদ্ধতির কারণে তাঁকে দ্রুততম সময়ে সেই সার্টিফিকেট বা নম্বরপত্র সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।

অদূর ভবিষ্যতে অবশ্য আরও ভালো পদ্ধতির খোঁজ করা দরকার। যেমন ফলবিন্যাসের কাজটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির আওতায় আনা যায় কি না, তা ভাবা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে একেকটি কোর্সের শিক্ষক নিজেই তাঁর নম্বর অনলাইনে আপলোড করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকে তাঁর নিজস্ব ড্যাশবোর্ড থেকে সব শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর ইনপুট দেবেন। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে প্রত্যেক শিক্ষক নিজ নিজ নম্বর এভাবে আপলোড করবেন।

এসব নম্বর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব হয়ে চূড়ান্ত ফল তৈরি করবে। শিক্ষার্থী তাঁর নিজের ড্যাশবোর্ড থেকে পরীক্ষার নম্বর ও ফল জানতে পারবেন। প্রয়োজনে তাঁর নম্বরপত্র বা সার্টিফিকেট প্রিন্ট দিয়ে নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে কোনো টাকা জমা দেওয়ার ব্যাপার থাকলে সেই সুযোগও সেখানে রাখা যায়।

মোদ্দাকথা, পুরো ব্যাপারটিই এমন করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষার্থীর ফল খুঁজে বের করতে বেগ পেতে না হয়। প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে রেজাল্ট সংরক্ষণ ও সংগ্রহ করার কাজটি সহজ করা দরকার।

 ● তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ফল খ দরক র ফল ফল

এছাড়াও পড়ুন:

আরেক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা উত্থানের সম্ভাবনা জিইয়ে রেখে ঘরে ফিরতে পারি নাই: নাহিদ ইসলাম

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে এক দফা ঘোষণার বর্ষপূর্তির দিনে সেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে দেশে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সমূলে উৎপাটনের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। গত বছর ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদই শেখ হাসিনার সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করেছিলেন।

আজ রোববার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশে দাঁড়িয়ে তিনি অভ্যুত্থানের পরে তরুণদের নেতৃত্বাধীন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গড়ে তোলার পেছনে যে আকাঙক্ষা কাজ করেছে, সেটি তুলে ধরেছেন।

নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের এক দফা দাবি ছিল, আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে চাই। কেবল এক ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা হটিয়ে, আরেক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা উত্থানের সম্ভাবনা জিইয়ে রেখে আমরা নিশ্চিন্তে ঘরে ফিরতে পারি নাই। বরং রাষ্ট্র ও সমাজে দীর্ঘদিন জেঁকে বসা এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সমূলে উটপাটনে আপনাদের তীব্র আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে আমরা আপনাদের ছাত্র–শ্রমিক–জনতা ও রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠন করেছি।’

সমাবেশ থেকে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ শিরোনামে ২৪ দফা ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। এতে সংবিধান সংশোধনসহ রাষ্ট্র ও জনগণের উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন দাবি, এনসিপির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের রূপরেখা তুলে ধরা হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরে বাংলাদেশে এই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরা আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের দ্বিতীয় রিপাবলিকের ২৪ দফা ইশতিহার ঘোষণা করছি।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির এই ২৪ দফার মধ্যে রয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার; নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক; গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার; ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার; সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন; ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার; টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষানীতি; সার্বজনীন স্বাস্থ্য; ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্ত্বার মর্যাদা; কল্যাণমুখী অর্থনীতি; জনবান্ধব পুলিশ; নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন; গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব; তারুণ্য ও কর্মসংস্থান; বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি; টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব; স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ; শ্রমিক-কৃষকের অধিকার; জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নগরায়ন, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা; জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা; প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার; বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ